Alapon

আমার পরীক্ষা এবং কিছু কথা...



পরীক্ষা জিনিসটা আমাদের সকলের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এর সাথে জড়িয়ে থাকে আমাদের ভবিষ্যৎ।

পরীক্ষা যেনো আমাদের পিছুই ছাড়তে চায় না। একাডেমিক হতে শুরু করে আমাদের বিভিন্ন পরীক্ষা থাকে। আজ এই পরীক্ষা তো কাল ঐ পরীক্ষা। ক্লাস টেস্ট, মাসিক টেস্ট, হাফ ইয়ার্লি, নির্বাচনী অ্যান্ড সবার শেষে আসে অ্যানুয়াল পরীক্ষা। অ্যানুয়াল পরীক্ষাটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেটা আমাদের পরবর্তী বছরের সাথে রিলেটেড। সারাবছর কঠোর সাধনা করি এই পরীক্ষাটার জন্য।

পরীক্ষা সন্নিকটে এলেই আমরা অন্যসব চিন্তা মাথা থেকে ফেলে দেই। ম্যাথ সল্ভ তো ডায়লগ লেখা এই সাবজেক্ট টু ঐ সাবজেক্ট। এককথায় তখন আমরা পড়া ছাড়া অন্যদিকে মোটেও খেয়াল দেই না। অন্যসব বাদ দিলাম। আমরা তখন সালাতে হয়ে পড়ি অমনোযোগী। পড়া পড়া বলে সালাতেও মন দিতে পারি না। আর ইবাদত তো মোটেও হয়ে উঠে না। আমরা তখন ইবাদতের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ফেলি। দ্বীন পালনে তখন আমরা হয়ে পড়ি উদাসীন। যেটা একজন মুসলিম হিসেবে মোটেও কাম্য নয়!

তো এখন মেইন টপিক হচ্ছে-
পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কিভাবে পড়া এবং দ্বীন প্র্যাক্টিস উভয়টা একসাথে ম্যানেজ করা যায়? চলুন আজ আমি জানাবো আমার আইডিয়া গুলোর কথা। যেই আইডিয়া গুলো আমি আমার সকল পরীক্ষার সময় কমবেশি অ্যাপ্লাই করে থাকি। আশা করছি এগুলোর মাধ্যমে আপনারা অনেক ফেসেলিটিস ভোগ করবেন। সো শুরু করা যাক-
First of all আমি যেটা করি সেটা হচ্ছে,

[1] To Do List
পরীক্ষার রুটিন চলে এলেই আমি খুব সুন্দর একটা তালিকা ক্রিয়েট করে ফেলি। ঘুম থেকে উঠার পর থেকে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত কি কি করবো তার সকল কিছু এই লিস্টে থাকে।তালিকা তৈরি হয়ে গেলে আমি আমার পড়ার টেবিলের সামনে এই তালিকাটা আঠা দিয়ে এডজাস্ট করে রাখি এবং কোনো কাজ করার আগে তালিকায় চোখ বুলিয়ে নেই।
মূলত পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আমার সকল ধরণের কাজকর্ম এই তালিকার আওতায় হয়ে থাকে।

[2]Before the fajr prayers
পরীক্ষার সময় বাদে অন্যসময়ে বেশিরভাগ মানুষের ভোর রাতে উঠার অভ্যাস। এই অভ্যাসটা মন্দ নয়!

পরীক্ষা এলে আমিযে আমি খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি এবং নিজেকে প্রফুল্ল রাখার চেষ্টা করি। সাধারণত আমরা যখন রাত জেগে পড়ি; তখন অনেকটা অসুস্থতা অনুভব করি, আমাদের শরীর অনেক ক্লান্ত থাকে, সকালে উঠতে পারবো কিনা এই নিয়ে চিন্তা করতে করতে শোয়ার সাথে সাথে ঘুমটাও হাজার মাইল দূরে চলে যায়। শেষরাতের দিকে চোখে ঘুমেরা ভীড় করে। শেষরাতে ঘুমানোর ফলে ফজর টাও ক্বাযা হয়ে যায়, পরীক্ষার পড়াগুলোও রিপিট করা হয় না।

এমনটা আশেপাশের অনেকেরই হয় থাকে। দেখা যায় মানুষগুলো পরীক্ষার হলে যাওয়ার পর চিন্তায় চিন্তায় রাতের পড়াটুকুও ভুলে যায়। রেজাল্টের সময় খাতায় বড় বড় দুটো শূন্য মেলে।

পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আমি ভোররাতে ঘুম থেকে উঠে যাই। তারপর ওজু করে আসি। ওজু করলে খুব তাড়াতাড়ি চোখের ঘুম ঘুম ভাবটা কেটে যায় এবং শরীরে প্রশান্তি অনুভব করি। তারপর দু'রাকাত নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ দু'আ করি। দু'আ জিনিসটা আমাদের লাইফের খুবই ইম্পর্ট্যান্ট একটা বিষয়।

এই পর্বটা শেষ হলে আমি পড়তে বসি। ছোটবেলা থেকেই অনুভব করেছি ভোররাত অথবা সকালবেলার পড়াগুলো একদম মাথায় সেট হয়ে থাকে। আর তাই আমি সবসময় এই দুটো সময়কে কাজে লাগানোর চেষ্টা করি।

[3] After the fajr prayers
যখন মুয়াজ্জিনের সুমধুর কন্ঠে চারিদিকে আজান শুরু হয়; তখন আমিও আর দেরী না করে সালাতুল ফজর শেষ করি। নামাজের পর কুরআন তেলাওয়াত করে তাসবিহ পাঠ করি।
রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর কারনে ফজরের সালাতের পর আর ঘুমানোর প্রয়োজন হয় না। তাই এই সময়টাকে ইবাদত এবং পরে পড়ার মাঝে কাটিয়ে দেই। আমার সময়টাও আর অপচয় হয়না দ্বীন প্র্যাক্টিস এবং নিজের পড়াগুলোও রিপিট করা যায়।

[4] Prayers along with Azan
আজানের সাথে সাথে সালাতের অভ্যাস করাটা মোটেও সহজ ব্যাপার নয়। তবে এই অভ্যাস থাকলে কিন্তু একটুও মন্দ হয় না! পরীক্ষার সময়টাতে তো আরো ভালো হয়। আমাদের অনেকের স্বভাব হচ্ছে আজানের সাথে সাথে সালাত আদায় না করে কিছু টাইম লস্ট করে তারপর আদায় করা।

এটা একদম ঠিক নয়! এভাবে সময়ের খুব অপচয় হয়। পরীক্ষার সময় ছাড়াও বছরের প্রত্যেক সময়ে আজানের সাথে সাথে সালাত আদায় করার দারুণ অভ্যাস আমার। আলহামদুলিল্লাহ! এই স্বভাবের কারনে আমার সময়ে অনেক বেশি বরকত অনুভব করি। সালাতের পর যেই সময়টা বেছে যায় তা কাজে লাগানোর যথেষ্ট চেষ্টা করি।

[5]Sitting down to read
সন্ধ্যা বেলায় আমি যখন পড়তে বসি তখন আমার মনটা খুব আনচান করতে থাকে। খুব ইচ্ছে করে ফোনটা হাতে নিয়ে একবার ফেবুতে ঢু মেরে যাই। কখনো কখনো নিজের মনকে না মানাতে পেরে অনেকে ফোনটাও হাতে তুলে নেয়। আর পরক্ষণেই খেতে হয় মায়ের বকুনি। আর তখন মুখটা হয়ে যায় ফ্যাকাশে। মায়ের বকা খাওয়ার পর মুডটাও অফ হয়ে যায় পাশাপাশি পড়ায়ও মন বসে না। দেহটা ঠিকই চেয়ারে থাকি; কিন্তু মনটা নয়। সেটা বিভিন্ন জায়গায় নাচানাচি করতে থাকে।

এগুলো হলো শয়তানের ওয়াসওয়াসা। আমরা যখন পড়ার আগে দু'আ, কালাম না পড়েই টেবিলে বসি; তখন আমাদের চির শত্রু শয়তান বেশ খুশিই হয়।
পড়তে বসার আগে আমার মাথায় সবসময় এই দিকটা খেয়াল থাকে। তাই আমি পড়া শুরু করার আগে আল্লাহর কাছে দু'আ করে নেই। দু'আ করার ফলে শয়তান আর আমার ধারেকাছেও ঘেঁষতে পারে না।

[6] The relationship between examination and deen
পরীক্ষার সময়টায় আমরা সবকিছু থেকে একদম বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ি।
সাধারণত কোনো কিছু থেকে যখন দীর্ঘদিন বিরত থাকা হয়; তখন আমরা সেই বিষয়ের সাথে আর আগের মতো এডজাস্ট হতে পারিনা।

তেমনই পরীক্ষার এই সময়টাতে আমরা দ্বীনের সঠিক পালন, সালাত আদায়, ডেইলি ইবাদত ইত্যাদি থেকে মোটামুটি রকমে দূরে সরে যাই। দীর্ঘদিন চাপা থাকায় এগুলোর উপর মরিচা ধরে এবং আমরা উৎসাহ হারিয়ে বসি।

ছোটবেলা থেকেই অনুভব করতাম, আমি যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য কুরআন পড়া অফ রাখতাম পরবর্তীতে সেটা আর পূর্বের ন্যায় পৌঁছোতো না। অনেক সময় নিয়ে সেটা আগের অবস্থায় ফিরে আসতো।

তাই পরীক্ষার সময় হোক বা অন্য কোনো সময় হোক না কেন আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করতে হবে এবং দ্বীনের ছোট ছোট বিষয় গুলো পালনের চেষ্টা চালাতে হবে। এতে দেখা যাবে দুটোই সমান ভাবে পরিচালিত হচ্ছে। যাকে বলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা!

