Alapon

যার যে ফিল্ড......



ডঃ কামরুল হাসান মামুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রফেসর। কয়েকদিন আগে তিনি একটি ফেইসবুক পোস্ট দিয়েছেন।
.
এই পোস্টের প্রথম দিকের কিছু অংশ হলো-
//ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের Botany বিভাগের ড. মোঃ আবুল হাসান উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির জন্য জীববিজ্ঞান বই লিখেন। বইটি হাসান বুক হাউস থেকে প্রকাশিত। এটি ১৯৭৪ সালে নাকি প্রথম প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে এর একাধিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে সকল বই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি কর্তৃক অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হলে বইটি অনুমোদন লাভ করে। ২০২১ সালে সর্বশেষ নবম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। বেসরকারিভাবে প্রকাশিত ২০২১ সালের সংস্করণে কিছু নতুন জিনিস সংযোজন করেন। যেমন বইটির তৃতীয় পৃষ্ঠায় জীবনের সংজ্ঞায়ন সম্পর্কে 'জীবন' নামে একটি নতুন পাঠ্য বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। জীবনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি লিখেছেন -- "দেহে আত্মা, প্রাণবায়ু বা রুহ্ থাকা অবস্থায় দেহ জীবিত, না থাকলেই দেহ মৃত। কাজেই আত্মা প্রাণ বা রূহ্-ই জীবন।" রূহের পরিচয় দিতে গিয়ে কোরাণের বনি-ইসরাইলের ৮৫ নাম্বার ভার্সও কোট করা হইছ -- ❛ক্বলি রূহ মিন আমরি রাব্বী— বলুন, রূহ্ আমার পালনকর্তার আদেশঘটিত বিষয়।❜
এইটা কিভাবে সম্ভব? কেন করা হলো?//
.
তার পোস্টের পরের অংশ, কমেন্ট সেকশন এবং এই পোস্টের ফলোয়াপ হিসেবে আর একটি ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে তিনি যা বলতে চাচ্ছেন তা হলো-
.
জীব বিজ্ঞান বইয়ে কুরআনের আয়াত দেবার মাধ্যমে বিজ্ঞানের অবমাননা করা হয়েছে। কুরআন কুরআনের জায়গায় থাকবে। বিজ্ঞান বিজ্ঞানের জায়গায় থাকবে। এখানে কোরআনের প্রবেশাধিকার নিষেধ। কুরআনের এখানে কিছু বলার নেই। ড. মোঃ আবুল হাসান বিজ্ঞান বইয়ে কুরআনের আয়াত এনে মারাত্মক ভুল করেছেন। তিনি বিজ্ঞান নিয়ে অধ্যয়ন করলেও বিজ্ঞান অন্তরে ধারণ করতে পারেননি।
.
আমরা পোস্ট দাতার যুক্তি আপাতত মেনে নিলাম। জ্বি প্রফেসর ডঃ কামরুল হাসান মামুন ঠিক কথা বলেছেন। বিজ্ঞানের মধ্যে কুরআন আনা উচিত নয়। যার যে ফিল্ড সেটা নিয়েই থাকা উচিত। অন্য ফিল্ডে নাক গলানো উচিত নয়।
.
তো এবারে আসুন , প্রফেসর ডঃ কামরুল হাসান মামুন তার নিজের দাবী করা এই ব্যাপারে কেমন আমল করেন- সেটা দেখা যাক।
.
প্রফেসর কামরুল হাসানকে অনেকদিন ধরে ফলো করি। উনার ফেইসবুক লিংক দিয়ে দিচ্ছি। আপনারাও পড়ে দেখতে পারেন উনার পোস্টগুলো। সাম্প্রতিক কয়েকটা পোস্ট দেখলেও চলবে।
.
আপনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করবেন তিনি নিজের কথার উপর আমল করছেন না। উনি ফিজিক্সের প্রফেসর। উনার কাজ হবে ফিজিক্সের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। এছাড়া শিক্ষকতা করার কারণে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে তিনি কথা বলবেন। কিন্তু আপনি দেখবেন উনি এসব কিছুর পাশাপাশি রাজনীতি, সমাজব্যবস্থা, ইসলাম, আফগান, তালিবান, নারী স্বাধীনতা , মানবাধিকার, ক্রিকেট ইত্যাদি নিয়ে কথা বলছেন। দেশ কিভাবে উন্নত হতে পারে, আফগানে নারীদের অধিকার কিভাবে ক্ষুন্ন করছে তালিবান(!) ইত্যাদি নিয়ে বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করছেন। অথচ এগুলো উনার ফিল্ড নয়। উনার ফিল্ড ফিজিক্স।
.
তো, দেখেন এটা হলো প্রফেসর মামুনদের মতো লোকদের দ্বিমুখিতা। উনারা নিজেরা যে কথা বলেন, যে কথার উপর অন্যদের আমল করতে বলেন, জোর খাটান, বাধ্য করেন, কেউ আমল না করলে ধর্মান্ধ, মৌলবাদী, রাজাকার, টাইপের ট্যাগ পারেন… কিন্তু নিজেরা তার উপর আমল করেন না। এটা শুধু প্রফেসর মামুনের সমস্যা নয়, বাংলাদেশে বিজ্ঞান, প্রগতিশীলতা, চেতনা নিয়ে চিল্লা পাল্লা করা সব লোকদেরই একই সমস্যা।
.
বাংলা ভাষায় প্রফেসর মামুনের জন্য একটা শব্দ বরাদ্দ আছে- ভন্ড । উনি স্যার মানুষ, জাতি গড়ার কারিগর। উনাকে এই নামে ডাকা হবে কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

পঠিত : ৪৬১ বার

মন্তব্য: ০