Alapon

মাওলানা মওদূদী কি হাদীছ অস্বীকারকারী ছিলেন?



মাওলানা মওদূদী কি হাদীছ অস্বীকারকারী ছিলেন?
.
মাওলানা মওদূদীর ব্যাপারে অনেক অনেক সমালোচনা পাওয়া যায়। এর মধ্যে যেসকল হার্ডকোর অভিযোগ পাওয়া যায় সেটা হচ্ছে তিনি নাকি হাদীছ অস্বীকার করতেন। দুঃখজনকভাবে মাওলানার ওপর উত্থাপিত অভিযোগ খণ্ডনের কিতাব বেশ কিছু বের হলেও তাতে এই অভিযোগটির সঠিক সমাধান পাওয়া যায় না (আমি এখন পর্যন্ত পাইনি)। এই অভিযোগটা বেশি আসে আহলে হাদীছ-সালাফীদের পক্ষ থেকে। তবে বেশ কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের অনেক বড় একজন দেওবন্দী মুফতি সাহেব (হাফিযাহুল্লাহ) এই অভিযোগটি তুলে আনেন। এই ব্যাপারে আলোচনার আগে হাদীছের ব্যাপারে তিনটি দল ও তাদের আচার-আচরণ সম্পর্কে সামান্য জেনে নেওয়া যাক। শায়খ আল্লামা তাহির আল-যাযায়িরী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘তাওযীহুন নাযর ইলা উসূলিল আছার’ গ্রন্থে হাদীছ সম্পর্কে তিনটি দলের কথা উল্লেখ করেছেন।
.
প্রথম দলঃ যারা শুধু হাদীছের সনদ নিয়েই কাজ-কারবার করে। তাঁদের সকল মনোযোগের মূল কেন্দ্রবিন্দু সনদ ও রাবীগণ। সনদ সহীহ হলেই তাঁরা যেকোনো হাদীছকে সহীহ বলে দেন, এমনকি যদি সেই হাদীছ অন্যান্য হাদীছের সাথে সাংঘর্ষিক হয় এবং সেই সাংঘর্ষিক হাদীছটি অধিক প্রাধান্য দেওয়ার মতও হয়। তাঁরা বলে- হাদীছ এটাও সহীহ, ওটাও সহীহ। যখন কেউ এ বিষয়ে নীরবতা অবলম্বন করে তাঁরা তাঁদেরকে সুন্নাহর বিরোধী বলে আখ্যা দেয়। শায়খের মতে এদের বেশিরভাগ-ই আহলুল আছার।
.
দ্বিতীয় দলঃ যারা শুধু হাদীছের মতন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকে। তাদের সকল মনোযোগ আবদ্ধ হয় হাদীছের মতনের ওপর। নিজেদের ধারণার সাথে হাদীছ মিললেই হলো, সেসকল হাদীছকে তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দিকে সম্বোন্ধিত করে দেয়, যদিও সেই হাদীছের সনদের অবস্থা অত্যন্ত বাজেও হয়। আর নিজেদের ধারণার সাথে না মিললে তারা বিশুদ্ধ হাদীছকেও নাকচ করে দেয়, যদিও সেই হাদীছ বিশুদ্ধ ও মতনের দিক থেকেও তাতে বিচ্ছিন্নতা ও গোপন ত্রুটি (শুযুয ও ইল্লাত) নেই।
.
তৃতীয় দলঃ তাঁরা সনদ ও মতন উভয় দিক থেকেই হাদীছকে পর্যালোচনা করে থাকে। এরা নিজেদের মতের বিপরীতে গেলেই সেই হাদীছের রাবীদের ওপর ভুলত্রুটির অভিযোগ তোলে না, আবার তাঁরা এটাও বিশ্বাস রাখে যে রাবীদের পক্ষে হাদীছ বর্ণনার ক্ষেত্রে ভুল কিংবা তাদের দ্বারা বিভ্রান্তি হয়ে যাওয়া মোটেও অস্বাভাবিক কিছু না। ফলে এ দলের নিকট এমন অনেক হাদীছ সহীহ প্রমাণিত হয় যা দ্বিতীয় দলের নিকট অগ্রাহ্য বলে গণ্য হয়, একইভাবে প্রথম দলের নিকট বিশুদ্ধ প্রমাণিত হাদীছের অনেকগুলোও অবিশুদ্ধ বলে পরিগণিত হয়। এরাই হচ্ছে প্রকৃত ন্যায়পন্থী দল। [১]
.
