Alapon

সারপ্রাইজ...!

ফরিদের অফিস দশ তলায়। পুরো বিল্ডিংয়ে মাত্র দুইটা লিফট। অফিস ছুটি হলে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় লিফটের জন্য। ফরিদের ধৈর্য্য কম। লিফটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা তার ঠিক পোষায় না। পুরো দশতলা সে সিঁড়ি বেয়ে নামে।


যদিও সিঁড়ি বেয়ে নামাটা খুব সহজ কর্ম নয়। টাইলসের সিঁড়ি। খুবই পিচ্ছিল। কোনো এক বিচিত্র কারণে বাঙালি বাথরুম আর সিঁড়িতে টাইলস লাগাতে পছন্দ করে। সেই টাইলস হয় আয়নার মতো মসৃন। ফরিদের প্রায়ই মনে হয় তার মৃত্যু হবে সিঁড়িতে। মানুষ লিফট ছিঁড়ে মরে। সে মরবে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়তে পড়তে। পত্রিকায় শিরোনাম হবে, সিঁড়ি দিয়ে পিছলে পড়ে নিহত ১। লোকজন সেই মৃত্যু সংবাদ পড়ে অনেক কষ্ট করে হাসি চেপে রাখবে।


ফরিদের বংশে হাস্যকর মৃত্যুর রেকর্ড আছে। তার দূর সম্পর্কের এক চাচা মারা গিয়েছিলেন এইভাবে। তার মাথার উপর সিলিং ফ্যান খুলে পড়ে গিয়েছিলো। যদিও সেই সময় সিলিং ফ্যান চলছিলো না। তখন ছিলো মাঘ মাস। গ্রামের লোকেরা শীতের সময় সিলিংফ্যান পত্রিকা দিয়ে মুড়ে রাখে; যাতে ময়লা না পড়ে। তার চাচাও সেই কান্ড করেছিলেন। শীতের শুরুতে পত্রিকা আর টেপ দিয়ে যত্ন করে ফ্যান বেঁধে রেখেছিলেন। রাতে ঘুমাচ্ছিলেন। সেই পত্রিকামোড়ানো স্থবির ফ্যান মাঘ মাসের রাতে আচমকা খসে পড়ে। থেতলানো মাথা নিয়ে তিনি দুই মাস বেঁচে ছিলেন। জ্ঞানহীন অবস্থায়। তাকে ঢাকায় এনে পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। তবু তার জ্ঞান আর ফেরেনি। হাসপাতালে তার নাম হয়েছিলো ফ্যানভাঙ্গা রোগী।


ফরিদেরও কপালে এমন কিছু আছে। তারও টাইটেল হবে সিঁড়িভাঙ্গা ফরিদ।


নিচে নেমে ফরিদ খানিকটা দ্বিধায় ভোগে। সবে সন্ধ্যা। এখনি বাসায় চলে যাওয়ার কোনো মানে হয় না। তাছাড়া এখন ভয়াবহ জ্যাম। ঘন্টা দুয়েক সময় কাটিয়ে রওয়ানা দিতে পারলে একটু আরামে পৌঁছানো যেত।


এই দুই ঘন্টা কি করা যায়?


হাতের ডানে মিনিট দশেক হাঁটলেই পর্যটনের বার। সেইখানে গিয়ে খানিকক্ষণ বসে থাকা যায়। দেশি একটা বিয়ার বের হয়েছে। দামে বেশ সস্তা। দুই তিনটা খেলে বেশ ঝিমঝিম ভাব হয়। এই বিয়ারের সমস্যা একটাই। মাথাব্যাথা। নেশা যত তীব্র হবে, পরদিন মাথাব্যাথা ততই ঘন হবে। মাসের শেষ। পকেটে পাঁচশ টাকার একটা নোট আছে। একবার ট্রাই করা যায়।


আরেকটা অপশন অবশ্য আছে। ডানে যাওয়ার বদলে বামে যাওয়া। রাস্তা পার হয়ে একটা রিকশা নিয়ে খানিকটা গেলেই বনানী এগারো। মুনার অফিস ওইদিকে। ওর সাথে অনেকদিন দেখা হয় না। মুনার সাথে লাস্ট কবে দেখা হয়েছিলো? ফরিদ মনে করার চেষ্টা করে। এটা মনে করতে গিয়ে ফরিদের মনটা খারাপ হয়ে যায়। মুনার সাথে তার পরশুদিনই দেখা হয়েছে। মাঝখানের একটা দিন দেখা না হওয়ার কারণে তার মনে হচ্ছে অনেকদিন। এটা খুবই খারাপ লক্ষণ। ফরিদ একটা সিগারেট ধরায়। আর তখনি দূরে কোথাও মেঘ ডেকে ওঠে। মুহুর্তেই আকাশ অন্ধকার হয়ে আসে। বৃষ্টি অবধারিত।


ফরিদ সাথে সাথেই মুনার সাথে দেখা করার পরিকল্পনা বাতিল করে। বৃষ্টির দিনে মুনার সাথে দেখা করার প্রশ্নই আসে না। পরশু দিন আকাশ খুবই মেঘলা ছিলো। মুনার সাথে সে তখন রিকশায় । মেঘের ডাক শুনে মুনা রিকশার হুড ফেলে দিলো। ফরিদ সাথে সাথে বলল, কি ব্যাপার? রিকশার হুড ফেললা কী মনে করে? আজ তো ছাতাও আনিনি। হুড তোলো।


মুনা বলল, আজ বৃষ্টিতে ভিজবো। দয়া করে আমার দিকে অমন করে তাকাবেন না। আজ বৃষ্টিতে শুধু্ ভিজবোই না, বৃষ্টি শুরু হলে আপনাকে একটা জিনিস দেবো। গিফট। এটা পাওয়ার পর আপনার মাথা যেটুকু ঠিক আছে, সেইটুকুও নষ্ট হয়ে যাবে।


ফরিদ আতংকিত গলায় বলল, কী সেটা?


মুনা বলল, সেটা তো বলা যাবে না। আপনি অনুমান করেন। আপনার তো অনুমান শক্তি ভালো।


ফরিদ মহা বিরক্ত হয়ে একটা সিগারেট ধরালো।


ফরিদের ভাগ্য সেদিন খুবই সুপ্রসন্ন ছিলো। হুট করে যেভাবে মেঘ জমেছিলো, তেমনি হঠাৎ করেই মেঘ কেটে একটু রোদ বেরুলো। বৃষ্টি আর হলো না। মুনার সারপ্রাইজড গিফট থেকে সে বেঁচে গেলো।


আরও কয়েকবার আকাশ ডেকে উঠলো। দুই এক ফোটা বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। ফরিদ দ্রুত পকেট থেকে মোবাইল বের করে বন্ধ করলো। এখন ফোন খোলা রাখা বেশ বিপদজনক। বৃষ্টি শুরু হওয়া মাত্র মুনা ফোন দেবে, এটা নিশ্চিত। কে জানে আজকেই হয়তো সে তার সারপ্রাইজড দিয়ে বসবে। ফরিদের সারপ্রাইজড ভালো লাগে না।


এখন সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে, বারে গিয়ে বসে আরামে বিয়ার খাওয়া। সাথে ঝাল দিয়ে ছোলাবুট। বৃষ্টির সাথে জমবে ভালো।


ফরিদ ডান দিকে হাঁটা শুরু করলো ....

পঠিত : ৬৭১ বার

মন্তব্য: ০