Alapon

"তুরস্ক-মিসর সুসম্পর্ক সহজেই হচ্ছে না"



গত আট বছর ধরে তুরস্ক-মিসর সম্পর্ক ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। মিসরের পণ্ডিতরা প্রচার করছেন যে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগানের ইসলামপন্থী মতাদর্শ এবং মুসলিম ব্রাদারহুড, এমবির সাথে সম্পর্ক এর একটি কারণ। তারা আরো মনে করেন, ধর্মীয় কর্তৃত্ব ও নেটিজেনদের মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব অনেক দেশে শুরু হয়েছে। অনেকেই সেকুলার ভাবধারা ও ইসলামের সাথে বিরোধের কথাও বলছেন। এরদোগান বৈশ্বিক মঞ্চে মিসরের সাথে সৌহার্দ্যের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথাও বলছেন বারবার।

মিসরের সাথে তুরস্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও বন্ধুত্বের প্রচেষ্টা উভয়ের সাথে এরদোগানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ ও আঞ্চলিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার অনেক বিষয় জড়িয়ে রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

২০০২ সালে একেপি, জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি তুরস্কে ক্ষমতায় আসার পর মধ্যপ্রাচ্যের সাথে দেশটির সম্পৃক্ততা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য একেপি সরকারের প্রচেষ্টাও কম ছিল না।

চলতি কুড়ির দশকের প্রথম দিকে এরদোগানের পররাষ্ট্র নীতি তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী পররাষ্ট্র নীতি পদ্ধতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল; অর্থাৎ আঙ্কারা মধ্যপ্রাচ্যে নিরপেক্ষতার ভূমিকা এবং ন্যাটো বা উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থার সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সাথেও ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখেছে।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলু একটি জনপ্রিয় সর্বজন সমর্থিত স্লোগান দিয়েছিলেন, ‘প্রতিবেশীদের সাথে শূন্য সমস্যা’ অর্থাৎ সব দেশের সাথে বিরোধ মিটিয়ে ফেলা এবং স্থিতাবস্থা বজায় রাখা তুরস্কের অভিপ্রায়। তবে সার্বিক বিচারে সেটি অনেক ঝুঁকিপূর্ণ স্লোগান। কেননা ইসরাইলসহ আরো পাশের ও কয়েকটি কিছু দূরবর্তী দেশের সাথে তুরস্কের স্বার্থ নিয়ে বিরোধ বিদ্যমান। তুরস্কের সাথে সম্পর্ক বেশির ভাগই বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার পারস্পরিক প্রয়োজনীয়তা দ্বারা চালিত।

২০-এর দশকের শুরুতে মিসরের মুবারক শাসনের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক ভালো ছিল। এই সময়ে একেপি ও মুসলিম ব্রাদারহুডের মধ্যে আদর্শগত উত্তেজনা থেকে যায়। প্রসঙ্গত, মিসরে মধ্যপন্থী ইসলামী আন্দোলনও কম জনপ্রিয় নয়। ওয়াসাত পার্টি মিসরে জনসমর্থিত একটি প্রধান মধ্যপন্থী ইসলামী দল।

সমালোচকরা বলছেন, ২০১০-১১ সালে তিউনিশিয়ায় আরব অভ্যুত্থান শুরু হওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি একেপির দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। ২০১১ সালে টানা তৃতীয় নির্বাচনে জয়ের পর এরদোগান তার ক্ষমতার শীর্ষে ছিলেন। তিনি উদারপন্থীদের সাথে তার জোট থেকে সরে আসতে শুরু করেন এবং নিজের হাতে ক্ষমতা রাখার প্রতি মনোনিবেশ করেন। ফলস্বরূপ প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর মতো কিছু শীর্ষ স্থানীয় নেতা দলত্যাগ করেন, তন্মধ্যে একজন নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে সরকারি সম্পত্তি অধিকারের অপরাধে মামলার শিকার হন।