বোঝা যাচ্ছে সনদ বিশুদ্ধ হলেই হাদীছ বিশুদ্ধ হয়ে যায় না। ইমাম ইবনু কাইয়্যিম বলেন, “জেনে রাখো! সনদের বিশুদ্ধতা হাদীছ বিশুদ্ধ হওয়ার শর্তসমূহের মধ্যে একটি, কিন্তু সনদ বিশুদ্ধ হলেই হাদীছ বিশুদ্ধ হয়ে যাবে- এমনটা নয়। হাদীছের বিশুদ্ধতা সনদের বিশুদ্ধতা, গোপন ত্রুটির অনুপস্থিতি, শায ও নাকারাতমুক্ততা, রাবী তার চেয়ে বিশুদ্ধ রাবীর বিরোধীতা করে বা বিচ্ছিন্ন কোনো হাদীছ বর্ণনা করবে না- এ ধরণের বিষয়সমূহের সমষ্টির ওপর নির্ভর করে।”[২] তাই সনদ ও মতন উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই হাদীছ পর্যালোচনা করা গভীর বুঝসম্পন্ন আলিমদের কাজ বলে গণ্য হয়ে আসছে। কেউ কেউ এটা করেছেন, কেউ কেউ করেননি, কিন্তু এটা যে বৈধ কাজ এতে বিবেকবান কেউই বিরোধীতা করতে পারে না এবং করেও না।
.
এবার মাওলানা কি বলছেন তা জেনে নেওয়া যাক। তিনি সূরা সাদ-এর ৩৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় পূর্বের আয়াতের সুলাইমান আলাইহিস সালামের আসনের ওপর ফেলে দেওয়া শরীরের ব্যাখ্যা দিতে যেয়ে বিভিন্ন দলের দৃষ্টিকোণ উল্লেখ করার পরে বলেন,
.
“তৃতীয় দলটি বলেন, একদিন হযরত সুলাইমান কসম খান, আজ রাতে আমি সত্তরজন স্ত্রীর কাছে যাবো এবং প্রত্যেক গর্ভে একজন করে আল্লাহর পথের মুজাহিদ জন্ম দেব। কিন্তু একথা বলতে গিয়ে তিনি ইনশাআল্লাহ বলেননি। এর ফলে মাত্র একজন স্ত্রী গর্ভবতী হয় এবং তাঁর গর্ভেও একটি অসমাপ্ত ও অপরিপক্ক শিশুর জন্ম হয়। দাই শিশুটিকে এনে হযরত সুলাইমানের আসনের ওপর ফেলে দেয়। এ হাদীসটি হযরত আবু হুরাইরা (রা ) নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। বুখারী , মুসলিম ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন রাবীর মাধ্যমে এটি উদ্ধৃত করেছেন। বুখারী শরীফেই এ হাদীসটি যেসব রাবীর মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে তার কোনটিতে স্ত্রীদের সংখ্যা বলা হয়েছে ৬০, কোনটিতে ৭০, কোনটিতে ৯০, কোনটিতে ৯৯, আবার কোনটিতে ১০০ও বলা হয়েছে। সনদের দিক দিয়ে এর মধ্য থেকে অধিকাংশই শক্তিশালী এবং রেওয়ায়াত হিসেবে এগুলোর নির্ভুলতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন করা যেতে পারে না। কিন্তু এ হাদীসের বিষয়বস্তু সুম্পষ্টভাবে সাধারণ বিবেক-বুদ্ধির বিরোধী। এর ভাষা বলছে, একথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো এভাবে বলেননি যেভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে। বরং তিনি সম্ভবত ইহুদীদের মিথ্যা ও অপবাদমূলক কিচ্ছা-কাহিনীর কথা উল্লেখ করতে গিয়ে কোন পর্যায়ে একে এভাবে উদাহরণ স্বরূপ বর্ণনা করে থাকবেন এবং শ্রোতার মনে ভুল ধারণার সৃষ্টি হয়ে থাকবে যে, নবী করীম (সা) নিজেই এ ঘটনা বর্ণনা করছেন। এ ধরনের রেওয়ায়াতকে নিছক জোরে লোকদের হজম করাবার চেষ্টা করানো দীনকে হাস্যাস্পদ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই হিসেব কষে দেখতে পারেন, শীতের দীর্ঘমত রাত ও এশা থেকে নিয়ে ফজর পর্যন্ত দশ এগারো ঘন্টার বেশী সময় হয় না। যদি স্ত্রীদের সংখ্যা কমপক্ষে ৬০ জন বলে মেনে নেয়া যায়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায়, সেই রাতে হযরত সুলাইমান আলাইহি সালাম কোন প্রকার বিশ্রাম না নিয়েই অবিরাম ১০ বা ১১ ঘন্টা ধরে প্রতি ঘন্টার ৬ জন স্ত্রীর সাথে সহবাস করতে থেকেছেন। কার্যত এটা কি সম্ভব ৷ আর একথাও কি আশা করা যেতে পারে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বাস্তব ঘটনা হিসেবে একথাটি বর্ণনা করে থাকবেন ৷ তারপর হাদীসে কোথাও একথা বলা হয়নি যে, কুরআন মজীদে হযরত সুলাইমানের আসনের ওপর যে দেহাবয়বটি ফেলে রাখার কথা বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে এ অপরিণত শিশু । তাই নবী করীম (সা) এ ঘটনাটি এ আয়াতের ব্যাখ্যা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন তা বলা যায় না। তাছাড়া এ সন্তানের জন্মের পর হযরত সুলাইমানের ইসতিগফার করার কথা তো বোধগম্য হতে পারে কিন্তু তিনি ইসতিগফারের সাথে সাথে" আমাকে এমন রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করো যা আমার পরে আর কারো জন্য শোভনীয় নয়" - এ দোয়াটি কেন করেছিলেন তা বোধগম্য নয়।”
.
দেখা যাচ্ছে, মাওলানা হাদীছের নকদের ক্ষেত্রে আকলকে মানদণ্ড বানাচ্ছেন। এটাই অনেকের জন্য মাওলানাকে মু’তাযিলাটাইপ বানানোর জন্য হয়ত যথেষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু এটা উসূলী দৃষ্টিকোণ থেকে একটা বৈধ উসূল যে আকলের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে যা জানা যায় তার বিরুদ্ধে হাদীছের বর্ণনা গেলে তার নকদ বা সমালোচনা করা যেতে পারে।
.
শিরাজী হাদীছ সমালোচনার পাঁচটি মূলনীতির মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করেন
.
‘হাদীছ যখন আকলের সাধারণ আবশ্যকতার বিরোধী হবে, তখন জানতে হবে সেই হাদীছ বাতিল। কেননা শরীয়ত আকলের পক্ষে, বিপক্ষে না।’[৩]
.
গাযালী এক্ষেত্রে চারটি মূলনীতির প্রথমেই উল্লেখ করেন,
‘আকল একান্ত আবশ্যকরুপে যা জানতে পারে, পর্যবেক্ষণ, ইন্দ্রিয়, মুতাওয়াতির বর্ণনার বিপরীতে যেই (হাদীছ) জানা যাবে (তা সমালোচনাযোগ্য বা বাতিল)।’[৪]
.
শায়খ আব্দুল ফাত্তাহও অ-তাবিলযোগ্যভাবে কুরআনের বিপরীতে, অন্যান্য সহীহ হাদীছের বিপরীতে, আকল, পর্যবেক্ষণ, ইন্দ্রিয়, নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের বিপরীতে যাওয়াটাকে হাদীছের মতন সমালোচনার মানদণ্ড হিসেবে উল্লেখ করেছেন।[৫]
.
তাই আকল যে বিষয়গুলোকে জরুরীভাবে জেনে থাকে এ বিষয়ের বিপরীতে গেলে হাদীছ নকদ (এমনকি বাতিলকরণের) সুযোগ আছে। কিন্তু এক্ষেত্রে অবশ্যই ত্বরাপ্রবণতা বর্জন কাম্য এবং সাথে সাথে যৌক্তিক সমন্বয়ের চেষ্টা করার পরে সিদ্ধান্তে আসা উচিত।
.
