Alapon

কীসে তোমাকে বিভ্রান্ত করলো...?



আজকের খুৎবায় মূলত আমি সূরা আল-ইনফিতারের ৬ নম্বর আয়াত নিয়ে কথা বলতে চাই। যেহেতু এই আয়াত নিয়ে কথা বলছি, সর্বপ্রথম সূরার কোন জায়গায় এটি এসেছে তার উপর কিছুটা আলোকপাত করতে চাই। যেহেতু বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদেরকে শুধু এটা জানলে হবে না যে, আল্লাহ কোন কথা বলেছেন বরং কোন প্রেক্ষাপটে তিনি কথাটি বলেছেন তাও জানতে হবে। যেমন, কারো বক্তব্যের মাঝখান থেকে যদি একটি কথা তুলে নেন, ভুল বুঝার সম্ভাবনা আছে।তিনি এর আগে কী নিয়ে কথা বলছিলেন, কোন বিষয়ে কথা বলছিলেন, এগুলো বিবেচনায় নিলে কথাটি দ্বারা হয়তো সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ পাবে।
তো, এই সূরার আরম্ভ হয়েছে বিচার দিবসের চিত্র নিয়ে। যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে, যখন তারকাগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে (ঝরে) পড়বে এবং তাদের আলো হারিয়ে ফেলবে, আর সেগুলো বিক্ষিপ্তভাবে পতিত হবে। উদাহরণস্বরূপ, কোন চাদরের উপর যদি মুক্তোদানা ছড়িয়ে থাকে আর কেউ চাদরটি ধরে ঝাড়া দেয়, তখন মুক্তোগুলো যেমন চারদিকে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে পড়ে, সেরকম। কারণ, যেসব মানুষ রাতের আকাশ দেখেন... আমরা এখন রাতের আকাশে খুব একটা তাকাই না, হয়তো দূষণের কারণে এবং আমরা শহরে বাস করি। আমরা আগের দিনের মত এখন আর তারা দেখে পথ ঠিক করি না। কিন্তু, অতীতে যারা মরুভূমিতে পথ চলতো তাদেরকে দিক নির্ণয় করতে হত হয় দিনের বেলা সূর্য দেখে অথবা রাতের বেলা তারা দেখে। যারা সমুদ্র অভিযানে বের হত তাদেরকেও এভাবে দিক নির্ণয় করতে হত। তারা আকাশের তারা দেখে পথের দিশা পেতো। আল্লাহ কুরআনেও এই ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলেছেন যে, তারকামণ্ডলী হলো মানুষের ন্যাভিগেশন সিস্টেম। বর্তমানেও, যদি পাইলটদের ন্যাভিগেশন সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায়, তাদেরকে এখনো তারকা দেখে পথ নির্ণয় করতে হয়।

আপনি ন্যাভিগেশনের জন্য তারকার উপর নির্ভর করতে পারেন কারণ, তারকাগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় দেখা যায়। ঠিক যেমন সূর্যকেও আমরা একই দিক থেকে উদিত এবং অস্ত হতে দেখি। পূর্ব দিক থেকে এর উদিত হওয়া স্থায়ী। সূর্যের উদয় হওয়ার দিকে তাকিয়ে আপনি কখনো বলবেন না, এটা কি উত্তর দিক নাকি দক্ষিণ দিক? কারণ দিকগুলো স্থিরীকৃত। তাহলে, দিক নির্ণয়ের জ্ঞান আমরা মূলত আকাশ থেকে পাই। আকাশ দেখেই আমরা এই জ্ঞান লাভ করি।

আর সেইদিন গোটা আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে। আর পৃথিবীর কথা কি বলবেন। তারকাগুলো, যেগুলোকে নির্দিষ্ট জায়গায় দেখা যেত, সেদিন দেখা যাবো এগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে ঝরে পড়ছে। وَ اِذَا الۡکَوَاکِبُ انۡتَثَرَتۡ - আর যখন নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে।

এরপর সেদিন সাগর সমূহ বিস্ফোরিত হবে। 'ফুজ্জিরাত'। যখন মহাসাগরগুলোকে বিস্ফোরিত করা হবে। আমরা সুনামি বা এমন দুর্যোগের কথা জানি। কিন্তু, এ বর্ণনাটা আসলে ফুটন্ত পানির বর্ণনার সাথে বেশি মানাসই, যেখানে তীব্র তাপে পানি ফুটছে আর পাতিল থেকে উপচে পড়ছে। সাগর সেদিন এমন রূপ ধারণ করবে। "ওয়া ইজাল কুবুরু বু'সিরাত।" 'বা'সারা' আসলে খুব ইন্টারেস্টিং একটি শব্দ। 'বাআসা' এবং 'আসারা' শব্দদ্বয় মিলে 'বা'সারা' হয়েছে। “আর যখন কবরগুলো উন্মোচিত হবে।”

যেমন, বড় এক ব্যাগ ভর্তি বাচ্চাদের খেলনার কথা ধরুন। অনেকগুলো লেগোর টুকরো ব্যাগের ভেতর। ব্যাগের ভেতর হাত ঢুকিয়ে নির্দিষ্ট একটি লেগো খুঁজতে থাকলেন। খুঁজতে গিয়ে সবগুলো লেগো উলট পালট করে ফেলছেন। অনেক সময় মানুষের অগোছালো ব্যাগ থাকে বা অগোছালো পার্স থাকে। 'আমার ফোনটা আমি কোথায় রাখলাম? চাবি কোথায় রাখলাম?' আর সে ব্যাগের ভেতর তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগলো। ভেতরটা দেখতে পাচ্ছে না, হাত ঢুকিয়ে সব উলট পালট করে খুঁজতে লাগলো; যদি হাতের মধ্যে চাবির স্পর্শ লাগে। এ কাজ করতে গিয়ে ব্যাগের সবকিছু যে উলট পালট করে ফেললেন এর নাম 'মুবা'সার'।

সুতরাং, যখন কবরগুলোতে এভাবে তন্ন তন্ন করে খোঁজা হবে এর ভেতর থেকে মানুষগুলোকে টেনে হিঁচড়ে তুলে আনার জন্য। এটা হলো 'ওয়া ইজাল কুবুরু বু'সিরাত'; যে বিশৃঙ্খল অবস্থা কবরে সংঘটিত হবে। সবচেয়ে শান্ত কোনো জায়গার কথা যদি চিন্তা করেন, যেখানে মানুষটিকে কোনো কিছু দ্বারা আর কোনোভাবেই ডিস্টার্ব করা হচ্ছে না, নীরবতা যেখানে সর্বদা বিদ্যমান, তা হলো মানুষের কবর। সে জায়গাটা তো আর নড়াচড়া বা হাঙ্গামার জায়গা নয়। কিন্তু, সেদিন এ শান্ত জায়গাটাই চূড়ান্ত হাঙ্গামার জায়গায় পরিণত হবে। এ জন্য আল্লাহ্‌ বলেন, 'ওয়া ইজাল কুবুরু বু'সিরাত'।