একেপির উদ্দেশ্য ছিল, তুরস্ককে আঞ্চলিক প্রভাবশালী ও শক্তিশালী দেশ হিসেবে ঘোষণা করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকাকে আরো সংহত করা। তুরস্ক - ইসলাম, গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতির সফল মিশ্রণকে আরব বিশ্বের জন্য উপযুক্ত মনে করে। তখন থেকে একেপি ও মুসলিম ব্রাদারহুডের মধ্যে অনেক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হতে থাকে।

মিসরীয় প্রেসিডেন্ট সিসিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা অভিযোগ করেন যে, একেপি ২০১২ সালের মিসরীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ব্রাদারহুডকে প্রার্থী দিতে রাজি করিয়েছিল। ড. মোহাম্মদ মুরসি মিসরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে, তুরস্ক-মিসরের সম্পর্ক ঐতিহাসিক উচ্চতায় পৌঁছায়। এরদোগান ও দাভুতোগলু আশা করেছিলেন যে, একটি উদীয়মান তুর্কি-মিসরীয় অক্ষ তৈরি হবে এবং ওই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তৃত হবে। ২০১৩ সালে ড. মুরসিকে অপসারণ তুরস্কের পররাষ্ট্র নীতি কৌশলের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

অভিযোগ করা হয় যে, ২০১৩ সাল জুড়ে এরদোগান মিসরে মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্যদের দুর্দশার প্রতিকারের সুযোগ দেখেছিলেন। তার নিজের রক্ষণশীল জনগণকে একত্রিত করার জন্য মিসর ও তুরস্কের ঘটনার মধ্যে একটি সমান্তরাল অবস্থান তৈরি করা দরকার জেনে এরদোগান অনেক ভিন্নমত পোষণকারী, এমবি-সমর্থিত মিসরীয়দের তুরস্কে থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন।

এক দিক থেকে এমবি যত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এরদোগানের বার্তা ততই পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। অবশ্যই তিনি নতুন শাসক এবং এমবির মধ্যে মধ্যস্থতা চেষ্টা করলেও সিসির একগুঁয়েমির কারণে মিসর-তুরস্ক সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে।

মুসলিম ব্রাদারহুড বা এমবির প্রতি সমর্থন দেশীয় রাজনীতির একটি বিষয় হয়ে ওঠে, কারণ এরদোগান ক্রমবর্ধমানভাবে নিপীড়িত মুসলিম ব্রাদারহুড সদস্যদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করেন। অনেক সময় এরদোগান সিসিকে মৌখিকভাবে আক্রমণ করেছেন। এর পরের বছরগুলোতে দুই দেশ বিভিন্ন আঞ্চলিক সঙ্ঘাতে বিরোধী পক্ষের পাশে দাঁড়ানোর সাথে সাথে উত্তেজনা আরো গভীর হয়। লিবিয়া, পূর্ব ভ‚মধ্যসাগরীয় ও কাতার সঙ্কটে এরদোগান ও সিসি পরস্পর বিরোধী দলে অবস্থান নেন।

উপরন্তু সোমালিয়া ও সিরিয়ায় তুরস্কের সামরিক উপস্থিতি, সুদান থেকে সুয়াকিন দ্বীপের নব্বই বছরের পুরনো ভাড়ার মাধ্যমে আঙ্কারার লোহিত সাগরে পা রাখার প্রচেষ্টা এবং ইথিওপিয়ার সাথে তুরস্কের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক কায়রোকে চিন্তার সাগরে ভাসায়। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তুরস্ক ও মিসরের মধ্যে বন্ধুত্বের বেশ কয়েকটি লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে এ চিত্রটি পরিবর্তিত হতে শুরু করেছে।

