Alapon

ইমাম শাফিয়ি: কবি থেকে যেভাবে যুগশ্রেষ্ঠ আলিম হয়ে উঠলেন...



কৈশোরেই কুরআন হিফজ করেন ইমাম শাফিয়ি রাহ.। তারপর মুয়াত্তা মালিক হিফজ করেন। মুয়াত্তা মালিক হিফজ করার পর ইমাম শাফিয়ি কাব্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন। কাব্য চর্চার প্রয়োজনে তিনি সারাদিন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়াতে থাকেন। এক পর্যায়ে তিনি দিনের অধিকাংশ সময় বেদুঈনদের সাথে কাটাতে লাগলেন। কারণ, বেদুঈনদের জীবন ছিল বৈচিত্র্যময়। আর সেই বৈচিত্র্যতা কাব্য রচনায় রসদ যোগাতো এবং উৎসাহ দিতো।

কাব্য ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ থেকেই একদিন ইমাম শাফিয়ি মুসলিম ইবনু খালিদ আয-যানজির দরবারে গমন করেন। মুসলিম ইবনু খালিদ ছিলেন আরবি ভাষা, সাহিত্য ও ব্যাকারণের উস্তাদ। নিজের সাহিত্য প্রতিভাকে আরও শানিত করার লক্ষ্যেই ইমাম শাফিয়ি তাঁর কাছে গিয়েছিলেন।

ইমাম শাফিয়ি মুসলিম ইবনু খালিদের কাছে গেলে, তিনি প্রথমেই জিজ্ঞেস করেন-

- ‘ছেলে আমার, তোমার বাড়ি কোথায়?’
- ‘মক্কায়।’
- ‘মক্কার কোন এলাকায়?’
- ’খাইফ উপত্যকায়।’
- ‘তোমার গোত্রের নাম কী?’
- ‘বনু আবদে মানাফ।’

এরপর মুসলিম ইবনু খালিদ বললেন, ‘সুবহানআল্লাহ! আল্লাহ তোমাকে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করুন। তবে একটি কথা, তুমি যদি নিরেট ভাষা ও সাহিত্য ছেড়ে ফিকহ অর্জনে মনোনিবেশ করো এবং এক্ষেত্রে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে পরিশ্রম করো, তাহলে সেটা হবে সোনায় সোহাগা।’

আর একদিনের ঘটনা। কাব্য চর্চার প্রয়োজনে ইমাম শাফিয়ি একদিন দূর এক গ্রামে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় এক বেদুইন এসে ইমাম শাফিয়িকে জিজ্ঞেস করে, ‘আচ্ছা বলুন তো, কোনো নারী যদি আজ হায়িযগ্রস্থ হয়ে আগামীকালই পবিত্র হয়ে যায়, তাহলে তার বিধান কী হবে?’ জবাবে ইমাম শাফিয়ি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার জানা নেই।’সেই বেদুইন তখন বলে, ‘বৎস, নফলের পূর্বে ফরজ অর্জন করতে হয়।’

আর একদিনের ঘটনা। ইমাম শাফিয়ি মক্কার বাইরে কোথাও যাচ্ছিলেন। যেতে যেতে তিনি আরবের তৎকালীণ বিখ্যাত কবি লাবিদের একটি কবিতা আবৃত্তি করতেছিলেন। আবৃত্তি শুনে ‘হাজাবা’-এর এক লোক ইমাম শাফিয়ির পিঠ চাপড়িয়ে বলেন, ‘বৎস, তুমি কুরাইশ বংশের ছেলে। সেইসাথে তুমি ইবনুল মুত্তালিবের বংশধর। কিন্তু তুমি এতো উচ্চ বংশ-মর্যাদা ও দ্বীন দুনিয়া ত্যাগ করে সামান্য শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছ! কবিতা কি খুব মহান জিনিস? খুব বড়ো মাপের কবি হলে বড়োজোর একজন শিক্ষক হতে পারবে। এতে কি তোমার বংশীয় ঐতিহ্য রক্ষা পাবে? তুমি বরং এসব বাদ দিয়ে ফিকহ অর্জনে মনোনিবেশ করো। ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ তোমাকে সম্মানিত ও মহিমান্বিত করবেন।’

এই ঘটনার পরপরই ইমাম শাফিয়ি কার্ব চর্চা থেকে মুখ ফিরিয়ে ফিকহ শিক্ষা অর্জন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর তিনি মক্কায় ফিরে সুফইয়ান ইবনু উয়াইনার সাহচর্য গ্রহণ করেন এবং তার থেকে হাদিস লিপিবদ্ধ করেন। এভাবেই ইমাম শাফিয়ি কবি থেকে যুগশ্রেষ্ঠ আলিম হয়ে ওঠেন।

তথ্যসূত্র: ইমাম শাফিয়ি: জীবন ও কর্ম

পঠিত : ২৯৫ বার

মন্তব্য: ০