Alapon

মুহাম্মদ সা. যেভাবে ভাষণ দিতেন



বক্তব্য দেওয়ার শুরুতে মুহাম্মদ সা. এক দারুণ কাজ করতেন। তিনি জনসাধারণকে কোনো না কোনো প্রশ্ন করতেন? খুব স্বাভাবিক প্রশ্ন। কিন্তু এতে যেটা হতো জনসাধারণ পূর্ণ মনোযোগ দিতেন রাসূল এর কথার দিকে।

আপনারা যারা বক্তব্য দেন তারা এটা এপ্লাই করতে পারেন।

উদাহরণ দেই, মুহাম্মদ সা.-এর একমাত্র মহাসম্মেলন যা বিদায় হজ্ব নামে পরিচিত। সেখানে ভাষণ দিতে দাঁড়ালেন।
দাঁড়িয়ে কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে প্রশ্ন করলেন, এটি কোন মাস? সাহাবারা অবাক হয়ে বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন। সাহাবারা ভেবেছে তিনি মাসের নাম পরিবর্তন করে দিবেন।

মুহাম্মদ সা. আবার প্রশ্ন করলেন, এটা কি জিলহজ্ব মাস নয়? সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ! অবশ্যই!
মুহাম্মদ সা. বললেন, এটা কোন শহর? এটা কি মক্কা নয়?
সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ! অবশ্যই!
কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার প্রশ্ন করলেন, এটা কি কুরবানীর দিন নয়?
সাহাবারা বললেন, হ্যাঁ! অবশ্যই!
লাখো সাহাবা সেদিন মুহাম্মদ সা.-এর এসব প্রশ্ন শুনে থমকে গিয়েছিলেন। পিনপতন নীরবতা শুরু হলো। কেউ বুঝতে পারছে না, মুহাম্মদ সা. এসব প্রশ্নের মাধ্যমে আসলে কী বার্তা দিতে চাইছেন?

এরপর মুহাম্মদ সা. শুরু করলেন তাঁর মূল ভাষণ....

হে মানবসমাজ!
আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনো। হয়তো আমি আর কখনো এখানে তোমাদের সঙ্গে একত্রিত হতে পারব না।

হে জনমণ্ডলী! আজকের এই দিন (জুমার দিন), এই মাস (জিলহজ মাস) ও এই শহর (মক্কা) যেমন পবিত্র; তোমাদের জানমাল, ইজ্জত-আবরু, মান-সম্মান কিয়ামত পর্যন্ত এমনই পবিত্র। কারো কাছে যদি কোনো আমানত রক্ষিত থাকে, তাহলে সে যেন তা আমানতকারীর কাছে পৌঁছে দেয়। আজ থেকে সব ধরনের সুদ রহিত করা হলো। তোমাদের কেবল মূলধনের ওপর অধিকার রইল। তোমরা অন্যের ওপর অত্যাচার করবে না, নিজেরাও অত্যাচারিত হবে না। সর্বপ্রথম আমি হজরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের সুদ রহিত করছি। অন্ধকার যুগের সব কৌলীন্য বিলুপ্ত করা হলো। শুধু কাবাঘরের তত্ত্বাবধান ও হাজিদের পানি পান করানো ছাড়া।

আজকের পর তোমাদের ভূখণ্ডে শয়তানের উপাসনার ব্যাপারে সে নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু ব্যাপার, যেগুলোকে তোমরা বড় পাপ মনেই করো না। তার অনুসরণ করলে শয়তান খুশি হবে। জনমণ্ডলী! তোমাদের নিজ স্ত্রীদের ওপর যেমন তোমাদের অধিকার রয়েছে, তদ্রূপ তাদেরও তোমাদের ওপর অধিকার রয়েছে। স্ত্রীদের ওপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে, তারা যেন নিজ স্বামী ছাড়া পরপুরুষের সঙ্গে সম্ভোগে লিপ্ত না হয়। যদি তারা তা করে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের তাদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শনের অনুমতি দিয়েছেন। এমতাবস্থায় তোমরা তাদের শয্যা পৃথক করে দেবে। এবং মৃদু প্রহার করবে। তাতে তারা বিরত হলে নিয়মমাফিক তাদের ভরণপোষণের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। স্ত্রীদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। তারা তোমাদের সাহায্যকারিণী। তোমরা তাদের আল্লাহর নির্ধারিত কালিমা বাক্যের (ইজাব-কবুল) মাধ্যমে নিজেদের জন্য হালাল করেছো। সুতরাং তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করো।

জনমণ্ডলী! সব মুমিন পরস্পর ভাই ভাই। কারো জন্য অন্যের সম্পদ বৈধ নয়। তবে যদি কেউ স্বেচ্ছায় কাউকে কিছু দেয়, তাহলে সেটা স্বতন্ত্র ব্যাপার। আমার পর তোমরা কুফরিতে ফিরে যেও না। পরস্পর খুনাখুনি করো না। আমি তোমাদের মাঝে এমন দুটি জিনিস রেখে গেলাম, তোমরা তা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে কখনো বিভ্রান্ত হবে না। তা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব (পবিত্র কোরআন) ও তাঁর রাসুলের হাদিস।

জনমণ্ডলী! তোমাদের প্রভু একজন। তোমাদের পিতাও একজন। তোমরা সবাই আদম থেকে আর আদম মাটি থেকে সৃষ্টি। তোমাদের মাঝে যারা সর্বাধিক মুত্তাকি, খোদাভীরু তারাই আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাবান। তাকওয়া ছাড়া কোনো অনারবের ওপর কোনো আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই।

জনমণ্ডলী, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক উত্তরাধিকারীর অংশ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। উত্তরাধিকারীর জন্য কোনো ওসিয়ত প্রযোজ্য নয়। অন্যদের জন্য এক-তৃতীয়াংশের অধিক ওসিয়ত করা বৈধ নয়। আমাদের কিয়ামত দিবসে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমাদেরও জিজ্ঞাসা করা হবে। তখন তোমরা আমার ব্যাপারে কী বলবে?

আমি কি তোমাদের নিকট আল্লাহর দ্বীন পৌছে দিয়েছি?
উপস্থিত সাহাবায়েকেরাম উত্তর দিলেন, আমরা সাক্ষ্য দেব যে আপনি আপনার দায়িত্ব পৌঁছে দিয়েছেন। হিত কামনা করেছেন।

অতঃপর রাসুল (সা.) আকাশের দিকে হাত তুলে তিনবার বললেন, আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন।

হে উপস্থিতগণ! অনুপস্থিতদের নিকট আমার এ পয়গাম পৌছে দেবে। হয়তো তাদের মধ্যে কেউ এ নসিহতের উপর তোমাদের চেয়ে বেশি গুরুত্বের সাথে আমল করবে।
আসসালামু আলাইকুম। বিদায়!

পঠিত : ৩৩৪ বার

মন্তব্য: ০