আড়ালে ক‚টনৈতিক ও গোয়েন্দা কর্মীদের যোগাযোগের পর, বছরের পর বছর ধরে প্রথম আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক গত ৫ মে কায়রোতে অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এ ধরনের মিথষ্ক্রিয়া উভয় দেশের উপকারে আসতে পারে; এটি স্পষ্ট যে, তুরস্ক মিসরের সাথে বেড়া মেরামত করতে বেশি আগ্রহী। অন্য দিকে মিসর দরজা পুরোপুরি বন্ধ না করে আলোচনার টেবিলে বেশ কয়েকটি শর্ত তুলে রেখেছে।

মিসরের সাথে বন্ধুত্বের জন্য তুরস্ক চাপ সৃষ্টি করেছিল। আঞ্চলিক রাজনীতিতে সমর্থন ও নেতৃত্ব দেয়ার মানস ও পররাষ্ট্রনীতি সমন্বয়ের জন্য এরদোগান চেষ্টা করে আসছে এবং অনেকাংশে তিনি সফলও হয়েছেন এতে।

তুরস্ক বিশেষ করে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় সঙ্ঘাতে বিচ্ছিন্নতা অনুভব করেছে। আঙ্কারা, দীর্ঘ দিন ধরে, এথেন্সের সাথে সামুদ্রিক সীমান্ত সমস্যার মধ্যে ছিল, যা তুরস্ক ও সাইপ্রাস উত্তেজনার কারণে আরো বেড়ে যায়।

তুরস্ক সাইপ্রাস প্রজাতন্ত্রকে একটি সত্তা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না, বরং দাবি করে যে দ্বীপটি দুটি দেশ নিয়ে গঠিত : দক্ষিণে একটি গ্রিক রাষ্ট্র এবং উত্তরে একটি তুর্কি রাষ্ট্র। ১৯৭৪ সালে দ্বীপটিতে আক্রমণের পর তুরস্কই পরবর্তীটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে। গ্রিস ও সাইপ্রাসের সাথে এই পুরনো সমস্যাগুলো আরো খারাপ হয়ে যায় যখন ২০০৯ সালে পূর্ব ভ‚মধ্যসাগরে বড় গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। সামুদ্রিক সীমানা হঠাৎ অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, তুরস্ক নতুন আবিষ্কৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের অধিকারী হয়ে ওঠে।

এমবি নেটওয়ার্কের সাথে অনানুষ্ঠানিক জোটের ফলে, তুরস্কের এখন পূর্ব ভ‚মধ্যসাগরীয় মিসর, ইসরাইল, সিরিয়া ও আংশিকভাবে লেবাননের সাথে সম্পর্ক ভালো নেই। পূর্ব ভ‚মধ্যসাগরে তুরস্কের দীর্ঘতম উপকূল থাকা সত্তে¡ও কায়রোতে সদর দফতর থাকা পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় গ্যাস ফোরামে দেশটি কোনো সুবিধা করতে পারেনি। এ জন্য কায়রো আঙ্কারাকে দুষছে।

এই চুক্তির প্রেক্ষাপটে তুরস্ক লিবিয়ায় প্রশিক্ষণ ও উপদেষ্টার ভ‚মিকার জন্য ড্রোন, সাঁজোয়া যানবাহন, সামরিক কর্মীদের ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মোতায়েন করেছে। তুরস্ক লিবিয়ায় সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটি স্থাপন করে এবং সিরিয়া থেকে পেশাদার সৈন্য নিয়ে আসে। তিন হাজার থেকে ষোলো হাজার পর্যন্ত পেশাদার সেনা তুরস্ক মোতায়েন করে বলে মিসর অভিযোগ করে। এসব হস্তক্ষেপ লিবিয়ায় গৃহযুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করে এবং অনেক বৃহৎশক্তি যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পিছপা হয়। এর মধ্যে রাশিয়া ও ফ্রান্স ছিল। এরা লিবিয়ায় মিসর ও জেনারেল হাফতারকে সাপোর্ট দিচ্ছিল।