এমন অবস্থা যখন চলতে থাকবে...। কল্পনা করুন, একজন মানুষকে মাত্র তার কবর থেকে টেনে হিঁচড়ে তোলা হলো...। কেউ যদি আপনাকে হঠাৎ করে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে, তাড়াহুড়ো করে জাগিয়ে তোলে, সে মুহূর্তে আপনার মাথায় প্রথম যে চিন্তাটি আসে- কিছু কি ঘটেছে!! কিছু কি ঘটেছে!! কেন জাগালে!! কেন জাগালে!! বা আপনার মাথায় তখন কিছুই কাজ করে না। আপনি সম্পূর্ণ ভেবাচেকা খেয়ে আছেন। কিয়ামতের দিন জেগে উঠার পর সবকিছুই দুঃস্বপ্ন মনে হবে। আকাশ বিদীর্ণ হয়ে আছে, সমুদ্র বিস্ফোরিত হচ্ছে। আপনি মাত্র জেগে উঠলেন আপনার কবর থেকে; হাজার হাজার বছর ধরে ঘুমানোর পর। সে সময় আপনি কী চিন্তা করবেন? চারপাশের ঘটে যাওয়া সবকিছু বুঝতে গিয়ে চিন্তার গতি স্তব্ধ হয়ে যাবে।

আল্লাহ্‌ সেই মুহূর্তের একটি চিন্তার কথা উল্লেখ করেছেন আমার আপনার জন্য। যে চিন্তা আমাদের সম্পূর্ণ অভিভূত করে ফেলবে। একটি চিন্তার কথা এই সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর সে চিন্তাটি হলো- عَلِمَتۡ نَفۡسٌ مَّا قَدَّمَتۡ وَ اَخَّرَتۡ - “তখন প্রত্যেকে জেনে নিবে সে কী আগে পাঠিয়েছিল, আর কী পেছনে ছেড়ে এসেছিল।” (82:5) আরবি ভাষার ছাত্র/ছাত্রীরা জানেন, তাকদিম এবং তা'খির। মুকাদ্দাম এবং মুআখখার। তাদের জীবনে তারা কোন বিষয়টাকে মুকাদ্দাম বানিয়েছিল এবং কোন বিষয়টাকে মুআখখার বানিয়েছিল।

এর মানে কী জানেন? কোন ব্যাপারটাকে তারা সামনে রেখেছিল এবং কোন ব্যাপারটাকে তারা পেছনে রেখেছিল। সাধারণ ইংরেজিতে বললে- কোন ব্যাপারটাকে তারা প্রায়োরিটি দিয়েছিল এবং কোন ব্যাপারটাকে তারা পশ্চাতে ফেলে রেখেছিল। আমারদের সমগ্র জীবন আসলে এটাই। আমার এবং আপনার। জীবনের প্রতিটি দিন কিছু জিনিস প্রায়োরিটি (আগে করতে হবে) পায় আর কিছু জিনিস পরে করার জন্য ফেলে রাখা হয়। এটাই আমাদের জীবন।

আমি ভাবি আমার হাতে অনেক সময় আছে। একটু বিশ্রাম নিই। আমার বিশ্রাম প্রায়োরিটি তখন পায়। যে কাজ বাকি আছে তা পরে করা যাবে। যদি বলি- আগে কাজ শেষ করি, খাওয়া-দাওয়া পরে করা যাবে; তখন আমার কাজ প্রায়োরিটি পায় আর আহার করার কাজ অপেক্ষমাণ থাকে। সারাক্ষণ আমি কিছু বিষয় মুকাদ্দাম বানাচ্ছি আর কিছু বিষয় মুআখখার বানাচ্ছি। কিছু ব্যাপার আমি সামনে রাখছি আর কিছু ব্যাপার পেছনে রাখছি। ঠিক না? এটা হলো সময়ের বিবেচনায়। সময়ের বিবেচনায় বলি- 'আচ্ছা, সাপ্তাহিক ছুটিতে এটা করবো। সপ্তাহের অন্য দিগুলোতে ব্যস্ত থাকি। ছুটির দিনে এটা করবো।' তাহলে আপনার চাকরি হয়ে গেলো মুকাদ্দাম। আর অন্য যে কাজ পরে করবেন সেটা হয়ে গেলো মুআখখার। মানুষ অনেক সময় ভ্রমণ পিছিয়ে দেয়। মুকাদ্দাম এবং মুআখখার।

সেইদিন চারপাশের ভয়ংকর সব ব্যাপারের মাঝে আপনি শুধু একটি ব্যাপার নিয়েই চিন্তায় থাকবেন- কোন জিনিসটাকে সামনে রেখেছিলেন আর কোন জিনিসটাকে পেছনে রেখেছিলেন।

কিন্তু, এর দ্বারা অন্য কিছুও বোঝায়। সেদিন আমি আপনি উপলব্ধি করবো কোন কাজটা আসলেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর কোন কাজটা ছিল কম গুরুত্বপূর্ণ। স্পষ্টতই, যেটা সামেন রাখেন সেটা আপনার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। 'আমাকে অমুক কাজটি আগে করতে হবে, কারণ এটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে এই কাজটা আমাকে করতেই হবে।' আর যেটা পরে করার জন্য রেখে দিয়েছেন তা আপনার নিকট বড় ধরণের কোনো প্রায়োরিটি নয়। সেটা আপনার কাছে অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।

সুতরাং, আয়াতের উক্ত কথাটি এ সম্পর্কেও যে, লোকটি সেইদিন উপলব্ধি করবে— তার সমগ্র জীবন কোন কাজগুলোকে তার নিকট বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরেছে এবং তার সমগ্র জীবন কোন কাজগুলোকে তার নিকট কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরেছে। কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর কোনটা কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কোনটা নিয়ে তার চিন্তা করা উচিত ছিল আর কোনটা নিয়ে তার চিন্তা করার দরকার ছিল না।

যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে কিছু কিছু ব্যাপার নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনা করতে হয়। সহজ একটি উদাহরণ নিন। যেমন, আহার করা। একজন মুসলিমের জন্য প্রথম চিন্তা হল- খাবারটা কি হালাল নাকি হালাল নয়? ঠিক না? আপনি হয়তো আরও কিছু ব্যাপার নিয়েও ভাবতে পারেন? এটা স্বাস্থ্যকর তো? আমার খাদ্যাভ্যাসের সাথে এটা যায় তো? আহার করার এটা ভালো সময় তো? এটা বেশি দামি? যাইহউক। অন্য ব্যাপারগুলোও এর সাথে জড়িয়ে আছে।

