Alapon

দ্বীনদার বলতে আমরা কী বুঝি?



দ্বীনদার বলতে আমরা কী বুঝি?
দ্বীনদার পাত্র পাত্রী চাই, হেদায়েতপ্রাপ্ত পাত্র-পাত্রী কেন নয়?


আমরা বিয়ের জন্য শুধু দ্বীনদার পাত্র আর পাত্রী খুঁজি।
দ্বীনদার বলতে একদম মাদ্রাসায় পড়ুয়া হাফেজ মাওলানা মুফতি বুঝাই।
পাত্রীর ক্ষেত্রেও মাদ্রাসায় পড়ুয়া আলেমা হাফেজা চাই। আর ভাবি শুধু দ্বীনদার হলেই বুঝি সংসারটা একটা জান্নাতের বাগীচা হয়!

সুখটা তো আসলে মানুষের ইলমের উপর নির্ভর করে না, সুখ নির্ভর করে আমলের উপর, আখলাকের উপর, সুখ নির্ভর করে নাসিবের উপর, সুখ নির্ভর করে কে কতটা আল্লাহর সান্নিধ্যে গেল তার উপর। আমাদের এই ধারণাটা অনেক ভুল যে, শুধু মাত্র মাদ্রাসায় পড়ুয়া আলেম/আলেমারাই দ্বীনদার।

দ্বীনদার বলতে আসলে কী বুঝায়?
অনেক বেশি ইলম নাকি অনেক বেশি আমল? জানেন তো সে আলেমের ইলমের কোনো দাম নাই যদি না সে আমল না করে আর দাওয়াহ না দেয়...
আমি এমন শত মানুষ দেখেছি যারা আলেম, যাদেরকে চোখে দেখেছি, উঠাবসা করেছি যারা একদম আগাগোড়া মাদরাসা লাইনের। আবার এমন শত মানুষ দেখেছি প্লাস উঠাবসা করেছি যাদের আগাগোড়া জেনারেল লাইনের।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলিঃ
জেনারেল লাইনের একটা মানুষ যখন হেদায়েত প্রাপ্ত হয় তখন সে অন্য সাধারণ ৮/১০ টা আলেম থেকেও বেশি আমলদার হয়। তার মাঝে ইলম থাকেনা ঠিক, কিন্তু যা থাকে তাই সে নিয়মিত আমল করে। দুনিয়ার মোহ বা চাকচিক্য আলেমদের থেকেও এদের বেশি দেখা হয়ে যায়, তাই হেদায়াতের পর এরা শুধু আল্লাহকেই আঁকড়ে ধরে রাখে। হেদায়াতের আগে তারা অনেক পাপ করে। গান বাজনা, হারাম প্রেম, বেপর্দা ইত্যাদি মারাত্মক গুনাহে জড়িত থাকে, এরপর একবার যখন রহমতের পরশ পায় তখন সারা জীবন এদের এই পাপ কাজ স্মরণে তওবা ও ইস্তগফারে কাটে।

একজন আলেম থেকেও বেশি অশ্রু তারা ফেলে আল্লাহর কাছে।
কারন জাহিলিয়াতের যে আজাব তা আলেমরা বুঝে না, যা কিনা হেদায়েত প্রাপ্তরা বুঝে। আরেকটা বিষয় হলো, যারা একবার পাপ করে আসে, তাদের জানা থাকে পাপের স্বাদ, তাই তারা ২য় বার সে পথে পা বাড়ায় না, অপর দিকে যারা পাপ করে বড় হয়না নিষিদ্ধ পাপ তাদেরকে সব সময় টানে।

হেদায়েত প্রাপ্তদের জন্য দ্বীনি ইলম অর্জনটা কষ্টসাধ্য, সমাজে পরিবারে দ্বীন পালনটা কষ্টসাধ্য, তাও সে জিহাদ করে চলে। সে শুদ্ধ করে তিলাওয়াত করতে না পারার জন্য কান্না করে, সে ঠিক ভাবে পর্দা করতে পারেনা সার্কেলের সবার হাসাহাসি বা পরিবারের বাধার জন্য। সে প্রতিনিয়ত আল্লাহর সাহায্য চায়।
অন্য দিকে একটা আলেম পরিবারের আলেম ছেলে/মেয়ের জন্য ইলম অর্জন বা আমল করা খুবই সহজ। আর সহজ বিধায় সে আলসেমি করে। তার এইসবের জন্য দুয়া করা লাগে না, কান্না করা লাগে না বা সাফার করা লাগে না।