উপরন্তু চুক্তিটি একটি প্রস্তাবিত পাইপলাইনে হস্তক্ষেপ করেছিল, যা পূর্ব ভ‚মধ্যসাগরীয় প্রাকৃতিক গ্যাস ইউরোপে স্থানান্তর করবে। ২০২০ সালের গ্রীষ্মে তুরস্ক তার দাবিকৃত সামুদ্রিক সীমান্তে নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান শুরু করে এবং অনুসন্ধান জাহাজ রক্ষার জন্য নৌবাহিনী মোতায়েন করে। গ্রিস ও সাইপ্রাস দ্বারা পরিচালিত আরো অনুসন্ধান সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল এবং গ্যাসের মূল্য হ্রাস পাইপলাইন প্রকল্পটিকে অকার্যকর বলে প্রমাণিত করেছে।

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রুশ নেতা পুতিন উভয় দেশের মধ্য শান্তি প্রচেষ্টায় মধ্যস্থতা করতে কায়রো ও আঙ্কারা সফর করেন বলে জানা যায়। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি তুরস্কের সাথে তার দেশের সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য শর্তারোপ করেন। মিসরের মতে, আঙ্কারা মিসরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করলে আলোচনা হতে পারে। এখনো মিসর ও তুরস্কের সম্পর্কে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

বলা হয়, এরদোগান মিসরের অনেক দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। সব কিছু যোগ করে একটি মিশ্র ফলাফল আশা করা যায়। উভয় দেশেরই সম্পর্ক পুনর্মিলন ও স্বাভাবিক করার মধ্যে লাভ রয়েছে। তবুও একটি বিশাল দরকষাকষি যা তুরস্ক ও মিসরকে সব ক্ষেত্রে একই লাইনে নিয়ে আসবে তা এ মুহূর্তে সম্ভাবনাহীন বলে মনে হচ্ছে, কারণ সমস্যাগুলো প্রচুর।

তুরস্ক মিসরীয় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য তার দরজা খুলে রাখে, যা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদের কোনো কোনো কার্যক্রমে সহায়তার হাতও প্রশস্ত করে। তুরস্কের ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনা, সমুদ্রে তেল অনুসন্ধান, এসব মিসরের সাথে সংঘর্ষিক হয়ে দেখা দিয়েছে।

লিবিয়া মিসরের প্রতিবেশী এবং কায়রোর সেখানে নিজস্ব অ্যাজেন্ডা রয়েছে। বৈধ লিবিয়া সরকারের আহ্বানে তুরস্ক লিবিয়ায় যায়; ফলে কায়রো ও আঙ্কারার মধ্যে বিরোধের একটি নতুন অধ্যায় খুলে যায়। কিন্তু সিরিয়া ও ইরাকে তুরস্ক কী করছে, তা নিয়ে মিসরের আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি প্রশাসন কেন এত উদ্বিগ্ন, মিসর এটিকে আরব বিষয়ে হস্তক্ষেপ কেন মনে করে? আর্মেনিয়ার জন্য যেমন ভূমধ্যসাগরের প্রাসঙ্গিকতা নেই, অন্যের লেজুড়বৃত্তি ছাড়া, এসব মিসরের জন্যও কি তেমন কিছু নয়?

আরব লিগ আরবদের জন্য যা করেছে বা করেনি তা দিনের মতো পরিষ্কার। প্রতিদিন শত শত ‘আরব’ তাদের জন্মভূমি থেকে তুরস্ক বা অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে অভিবাসন করছে। আরব দেশগুলো কী ব্যাখ্যা দেবে এসব ঘটনার?

সিরিয়ায় তুর্কি সৈন্য মোতায়েনের আগে কমপক্ষে ৪০ লাখ সিরীয় তুরস্কে প্রবেশ করে। তারা আরব লিগের পতাকাধারী কোনো দেশে যায়নি। পরিবর্তে অ-আরব দেশগুলোতে অভিবাসন বেছে নেয়। এটি কি আরবদের লজ্জাবোধ করার জন্য যথেষ্ট নয়?