কিন্তু, আমার আপনার জন্য সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, এই খাদ্য আহার করার অনুমতি আছে নাকি নেই? হালাল নাকি হালাল নয়? এটা এক নাম্বার।

কেউ একজন বলতে পারে— কিন্তু খাবারটা আসলো দারুণ সুস্বাদু। তো, তার কাছে হালাল হারাম মুখ্য বিষয় নয়। তার নিকট এটা মুআখখার। আর স্বাদ হয়ে গেলো মুকাদ্দাম। স্বাদ হয়ে গেলো মুকাদ্দাম। হতে পারে এই খাদ্যের স্বাস্থ্যগত ভালো কোন উপকার নেই। কিন্তু, স্বাদ অসাধারণ। তো, স্বাদ হয়ে গেলো মুকাদ্দাম। আর স্বাস্থ্যগত উপকার বা ক্ষতি হয়ে গেলো মুআখখার। এটি হলো তাকদিম এবং তা'খির। এটা নিয়েই আমি এখানে কথা বলছি। কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর কোনটা কম গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এখন প্রশ্ন হলো— বিচার দিবসে একজন লোক কবর থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে কেন এ প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিবে? তাকে মাত্র কবর থেকে তোলা হল। সেই মুহূর্তে, সেই ক্ষণে সে যে উপলব্ধি করবে কোন কাজটাকে আমি গুরুত্ব দিয়েছি আর কোনটাকে আমি গুরুত্ব প্রদান করিনি...এই আয়াতে মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আমাকে আপনাকে বলছেন আমাদের জীবনে এমন অসংখ্য মুহূর্ত এসেছিল যখন আমার আল্লাহকে গুরুত্ব দেয়ার কথা ছিল। অন্য কাউকে নয়। আমার নিজেকে নয়, আমার অনুভূতিকে নয়, আমার লোভকে নয়, অন্য একজনের অনুভূতিকে নয়, অন্য একজনের মতামতকে নয়, আমার চাহিদাকে নয়, তাদের চাহিদাকে নয়। আল্লাহ্‌ যেটা চান সেটা আমার সবার আগে করা উচিত ছিল। কিন্তু, আমি অন্য কিছুকে বাছাই করেছি। আমি অন্য কিছুকে মুকাদ্দাম বানিয়েছি। আমি অন্য একজনকে প্রাধান্য দিয়েছি বা অন্য কিছুকে প্রাধান্য দিয়েছি বা আমি আমার নিজেকে প্রাধান্য দিয়েছি। অন্য কিছু বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।

জানেন? আমরা যতই নিজেদের এই বলে বুঝ দিই না কেন যে, এতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা তখন আসলে নিজেদের সাথে মিথ্যে বলছি। নিজেরা নিজেদের বোকা বানাচ্ছি। বাস্তবতা হলো, আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসূল (স) যখন আমাদের কিছু বলেন, তাঁরা আমাদের যখন কিছু করতে বলেন, যখন তাঁরা আমাদের বলেন অমুক কাজটি করা ভুল, যখন তাঁরা আমাদের বলেন অমুক কাজটি করা বাধ্যতামূলক, তোমাকে এভাবে এটা করতে হবে, তুমি কখনো ঐভাবে এটা করতে যাবে না— তাঁরা এমনটা করছেন কারণ, তাঁরা আমাদের ভালো চান। আল্লাহ্‌ আমার ভালো চান, আমাকে ভালবাসেন বেশি এবং রাসূল (স) আমার জন্য বেশি ভালো চান, আমি আমার নিজের জন্য যত ভালো চাইতে পারবো তার চেয়েও। এমনকি আমি আমার জন্য যত ভালো চাইতে পারবো তার চেয়েও।

রাসূল (স) নিজেকে এমন একজন হিশেবে বর্ণনা করতেন যিনি...জানেন তো? পতঙ্গ, পোকামাকড় বাতি দেখলে কী করে? তারা এর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর আপনি তাদেরকে হাত নেড়ে তাড়িয়ে দিতে চান। ঠিক না? এখন তো বাজারে মশা ধরার লাইটও পাওয়া যায়। প্রতিবার কোনো মশা এতে উড়ে এসে ধরা পড়লে আপনি খটাশ করে শব্দ শুনতে পান। আমাদের রাসূল (স) এ রকম একটি উপমা দিয়েছেন। আমরা হলাম ঐ পোকামাকড় গুলোর মত যারা আগুনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, আর আমাদের যখন তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তখন আমরা বলি- "আপনি কেন আমাকে কিছুই করতে দেন না! আমার জীবনটা কেন এতো কঠিন করে তুলছেন! এতো কঠিন কেন আপনি! আমাকে কেন পুড়তে দেন না(?) " আমরা এভাবেই দেখি। কারণ, আমরা এতোটাই বিভ্রান্ত নিজের মত করে প্রায়োরিটি ঠিক করতে! আমাদের নিজদের কাছে যেটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় সেটা নিয়ে আমরা এতোটাই বিভ্রান্ত।

আর সেইদিন যখন সবকিছু উলট পালট হয়ে যাবে, আকাশ উলট পালট হয়ে যাবে, কবর উলট পালট হয়ে যাবে, সমুদ্র উলট পালট হয়ে যাবে— সেই মুহূর্তে শুধু একটি জিনিস ঠিক থাকবে আর তা হলো আমাদের চিন্তা। এখন, সবকিছু সঠিক নিয়মে আছে কিন্তু আমাদের চিন্তা-ভাবনা আছে উল্টো হয়ে। আর বিচারের দিন সবকিছু উল্টে যাবে কিন্তু আমাদের চিন্তা সঠিকভাবে পুনর্বিন্যাস লাভ করবে। "এখন আমি জানি কোনটাকে আসলে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচতি ছিল। কিন্তু, বোকার মত আমি কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলাম, আর কোনটাকে ফেলে রেখেছিলাম।"

আজ আমার আলোচনার বিষয় আসলে এই আয়াত নয়। যে আয়াত নিয়ে কথা বলতে চাই তা হলো পরের আয়াত। یٰۤاَیُّهَا الۡاِنۡسَانُ مَا غَرَّکَ بِرَبِّکَ الۡکَرِیۡمِ - "হে মানুষ!! হে মানুষ!!"
প্রসঙ্গতঃ 'ইনসান' দুটি জিনিসের সমন্বয়ে গঠিত। আল্লাহ্‌ যখন আমাদের মানুষ বলে সম্বোধন করেন। "হে মানুষ!!" এর দ্বারা বুঝায়— যে প্রচুর পরিমাণে ভুলে যায়। 'নিসইয়ান' থেকে আগত। "ওই ভুলো-মনা সৃষ্টি!!" "ওই ভুলো-মনা সৃষ্টি!!" এভাবেই আল্লাহ্‌ আমাদের সম্বোধন করছেন।

