Alapon

সাব্জেক্ট রিভিউ- কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE)



#Subject_Review
#CSE
সাব্জেক্ট রিভিউ- কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (CSE)
-----------------------------------------------------------------
নিঃসন্দেহে সিএসই বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে ডিমান্ডেবল সাব্জেক্টগুলোর শীর্ষে। তাই বলে কি তোমারও সিএসই পড়া উচিত?
কেন তোমারও সিএসই পড়া উচিত, কেন উচিত নয়, সিএসই পড়তে তোমার মধ্যে কি কি গুণগুলো থাকা চাই, কি কি দোষ বর্জন করা চাই, সিএসই পড়ার সুবিধা কি, সমস্যা কি, সিএসইতে কি কি পড়ানো হয়, সিএসই নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা - ব্যাপারগুলো নিয়ে খুবই সংক্ষেপে কিছু লেখার চেষ্টা করবো।
▪️তুমি সিএসই পড়বে, কারণ:
১. তুমি বুদ্ধিদীপ্ত পরিশ্রমী। তুমি নূন্যতম সময়ে কিভাবে সর্বোচ্চ কাজ করা যায় -জানো। তুমি শুধু Hard worker না, smart worker ও।
২. তুমি অনেক ক্রিয়েটিভ। আইডিয়ার জ্বালায় ঘুম আসে না তোমার। মাথায় গিজগিজ করে খালি অদ্ভুত সব আইডিয়া।
৩. প্রব্লেম সলভিং তোমার নেশা। যেখানেই প্রব্লেম দেখো, সলভ করতে লেগে যাও। একেকটা প্রব্লেমের পেছনে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যয় করেও যখন সমাধান না হয়, তখনও তুমি আফসোস করো না। সিএসই পড়লে এটাই হবে তোমার মূল কাজ।
৪. তুমি বেশ সামাজিক। সবসময় সিনিয়র-জুনিয়রদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখো। কোনো কিছু না জানলে কারো থেকে জিজ্ঞেস করে জেনে নিতে একটুও লজ্জা হয় না তোমার। কারণ, তোমাকে অবশ্যই ডিপার্ট্মেন্টের সিনিয়রদের থেকে প্রতিনিয়ত শেখা লাগবে, নিজে যা জানো- জুনিয়রদের শেখানো লাগবে।
৫. নতুন নতুন জিনিস শিখতে তোমার ভাল্লাগে। কারণ, আজ যা শিখছো, প্রযুক্তির দুনিয়ায় কাল সেটা ডালভাত হয়ে যেতে পারে। তখন তোমার নতুন কিছু শিখে নেয়া লাগবে দ্রুতই। তাছাড়া, এতে তুমি আনন্দও পাও।
▪️ভুলেও সিএসই পড়বে না, কারণ :
১. উপরের গুণগুলো তোমার মধ্যে কমবেশি নেই।
২. খালি শর্ট টেকনিক খোঁজে বেড়াও।
৩. ম্যাথ তোমার কাছে এক আতঙ্কের নাম।
৪. ক্যাম্পাস লাইফ শুধু চিল করে কাটাই দিতে চাও।
৫. সব রেডিমেইড চাই তোমার। গুগল করাও তোমার কাছে একটা ঘাম ঝরানো কাজ।
৬. তোমার সেভিয়ার কোনো শারিরীক সমস্যা আছে। যেমন তোমার চোখে বড়সড় কোনো সমস্যা আছে, তাই ডাক্তার তোমাকে স্ক্রিনটাইম কমাতে বলছে।
▪️কোথায় পড়বোঃ
বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়েই এই বিভাগ রয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সকল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ঢাবি,জাবি, চবি, রাবিসহ প্রায় সবগুলোর সিএসই বিভাগই ভালো। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে IUT, NSU,Brack, AIUB,AUST, IIUC সহ অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয়ই ভালো করছে।
▪️সিএসইর কারিকুলামঃ
৪ বছরে মোট ৮ টি সেমিস্টারে মোটামুটি ৫০ টির মতো কোর্স করা লাগবে, ক্রেডিট মোট ১৬০ থাকবে। নূন্যতম ১৫৪ ক্রেডিট নিয়েই গ্রেজুয়েট হওয়া লাগবে। কোনো সেমিস্টারে ২.২৫ এর নিচে পেলে ফেল ধরা হবে। মানে তোমাকে ওই সেমিস্টারে আবার পড়া লাগবে। কি কষ্ট, তাই না?