আমার যখন পরীক্ষা শুরু হয়; তখন আমার পরিবার আমাকে নিয়ে খুবই সচেতন হয়ে যান। পড়ার পাশাপাশি দ্বীনের বিষয়গুলো পালনে তারা আমাকে খুবই উৎসাহ প্রদান করেন। যার কারনে আমিও খুব সহজ ভাবে তা অ্যাভিডেন্স করে যেতে পারি।

ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়! এই কথাটা আমার কাছে খুবই ইউনিক টাইপের মনে হয়। এই কথাটা যে কতটা ট্রু সেটা আমি কাজেই প্রমাণ পেয়েছি।

পরীক্ষা এবং দ্বীন প্র্যাক্টিসের সমন্বয় করাটা খুবই সহজ! আমি যখন কোনো একটা বিষয় করতে খুব চাই তখন সেটা আল্লাহর রহমতে কমপ্লিট হয়ে যায়।
আর এটা হয় নিজের উপর প্রবল বিশ্বাস থেকে।
পরীক্ষা যেমন আমাদের যেমনের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় তেমনি দ্বীন পালনও খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটাকে রেখে আরেকটা ছেড়ে দিলে হবে না। দুটোই সমানভাবে পরিচালনা করা মোটেও সহজ কাজ নয় আবার কঠিনও নয়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পড়ার ফাঁকে যে সময়গুলো থেকে যায় তা আমাদের খুবই সুক্ষ্ম ভাবে কাজে লাগাতে হবে।

[7]At Last
আমরা যখন কোনো কিছু ধারাবাহিক ভাবে কন্টিনিউ করে আসবো তখন একটা সময় এক্সট্রা কিছু ফিল করবো। দুটো কাজ একসাথে পরিচালনা করার জন্য আমাদের সেটা খুব করে উপলব্ধি করতে হবে, মন দিয়ে ভাবতে হবে এবং সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আপনি বা আমি কি করতে পারবো কি পারবো না সেটা নিশ্চয়ই আমাদের থেকে ভালো কারোই জানা নেই। দেখা যায় খুব সহজ টাস্ক দেখেও আমরা নাক ছিটকে বলি,
"নাহ! এগুলো আমার দ্বারা সম্ভব নয়।"

কিন্তু একবার চেষ্টা করলে দোষের কি? একটা কাজ যখন আমরা প্রথমে শুরু করি তখন সেটা আমাদের কাছে জগতের সবচেয়ে কঠিন কাজ মনে হয়। আস্তে আস্তে সেটা হয়ে যায় সহজ। ম্যাথের কথা চিন্তা করুন... একটা ম্যাথ সল্ভ করার আগেই আমরা দুনিয়ার সকল কিছু ভেবে ফেলি।

কিন্তু দেখা যায় সেটার মতো সহজ আর হয় না।

লাইফের প্রতিটি সেকেন্ড আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়গুলোকে হেলাফেলা না করে কাজে লাগানো দরকার। পরীক্ষার সময়টাতো অবশ্যই! আমি শুধু পড়লাম আর বাকী কাজ পরের জন্য রেখে দিলেন এটা মোটেও ঠিক নয়। সব ছেড়ে দিলাম তো অমনোযোগীতা চলে এলো। তখন কিন্তু একদিনেই মনোযোগ ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। আবার মনে রাখতে হবে মনোযোগ ধরে রাখার জন্য হলেও নিয়মিত অনুশীলন করা প্রয়োজন। আর ইচ্ছে শক্তি তো জীবনের প্রতিটি ক্ষণে দরকার। তাই কোনো কিছু শুরু করার আগে নিজের ইচ্ছে শক্তিটাকে আরো বাড়িয়ে নিতে হবে। সবসময় সকল দিকে খেয়াল রাখতে হবে যেনো কোনো কিছুতে মরিচা না ধরে। এবং সবকিছু সমানভাবে পরিচালনা করতে পারলেই জীবনে সফল হওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ।

- কাজিমা

পঠিত : ৬৬৩ বার

মন্তব্য: ০