শব্দটি নিয়ে অন্যভাবেও চিন্তা করা যায়। "উন্স" থেকে এটি আগত। যার মানে ভালোবাসা এবং দরদ। তোমরা ভালোবাসায় পূর্ণ এক সৃষ্টি। তোমরা ভালোবাসা পেতে চাও। বিড়াল আলিঙ্গনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে না। কিন্তু, শিশুরা চায় তাদেরকে কেউ ভালোবাসায় জড়িয়ে ধরুক। এমনকি বড়রাও চায়। তারা চায় সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে, তারা চায় মানুষ তাদের ভালবাসুক, গ্রহণ করে নিক। আবার তারা ভালোবাসা দিতেও চায়। মানুষের মাঝে এই ব্যাপারগুলো লক্ষ্য করা যায়। অন্য সৃষ্টির মাঝে সাধারণত এগুলো দেখা যায় না। ঠিক এই কারণেও আমরা ইনসান।

আল্লাহ এই উভয় বৈশিষ্ট্যসহ আমাদেরকে ডাক দিচ্ছেন, যখন তিনি আমাদের প্রতিটি মানুষকে লক্ষ্য করে কথা বলছেন। প্রসঙ্গত, এই আয়াতের আহবান "ইয়া আইয়ুহাল ইনসান- মানুষ!!" যখন আমরা এই আহবান শুনি, আমি তখন অন্য কারো কথা ভাবি না। আমি আগের দিনের কোনো জাতি নিয়ে ভাবছি না বা অবিশ্বাসীদের নিয়েও ভাবছি না। আল্লাহ বলেননি, ইয়া আইয়ুহাল কাফের। তিনি বলেছেন, ইয়া আইয়ুহাল ইনসান। তিনি আপনাকে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন।

তিনি এমনকি বলেননি সেইদিন আল্লাহ বলবেন। শুধু এই শব্দগুলো সেদিন বলা হবে। তাই, আমরা জানি না কে এখানে কথা বলছে। এখানে 'কায়েল' কে? এ সম্পর্কে একভাবে চিন্তা করা যায়- এখানে আল্লাহ নিজেই বক্তা। আল্লাহ নিজে এই কথাগুলো আমাদের বলছেন। এ নিয়ে অন্যভাবেও চিন্তা করা যায়। ব্যাপারটা এরকম- যখন বিচার দিবস আসবে তখন উপলব্ধি করবেন কোন কোন ব্যাপারগুলোকে আপনি বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন অথচ কোন কোন ব্যাপারগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল। কোনটা আপনার সামনে ছিল আর কোনটাকে পেছনে ফেলে রেখেছিলেন। কেমন করে যেন খুব সহজেই আপনার রবের কথা ভুলে যেতেন। খুব সহজেই আপনার প্রভুকে পরিত্যাগ করতেন। তখন নিজেই নিজেকে দোষ দিয়ে বলবেন- কেমন ভুলোমনা সৃষ্টি তুমি!! মা- গাররাকা বিরাব্বিকাল কারিম। 'মা' এখানে প্রশ্নবোধক শব্দ। কোন জিনিসটা তোমাকে প্রতারিত করল!! কোন ব্যাপারটা তোমাকে মিথ্যা আশা দিয়েছিল, যখন তোমার সুমহান দাতা রবের কথা আসতো। বি রাব্বিকাল কারিম।

এই প্রশ্নটি কুরআনের অন্যতম অন্তরবিদ্ধকারী প্রশ্ন, হৃদয় ছিদ্র করা প্রশ্ন। "ইয়া আইয়ুহাল ইনসান মা গাররাকা বি রাব্বিকাল কারিম??" যদি কুরআনের বেশি কিছু আপনার মুখস্ত না থাকে বা না জেনে থাকেন, কিন্তু বাসায় ফ্রিজের গায়ে কুরআন থেকে কিছু একটা লিখে রাখতে চান এবং প্রতিদিন নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতে চান- তবে, এই আয়াতটি লিখে রাখুন। "ইয়া আইয়ুহাল ইনসান মা গাররাকা বি রাব্বিকাল কারিম??"

চলুন, এই শব্দগুলো দ্বারা কী বোঝানো হচ্ছে তা আরও ভালভাবে জানার চেষ্টা করি। আরবি 'গাররা' শব্দের আমি অনুবাদ করেছি প্রতারিত। ইবনে আসুর (র) তাঁর তাফসীরে উল্লেখ করেছেন, (আরবি) তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি যখন তার চিন্তা এবং আশা এমন কিছুর উপর অর্পণ করে যার দ্বারা সে প্রতারিত হয়। সে মনে করেছিল এটা তার উপকারে আসবে। এর কারণে তার ভাল লাগবে, এর কারণে ভবিষ্যতে সে ভাল থাকবে, এর কারণে সে আরও বেশি নিরাপত্তা লাভ করবে, এর কারণে সে আরও সুখী হবে, এর কারণে সে শান্তি পাবে— বস্তুত এগুলো সবই ছিল ভুল ধারণা। এটা মূলত তার ক্ষতি করবে। সে মনে মনে একেবারে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, এটা সবধরনের উপকার নিয়ে আসবে। কিন্তু আসলে এটা ক্ষতিকর। এর নাম হলো 'গুরুর'।

এই শব্দ আমাদের কী শেখাচ্ছে? জীবনে এমন অনেক কিছু সামনে এসে পড়বে যা খুবই আকর্ষণীয় মনে হবে। যা আমরা চাই। আমাদের অন্তর যার দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু, আমাদের অন্তর আমাদেরকে মিথ্যা বলছে।

অন্তরে তথ্য থাকে না, অন্তরে থাকে অনুভূতি। এর কাছে বাস্তবতার কোনো ধারণা নেই। এটা শুধুই 'ওহাম' বা বিভ্রম। তাই আমাদের অন্তরকে পথ দেখানোর দরকার হয়। কারণ, আমাদের অন্তর অন্ধ। এটা কিছু দেখলেই তার দিকে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। অন্য আরও কিছু দেখলে তার দিকেও আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। এর মাঝে চাহিদা আছে আর সে তা পূরণ করতে চায়।

কিন্তু, আল্লাহ তাঁর বাণীর মাধ্যমে অন্তরকে পথ দেখানোর উপায় বলে দিয়েছেন। এটা অন্তরকে ভাল-মন্দ দেখিয়ে দেয়। এটা অন্তরকে চিন্তা করতে শেখায়। আপনার অনুভূতিগুলোর কোনো দোষ নেই, কিন্তু যে দিকে এদের চালাচ্ছেন তা হয়ত ঠিক নেই। আমাদের অনুভূতিগুলো আল্লাহ প্রদত্ত। আপনি যা যা কামনা করেন আপনার তা কামনা করার কথা। কিন্তু, যে পথে এই কামনাগুলো পূরণ করতে চাচ্ছেন আপনি নিজেকে প্রতারিত করছেন। মনে করছেন এতে শান্তি পাবেন।