কি কি পড়ানো হয়, তার তালিকা বেশ বড়। প্রায় ৫০ টি কোর্সের মধ্যে ৩৫ টির মতো কোর্স সরাসরি সিএসই সম্পর্কিত। বাকিগুলোর মধ্যে থাকবে ম্যাথ, ফিজিক্স, স্ট্যাটিস্টিক্স, ইংরেজি, ইকোনমিক্সের কিছু কোর্স।
এই মুহূর্তে মাথায় আসা কিছু রিসোর্স এর সন্ধান দেই, যেগুলো সিএসই পড়তে তোমার কাজে দেবে-
Site: github, geekforgeeks, gur99, freecodecamp, tutorialspoint, stack overflow, w3school
ইউটিউব চ্যানেল:
ইংরেজি: freecodecamp, programing with mosh, telesku, Neso Academy, Khan Academy, TutorialsPoint.
বাংলা: Anisul Islam, Jhankar Mahbub, learn with Sumit, Tamim Shahriar Shubeen.
হিন্দি: Apna College, Code with Harry, Dr Gajendra pauruhit.
কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাইট, যেগুলো থেকে প্রোগ্রামিং শিখবে, যেগুলোতে প্রোগ্রামিং কন্টেস্ট হয়-
CodeChef, uva, uri, hackerrank, topcoder, coderbyte সহ আরো অনেক আছে।
▪️সুবিধা:
▫️১. জবঃ
সিএসই পড়লে কোথায় কোথায় চাকরি করা যাবে?
-দেশে সিএসসি গ্রেজুয়েটদের চাহিদা বাড়ছে বৈ কমছে না। মোটামুটি নিচের সেক্টরগুলোতে তুমি কাজ করার সুযোগ পেতে পারো-
Computer Engineer (Firmware Engineer)
Computer System Analyst
Software Engineer
Network Engineer
Database Administrator
System Administrator
Software Developer/Programmer
Application Programmer/Developer
Game Developer
Web programmer.
বাংলাদেশে অনেকগুলো আইটি কোম্পানি গড়ে উঠেছে, এই ইন্ডাস্ট্রির ভবিষ্যতও বেশ উজ্জ্বলই মনে হচ্ছে। কয়েকটা শীর্ষস্থানীয় আইটি ফার্মের নাম নিচে দিয়ে দিচ্ছি-
1. Pro Software Company
2. HRSOFTBD
3. Workspace InfoTech
4. Tiger IT
5. Datasoft
6. BrainStation-23
7. Kaz Software
8. Dream71
9. Databiz Software
10. Cefal
সিএসই গ্রেজুয়েটদের ক্ষেত্রে স্যালারির রেঞ্জ বলা আসলেই কঠিন। একজন সিএসই গ্রেজুয়েটের স্যালারি আমাদের দেশেই ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে ৬/৭ লাখ টাকাও হয়। উন্নত বিশ্বে এই ফিগারটা কয়েকগুণ বেশি হয়-সেটাতো বলার অপেক্ষা রাখে না।
এসবের বাইরে প্রায় সবধরনের সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আইটি অফিসার হিসেবে কেবল সিএসই গ্রেজুয়েটদেরই যোগদানের সুযোগ থাকে। কেউ চাইলে অন্য ডিসিপ্লিনের অনেক জবও এখান থেকে করতে পারে, যে সুযোগ অন্যান্য গ্রেজুয়েটদের ক্ষেত্রে সামান্যই।
এছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরমাণু শক্তি কমিশন, E-governance এও সিএসই গ্রেজুয়েটদের চাহিদা প্রচুর।
▫️হাইয়ার স্টাডিঃ
হাইয়ার স্টাডির সুযোগ সিএসই গ্রেজুয়েটদের জন্য অবারিত। USA, Japan, Canada, Germany সহ উন্নত বিশ্বের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ই সিএসই গ্রেজুয়েটদের উচ্চশিক্ষার জন্য চমৎকার সব স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে MEXT/Monobusho (Japan), Erasmus mundus (Europe), Microsoft, IDB, Commonwealth scholarship সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস হিসেবে বিবেচিত।
▪️অসুবিধাঃ
