Alapon

ইসলামী ব্যাংক কি করছে...?



ইসলামী ব্যাংকিংকে ঘিরে যত আলাপ-আলোচনা ও সমালোচনা হয়ে থাকে তা কেবল মাত্র একটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই ঘুরপাক খায়। লেনদেন প্রক্রিয়া কতটা শরিয়া ভিত্তিক আছে বা নেই?

কিন্তু দুঃখজনক ভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটি আড়ালেই রয়ে যায়। তা হচ্ছে অর্থনীতিতে ও মানুষের জীবনে ইসলামী ব্যাংকের প্রভাব কি এটি কি সুদী ব্যাংকের থেকে ভিন্ন? নাকি উভয়ের প্রভাব একই। কেবল প্রক্রিয়াটি ভিন্ন?

চলুন এই দুই ব্যবসা মডেলের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ করা যাক।

সুদী ব্যাংকের সাথে ইসলামী ব্যাংকের মুরাবাহা পদ্ধতিতে কোন অর্থনৈতিক পার্থক্য নাই। কেবল মাত্র সামান্য কিছু প্রক্রিয়াগত পার্থক্য বিদ্যমান মাত্র।

মনে করি একজন স্বপ্নবাজ তরুণ উদ্যোগতা আছে যার দুই চোখ ভরা স্বপ্নে আর পকেট ভরা বাতাসে। নাম তার সিন্দাবাদ। সে স্বপ্ন দেখে একদিন জাহাজ কিনে সাগরে পাড়ি দিয়ে দেশ-বিদেশে সওদাগরী করবে। তার জাহাজ কেনার মত সামর্থ তার নেই কিন্তু সিন্দাবাদ নাছোড়বান্দা। স্বপ্ন পূরণ করা তার চাই ই চাই। নিরুপায় হয়ে সে টাকা ধার নিতে গেল কেহেরমান মহাজনের কাছে যার ব্যাগ ভরা থাকে টাকাতে আর মন ভরা থাকে লোভে। কেহেরমান সাহেব সিন্দাবাদের ব্যাবসায়িক উদ্যোগের কথা শুনে খুব খুশি হলেন এবং সাহায্য করতে রাজি হলেন তবে বিনা লাভে নয়। কিন্তু কেহেরমান সাহেব মুসলিম। তাই তিনি টাকা ধার দিয়ে বেশি অর্থ ফেরত চাইতে পারবেন না। এর থেকে বাঁচার জন্য তিনি এক বুদ্ধি করলেন। হাতে হাতে ৫০ লক্ষ টাকা ধরিয়ে না দিয়ে সিন্দাবাদকে ( অথবা তার পরিচিত অন্য কোন ব্যাক্তিকে) হুকুম দিলেন ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে একটি জাহাজ কেহেরমান সাহেবের নামে কিনতে। কেনা হল। জাহাজের মালিক কেহেরমান। এবার তিনি এই জাহাজ সিন্দাবাদের কাছে বিক্রয় করলেন ১ কোটি টাকা বিক্রয়মূল্যে। শর্ত হচ্ছে এই যে সিন্দাবাদকে ৭ বছরে কিস্তিতে টাকা পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ, যদিও সিন্দাবাদ কেহেরমান সাহেবের কাছে টাকা ঋণ নিতে গিয়েছিল তিনি ব্যাবসায়ির সুরত ধরে ঋণ হালাল করে নিলেন। কেহেরমান আদতে ব্যাবসায়ি নন একজন মহাজন ছিলেন।

জাহাজ যদি ডুবে যায়, সিন্দাবাদ যদি ব্যবসায় সুবিধা না করতে পারে, সম্পূর্ণ ক্ষতি সিন্দাবাদকে বহন করতে হবে। কেহেরমান যেহেতু বিক্রেতা সেহেতু লাভ লসের অংশ নিবেন না।

পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সিন্দাবাদ কেন ৫০ লক্ষ টাকা বাজার মূল্যের মাল ১ কোটি টাকায় কিনবে?

কিনবে এজন্য যে তার হাতে টাকা নেই। লক্ষ করুন, সিন্দাবাদ কেহেরমানের কাছে গিয়েছে টাকার জন্য এবং কেহেরমান জাহাজ ব্যাবসায়ি নন, টাকার ব্যাবসায়ি। এর মাঝে যা হয়ে গেল তার নাম ব্যাবসাকরণ বা সুদকে হালালকরণ। এই হালালকরণ কি বৈধ? ইসলামী ব্যাংকাররা বলবেন বৈধ যেহেতু তারা সুদ এড়িয়ে গেলেন এবং ব্যাবসা করলেন।

সিন্দাবাদ যদি কেহেরমানের কাছে না গিয়ে সাধারণ মহাজন গোপালের কাছে যেত তাহলে কি হত? গোপাল সিন্দাবাদকে ৫০ লক্ষ টাকা হাতে দিয়ে ৭ বছরের কিস্তিতে ১ কোটি টাকা ফেরত চাইত। অর্থাৎ, গোপালের সিন্দুক থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বের হয়েছে এবং ৭ বছরে ১ কোটি টাকা সিন্দুকে ফেরত এসেছে। আবার কেহেরমানের কাছে গেলেও কেহেরমানের সিন্দুক থেকে ৫০ লক্ষ টাকা বের হয়েছে এবং ৭ বছরে ১ কোটি টাকা সিন্দুকে ফেরত এসেছে। অর্থনৈতিক পার্থক্য থাকল কোথায়?

একটা সুদী ব্যাংক কিন্তু এই কারসাজি করে তাদেরকে ইসলামী দাবি করে ফেলতে পারে। সুদী ব্যাংককে ইসলামী বানিয়ে প্রায় আগের স্থানেই রাখা যায়। তাহলে এই কারসাজি করে সমাজ, রাষ্ট্র বা জাতির ভাগ্যে কি বদলাল? এবং সকল বিচারকের সেরা বিচারক কেন এই কারসাজির না করাতে এক দলকে করবেন জাহান্নামী আর আরেক দলকে করবেন জান্নাতি? ইসলাম কি কেবল একটি নাটকের দাবিতেই সুদকে হারাম করেছিল? নাকি এই অর্থনৈতিক প্রভাব আছে?

প্রশ্ন হচ্ছে এই ক্ষেত্রে প্রশ্ন হচ্ছে এই ক্ষেত্রে সমাধান কি?

সমাধান হচ্ছে ব্যবসার অংশীদার। ইসলামী ব্যাংককে ব্যবসার অংশীদার হতে হবে, যা মুশারাকা পদ্ধতিতে অনুসরণ করা হয়। তাই কল্যাণ নিশ্চিত করতে ইসলামী ব্যাংকের উচিত ছিল ব্যবসায় লাভ এবং লস উভয়ের অংশীদার হওয়া। কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে কি? যেখানে ইসলামী ব্যাংক গুলোর উচিত ছিল ব্যবসায় অংশীদার পদ্ধতির সর্বাধিক ব্যবহারে উদ্যোগী হওয়া, দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে অতীতে ইসলামী ব্যাংক গুলো কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুশারাকাকে উৎসাহিত করলেও একজন ইসালামি ব্যাংক কর্মকর্তা আমার সাথে সাক্ষাতে বলেছেন "বর্তমানে মুশারাকার ব্যবহার ১০০ ভাগের ১ ভাগের চেয়েও কম।"

মোহাইমিন পাটোয়ারী

পঠিত : ৩৪৭ বার

মন্তব্য: ০