Alapon

নির্দিষ্ট কিছু আমল করলে জান্নাতে বিশেষভাবে নির্মিত প্রাসাদ পাওয়া যাবে...



আমরা সহিহ বুখারিতে বর্ণিত বিখ্যাত একটি হাদিস থেকে জানতে পারি- রাসূল (স) যখন জান্নাতে প্রবেশ করলেন...তিনি বলেন, "আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম এবং রুমাইসাকে (আবু তালহার স্ত্রীকে) দেখতে পেলাম।" এখানে একটু থামি। রুমাইসা ছিলেন বিখ্যাত সাহাবী আনাস ইবনে মালিকের মা। তিনি ছিলেন খুবই কর্মঠ এবং ধার্মিক একজন নারী। সবাই তাঁকে চিনত তাঁর দানশীলতার কারণে, তাঁর সাহসিকতার কারণে, তাঁর মায়া-মমতার কারণে, তাঁর সহানুভূতিশীল মানসিকতার কারণে। তিনি ছিলেন এমন এক ব্যক্তি যাকে মদিনার সবাই চিনত। এমনকি কিছু কিছু যুদ্ধেও তিনি নার্স হিসেবে যোগদান করেন। তিনি যুদ্ধাহতদের সেবা করতেন। তাঁর ঘটনা বেশ পরিচিত।

তো, রাসূল (স) বললেন, আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম এবং রুমাইসাকে দেখতে পেলাম। যিনি ছিলেন আবু তালহার স্ত্রী। এবং আমি বিলালের পদধ্বনি শুনতে পেলাম। এবং আমি দারুণ সুন্দর এক প্রাসাদ দেখতে পেলাম। এক বর্ণনায় এসেছে, এটি ছিল স্বর্ণের তৈরি। অন্য বর্ণনায় এসেছে- ঝকঝকে সাদা। উভয় বর্ণনা একত্র করে আমরা বলতে পারি, এটি ছিল অত্যন্ত চমৎকার এক প্রাসাদ। আর প্রাসাদের পাশে ছিল একজন জারিয়া। প্রাসাদের সঙ্গী। আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম, এটি কার জন্য? ফেরেশতা তখন উত্তর দিলো, এটি কুরাইশ গোত্রের এক যুবকের জন্য। রাসূল (স) বললেন- আমি ইচ্ছা করলাম, আমিই সেই যুবক। ফেরেশতা তখন বললেন- না, এটি ওমর ইবনে খাত্তাবের জন্য।

প্রাসাদটি এতোই জাঁকজমকপূর্ণ এবং মনোমুগ্ধকর ছিল যে, রাসূল (স) ভাবলেন এটি হয়তো তাঁর নিজের জন্য। কিন্তু, অবশ্যই তাঁর প্রাসাদটি হবে এর চেয়েও জাঁকজমকপূর্ণ। সুতরাং, তিনি ওমর (রা) এর প্রাসাদ দেখতে পেলেন। এটি ছিল সাদা, ধবধবে সাদা। স্বর্ণের তৈরি।

বিখ্যাত আরেকটি হাদিসে রাসূল (স) বলেছেন, "যে ব্যক্তি ফরজ নামাজের বাহিরে ১২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করবেন।"

তাহলে আমরা এখন জানলাম, আপনি যদি বিশেষভাবে নির্মিত, সাধারণ মানের চেয়ে উন্নত একটি প্রাসাদ পেতে চান যা আল্লাহ আপনাকে দান করবেন— জান্নাতে সবার বাড়ি থাকবে— কিন্তু, আপনি যদি আরো বেশি জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ চান, তাহলে ১২ রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করুন। আপনি জান্নাতে বিশেষভাবে নির্মিত একটি প্রাসাদ পাবেন। যার ডিজাইন করবেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা, যা আপনাকে উপহার দিবেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা।