আমাদের দেশে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই নিজের সাথে কম্পেটেবল কিনা না জেনে সিএসই নিয়ে থাকে। ফলে বেশিরভাগ (মে বি ৮০%+) শিক্ষার্থী পরবর্তীতে আফসোস করে থাকে। স্কিল না থাকলে রেজাল্ট যতোই ভালো হোক, সিএসইতে আশানুরূপ সাফল্য লাভ করা যায় না সাধারণত। এটিই অন্যান্য সাব্জেক্টের সাথে সিএসইর সবচেয়ে বড় পার্থক্য। এটি অবশ্য কারো জন্য আশার কথাও হতে পারে।
▪️কিছু প্রচলিত ভুল ধারণাঃ
১. সিজিপিএ কোনো ব্যাপারই না। এটা আসলে একদম মিথ্যা না হলেও পুরোটা সত্যি না। তোমার যদি সিজিপিএ ভালো না থাকে, বেশিরভাগ জায়গায় তুমি প্রাথমিক বাছাইয়েই বাদ পড়ে যাবে। তবে তুমি যদি দূর্দান্ত স্কিল্ড হও, তাহলে হয়তো তোমার ক্ষেত্রে সিজিপিএ ম্যাটার করবে না। সাস্টের মনির ভাইয়ের উদাহরণ সবখানেই শোনেছো নিশ্চয়ই? ভালো সিজিতো দূরের কথা, লাস্ট সেমিস্টার এক্সাম দেয়ার আগেই তিনি জবের অফার পেয়ে যান বিশ্বের অন্যতম টেক জায়েন্ট মাইক্রোসফটে।
এই টাইপের উদাহরণ আমাদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও আছে। আমাদের সুমিত সাহা ভাইয়া ৩ এরও অনেক কম সিজিপিএ নিয়েও আজ গুগলে জব করছেন!
তবে এই উদাহরণগুলো থেকে আসলে তোমার জন্য আপাতত কোনো শিক্ষা নেই, নিলে সেটা লাভজনক হবে মনে হয় না।
২. খুব ভালো গণিতজ্ঞ হতে হবে। এটা বেশ মুখরোচক একটা প্রচলিত ধারণা। ম্যাথে অনেক ভালো হওয়া অবশ্যই সিএসই পড়ার পক্ষে সুবিধাজনক, কিন্তু ম্যাথে যে একদম এক্সট্রিমলি প্রো হতেই হবে- এমন কোনো কথা নেই। ভালো হলেই চলবে।
৩. প্রোগ্রামিং এ প্রো হতে হবে। এটাও আগেরটির মতোই। অবশ্যই সবাইকেই প্রোগ্রামিং পারতে হবে, কিন্তু তাই বলে প্রত্যেককেই প্রো প্রোগ্রামার হতে হব- এটা ভুল কথা। জব সেক্টরে প্রোগ্রামিং এর বাইরেও, বিশেষত নেটওয়ার্কিং এ সিএসই গ্রেজুয়েটদের অনেক সুযোগ রয়েছে।
৪. সিএসইতে চান্স পেলেই লাইফ সেটেল্ড, চাকরি বুক পকেটে! এর চেয়ে ভুল ধারণা আর হতেই পারে না। তুমি যদি স্কিলড না হও, তাইলে সিএসই পড়ে বেকার থাকার সম্ভাবনা অন্যান্য যেকোনো ডিপার্টমেন্ট থেকে অনেক বেশি।
৫. আগে থেকেই প্রোগ্রামিং পারা লাগবে। একদম ভুল ধারণা। বেশিরভাগ ভালো প্রোগ্রামারই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে প্রোগ্রামিং শুরু করেছেন। আগে থেকেই প্রোগ্রামিং এ এগিয়ে থাকাতো নিঃসন্দেহে ভালো ব্যাপার।
▪️চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসইঃ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসইর আসনসংখ্যা ৬৫টি। ২০১৯-২০২০ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় ৪৭৪ মেরিট পজিশন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সিএসই পড়ার সুযোগ পেয়েছিলো। বলে রাখি, এ ব্যাপারটা ভীষণ রিলেটিভ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাস্টেস্ট বিভাগগুলোর একটা সিএসই। এখানে কোনো জট আপাতত নেই।
১১ জন প্রফেসরসহ এখানে রয়েছেন ২২ জনের অধিক ফ্যাকাল্টি, যারা বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে পড়াশোনা করে আসা। এখানে প্রায় ১০ টি সর্বাধুনিক ল্যাব রয়েছে।
(সিএসই, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই নিয়ে আর কোনো তথ্য জানার থাকলে জিজ্ঞেস করতে পারো অনায়াসেই)
-Mohammad Sayeed
Department of CSE, CU

পঠিত : ১২২৩ বার

মন্তব্য: ০