আর আল্লাহ যেভাবে আপনাকে পথ দেখান- তিনি পরিষ্কারভাবে আপনাকে হালাল পথের কথা জানিয়ে দেন। এটা হালাল পথ। এটাই হারাম এড়িয়ে চলার পথ। আর তিনি যখন চান আমরা যেন হারাম এড়িয়ে চলি তা শুধু এই কারণে যে, আমরা নিজেদেরকেই কষ্ট দিবো যদি আমরা হারাম পথ অনুসরণ করি। অন্য কাউকে নয়। প্রথম শিকার আমি নিজেই হবো। অন্য কেউ নয়, আমি নিজে। পাপ করার কারণে সবার আগে আমিই ক্ষতির সম্মুখীন হবো।
আর শয়তান এসে কী বলে? সে বলে- তুমি নিজের প্রতি এত কঠোর কেন? এত হুজুর কেন তুমি? এত ইসলামিক কেন তুমি? তোমাকে এমন হতে হবে কেন? আর আমি নিজেই নিজেকে বলবো কিয়ামতের দিন, ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাকে শিখিয়েছিলেন কোনটাকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে। আপনি জানিয়েছিলেন কোনটাকে পরেও করা যাবে। কিন্তু আমি আপনার কথা শুনিনি। কারণ, আমি বার বার আপনার কথা ভুলে যেতাম।
প্রথমত, আমি ভুল জিনিস দ্বারা প্রতারিত হয়েছি। দ্বিতীয়ত, আমি ভুলে গিয়েছিলাম আপনি আমার কে? 'বি রাব্বিকাল কারিম'। কোন জিনিসটা তোমাকে তোমার সুহমহান দাতা রব সম্পর্কে প্রতারিত করল? তোমার 'কারিম' রব। আরবি 'কারিম' শব্দটি খুবই সুন্দর আকর্ষণীয় এক শব্দ।

এর দ্বারা এমন সব জিনিসের বর্ণনা দেওয়া হয় যা অতীব চমৎকার, অভিজাত এবং মনোহর। তাই, যে ঘোড়ার সবচেয়ে বেশি রেশমী চুল আছে, যার গায়ের রংও সবচেয়ে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর শরীর আছে, আরবীয় ঘোড়া, সত্যিকারের আরবীয় ঘোড়াকে তারা 'কারাম' বলে অভিহিত করতো। এই শব্দকে সম্বন্ধযুক্ত করা হয় গুপ্ত সম্পদের সাথে। এই শব্দকে আরো সম্বন্ধযুক্ত করা হয় স্বর্ণের নেকলেসের সাথে। যে নেকলেস খুব দামী স্বর্ণ দিয়ে তৈরি করা হয়। এটাকেও 'কারম এবং কিরম' বলা হয়। সকল সুন্দর জিনিসের সাথে এই শব্দকে সম্পর্কযুক্ত করা হয়। সকল অভিজাত জিনিসের সাথে। সকল হাই ক্লাসের জিনিসের সাথে। সকল কোয়ালিটি সম্পন্ন জিনিসের সাথে।

এরপর অর্থটি আরও সম্প্রসারিত হয়ে দানশীলতার সাথে যুক্ত হতে শুরু করলো। তাই, তারা রাসূল (স) কে বর্ণনা করতো 'কারিমুন ইবনু কারিম' হিসেবে। অভিজাত বাবার অভিজাত সন্তান। অভিজাত মানে তিনি আমাদের প্রতি দানশীল হবেন। তিনি আমাদের প্রতি উদার হবেন।

আল্লাহ স্বয়ং এতোই মহান, উদার এবং দানশীল যে, আমরা তাঁকে ভুলে গেলেও তিনি আমাদের সাথে দয়ালু আচরণ করেন। আমরা অন্য কিছুকে প্রায়োরিটি বানালেও তিনি আমাদের সাথে দয়ালু আচরণ করেন। আমরা নিজেদের জীবনে তাঁর বিধি-বিধানকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করলেও... আমরা এমনভাবে আচরণ করি যেন এগুলোর অস্তিত্ব নেই, আমরা এমনভাবে আচরণ করি যেন এগুলো মান্য বা অমান্য করাতে কিছু যায় আসে না, তবু এর বিনিময়ে তিনি আমাদের সাথে সাথেই অপমানিত করেন না। তবু তিনি আমাদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করেন। তবু তিনি আমাদের মান মর্যাদা রক্ষা করেন। তবু তিনি আমাদেরকে মানবতার সামনে অপমানিত করেন না। তিনি এমনটা করেন না। তিনি মর্যাদাপূর্ণ উপায়ে আমাদের সাথে আচরণ করে যান। তিনি আমার প্রতি কারিম। তিনি সবসময় এমন ছিলেন।

আমি মোটেই তাঁর অনুগ্রহের কোনো বিনিময় প্রদান করি না। আমি এমনকি শুরুও করি না। শুধু ভুলে যাই। বার বার তাঁকে অগ্রাহ্য করি। এবং তিনি যা করতে বলেছেন সেটা অগ্রাহ্য করি। আমি দ্বিতীয়বার এটা নিয়ে আর চিন্তা করি না। আমি ধরে নিয়েছি আল্লাহ শুধু দিয়েই যাবেন। তিনি সবসময় আমার যত্ন নিয়ে আসছেন। তিনি বুঝেন। এটা কোনো ব্যাপার না।
কিন্তু শেষ বিচারের দিন আমি বলবো না, আল্লাহ বুঝেন। সেই দিন আমি কপাল চাপড়িয়ে বলতে থাকবো- কি করলাম আমি!! সব ভুল জিনিসকে প্রায়োরিটি দিয়েছি আমি। "আলিমাত নাফসুম মা কাদ্দামাত ওয়া আখখারাত।" হে মানুষ! কিসে তোমাকে তোমার মহানুভব প্রভু সম্পর্কে বিভ্রান্ত করলো!!