সে ভাবে অনেক ইলম অর্জন করে, হাফেজ আলেম হয়ে অনেক সওয়াবের অধিকারী হয়ে গেছে, তার আশেপাশের কেউই তার আগে যেতে পারবে না, তাই আসলে আমলে অনেক ঘাটতি থাকে। সত্যি বলতে হেদায়েত প্রাপ্তদের থেকে আলেমদের মাঝে আমলে ঘাটতি থাকে বেশি। আলেমরা জন্ম সুত্রে পর্দা করা, দাড়ি রাখা, ইসলামি লিবাস পরা ইত্যাদি পেয়ে থাকে, খানাপিনার মত এইগুলাও একটা সাধারণ কাজ।

অপর দিকে হেদায়েত প্রাপ্তরা সব সময় সেভ করা গালে শুধু মাত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রেমে বিগলিত হয়ে সেখানে দাড়িকে বড় হতে দেয়। একটা চুল খোলা টাইট কামিজ পরা মেয়ে হুট করে সব ঢেকে বোরকা পরা শুরু করে মারাত্মক আল্লাহভীতি বা প্রেম থেকে। এই যে এই দাড়ি রাখার প্রেম, এই প্রেমটা কিন্তু কখনো রেজার না লাগানো গালটা বুঝেনা, হয়ত বুঝে কিন্তু সেই হেদায়েত প্রাপ্তর মত করে বুঝে না।

একজন আলেমা যখন রাস্তায় বের হয় পূর্ন পর্দা করে, তার মাঝে একবারের জন্যও অনুশোচনা কাজ করেনা। কিন্তু সেই হেদায়েত প্রাপ্তা ঠিকই বার বার মাফ চায় তার আগের বেপর্দা দিনের কথা গুলো ভেবে। আল্লাহ কাদের ভালবাসেন?
আল্লাহকে অধিক স্মরণকারীদের, উনার আজাবের ভয়ে ভীত হয়ে উনার পথেই ফিরে আসা মানুষদের, বার বার তওবাকারীদের, ইলম অর্জন করার পিছে ছোটা মানুষদের। না আমি বলছিনা সকল আলেমরা এমন কিংবা আমি বলছিনা আলেমরা দ্বীনদার নয় কিংবা আলেমদেরকে বিয়ে করা থেকে অনুৎসাহিতও করছিনা।

আমি শুধু বলছি দ্বীনদার বলতে যে শুধু আলেমকেই বুঝি তা কিন্তু নয়।
মানুষ বিয়ের জন্য যদি শুধু আলেম চায় তাহলে এই হেদায়েত প্রাপ্তরা কই যাবে?
দ্বীন শেখার কোন শেষ বয়স নেই, আমি এমনও অনেক ডক্টর ইঞ্জিনিয়ার দেখেছি যারা পড়াশুনা শেষ করে মাদ্রাসার লাইনে পড়েছেন। হাফেজ আলেম হয়েছেন।
জেনারেল লাইনের কাউকে পাত্র বা পাত্রী হিসেবে রিজেক্ট করে দিয়েন না।
বা এও ভাববেন যে এদের বিয়ে করলে আপনি সুখি হবেন না। এমন অনেক আলেমের পরিবার আছে, যেখানে নিত্য অশান্তি লেগে থাকে। আবার এমন অনেক হিদায়াত প্রাপ্তর পরিবার আছে যা আসলেই জান্নাতের বাগীচা হয়ে থাকে।

যারা দুনিয়ার মোহে ছুটে প্রকাশ্যে, তাদের আপনি রিজেক্ট করতে পারেন, কিন্তু যদি দেখেন জেনারেল লাইনের কিন্তু দ্বীন পালনে খুব সচেষ্ট, পর্দা করছেন বা সুন্নতি বেশ ও লেবাস পরছেন। দ্বীনি ইলমের পিছে সময় ব্যয় করছেন, ইবাদাতে যথেষ্ট যত্নশীল তাদেরকে রিজেক্ট করে ভুল করবেন না, এরা হতে পারে আপনার জান্নাতের বাগীচা খননের সঙ্গী।
//Collected//

পঠিত : ২৯৮৩ বার

মন্তব্য: ০