Alapon

বাংলাদেশ কি পারমানবিক বোমা তৈরির কাছাকাছি চলে গিয়েছিল? কয়েকটি ইঙ্গিত ও তথ্য:::



বাংলাদেশ কি পারমানবিক বোমা তৈরির কাছাকাছি চলে গিয়েছিল? কয়েকটি ইঙ্গিত ও তথ্য:::

বাংলাদেশ কি কখনো পারমানবিক বোমা তৈরি বা পাওয়ার কাছাকাছি চলে এসেছিল? কার কাছ থেকে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল? কেন সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল ও পর্দার আড়ালে কি হয়েছিল?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ডকুমেন্ট বা নথিপত্রের ভিত্তিতে কখনোই হয়তো প্রমান করা যাবে না। কোনদিন হয়তো এদেশের মানুষ ওই প্রচেষ্টাকে পিছন থেকে ছুড়ি মারার স্যারোটিয়ারদের নাম,পরিচয় জানতে পারবে না।

তবে, বিদেশী পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট ও আনুষাঙ্গিক বিষয়াদি বিবেচনা করে বলা যায় যে একসময় বাংলাদেশ পারমানবিক ক্ষমতা অর্জনের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছিল। যদি পঞ্চম বাহিনী তা নস্যাত করে না দিতো তাহলে হয়তো নব্বই দশকেই বোমা বাংলাদেশের ভান্ডারে জমা হতো।

১৯৯৩ সালের এপ্রিলে ভারতের সানডে পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়-
‘‘ সৌদি আরব,সংযুক্ত আরব আমিরাত আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের সাথে এককভাবে পাকিস্তানের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। সময় ও সুযোগ মতো পাকিস্তান এদের অথবা অন্য কোন দেশকে পারমানবিক ছত্রছায়া দিতে পারবে।’’

উল্লেখ্য ভারতের পত্রিকায় রিপোর্টি প্রকাশিত হয় এটম বোমা তৈরিতে বাংলাদেশের সকল প্রচেষ্টা নস্যাত করার পর। এটা এমন সময়ে ছাপা হয় যখন প্রায় সমান্তরাল প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ভয়াবহ রকম হিংস্র আন্দোলন, ভাঙ্গচুর শুরু করা হয়। একটি বিশেষ ‘নির্মুল’ নামের সংগঠন দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের নাম করে। একইসাথে শুরু হয় তসলিমা ইস্যু নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড়, মোল্লাদের উগ্রবাদী তৎপরতা...এককথায় পাগলপাড়া দশা হয় বাংলাদেশের।

মনে পড়ে সেসব দিনের কথা?
ওই একই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে প্রকাশিত গালফ নিউজেও অনুরূপ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল যাতে বলা হয়েছিল পাকিস্তানের সহায়তায় বাংলাদেশ পারমানবিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারে।

অনেকেই ধারণা করেছিলেন যে ১৯৯৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি ‘বন্ধু রাষ্ট্রের’ সহযোগিতায় পারমানবিক ক্ষমতা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে চলে আসবে। ততোদিনে ভারতের সাথে ‘মৈত্রি ও সহযোগিতা চুক্তির’ মেয়াদও ১৯৯৭ সালে এসে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু ওই সময় এদেশে কি হয়েছিল তা সবাই জানেন। কেন হয়েছিল তার কি বিশদ কোন ব্যাখ্যা প্রয়োজন আছে?
বাংলাদেশের পারমানবিক ক্ষমতা বা সক্ষমতা অর্জন ইস্যুতে আমি আমার দীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে বহুজনের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছি। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকায় দেশের কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সাংবাদিকের সাথে ঘনিষ্ঠতা অর্জন করতে পেরেছি।

এছাড়া একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট ২০০২ সালে তার বাসায় দুপুরের খাবার দাওয়াত দেন। সেখানে এক প্রশ্নের উত্তরে এনিয়ে হ্যা সূচক মন্তব্য করেন। তিনি এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে রাজী হননি। এখনো ওখানে উপস্থিত একজন সিনিয়র সাংবাদিক জীবিত আছেন যিনি এর স্বাক্ষ্য দিতে পারবেন।