এরপর, তিনি কিভাবে মহানুভব? "আল্লাজি খালাকাকা, ফাসাওয়াকা, ফাআদালাকা ফিই আইয়ি সুওরাতিম মা শা আরাক্কাবাক- যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তোমাকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন।" যেন তুমি দুই পায়ে হাঁটতে পার। তিনি তোমাকে ভালো মন্দের মাঝে পার্থক্য করার যোগ্যতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ হিসেবে তিনি তোমাকে ভারসাম্যপূর্ণ করেছেন। তিনি তোমাকে চিন্তাশীল জীব হিসেবে তৈরি করেছেন। "ফাসাওয়াকা"। তিনি তোমাকে সুঠাম করেছেন। তোমাকে ব্যালান্সড, ন্যায়পরায়ণ এবং সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন। তিনি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে তোমাকে আকৃতি দান করেছেন। "ফি আইয়ি সুওরাতিম মা শা আরাক্কাবাক।" তিনি তোমার জীবনকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়েছেন। এগুলো তাঁর ডিজাইন।

কিন্তু, এই সবগুলো ক্ষেত্রে, আল্লাহ যে আমাকে প্রতিটি ধাপে এগিয়ে নিয়েছেন, আমাকে দিয়ে যত দু:সাহসিক কাজ তিনি করিয়েছেন, যত কঠিন সময়ে তিনি আমাকে ফেলেছেন, যত পরীক্ষায় তিনি আমাকে অবতীর্ণ করেছেন, যত অভিজ্ঞতায় তিনি আমাকে ফেলেছেন, যত মানুষ আমার জীবনে এসেছে, যত মানুষ আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছে, এই প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ আমাকে একটি ভ্রমণের ভেতর দিয়ে এগিয়ে নিয়েছেন। সকল ক্ষেত্রে আমাকে দেখতে হয়েছিল কোন কাজটা বেশি অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য ছিল আর কোনটা ছিল না।

কখনো কখনো আপনি আল্লাহকে ভুলে যান। তখন কোনো এক ব্যক্তি হয়তো আপনার প্রায়োরিটি হয়ে যায়। কখনো কখনো আপনি আল্লাহকে ভুলে যান। তখন আপনার নিজের আরাম-আয়েশ আপনার প্রায়োরিটিতে পরিণত হয়। খুব সহজেই আমরা ভুলে যাই। বারবার, বারবার এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে।

সর্বশেষ যে কথাটি শেয়ার করতে চাই, এখানে কী বলা হচ্ছে। এ ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করার জন্য আসন্ন উদাহরণটি আমি আগেও ব্যবহার করেছি। কারণ, আমি শিক্ষকতা পেশার সাথে জড়িত। আগে একসময় আমি ছোট ছোট শিশুদের শিক্ষা দান করতাম।

যদি কোনো শিক্ষক ক্লাসে এসে ছাত্রদের কোনোদিন শাসন না করে, কখনো না। তিনি শুধু ক্লাসে আসেন আর দেখেন যে কিছু বাচ্চারা নিজেদের ডেস্কের উপর লিখছে, অন্যদিকে একজন আরেকজনের গালের উপর কিছু আঁকছে, ক্লাসের আরেক প্রান্তে এক গ্রুপ একে অন্যের দিকে বই ছুঁড়ে মারছে, আরেকজন এদিক ওদিক পেন্সিল ছুঁড়ে মারছে যেটাই করুক- গোটা ক্লাস রুম যেন একটি সার্কাস।

আর শিক্ষক! সবসময় ভালো স্যার। সবসময় কৌতুক বলে বাচ্চাদের হাঁসান। কাউকে কোনোদিন বকাঝকা করেন না। ভদ্রভাবে বসতে বলেন। "ছাত্ররা, তোমরা কি একটু বসবে সবাই? চলো আমরা আমাদের লেসনে ফেরত যাই।" বাচ্চাদের কয়েকজন চেয়ারের উপর দাঁড়িয়ে ড্যান্স দিচ্ছে, অন্যরা অন্য কোনো দুষ্টামিতে ব্যস্ত। কিন্তু তিনি কাউকে কখনো কোনো শাস্তি দেন না, ধমক দেন না, বকা দেন না। শিক্ষকে সবাই ভদ্র শিক্ষক হিসেবে জানে। এমনকি সবচেয়ে খারাপ ছাত্রদের সাথেও তিনি সুন্দরভাবে কথা বলেন। এমন ছাত্র যে তাঁকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করছে।

"আহমেদ, তুমি কি একটু এদিকে আসতে পারবে?" কিন্তু আহমেদ এখনো অন্য ছাত্রদের সাথে কথা বলছে। আহমেদ বলল, "একটু থামেন। আমি আমার বন্ধুর সাথে কথা বলছি।" শিক্ষকের দিকে ফিরে বলছে। "একটু থামেন শিক্ষক সাহেব। আমি আমার ভিডিও গেইমে কতটুকু এগিয়েছি তা আমার বন্ধুকে বলছি এখন। আপনি একটু অপেক্ষা করেন।" এরপর সে তার বন্ধুর সাথে আবারো কথা বলা শুরু করলো। এতক্ষণে নরমাল একজন শিক্ষক হলে কী করতেন? এতক্ষণে পরবর্তী ঈদের জন্য ছাত্রটার কুরবানি হয়ে যেতো
কিন্তু এই শিক্ষক! তিনি নরম স্বরে বললেনঃ
- ঠিকাছে, তোমার কথা শেষ কর। তুমি যদি একটু মনোযোগ দিতে আমি খুব খুশি হতাম। এটা তো গণিতের ক্লাস। প্লিজ একটু মনোযোগ দাও।"
- না, না। আমি জানি এটা গণিতের ক্লাস। বুঝছি আমি। আপনি কি আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করবেন?
একজন ছাত্র এভাবে আচরণ করছে!! কিন্তু শিক্ষক এর বিপরীতে শুধু ভদ্র আচরণ করে যাচ্ছেন। উদার আচরণ করে যাচ্ছেন। মহৎ আচরণ করে যাচ্ছেন।

যদি শিক্ষক হিসেবে এমন আচরণ করতে থাকেন তখন কী হয় জানেন? মানুষ একেবারে আপনার গায়ের উপর এসে পড়ে। ঠিক না? এই শিক্ষকের ভদ্রতার সুযোগে সবাই একেবারে তার গায়ের উপর এসে পড়েছে। এমনকি বাচ্চারাও! যদি এমন আচরণ অব্যাহত রাখেন, তখন ছাত্ররা মনে করতে শুরু করে- তাদের কিছুই হবে না তারা মন্দ ব্যবহার করলেও, অসম্মানজনক আচরণ করলেও, শিক্ষকের আদেশ-নিষেধ না মানলেও। তাঁর কথার কোনো মূল্য নেই। কারণ, তিনি খুবই দয়ালু মানুষ। কারণ, তিনি খুবই ভালো মানুষ।
অন্যদিকে আছে আরেকজন শিক্ষক। যিনি কড়া মেজাজের মানুষ। দূর থেকে উনাকে ক্লাসের দিকে আসতে দেখলেই আপনি সটান হয়ে বেঞ্চে বসে পড়েন। মনে হয় যেন নামাজের জামাতে দাঁড়িয়ে আছেন। এমনকি এদিক ওদিকও তাকাচ্ছেন না। কেউ যদি কর্তৃত্ববাদী হয় তাকে দেখলেই শিরদাঁড়ায় কাঁপন শুরু হয়ে যায়। সম্পূর্ণ ভিন্ন মনোভাব।
এখন, এ শিক্ষক ক্লাস থেকে চলে যাওয়ার পর যদি ভদ্র শিক্ষক আসেন সবাই তখন-- "ওহ, যাক, এখন একটু রিলাক্স করতে পারবো।" কারণ, তিনি কারিম।

