Alapon

তেলের দাম বৃদ্ধিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হবার উপক্রম...



অবশেষে সরকার সফল হলো। সরকার সফল হলো দুদিক থেকে। প্রথমত, সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে। আর এই দাম বাড়ানো নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষ নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার আগেই পরিবহন ধর্মঘট শুরু হলো। এরপর আজ সরকার পরিবহন মালিকদের সাথে বসে বাসের ভাড়াও বৃদ্ধি করে দিলো। আর এভাবে সরকার পরিবহন মালিকদের তুষ্ট রাখতে সক্ষম হলো। দুদিকেই লাভ হলো!

মূলত, সরকার দেশের সাধারণ মানুষের কথা ভাবছে বলে মনে হয় না। কারণ, চারদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের মূল্য যখন লাগাড় ছাড়া, ঠিক তখনই এভাবে লিটার প্রতি তেলের দাম ১৫ টাকা বৃদ্ধি করার মানে পন্যের বাজারের আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া।

প্রথমত আমার যেটা মনে হচ্ছে, পরিবহন ধর্মঘটের ব্যাপারে সরকারের অস্বাভাবিক নীরবতা দেখে আমার মনে হয়েছে, এই ধর্মঘটে সরকারের স্বায় রয়েছে। না হলে পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে একটি কথাও শোনা যায়নি। যেহেতু সরকার কোনো আগাম ঘোষণা ছাড়াই তেলের দাম বাড়িয়েছে, তাই সরকার চাচ্ছিল পরিবহন ধর্মঘটের মতো বিপদে ফেলে জনগণকে তেলের অতিরিক্ত দাম মেনে নিতে বাধ্য করা হবে। কারণ, পরিবহন ধর্মঘট হলে মানুষ খুব স্বাভাবিকভাবেই বিপদে পড়বে। অফিসে যেতে ভোগান্তিতে পড়বে। বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যেতে ভোগান্তিতে পড়বে। চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে ভোগান্তিতে পড়বে। বাজার করতে গেলে ভোগান্তিতে পড়বে। এসব ভোগান্তিতে পড়ার দরুন সাধারণ মানুষ বলবে, দাম বাড়ছে ঠিক আছে, বাসের ভাড়াও বৃদ্ধি করুক! কিন্তু তারপর পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হোক। আর ঠিক এটাই হলো!

গত দুদিন থেকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ নাই। চাকরিজীবিরা অফিস করতে বাধ্য। তাই ১০০ টাকা রিক্সা ভাড়া দূরত্বে ৫০০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে অফিস করতে হচ্ছে। যেখানে সাধারণত রিক্সা ভাড়া ৫০ টাকা হওয়ার কথা, সেখানে যেতে ২০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। তার চেয়ে সাধারণ মানুষের কাছে বাসের অতিরিক্ত ভাড়া দেওয়াই সহজ। এমন একটা পরিস্থিতিতে ফেলে আজ বাস ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। সরকারি ঘোষণা মতে ২৭ শতাংশ বাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। অর্থাৎ দূরপাল্লার বাসে কি.মি প্রতি ৪৫ পয়সা করে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাস কোম্পানীগুলো সরকারের বেধে দেওয়া ভাড়ার চেয়েও বেশি ভাড়া আদায় করে! তখনই শুরু হয় চূড়ান্ত ভোগান্তি।

তেলের দাম বাড়ার কারণে যদি কেবল বাস ভাড়া বৃদ্ধি পেতো তাতেও কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ট্রাকের ভাড়াও বৃদ্ধি পাবে। আর ট্রাকের ভাড়া বৃদ্ধি পেলে নিত্য পন্য আনা নেওয়ার খরচ বৃদ্ধি পাবে। আর খরচ বৃদ্ধি পেলে পন্যের দামও স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাবে। তাতে পন্যের বাজারের আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া হবে। শুধু পন্যের বাজারেই আগুন লাগবে না, আর কিছুদিন পর হয়তো নতুন করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা হবে। কারণ, তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও খরচ বৃদ্ধি পাবে। তারপর পানির দামও হয়তো বৃদ্ধি হতে পারে। কারণ, পানি শোধনের খরচ বৃদ্ধি পাবে। সবমিলিয়ে জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত অবস্থা!

পত্রিকায় দেখলাম, বাংলাদেশের মানুষের আয় নাকি ২৫০০ ডলার ছাড়িয়েছে। অথচ বাজারে পন্য কিনতে গেলেই পকেটের সমস্ত পয়সা ফুরিয়ে যায়। এমতাবস্থায়, আমাদের আয় ২৫০০ ডলার হলেই কি আর ৫০০০ ডলার হলেই কি! বাজার স্থিতিশীল না হলে, যতোই আয় করি না কেন, কোনো লাভ নেই!

পঠিত : ২৫০ বার

মন্তব্য: ০