সংযুক্ত আরব আমিরাতের জনসংখ্যার মধ্যে ১০ লাখ আরবও নেই; আরবদের পক্ষে কে সোচ্চার হবে? এদের মধ্যে তুরস্কের নাগরিকত্বপ্রাপ্ত আরব, তুরস্কে আশ্রয় নেয়া অন্যান্য আরব ও সিরিয়ায় তুরস্ক সীমান্তে ৬০ লাখ আশ্রয় প্রার্থীসহ প্রায় ১৫ মিলিয়ন আরবদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে তুরস্ক। এহেন পরিস্থিতিতে আঙ্কারা আরবদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে - তা শুনতেও অশালীন লাগে, কোনো প্রমাণ তো অনেক পরের কথা।

মিসরের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক নিয়ে যে বিরোধ, সেগুলো কারো জন্য ক্ষতিকারক প্রমাণিত হচ্ছে না। গ্রিসের সাথে এর জোট স্পষ্টতই মিসরের স্বার্থের বিরুদ্ধে। গ্রিসকে বন্ধুত্বের মালা পরিয়ে তুরস্কের ক্ষতি করা এত সোজা নয়। মনে রাখতে হবে, তুরস্কও এখন একটি সুপার পাওয়ার। বিশ্বব্যাপী তার হস্ত প্রসারিত। অন্য দিকে আমিরাত, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্রের টাকা ছাড়া মিসর দেউলিয়া হয়ে যাবে।

যারা মিসর শাসন করছেন, তাদের এ ধরনের অযৌক্তিক কাজের আশ্রয় নেয়ার দরকার নেই। কারণ এভাবে তারা নিজেদের ইতিহাস, জনগণ ও সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষতি করছেন। এটি স্পষ্ট যে, তারা তাদের নিজস্ব নীতি অনুসরণ করছেন না। অন্যদের জন্য প্রক্সি হিসেবে তুরস্কবিরোধী অক্ষে থাকার মাধ্যমে মিসর কী হারাচ্ছে সে দিকে তাদের দৃষ্টি দেয়া উচিত। আরো একটি জরুরি বিষয়; তুরস্ক ও মিসরের সিসি শাসনের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন তুরস্ককে কোনো বিশেষ সুবিধা দেবে না, কারণ মিসরে কোনো সক্রিয় অর্থনৈতিক পরিবেশ নেই।

সিসি প্রশাসন মিসরকে যে অবস্থায় নিয়ে এসেছে, তা স্পষ্ট। দুর্নীতি, চাপ, খারাপ প্রশাসন, প্রতিটি ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ এবং আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ একটি নিরাপদ অর্থনৈতিক পরিবেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। যেহেতু এ ধরনের অভ্যুত্থান প্রশাসনে প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে স্বৈরশাসকের নিরাপত্তা এবং লাভ, অর্থনৈতিক ক্ষেত্র তাই কোনোভাবেই সুরক্ষিত হবে না। অতএব, মিসরের সাথে সম্পর্কের অভাব বা হ্রাস থেকে কেউ কিছু হারাবে না।

এতসব সত্ত্বেও দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক, ভূরাজনৈতিক সম্পর্কের জন্য ন্যূনতম সম্পর্ক থাকা প্রয়োজন। মিসরের বর্তমান অক্ষ সঠিক মানদণ্ড প্রকাশ করে না। এটি তুরস্কের পরিবর্তে নিজেরই ক্ষতি করছে। তুরস্ক এমন কোনো পন্থা অবলম্বন করেনি, যা মিসরের ক্ষতি করছে। সিসির সাথে তুরস্কের যেসব বিরোধের কথা বলা হচ্ছে তা মিসরের স্বার্থে, বিরুদ্ধে নয়।
~নয়াদিগন্ত
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার

পঠিত : ২৫৮ বার

মন্তব্য: ০