Alapon

তেলের দাম বৃদ্ধি সরকারের তরফ থেকে পরিবহন মালিকদের জন্য উপহারস্বরূপ...



লিটার প্রতি তেলের দাম ১৫ টাকা বৃদ্ধি, বাংলাদেশে ইতিহাসে সম্ভবত প্রথমবার ঘটল। অর্থাৎ তেলের দাম ২৩% বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর তেলের দাম বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে টাকার অবমূল্যায়ন করা হল। এতো বৃহৎ আকারে টাকার অবমূল্যায়ন স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে একবারই ঘটেছিল, ১৯৭৫ সালে। এর পর থেকে ৫০ পয়সা করে টাকার অবমূল্যায়ন করা হতো। এখন ডলারের বিপরীতে টাকা ৮৬ টাকা ৩০ পয়সা হয়ে গেছে। সামনের দিনে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে অর্থনীতিবিদরা মন্তব্য করছেন।

তেলের দাম বৃদ্ধি করা হল কেন?

সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, ভারতের তুলনায় বাংলাদেশে ডিজেলের দাম তুলনামূলক অনেক কম। ভারতে যখন ডিজেলের দাম ১০০ টাকারও বেশি তখন আমাদের দেশে ডিজেলের দাম ৬৬ টাকা। ফলে বাংলাদেশ থেকে শত শত টন ডিজেল ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছিল। আর তেল পাচারের সত্যতাও পাওয়া গেছে। ভারতীয় যেসব ট্রাক পন্য নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে, সেগুলোর মাধ্যমে শত শত টন ডিজেল ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছিল। তাতে একদিকে বাংলাদেশের ক্ষতি হচ্ছিল, অন্যদিকে ভারতও রাজস্ব হারাচ্ছিল। আর এই পাচার রোধ করতেই নাকি সরকার তেলের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে!

পাচার রোধে তেলের দাম বৃদ্ধি- এমন হাস্যকর কথা তেলের বাড়ানোর যৌক্তিক কারণ হতে পারে কি? তেলের পাচার রোধ করা যাচ্ছে না, এই ব্যর্থতা সরকারের। কিন্তু তার দ্বায় কি দেশের সাধারণ মানুষকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে তেল ক্রয় করে মেটাতে হবে? মন্ত্রী সাহেবদের কথা শুনে মনে হচ্ছে যেন, তেল যে পাচার হয়ে যাচ্ছে, তার জন্য দ্বায়ী জনগণ। তাই তেলের দাম বৃদ্ধি করে জনগণকে সেই দ্বায় মেটাতে হবে। এমন জুলুম আর কোনো দেশের সরকার তার দেশের জনগণের উপর করে কিনা আমার সন্দেহ! স্বয়ং কিম জং উনও হয়তো এমন পাগলামো কথাবার্তা বলবে না!

অন্যদিকে সরকার বলছে, আর্ন্তজাতিক বাজারে এখন তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। অথচ বিগত ৫ বছর ধরে আর্ন্তজাতিক বাজারে তেলের দাম পড়তির দিকে ছিলো। মাঝে তেলের দাম জিরো ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু তখন তো সরকার তেলের দাম কমায়নি। বরং সাধারণ মানুষকে পূর্বের দামেই তেল ক্রয় করতে হয়েছে। আর এর ফলে সরকার তেল বিক্রি করে ৪৩ হাজার কোটি টাকা মুনাফা করেছে।

এখন যদি সরকার তেলের দাম না বাড়িয়ে ভুর্তকি দিতো, তাহলে সরকারকে বার্ষিক ভুর্তুকি দিতে হতো ২২৯ কোটি টাকা। সেই ৪৩ হাজার কোটি টাকা থেকে ২২৯ কোটি টাকা ভর্তুকি দিলে, আগামী বেশ কয়েকবছর তেলের দাম অপরিবর্তিত রাখা সম্ভব হতো। এতে সাধারণ মানুষের জীবন ধারণ সহজ হতো। কিন্তু সরকার বাহাদুর সাধারণ জনগণের কথা কখনো ভাবেন বলে মনে হয় না। নিত্য পন্যের বাজারে সব কিছুর দাম যখন উর্ধ্বমুখী, ঠিক তখনই সরকার তেলের দাম বাড়িয়ে দিলো। আর এতে করে পন্যের বাজারের আগুনে ঘি ঢেলে দেওয়া হল। আর এই সুযোগে পরিবহন মালিকেরা বাসভাড়া ২৭% বৃদ্ধি করল! এ যেন সরকারের পক্ষ থেকে পরিবহন মালিকদের জন্য উপহার!

পঠিত : ১৯৭ বার

মন্তব্য: ০