জানেন? আল্লাহ এই আয়াতে কী বলছেন? আল্লাহ তোমার প্রতি সবসময় কারিম ছিলেন, তার মানে তুমি কি এরকম অবজ্ঞামূলক আচরণ করতে থাকবে? আমি তোমার সমগ্র জীবন ধরে তোমার প্রতি কারিম ছিলাম; তুমি আমাকে মান্য করলেও বা অমান্য করলেও। তুমি কি মনে করতে শুরু করেছ যে, যেহেতু আমি তোমার প্রতি এতোই কারিম তোমার কাজের কোনো ফলাফল ভোগ করতে হবে না? আমি কি তোমাকে ভদ্রভাবে ভালবাসা সহকারে বলিনি তোমার কাজের কর্মফল আছে? আল্লাহ কি তোমাকে শিক্ষা দান করেননি? আল্লাহ কি আমাকে শিক্ষা দান করেননি? কোনটা সঠিক কোনটা ভুল? প্রতিটি কাজের জন্য কেমন মূল্য দিতে হবে? তিনি কি আমাদের জানান নাই বিচার দিবস কাকে বলে? তিনি কি বলেননি সমুদ্র ফুটতে থাকবে? এবং তারকাসমূহ খসে পড়বে? আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে? কবরসমূহ খুলে যাবে? তিনি কি এ সমস্ত কিছু আমাকে জানান নাই? তিনি কি তাঁর অসংখ্য অনুগ্রহের কথা বলেননি?

তিনি আমাকে একেবারে ঝাঁকি দিয়ে বলেননি। কিন্তু, এমন এক সময় আসবে যখন তীব্র কম্পনের সাথে জিজ্ঞেস করা হবে- হে মানুষ!! কিসে তোমাকে বিভ্রান্ত করলো? কিসে, কিসে তোমাকে প্রতারিত করলো তোমার মহানুভব পালনকর্তা সম্পর্কে?? (یٰۤاَیُّهَا الۡاِنۡسَانُ مَا غَرَّکَ بِرَبِّکَ الۡکَرِیۡمِ) [৮২:৬]

যখন বলা হয় কিসে প্রতারিত করলো? 'গাররাকা' অতীত কাল। ‘গাররা' ‘নাসারা’-র মত অতীত কাল। এরকম অতীত কালীন ক্রিয়া দ্বারা বুঝানো হচ্ছে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু, এই মুহূর্তে আমরা তো বিচার দিবসে দাঁড়িয়ে এটি পড়ছি না। আমরা তো এটা এখন দুনিয়াতে থেকেই পড়ছি। সুতরাং, আল্লাহ আমাদেরকে ভবিষ্যতের একটি চিত্র দেখাচ্ছেন। যা কিয়ামতের দিন ঘটবে। কিন্তু, এখনি এই মুহূর্তে তিনি আমাদেরকে এটা জানার সুযোগ করে দিয়েছেন।

সুতরাং, বর্তমানে যদি ভবিষ্যতের কোনো চিত্র দেখতে পান যে, এমন একটি দিন আসবে যেদিন আমি উপলব্ধি করবো কোনটাকে আমার বেশি গুরুত্ব দেয়ার দরকার ছিল। কিন্তু আমি সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি। এরপর আমাকে বলা হবে- কোন জিনিস তোমাকে প্রতারিত করলো তোমার মহামহিম পালনকর্তা সম্পর্কে?

সাথে সাথে আমার হুঁশ হবে এবং উপলব্ধি করবো যে, কিয়ামত তো এখনো সংঘটিত হয়নি। আমি এখনো এই দুনিয়াতে আছি। এই মুহূর্তে আমার অবস্থান এখানে, শেষ বিচারের ময়দানে নয়।

জানেন, তাহলে এখন প্রশ্নটির অর্থ কী? এখন প্রশ্নটির অর্থ হলো- নিজেকে প্রতারিত করার জন্য কোন কোন জিনিসগুলোকে আমি বার বার সুযোগ দিয়েছি, সুদূর অতীত থেকে আজ পর্যন্ত?

তা কি ছিল নিজের জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু মানুষ? নিজের কামনা-বাসনা? নিজের লোভ-লালসা? নিজের স্বার্থপরতা? নিজেকে প্রবোধ দেওয়া মিথ্যাগুলো? কী ছিল সেটা নিজের ভেতরে? সেটা কি ছিল নিজের ভেতরের কোনো ঘোর তমসা? কী ছিল সেটা যা আমাকে দূরে বহুদূরে প্রতারিত করে নিয়ে গেল? যাইহোক, একে আর সুযোগ দেওয়া যাবে না। নিজেকে পরিবর্তন করার সময় এসে গেছে। আমি এই আয়াতটি শুনেছি। আমার অগ্রাধিকার পাওয়া বিষয়গুলোতে আমি পরিবর্তন আনব।

এই ধরণের আয়াতগুলো আমার আপনার জন্য জীবন পরিবর্তনকারী আয়াত। যা-ই ঘটুক কোনো ব্যাপার না। নিজেকে পরিবর্তন করার এই ভ্রমণটা যত কষ্টকরই হোক না কেন, আমি প্রস্তুত, ইয়া রব! কারণ, আমার সমগ্র জীবন ধরে আপনি আমার প্রতি যথেষ্ট কারিম (দানশীল, উদার) ছিলেন। আমি এর জন্য প্রস্তুত, কারণ, আমি চাই এই উপলব্ধিটা আমার এখন হোক, শেষ বিচারের দিনে হওয়ার পরিবর্তে। আমি বরং এই উপলব্ধিটা এখন চাই। আমি পরোয়া করি না, এতে যদি আমাকে কাঁদতে হয় বা অন্য কাউকে কাঁদতে হয়। আমি পরোয়া করি না, এটা যদি আমাকে অসন্তুষ্ট করে বা অন্য কাউকে করে। আমি পরোয়া করি না এতে যদি আমাকে বিভিন্ন জিনিস ছাড়তে হয় বা অন্য কাউকে ছাড়তে হয়।

যদি এটা মদ পানের আসক্তি হয়, আমি আজকেই ছেড়ে দিবো। আমি পরোয়া করি না এতে যত কষ্টই হউক। এটা যদি নামাজ মিস হয়, আমি এখন থেকে নিয়মিত নামাজ পড়বো। আমি পরোয়া করি না এর জন্য যদি আমাকে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে হয়, আমি যাব। আমি নিজেকে পরিবর্তন করবো। যদি হারাম কিছু আমি অনেক দিন যাবত করে আসছি, আমি এই হারাম ছেড়ে দিবো। আমি পরোয়া করি না এতে কে ক্রুদ্ধ হলো আর কে অসন্তুষ্ট হলো। এটা যদি হারাম ব্যবসা হয়ে থাকে আমি ঐ ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছি। আমি পরোয়া করি না যদি টাকা আসা বন্ধ হয়ে যায়। আমি পরোয়া করি না। আমি যা নিয়ে পরোয়া করি তা হলো এই শেষ বিচারের দিন। এর নাম অগ্রাধিকার প্রদান, ঠিক না?

