Alapon

ইমাম আহমাদ: এক আত্মমর্যাদাশীল মানুষ...



হঠাৎ করেই ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বলকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল ইমাম আহমাদকে একদমই দেখা যাচ্ছে না। তাঁকে খুঁজে না পেয়ে তাঁর সাথীরা চিন্তিত হয়ে পড়ল। এমন সময় কেউ একজন এসে বলল, ‘ইমাম আহমাদ তাঁর বাড়িতেই অবস্থান করছেন!’

এ সংবাদ পাওয়া মাত্রই ইমাম আহমাদের সাথীরা তাঁর বাড়িতে গেলেন। বাড়িতে গিয়ে দেখলেন, ইমাম আহমাদ দরজা বন্ধ করে ভিতরে বসে আছেন। তখন উপস্থিত সাথীরা ইমাম আহমাদকে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে বললেন। তখন ইমাম আহমাদ নিজের অপারগতা প্রকাশ করে বললেন, ‘আমি বাহিরে আসতে পারব না। কারণ, চোর আমার জামাকাপড়সহ সমস্তু কিছু চুরি করে নিয়ে গেছে!’

এ কথা শুনে ইমাম আহমাদের সাথীদের মন খারাপ হয়ে গেল। তখন উপস্থিতদের একজন বলল, ‘আমি আপনাকে কিছু মুদ্রা হাদিয়া দিতে পারি। হাদিয়া না নিলে ঋণ হিসেবেও নিতে পারেন।’

কিন্তু ইমাম আহমাদ হাদিয়া বা ঋণ কোনোটাই গ্রহণ করলেন না। তিনি বললেন, ‘আমি হাদিয়া নিতে পছন্দ করি না, আর ঋণ ভয় পাই।’

এরপর সেই ব্যক্তি বললেন, ‘ঠিক আছে, তাহলে আপনি আমার এই বইয়ে একটা অনুলিপি লিখে দিন। এই অনুলিপি লিখে দেওয়ার বিনিময় হিসেবে আমি মুদ্রা দিতে চাই।’
তখন ইমাম আহমাদ রাজি হলেন। অনুলিপি লিখে দেওয়ার পর ইমাম আহমাদ বললেন, ‘এই মুদ্রা দিয়ে আমার জন্য একটি পাজামা আর একটি চাদর কিনে আনুন!’
ঘটনাটি ইমাম যাহাবি রাহ. তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণনা করেন।

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহ.-এর জীবন জুড়ে এমন শত শত ঘটনা রয়েছে।
একবার ইমাম আহমাদ রাহ. শিক্ষা অর্জনের জন্য সূদুর ইয়ামানে শাইখ আব্দুর রাজ্জাকের দরবারে গমন করেন। সেখানে অবস্থান করার সময় ইমাম আহমাদের সমস্ত মুদ্রা ফুরিয়ে যায়। তখন ইমাম আহমাদের এক বন্ধু তাকে কিছু মুদ্রা হাদিয়া দিতে চান। কিন্তু ইমাম আহমাদ হাদিয়া নিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর সেই বন্ধু তাঁকে ঋণ দিতে চান। কিন্তু ইমাম আহমাদ ঋণ নিতেও অস্বীকৃতি জানান। এরপর ইমাম আহমাদ পাজামার ফিতা বুনে তা ইয়েমেনের বাজারে বিক্রি করে নিজের হাত খরচের ব্যবস্থা করেন।

এরপর ইয়েমেন থেকে ফেরার সময় তিনি ওয়াসিত শহরে ইয়াজিদ ইবনে হারুনের কাছে যান। তার সান্নিধ্যে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন। সেখানে অবস্থান করার সময় পুনরায় ইমাম আহমাদের সমস্ত টাকা ফুরিয়ে যায় এবং তিনি ভয়াবহ আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হন। একদিন ইমাম আহমাদের এক সহপাঠি ইয়াজিদ ইবনে হারুনের কাছে ইমাম আহমাদের আর্থিক সংকটের কথা খুলে বলেন। তখন ইয়াজিদ ইবনে হারুন ইমাম আহমাদকে ২০০ মুদ্রা হাদিয়া প্রদান করেন। যথারীতি ইমাম আহমাদ হাদিয়া নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন, ‘আমি অভাবগ্রস্থ মুসাফির হতে পারি; কিন্তু তাই বলে অন্যের দান-দক্ষিণা গ্রহণ করতে পারি না।’

আর একবারের ঘটনা। ইমাম আহমাদ রাহ. যে এলাকায় বসবাস করতেন, সেখানকার আমির ইসহাক ইবনু ইবরাহিম ইমাম আহমাদকে ইফতারের দাওয়াত দিতে চাইলেন। তাই তিনি নিজের খাদেমকে বললেন, ‘যাও তো, ইমাম আহমাদ সাধারণত ইফতারে কী খান, একটু জেনে আসো। আমি তাঁর রুচিসম্মত ইফতারের ব্যবস্থা করতে চাই।’

আমির ইসহাক ইবনু ইবরাহিমের খাদেম গিয়ে দেখলেন, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল মাত্র দুটি রুটি আর একটি শসা দিয়ে তৃপ্তি নিয়ে ইফতার করছেন। এ কথা যখন আমির ইসহাস ইবনু ইবরাহিমকে বলা হল, তখন তিনি বললেন, ‘এই সামান্য খাবার দিয়ে যিনি তৃপ্তি নিয়ে ইফতার করেন, তিনি কিছুতেই আমাদের দাওয়াত গ্রহণ করবেন না।’

আমাদের ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বল রাহ. যেমন জ্ঞানী ছিলেন, তেমনই ছিলেন আত্মমর্যাদাশীল মানুষ। আজকের আলিমদের মাঝে হয়তো জ্ঞান এখনও অবশিষ্ঠ রয়েছে, কিন্তু আত্মমর্যাদা আর অবশিষ্ঠ নেই। কতক আলিম তাদের আত্মমর্যাদা অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে। যার কারণে, তাদের ইলম আর মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। আর আত্মমর্যাদাশীল ইমামদের জ্ঞান যুগের পর যুগ ধরে মানুষদের কল্যাণের পথ দেখাচ্ছে।

পঠিত : ২৮৪ বার

মন্তব্য: ০