Alapon

ইসলামি রাষ্ট্র এবং কিছু কথা...



ধরেন একটা ইসলামি রাষ্ট্র। সেখানে কি এভাবে একটা ঘটনার জন্যে অন্য এলাকায় ভিন্ন ধর্মের পূজামণ্ডপে হামলা করতে দিত?

এখানে অনেক আলাপ আছে। এ উপমহাদেশে বৃটিশদের আগে কখনো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল না। বৃটিশরা আসলো। আমাদের সভ্য (?) বানালো। এবং সেই সভ্য হওয়ার পর থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হলো।

ঐতিহাসিকভাবে সাধারণ মানুষের দাঙ্গায় উপকার হয় এলিট শ্রেণির। বিশ্বাস হয় না? ভারত ভাগের সময়ে পুরো ভারতবর্ষে নিম্নশ্রেণীকে জাতে ওঠানোর হিড়িক শুরু হয়। হিন্দু মহাসভা অস্পৃশ্যকে স্পর্শ করা থেকে শুরু করে ধর্মীয় অধিকার প্রদান করে। তাদের দেখাদেখি কংগ্রেসও এ পথে নামে। সেই নিম্নশ্রেণীর জাতে ওঠা হিন্দু ও আতরাফ মুসলমানরা দাঙ্গায় শরিক হয় দ্বিগুণ উদ্যোমে। যার ফায়দা লুটে এলিটরা। ভাগ হয় রাষ্ট্র। ক্ষমতায় যায় পণ্ডিত, মুখার্জি, ব্যানার্জিরাই। ক্ষমতায় যায় খান, চৌধুরীরাই। ইতিহাস তার সাক্ষী।

আজকের বাংলাদেশে যেসব দাঙ্গা হচ্ছে, এগুলি কি পরিকল্পিত নয়? এ দাঙ্গায় লাভ ক্ষতিটা কার বেশি হয়? এলিটদেরই।

তবে ফারাক অন্য জায়গায়। আগেকার মুসলিম এলিটরা স্বাধীন ছিল। বর্তমান মুসলিম এলিটরা আরএসএসের কাছে পরাধীন ও জিম্মি।

ইসলাম স্বাভাবিক সময়ে অপরাধী ছাড়া কাউকে হামলা করতে অনুমতি দেয় না। যুদ্ধাবস্থা ভিন্ন। এখন এ সময়টাকে আপনি যেভাবেই দেখেন, নিরীহ কাউকে আপনি হামলা করতে পারেন না। হ্যাঁ, সে যদি অপরাধ করে সেটা ভিন্ন আলাপ। ভিন্ন ধর্মের উপাস্যকে গালি দিতে নিষেধ আছে কুরআনেই। ভাঙচুর তো বহুদূর। অতএব শুধুমাত্র কুমিল্লার একটা ঘটনা নিয়ে সারাদেশের হিন্দুদের উপর বা পূজা মণ্ডপের উপর হামলা করা ইসলাম সম্মত নয়। এতটুকু তো সত্য। সবাই বলছেও।

কিন্তু মণ্ডপে কুরআন অবমাননার বিচার হয়নি। প্রশ্ন হতে পারে, সময় পেয়েছে কোথায়। উত্তরে অতীত ঘটনাগুলি দেখা যায়। এ কিছুদিন আগে নাসিরনগরে হিন্দুপাড়ায় হামলা করা দুজন নৌকার নমিনেশন পেয়েছিল। সমালোচনায় সেটা সরাতে বাধ্য হয়েছিল। আইনের শাসনের যদি এ অবস্থা হয় তবে জনগণ সে আইনের শাসনে বিশ্বাস রাখবে কীভাবে?
আইনের শাসন নিশ্চিত না করা গেলে এসব বিশৃঙ্খলা রোখা সম্ভব নয়।

দাঙ্গার সময়ে প্রতিরোধ হিশেবে পাল্টা হামলা করতে হয়। কিন্তু তাই বলে শিশু হত্যা করতে হবে? এ দাঙ্গা দমনে প্রশাসন কি ব্যর্থ নয়? কোথাও জনগণকে শান্ত থাকতে বলতে শুনিনি। হুমকি ধমকি ও গোলাগুলি। এ ব্যর্থতার দায় প্রশাসনকেই নিতে হবে।

দাঙ্গা চিরকাল এলিট শ্রেণিকে সার্ভ করে। মাঝখানে মারা যায় নিরীহ মানুষ। এই নিরীহ হওয়া থেকে বের হয়ে আসতে হবে। একজনের অপরাধে অন্যজনের উপর হামলা করা যাবে না। তেমনি ঘটনারগুলির সুষ্ঠু বিচার না করে দাঙ্গা জিইয়ে রেখে ফায়দা তোলার নিকৃষ্ট পাঁয়তারা ছেড়ে দিয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নাহয় এ দেশের কল্যাণ নেই।

- হাবিবুর রহমান

পঠিত : ২৮৯ বার

মন্তব্য: ০