[১২ রাকাত সুন্নত হলোঃ ফজরের ২ রাকাত + যোহরের আগে ৪ রাকাত + পরে ২ রাকাত + মাগরিবের পরে ২ রাকাত + এশার পরে ২ রাকাত ]

আমরা আরেকটি বিখ্যাত হাদিসের কথা জানি। আমাদের রাসূল (স) বলেছেন- "যে ব্যক্তি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জন্য একটি মসজিদ তৈরি করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ তৈরি করবেন।" আবারো বলছি, এর মানে এটা নয় যে, আপনি যদি মসজিদ নির্মাণ না করেন তাহলে জান্নাতে বাড়ি পাবেন না। না। জান্নাতে সবাই নিজস্ব বাড়ি পাবে। কিন্তু, যে ব্যক্তি ১২ রাকাত সুন্নত আদায় করবে, যে ব্যক্তি একটি মসজিদ নির্মাণ করবে তার জন্য থাকবে বিশেষভাবে নির্মিত, আরো বেশি বিলাসী আলাদা প্রাসাদ। এগুলো হবে জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল বিশাল প্রাসাদ। আরবি 'বাইত' পরিভাষাটি যে কোনো ধরনের বাড়ির জন্য প্রযোজ্য। আমরা এখান থেকে বুঝতে পারি...আমাদের সময়ে আধুনিক আরবি ভাষায় 'বাইত' বলতে সাধারণ বাড়ি-ঘর বুঝায়। কিন্তু প্রাচীন আরবিতে 'বাইত' বলতে যে কোনো ধরণের বাসস্থানকে বুঝাতো। তাহলে, 'বাইত' দ্বারা জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ যেমন বোঝানো হতে পারে আবার 'বাইত' দ্বারা মাটির ঘরও বুঝায়।

এখন, আমাদের যখন বলা হচ্ছে আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে একটি 'বাইত' দান করবেন আমরা এর অনুবাদ করবো আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে একটি বিশাল জাঁকজমকপূর্ণ প্রাসাদ দান করবেন। কারণ, এখানে মূলত বোঝানো হচ্ছে উক্ত আমলের জন্য অন্যদের চেয়ে তাকে উন্নত প্রাসাদ প্রদান করা হবে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা খাদিজা (রা) কেও একটি বিশেষ প্রাসাদ প্রদানের অঙ্গীকার করেন। সহিহ বুখারির একটি বিখ্যাত হাদিস। আমি সিরাতের আলোচনায় এটি নিয়ে কয়েকবার আলোচনা করেছি। আমাদের রাসূল (স) তখন মক্কায় ছিলেন, খাদিজা (রা) এর বাড়িতে। খাদিজা (রা) কোনো কাজে বাড়ির বাহিরে ছিলেন। জিব্রিল (আ) বাড়িতে এলেন। জিব্রিল (আ) রাসূল (স) এর সাথে কথা বলছিলেন। জিব্রিল রাসূল (স)-কে বললেন, "ও আল্লাহর রাসূল! খাদিজা আসছে।" খাদিজা তখন বাড়ির ভেতরে ছিলেন না। তিনি ছিলেন বাড়ির বাহিরে। তো জিব্রিল রাসূল (স) কে জানাচ্ছেন যে, খাদিজা আসছে। তাঁর সাথে ছিল কিছু খাবার এবং খাবার চুবিয়ে আহার করার জন্য কিছু একটা। মানে রুটি এবং সসের মত কিছু একটা। "তিনি এসে পৌঁছালে তাকে তার রবের সালাম প্রদান করুন এবং তাকে আমার সালামও প্রদান করুন।"