আর যখন এভাবে প্রায়োরিটিতে পরিবর্তন নিয়ে আসবেন, আল্লাহর ব্যাপারগুলোকে অগ্রাধিকার দিবেন, তখন দেখবেন আপনার নিজস্ব সত্তা এবং আশেপাশের মানুষেরা এই পরিবর্তনের তীব্র বিরোধিতা করছে। তারা এভাবে বলবে:
- আরে! কী হয়েছে তোমার? তুমি কি আর গুরুত্ব দিবে না অমুক অমুক ব্যাপারগুলোকে?
- না। আমি দিবো না। কারণ, অন্য একটি বিষয়কে আমি এখন বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আমি ঐটাকে মুকাদ্দাম বানিয়েছি। আর অন্যসবকিছুকে মুআখখার। ঐটাকে আমি সবার আগে রাখবো আর অন্যসবকিছুকে পরে। "আলিমাত মাফসুন মা কাদ্দামাত ওয়া আখখারাত- সেদিন তারা জানবে কোন কোন জিনিসগুলোকে তারা সামনে রাখেছিল আর কোন কোন জিনিসগুলোকে পেছনে।"

আমার এবং আপনার বরং এমন মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত যারা এখনি নিজেদের প্রায়োরিটি ঠিক করে নেয়। এখনি। নিজের মাঝে সেই মনোবল তৈরি করুন। আল্লাহর বাণীতে সেই শক্তি খুঁজুন। এ জন্যই তো আল্লাহর বাণী আমাদের সামনে আছে।
আমি আমার নিজেকে এবং আপনাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি যে, আমাদের আমলের দরজা এখনো বন্ধ হয়নি। অতীতে যে ভুল-ই করে থাকেন না কেন, যে পাপ-ই করে থাকেন না কেন, যে ভুল-ই আমি করে থাকি না কেন, তাওবার দরজা এখনো খোলা আছে। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান।

শুধু আল্লাহর কাছে ক্ষমার দুআ করেই থেমে যাবেন না বরং নিজের মাঝে সত্যিকারের পরিবর্তন নিয়ে আসুন। একটি বাস্তব পরিবর্তন। আল্লাহকে দেখান এবং নিজেকে দেখান যে, কোন কোন ব্যাপারগুলোকে আপনি সবার আগে গুরুত্ব প্রদান করেন। অন্য কারো নিকট আপনাকে কিছু প্রমাণ করতে হবে না। যে কেউ আপনাকে যাই বলুক না কেন, আশেপাশের লোকজন আপনাকে যেভাবেই দেখুক না কেন, এতে কিছু যায় আসে না। সময় আসলে তারা আপনার ব্যাপারে কোনো পরোয়া করবে না।

এতে কিছু যায় আসে না কে অসন্তুষ্ট হলো আর কে বাঁকা চোখে তাকালো বা কে কী মনে করলো। এই পৃথিবীর সবকিছুই উপলব্ধির ব্যাপার। একমাত্র যে উপলব্ধিটি এখানে গুরুত্ব পাওয়ার যোগ্য তা হলো- নিজেকে আপনি কীভাবে দেখেন এবং আল্লাহ আপনাকে কীভাবে দেখে। এ ব্যাপারটা যখন আপনার কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠবে কেবল তখনি আপনি পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। আর যদি তা না হয়, তবে, যে ধ্রুবকগুলোকে আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি, যেগুলো জীবনের অংশ, যেগুলো সবসময় বর্তমান থাকে, আল্লাহ বলছেন- যদি তারকারাজির যেখানে থাকার কথা সেখানে না থাকে, সমুদ্রগুলোর যেখানে থাকার কথা সেখানে না থাকে, সেগুলো এখন তো আর স্থায়ী কোনো জিনিস নয়, তখন মানুষের অভিমতকে কেন তুমি স্থায়ী কিছু মনে করছ? সমাজের অভিমতকে কেন তুমি স্থায়ী কিছু মনে করছ যে, এটাকে তুমি উপেক্ষা করতে পার না?

নিজের প্রায়োরিটি ঠিক করুন। আমাকে আমার অগ্রধিকারগুলো ঠিক করতে হবে।
আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লা আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত না করুন- যারা প্রতারিত হয় এবং তাদের পরম করুণাময় পালনকর্তাকে ভুলে যায়, যারা তাদের রবের উদারতার এমন সুযোগ গ্রহণ করে যে শেষ বিচারের দিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। " الَّذِیۡ خَلَقَکَ فَسَوّٰىکَ فَعَدَلَکَ - فِیۡۤ اَیِّ صُوۡرَۃٍ مَّا شَآءَ رَکَّبَکَ - আল্লাজি খালাকাকা ফাসাওওয়াকা ফাআ'দালাক। ফিই আইয়ি সুওরাতিম মা শা আরাক্কাবাক।" (৮২ঃ ৭-৮)

নিজের ফ্রি সময়ে...আবার বলছি, এটা সূরাতুল ইনফিতার। আমি চাই আপনারা নিজের ফ্রি সময়ে গোটা সূরাটি একবার পড়ে ফেলুন। যদি শুধু অনুবাদ পড়া সম্ভব হয়, তবুও পড়ুন। এবং চিন্তা করুন, গভীরভাবে ভাবুন আল্লাহ ছোট্ট এই সূরায় আমাদের কী বলেছেন। এটা এমনকি এক পৃষ্ঠাও না। অতএব, এটা বড় কোনো বাড়ির কাজ না। এক পৃষ্ঠাও না। পড়ার টেবিলে বসুন। নিজের জন্য। এ নিয়ে আপনাকে অন্য কারো সাথে কথা বলতে হবে না। নিজে নিজে বসে সূরাটি পড়ুন এবং গভীরভাবে ভেবে দেখুন আল্লাহ এখানে কী বলছেন, আপনাকে। আপনাকে উদ্দেশ্য করে তিনি কী বলছেন এই সূরার ভেতরে।

- নোমান আলী খান

পঠিত : ৭৯৬ বার

মন্তব্য: ০