Alapon

যৌতুকের নব পদ্ধতি এবং কিছু কথা...



বিয়ের পূর্বে চুক্তি করে কনের পরিবারের নিকট থেকে অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নেওয়াটাকেই আমরা যৌতুক হিসেবে জানি। প্রকৃত পক্ষে যৌতুক এতটুকুর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বিয়ের সময় কিংবা পরে, চুক্তি ছাড়া অথবা চুক্তি করে, চেয়ে কিংবা চাওয়ার ভান করে কনেপক্ষের কাছ থেকে.... কোনোকিছু নেয়াটাও যৌতুকের অন্তর্ভুক্ত। যৌতুক অল্প হোক বেশি হোক, মূল্যবান হোক কিংবা স্বল্পমূল্যের হোক তা হারাম। যৌতুক থেকে বেঁচে থাকা আমাদের সকলের ঈমানি দায়িত্ব।

কিন্তু দুঃখজনক সত্য যে, হালাল হারামের তোয়াক্কা না অধিকাংশ মানুষ যৌতুক নিচ্ছে এবং যৌতুক নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে। বিয়ে পরবর্তী সময়ে চেয়ে কিংবা চাওয়ার ভান করে নেয়া সম্পদকে যৌতুক হিসেবে দেখছে না। বরং শ্বশুরবাড়ি থেকে এভাবে জিনিসপত্র নেয়াকে নিজেদের অধিকারের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন চক্ষুলজ্জা এড়াতে কষ্ট করে হলেও জামাইবাবুর আবদারগুলো পূরণ করছে। এভাবে সমাজের সব ধরনের মানুষের মাঝে নামে বেনামে যৌতুক শিকড় গেড়ে বসেছে।

একসময় বাবা মেয়েকে স্বর্ণ ও রৌপ্যের অলংকার দিতেন আদর করে। কিন্তু এটিও আজকাল যৌতুকের রূপান্তরিত হয়েছে। বিয়ে ঠিক করার সময় কথা ওঠে মেয়েকে কতখানি গয়না দেয়া হবে। গয়না কম হওয়ার কারণে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার ঘটনাও এখন অতি পরিচিত বিষয়। এর অর্থ হলো, মেয়েকে নয় অলংকারও দেয়া হচ্ছে জামাইকে।

বিভিন্ন কারণবশত বিয়ের সময় চুক্তি করে অর্থ সম্পদ আদায়ের প্রথা কিছুটা কমে গেছে। কিন্তু চুক্তি ছাড়াই কয়েক লাখ টাকা কিংবা তার সমমূল্যের জিনিসপত্র দিতে হচ্ছে। যেন বিয়ের অঘোষিত চুক্তিই হলো- একটা আকর্ষণীয় মোটরসাইকেল, ছেলের ঘর সাজাবার জন্য ফার্নিচার থেকে শুরু করে বাসনকোসন- তৈজসপত্র সবকিছু দেয়া। এজন্য অনেকেই বিনা যৌতুকে বিয়ে করার পর অপেক্ষায় থাকে কবে শ্বশুরবাড়ি থেকে ট্রাকভর্তি মালামাল আসবে। বিয়ে পরবর্তী সময়ে ছেলে এবং তার অভিভাবকেরা যদি নিজেদের আশা অনুপাতে জিনিসপত্র না পায়, তাহলে আক্ষেপের সুরে বলতে থাকে - বিয়ের সময় না চেয়ে বড় ভুল করেছি। তখন চাইলে আজ এ অবস্থা হতো না।

বিবাহ পরবর্তী সময়ে ছেলে পক্ষ একেবারে নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেয়। মাসে মাসে, তিথিতে তিথিতে জামাই এবং তার আত্মীয় স্বজনকে দাওয়াত করে আনতে হয়। মোবাইল ফোনে দাওয়াত যথেষ্ট নয়, শ্বশুরের ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন, সশরীরে গিয়ে দাওয়াত দিয়ে আসতে হয়, অন্যথায় মেয়ের ওপর চলে নানারকম মানসিক জুলুম ও নির্যাতন। বিশেষ করে শীতের মৌসুমে ঘটা করে জামাই বাবু তাদের আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত দিতে হয়।

অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে - এসকল আয়োজনে অনেকটা বাধ্য করা হয় কনেপক্ষকে। হরেক রকম পিঠাপুলি আর মিষ্টান্নের আয়োজন করে তাদের মন যোগাতে হয়। বিদায়কালে সকলকে দিতে জামাকাপড়। এক্ষেত্রে থাকতে চূড়ান্ত সচেতন। উচ্চমূল্যের কিংবা দৃষ্টিনন্দন পোশাক না হলে হলে মেয়েকে কটুবাক্য শুনতে হয় সারাজীবন। জামাই শ্বশুরালয়ে থাকালীন সময়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পর্যাপ্ত চেষ্টা করে খাবার ভালো করতে। রকমারি খাবারের সমাবেশ ঘটায় জামাইয়ের টেবিলে। অকস্মাৎ খাবার খারাপ হলে ভ্রূ কুঁচকায় অসংখ্য জামাইবাবু।

একাধিক অভিভাবকের সাথে আলোচনা করে জানতে পেরেছি, তারা বিয়েপরবর্তী অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। বিনা যৌতুকে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পরও যে একের পর এক সামনে আসে খরচের পালা। এই বিষয়টি তাঁদের সর্বদা ভাবায়। লক্ষ করুন, নিম্ন আয়ের অভিভাবকদের অবস্থা কতটা শোচনীয়। আত্মীয়তার সম্পর্কে জড়াবার পরও যদি তাদের সুখ দুঃখ না বুঝি তাহলে সত্যি সত্যি আমাদের জন্য এক বালতি সমবেদনা।

একটু সচেতন হলেই অনেক অপচয় ও অপব্যয় থেকে বাঁচা সম্ভব। সূরা আল বাকারায় মহান আল্লাহর দ্ব্যর্থহীন উচ্চারণ, “তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না”। এসকল সমস্যা সমাধানে ছেলে এবং ছেলের অভিভাবকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাঁরা যদি নিজেরা কনে পক্ষের কাছে দাবি দাওয়া উপস্থাপন না করেন এবং নিজেদের আত্মীয় স্বজনদের বোঝাতে সক্ষম হন, তাহলে খুব সহজেই এসকল কুপ্রথা দূর করা সম্ভব।

অবশ্য মেয়ের অভিভাবকদেরও আছে এক দায়িত্ব। তারা কাবিন ব্যবসায়ী সেজে লাখ লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণে বাধ্য করবেন না। ছেলের সামর্থ্য অনুযায়ী দেনমোহর নির্ধারণের চেষ্টা করবেন।

পরিশেষে সম্মানিত জামাইবৃন্দকে বলতে চাই, অতিরিক্ত ভোজের পেছনে না পড়ে শ্বশুরবাড়ির একজন স্থায়ী সদস্যের মতো হয়ে যান। নিজেরাও তৃপ্তি সহকারে খেতে পারবেন শ্বশুরবাড়ির লোকজনও পেরেশানি থেকে মুক্তি পাবেন।

~Mokarram_Hasan

পঠিত : ৪০০ বার

মন্তব্য: ০