Alapon

৭১ থেকে বর্তমান : আওয়ামীদের জঙ্গীপনা এবং ইসলামপন্থীদের হালহকিকত



হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন কারা দেয়? কারা আলিমদের গ্রেফতার করে, ফাঁসি কারা দেয়? ১৯৭১ সালে যারা অবাঙালি নিরিহ বিহারিদের হত্যা করেছে, তারা-ই। আর এসব দোষ এখন যেভাবে জামায়াত-বিএনপির ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে, তদ্রূপ '৭১-এর বিষয়টিও তেমন। আওয়ামী লীগের পাণ্ডারা সারাদেশে অস্থিতিশীল আর অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষদেরকে পর্যন্ত হত্যা খুন এবং ধর্ষণ করে খালবিল নদীতে ভাসিয়ে দিতো। এরপর পাকিস্তান ভেঙে পূর্ব পাকিস্তান যখন আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে ভারতীয় কা.ফি.রদের তাবেদারে পরিণত হয়েছে, তখন সব দোষ গিয়ে চাপিয়ে দিলো ইসলামপন্থীদের ওপর, বিশেষত জামায়াতে ইসলামীর ওপর।
১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের জঙ্গীরা পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের মধ্যে এমন ধারণা সৃষ্টি করে দেয় যে, পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের শত্রু। তারা বাংলাদেশকে সমর্থন করতে পারে না। তারা পাকিস্তানকেই সমর্থন করবে। আর যেহেতু তারা অধিকাংশই উর্দু ভাষাভাষি সেহেতু পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত পশ্চিম পাকিস্তানিরাও তাদের শত্রু। এমন মনোভাব সৃষ্টি করেই তারা নিরিহ-নিরস্ত্র বিহারিদের ওপরও হামলা করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিয়ে খুন করে।
এর কিছু নমুনা হলো :
১. সিরাজগঞ্জের রেলওয়ে কলোনির বিহারী পট্টিতে আওয়ামী লীগের জঙ্গীরা হামলা চালায় এবং তিনশ থেকে চারশ লোককে বিনা দোষে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
২. পাবনায় ২৫০ জন পুরুষ, নারী ও শিশুকে একটা দালানে ঢুকিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে হত্যা করে। এভাবে সেখানে তথা বিহারি কলোনীর ভেতরে যারা ছিলো তাদের সকলকেই আওয়ামী লীগের জঙ্গীরা হত্যা করে।
৩. মুন্সিগঞ্জের আড়িয়াল খাঁ বিলের মধ্যেও এভাবে অনেকগুলো অবাঙালি নিরিহ বিহারি মানুষকে খুন করে, নারীদের ধর্ষণের পর হত্যা করে তা বিলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে আবার চোর আর লুটেরার দল এসে নারীদের লাশের গলার হার, কানের দুল খুঁজে খুঁজে নিয়ে যেতো।
এমন ভয়াবহ অমানবিক নির্যাতনের নজিরই আওয়ামী লীগের পাণ্ডারা সারাদেশে সৃষ্টি করেছিলো যে, নদীতে নদীতে লাশগুলো ভেসে বেড়াতো। লঞ্চ-স্টিমারের গায়ে এসব ধাক্কাও খেতো।
এসব নির্মমতার চিত্র আর পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বদরুদ্দিন উমর তার বইয়ে লিখেছেন ,
"জীবনে মানুষের করুণ মৃত্যুর অনেক চেহারা আমি দেখেছি। একেবারে প্রথম সেই ছেলেবেলায় ১৯৪৩-এর দুর্ভিক্ষ, তারপর কলকাতায় ১৯৪৬ সালের দাঙ্গা, ১৯৭০ সালে দক্ষিণ বাঙলায় সাইক্লোন ও জলোচ্ছাস। তারপর ১৯৭১ সালের এই সব মৃত্যু। পরে আরও দেখেছি, ঢাকায় ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষে মৃত্যুর থেকে করুণ আর কোন মৃত্যু নেই। আর গণহত্যা ও দাঙ্গায় মৃত্যুর থেকে মানুষের সামষ্টিক অমানুষিকতার বড় দৃষ্টান্ত মনে হয় আর নেই। ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে এই অমানুষিকতার সাথেই আমরা বসবাস করছিলাম।"
আর এসব বাস্তবতার কথা বাংলার মানুষ পুরোই বেখবর। সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যজনক অবস্থা হচ্ছে বর্তমান ইসলামপন্থীরাও এসবের কিচ্ছু জানেনা। আরো ভয়াবহ হতাশা আর আফসোস কিংবা আক্ষেপের কথা হলো যে, স্বয়ং যাদের বিরুদ্ধে ৭১ নিয়ে এতো অভিযোগ অনুযোগ আর অপপ্রচার, সেই জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান প্রজন্মও জানেনা। শিবিরের ছেলেরা জানবে কী, তারা তো পড়াশোনাই ছেড়ে দিয়েছে! অথচ এসব তাদেরই বেশি চর্চা করা উচিত ছিলো। অন্তত অভ্যন্তরীণভাবে হলেও। কিন্তু অভ্যন্তরীণভাবে তিক্ত হলেও সত্য যে, এদের হিংসা পরশ্রীকাতরতা গীবত অহংকার বেড়েছে। আরো প্রকটভাবে বেড়েছে, আখলাক ইখলাস ও ঈমানের দুর্বলতা, আকিদা ও আমলের দুর্বলতা।
|| ৭১ থেকে বর্তমান : আওয়ামীদের জঙ্গীপনা এবং ইসলামপন্থীদের হালহকিকত ||
~রেদওয়ান রাওয়াহা
১৮.১০২১

পঠিত : ৪৪৭ বার

মন্তব্য: ০