Alapon

ক্রিকেট, আমার জীবনের প্রথম প্রেম...



বহু বছর পর রংপুর সুপার মার্কেটে গেলাম। যদিও এই শহর আমার, কিন্তু এই শহরটা ঠিক আমার পরিচিত নয়। সুপার মার্কেট আরও বেশি অপরিচিত। এই মার্কেটে ঠুকলেই আমার কেমন জানি দম বন্ধ হয়ে আসতো। এখনও ঠিক তেমনই হাসফাস লাগে!

মানুষ সুপার মার্কেটে আসে কাপড়-চোপড় কেনার জন্য! আমি সুপার মার্কেটে যতোবার না কাপড় কেনার জন্য এসেছি, তার চেয়ে বেশি এসেছি ক্রিকেট ব্যাট কেনার জন্য! ক্রিকেট ছিলো আমার জীবনের প্রথম প্রেম। সুপার মার্কেটে খেলাঘরের সামনে গিয়ে এক ‍দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। কল্পনার জগতে আমি আমার জীবনের সেরা সেরা ইনিংসগুলো দেখছিলাম।

আমি ক্রিকেট খেলা শুরু করি টুয়েলভ ম্যান হিসেবে। প্রথমদিকে কখনোই মূল একাদশে জায়গা পেতাম না। কখনো কখনো দুই-তিন ওভার সাব প্লেয়ার হিসেবে ফিল্ডিং করার সুযোগ পেতাম। নয়তো প্লেয়ার কম থাকলে ১১ জনের প্লেয়ার কোটা পূরণের জন্য আমার নাম থাকতো। এটুকুতেই আমি খুশি ছিলাম। আর আমার শখ ছিলো উইকেটকিপিং করার! কিন্তু সত্যি বলতে, তৎকালীণ সময়ে সবচেয়ে বাজে উইকেটকিপিং করতাম আমি! প্রতি ম্যাচেই দুই-তিনটা করে ক্যাচ মিস করতাম। দল হেরে যেতো, তারপর সবাই আমাকে গালাগালি করতো। কিন্তু তারপরও আমি কিপিং করতাম।

এরপর যখন মূল একাদশে জায়গা মোটামুটি ফিক্সড হলো, তখন আমার ব্যাটিং পজিশন ছিলো ৮-৯! যার ফলে অধিকাংশ দিনই ব্যাটিং করার সুযোগ পেতাম না। একদিন বাবু ভাইকে বললাম, ‘ভাই, আজ ওপেনিং-এ খেলি?’

বাবু ভাই ‍মুখের ওপর বলে দিলো, ‘না! আজ আমি ওপেন করব।’

মুখ ফুটে একদিন ওপেন করতে চাইলাম! আর শালা বাবুরাম মুখের ওপর না করে দিলো। মনটা ভীষণ খারাপ। বাবুরাম হয়তো আমার মন খারাপ ধরতে পেরেছিল। তারপর মায়া করে আমাকে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে পাঠিয়ে দিলো।

কী ভাবছেন? সিনেমার মতো প্রথম ম্যাচে নেমেই বাজিমাত করে দিলাম? না! জীবনটা সিনেমা নয়, বাস্তবতা! আমি প্রথম বলেই ক্লিন বোল্ড হয়ে গেলাম। আউট হওয়ার পর নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছিলো। সেই রাগের চোটে হাতে থাকা ব্যাটটা সজোরে মাটিতে ছুঁড়ে মারলাম। কথায় আছে, অভাগা যেদিকে যায়, সাগরের পানি সেদিকেই শুকায়। ব্যাটটাও ঠুক করে ভেঙ্গে গেল! একে প্রথম ওভারের প্রথম বলেই আউট হয়েছি, তার উপর ব্যাটও ভেঙ্গে ফেলেছি। এবার আর নিস্তার নাই।

কিন্তু সবাই আমাকে অবাক করে দিয়ে চুপচাপ বসে রইল! শুধু বাবুরাম বলল, ‘কাল ব্যাট কিনে দিবি।’

আমিও সুবোধ বালকের মতো মাথা নাড়লাম!

পরের গেমে বাবুরাম কি মনে করে আমাকে আবারও ওপেন করতে পাঠালো! এই দিন আর সুযোগ মিস করিনি। প্রথম ম্যাচে হাজিপাড়ার সাথে ৪৭ বলে ৪০ রান করে অপরাজিত থাকলাম এবং দল জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলাম। সেইদিনের পর থেকে ওপেনিং ব্যাটসম্যান হিসেবে আমার জায়গা পাকাপোক্ত হয়ে গেল। তারপর এমন অবস্থা দাঁড়ালো, যদি ৪০ টা বল খেলতে পারি, তাহলে নামের পাশে ৭০-৮০ রান লেখা থাকতো!

আর উইকেটকিপিং?

উইকেটকিপিং যখন শুরু করি, তখন সহজ সহজ ক্যাচ মিস করে দলকে হারিয়ে দিতে আমার অসামান্য ভূমিকা ছিলো! কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে আমার হাত থেকে ক্যাচ মিস হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ালো। এটাই সত্যি ছিলো! আর ক্যাচ যেন মিস না হয়, সেজন্য জীবন ছেড়ে দিয়ে লাফ দিতাম। এই লাফ দিতে গিয়ে কত বার যে হাত কেটেছে, তার হিসাব নেই! আর যেদিন হাত কাটতো সেদিন আম্মার মাইর বোনাস হিসেবে থাকতো!

হায়! সেইদিনগুলো এখন অতীত হয়ে গেছে। আগে একটা দিনও ক্রিকেট ছাড়া কল্পনা করতে পারতাম না। এমনকি ঈদের দিনও বাবুরাম আর আমি স্কুল মাঠে গিয়ে দুজনে ক্রিকেট খেলতাম। আর এখন দিন গড়িয়ে মাস যায়, মাস গড়িয়ে বছর যায়- কিন্তু ক্রিকেট ব্যাট আর ছুঁয়েও দেখা হয় না। কিন্তু আজও ক্রিকেট আমার প্রথম প্রেম হিসেবেই রয়ে গেছে!

পঠিত : ২৮৯ বার

মন্তব্য: ০