আকল সাধারণভাবেই বুঝতে পারে যে, কোনো মানুষই এত কম সময়ের মাঝে এত এত নারীর সাথে মিলন করতে পারে না। এ বিষয় অভিজ্ঞতা ও আকলের সংমিশ্রণেই মানুষ জেনে থাকে। এতটুকুতে কোনো বিবেকবান-ই মতবিরোধ করতে পারে না। এটা মানুষের শারিরীক গঠন, শক্তিমত্তার সাথে জড়িত; এ দৃষ্টিকোণ থেকে এটা আকলের বিপরীতে। আর শরীরের দিক থেকে নবীরা মানুষ বৈ অন্য কিছু ছিলেন না, এটা কুরআনের অকাট্য প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত। আর মানুষের শরীরের সাধারণ ক্ষমতার বাহিরে তাঁরাও যেতে পারতেন না। মাওলানা এ দৃষ্টিকোণ থেকেই সনদের দিক থেকে হাদীছের বিশুদ্ধতা মেনে নিলেও দিরায়াতের দিক থেকে হাদীছটির ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। দিরায়াতে হাদীছের উসূলের দিক থেকে এই উসূল ঠিক আছে, ইনশাআল্লাহ।
.
তবে বলা যেতে পারে এটা সুলাইমান আলাইহিস সালামের মুযিজা ছিলো। হতে পারে, তবে মুযিজা সাধারণত রিসালাত বা নবুওয়্যাতের প্রমাণ প্রতিষ্ঠার জন্য আসে, এর সাথে স্ত্রী মিলনের কোনো সম্পর্ক আছে বলে তো মনে হয় না। হতে পারে এটা বারাকাহ। সালিহীনদের ক্ষেত্রেই যখন বারাকাহ প্রমাণিত, তখন নবীদের ক্ষেত্রে না হওয়ার তো কারণ নেই। নির্ভরযোগ্য সনদের হাদীছে পাওয়া যায় দাউদ আলাইহিস সালাম অতি অল্প সময়ে যাবুর কিতাব পড়ে ফেলতেন। তো এটা সুলাইমান আলাইহিস সালামের বারাকাহ হতেই পারে। আল্লাহু আ’লাম। প্রশ্ন আসতে পারে, বুখারী-মুসলিমের হাদীছকে কীভাবে সমালোচনা করা সম্ভব? অনেক আলিমই সমালোচনা করেছেন বুখারী-মুসলিমের। তারপরেও উম্মাহ সনদের দিক থেকে বুখারী ও মুসলিমের উচ্চস্থান স্বীকার করে আসছেন যুগে যুগে। তারপরেও মতনের দিক থেকে বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হাদীছের সমালোচনা হতে পারে। এক্ষেত্রে মুসলিমে বর্ণিত ‘হাদীছে তুরবা’ এর উদাহরণ তো হাদীছের ছাত্রদের জানারই কথা। এছাড়াও বুখারী মুসলিমের হাদীছের মতনের দিক থেকে সমালোচনার উদাহরণ রয়েছে আরও। আর মাওলানা হাদীছের সনদের দিক থেকে প্রশ্ন করেননি, করেছেন মতনের দিক থেকে। তিনি শ্রোতাদের ওয়াহাম বা ভ্রান্তিকে দায়ী করেছেন। রাবীদের দ্বারা এহেন ভুল হওয়া সম্ভব। সাহাবীদের দ্বারাও হাদীছ বুঝতে ভুল হয়েছে, এরকম উদাহরণ আছে অনেক।
.
কিন্তু হাদীছের ব্যাখ্যা যাই হোক, এ হাদীছের সমালোচনার কারণে মাওলানাকে হাদীছ অস্বীকারকারী বলার উপায় নেই। তাঁর নকদে মতনের উসূল হয়ত ঠিক আছে, কিন্তু এক্ষেত্রে হয়ত সেই প্রয়োগটা সঠিক হয়নি। এখানে এ্যাকাডেমিকভাবে উনার খণ্ডন হতে পারে, কিন্তু হাদীছ অস্বীকারকারের অভিযোগ করা যেতে পারে না। আল্লাহু আ’লাম।
.
.
[১] তাওযীহুন নাযর ইলা উসূলিল আছার, পৃঃ ১৯০-২০৮; বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে এখানে। সংক্ষেপে দেখতে চাইলে ড. আব্দুল্লাহ মা’রুফী, হাদীছ অওর ফাহমে হাদীছ, পৃঃ ৩৫৪-৫৫ পৃষ্ঠা।
[২] ড. আবুল্লাইছ খায়রাবাদী, ‘আল-মানহাযুল মুহাদ্দিছীন ফি তা’আমুল মাআ মুতুনুল হাদীছ’
[৩] তাওযীহুন নাযর, পৃঃ ২০৬
[৪] ঐ,
[৫] আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ, লামাহাত মিন তারিখিস সুন্নাহ, পৃঃ ৮৭
~Hossain Shakil

পঠিত : ৪০২ বার

মন্তব্য: ০