১৯৯৭ সালে কোন একটি দৈনিক পত্রিকার প্রথিতযশা সম্পাদক আমার সাথে এনিয়ে আলাপকালে স্পষ্ট করেই বলেছিলেন যে বাংলাদেশ পারমানবিক বোমা পাওয়ার চেষ্টা করেছিল এবং বিদেশি একটি দেশের সহায়তায় তা অর্জনের কাছাকাছি চলে গিয়েছিল। তিনি রাষ্ট্রের উচ্চ পর্য়ায়ে ঘনিষ্ঠ ছিলেন।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা এনিয়ে কিছু তথ্য দিয়েছিলেন তারা ছিলেন সিজনড ইন্টেলিজেন্স অফিসার। গোয়েন্দা জীবনের বিভিন্নি পর্য়ায়ে তারা বিদেশেও অফেন্সিভ ইন্টেলিজেন্স তৎপরতা চালিয়েছেন যদিও তখন বাংলাদেশের সক্ষমতা ছিল আজকের চেয়ে সীমিত।

আমি যাদের সাথে এনিয়ে কথা বলেছি তাদের সবার সাথেই ওথ বাউন্ড তাদের দেয়া তথ্যাদি প্রকাশ না করতে। এটা সম্ভবও নয়। বিশাল পঞ্চম বাহিনী সমৃদ্ধ একটি দেশ কখনোই হয়তো পারমানবিক ক্ষমতা অর্জন করতে পারবে না আর। সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে।

গত ১০ অক্টোবর পাকিস্তানের পরমানু বোমার জনক ড. আব্দুল কাদির খানের মৃত্যুর পর উল্লেখিত বিষয়টি আবার আমার মনে আসে। হতাশার মাঝ দিয়েই আরো হতাশ করে দেয়।

১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি সি-১৩০ বিমানে করে বিশেষ আয়োজনের মধ্য দিয়ে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে তৈরি হেভি ওয়াটার পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নেয়া হয়।

পাকিস্তান আমলে এটমিক এনার্জি কমিশন এমনভাবে সজ্জিত করা হয়েছিল যাতে কিছু মডিফিকেশন করে তাতে পারমানবিক বোমা বানানোর দিকে এগিয়ে যাওয়া যায়।

যাহোক, বাংলাদেশ হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জিয়া চীনের সাথে সামরিক সম্পর্ক জোরদার করে একপর্য়ায়ে পারমানবিক ক্ষমতা অর্জনের চিন্তা করেন। তখন দেশের একটি অঞ্চলে ইউরেনিয়াম আছে বলে পাকিস্তান আমলে চালানো জরিপ থেকে জানা যায়। এনিয়ে তার খুব কাছের একজন ২০০৭ সালে আমাকে স্পষ্ট করে কয়েকটি তথ্য দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হওয়ার পর তা কিছুদিনের জন্য থমকে গিয়েছিল। জেনারেল এরশাদ ওই পরিকল্পনা ঠিকই এগিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু ওই তথ্য জানতেন এমন কোন বা কয়েকজন কর্মকর্তা সব তথ্য একটি দেশের গুপ্তচর সংস্থাকে জানিয়ে দেন।

একসময় বাংলাদেশ মরাত্মক চাপের মুখে সব পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এখানে উল্লেখ করতে হয় যে, ভারত প্রথম পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ১৯৭৪ সালে। শান্তির জন্য পারমানবিক ক্ষমতা ছিল তাদের শ্লোগান। তখন কেবল দেশ ভেঙ্গে যাওয়ায় পাকিস্তান অর্থনৈতিক ও অন্যান্যা খাতে বেশ পিছিয়ে পড়েছে যদিও ১৯৬০ ও ৭০ দশকে পারমানবিক খাতে পাকিস্তান কিছুটা সমানতালে চলছিল।

যাহোক, তড়িঘড়ি করে তারা তাদের কাজ শুরু করে ও ১৯৮০’র দশকের মধ্যে পারমানবিক বোমা তৈরিতে সক্ষম হয়। কিন্তু এসবই থাকে গোপন। ভারত ভালো করেই জানতো পাকিস্তানের হাতে বোমা আছে। জেনারেল জিয়াউল হক একবার সীমান্ত উত্তেজনার সময় ক্রিকেট কূটনীতির নামে ভারতে গিয়ে রাজীব গান্ধীকে ব্যক্তিগতভাবে হুশিয়ার করে দিয়ে এসেছিলেন।

ওই যুগে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ ছিল না। তাই শোরগোল কম ছিল। সেসময় পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে গেলে হয়তো ঠিকই আমরা পারমানবিক বোমার অধিকারী হয়ে যেতাম। এখন যা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে।

By -Abu Rushd
সাবেক সেনাকর্মকর্তা এবং
ডিফেন্স জার্নালের সম্পাদক!

পঠিত : ৪১৬ বার

মন্তব্য: ০