জিব্রিল (আ) কে পাঠানো হয়েছিল খাদিজা (রা)-কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সালাম পৌঁছানোর জন্য এবং জিব্রিল (আ) এর সালামও। এরপর জিব্রিল (আ) রাসূল (স) কে বলেন- তাঁকে জান্নাতের একটি বিশেষ প্রাসাদের সুসংবাদ প্রদান করুন। যা মুক্তোর তৈরি। 'কাসাব' মানে মুক্তো। কেউ কেউ বলেছেন, বিশাল মুক্তোর ভেতরটা ফেলে দিয়ে বানানো হয়েছে। তো, প্রাসাদের বাহিরের দিকটা হবে মুক্তোর তৈরি। সুতরাং, তাঁকে এমন এক বাড়ির সুসংবাদ প্রদান করুন যা মুক্তো দিয়ে তৈরি। "লা সাখাব ফিইহি ওয়া লা নাসাব- সেখানে থাকবে না কোনো কোলাহল, থাকবে না কোনো ক্লান্তি।" খাদিজা (রা) মক্কার খুব জনাকীর্ণ অংশে বাস করতেন। বাড়ি থেকে বাজারের দূরত্ব বেশি দূরে ছিল না। তাই গোলমাল, হট্টগোল, চিৎকার, হই হুল্লোড় মোটকথা শহরের সব কোলাহল রাসূল (স) এর বাড়ি বা খাদিজার বাড়ি থেকে শোনা যেত।

সুতরাং, জিব্রিল আকাশ থেকে নেমে এলেন এবং রাসূল (স)-কে বললেন আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন খাদিজাকে সালাম প্রদানের জন্য। আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকে সুসংবাদ জানানোর জন্য যে, পরকালে তাঁকে একটি বিশেষ বাড়ি প্রদান করা হবে যা তৈরি করা হবে মুক্তো দিয়ে। আর সেই বাড়িতে কোনো 'সাখব এবং নাসব' থাকবে না। সাখব মানে কোলাহল বা ঠাস-ঠুস বিরক্তিকর আওয়াজ। আর 'নাসব' মানে ক্লান্তি।

কারণ, আমাদের মা খাদিজা (রা) কাজ করতে করতে খুবই ক্লান্ত হয়ে যেতেন। তিনি রাসূল (স) এর সন্তানদের মাতা ছিলেন। তিনি রাসূল (স) এরও সেবা করতেন। তদুপরি তিনি ছিলেন ব্যবসায়ী নারী। তো, তাঁকে খুবই কর্মক্লান্ত সময় কাটাতে হত।

আর তাইতো জিব্রিল (আ) এসে তাঁকে জানালেন, এই কষ্টটা শুধু অল্প কিছু সময়ের জন্য। ইনশাআল্লাহ, যে ভবিষ্যৎ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে সেখানে আপনি ঐশ্বর্যশালী এক বিশেষ প্রাসাদ পাবেন। যা তৈরি করা হবে মুক্তো দিয়ে। আর সেই প্রাসাদে থাকবে না কোনো বিরক্তিকর কোলাহল। এটা হবে প্রশান্তময় এবং তৃপ্তিকর। এবং সেখানে আপনি কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়বেন না। জান্নাতে কোনো ঘরের কাজ নেই। জান্নাতে আপনাকে কোনো কাজই করতে হবে না। অতএব, জিব্রিল (আ) খাদিজা (রা)-কে এই সুসংবাদ প্রদান করেন।

আমাদেরকে আরো বলা হয়েছে এমন কিছু নির্দিষ্ট কাজ আছে যা করলে জান্নাতে বিশেষ ধরণের বাড়ি পাওয়া যাবে। মাঝে মাঝে এই বাড়িগুলোর নাম দেওয়া হয়েছে। মূলত, নাম থাকাটা সাধারণ নিয়ম। উদাহরণ স্বরূপ, রাসূল (স) বলেছেন- আমি জান্নাতের প্রান্তসীমায় একটি বাড়ির গ্যারান্টি দিচ্ছি...। অর্থাৎ, জান্নাতের চৌহদ্দির কাছে। যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে। জাস্ট তর্কাতর্কি বা ঝগড়াঝাটি বাদ দাও। শুধু আল্লাহর জন্য বাদ দাও।

- ইয়াসির ক্বাদি

পঠিত : ৩৩৮ বার

মন্তব্য: ০