Alapon

|| জামায়াতের ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ||


জামায়াত-শিবির এক চতুর্মাত্রিক হিংসা-বিদ্বেষ-জুলুমের স্বীকার। জামায়াতের অযাচিত অশোভন বিদ্বেষী সমালোচকরাই আমাকে তাদের প্রতি বারবার নমনীয় আর আন্তরিক করে তোলে। তদ্রূপ তাদের কিছু কর্মীদেরও আচরণ আমাকে আমার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে তোলে। তবে এ-কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, জামায়াতের ওপর বহু ইসলামপন্থীরাও চরম জুলুম আর ঘৃণার দৃষ্টি প্রদর্শন করে। তারা সর্ব দিকেই নিগ্রহের শিকার।
কেউ জামায়াত করা তো দূরে থাক, জামায়াতের পক্ষে যায় এমন দুয়েকটা সত্য বললেও উক্ত ব্যক্তিকে অপরাধী বানিয়ে দেয়া হয়। অন্তত পক্ষে তাকে জামায়াতের দালাল হলেও উপাধি প্রদান করা হয়। সে হিসেবে ডক্টর আসিফ নজরুল, পিনাকীর মতো লোকজনও জামায়াত ট্যাগ থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। তারা ইসলামের কোনো প্রতিনিধি না হয়েও স্রেফ দুয়েকটা সত্য কথা তারা বলেছেন। হয়তো তাদের বলা কথাগুলো জামায়াতের পক্ষেই এসেছে।
ইসলামি পাড়া তো আরো এককাঠি সরেস। তারা তো জামায়াতে ইসলামীকে, ইসলামি ছাত্রশিবিরকে ইসলামি দলই মনে করেনা। তাদের নেতা কর্মী হওয়া তো দূরের বিষয়, তাদের পক্ষে কিছু বললেই তারাও আপনার প্রতি ভালো দৃষ্টিতে তাকাবেনা। আড়চোখে তাকাবে আপনার প্রতি। মনে হয় জামায়াত করা পাপের কিছু। অপরাধের কিছু। ভূইফোঁড় অনেক প্রতিষ্ঠানের, অনেক ব্যক্তির, অনেক সংগঠনের উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্রশিবিরের হাজারো ভালো কাজের কোনো এপ্রিশিয়েট করা হয় না। স্বয়ং মাওলানা মওদূদী রহিমাহুল্লাহ এর মতো উম্মাহর এক সিংহ শাবকের পক্ষেও কিছু বলা হয় না। শুধু একটাই দোষ তিনি জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা। কেউ কিছু বললেও তাকে হেনস্তা করা হয়। কেউ ওনার অবদান নিয়ে কিছু বললে তাকেও জামায়াতে ইসলামীর আমীর-ওমরা সাব্যস্ত করা হয়।
জামায়াতের ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে :
১-একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক ইসলামি আন্দোলন।
২-তাদেরকে আমি আমার মুসলিম ভাই-ই মনে করি।
৩-তাদেরকে ফেরেশতা মনে করি না।
৪- তারাই হকের ডিলার তা ভাবিনা।
৫- তারা পথভ্রষ্ট গোমরাহ, এটা ভাবিনা।
৬-তাদের কর্মসূচি ও কর্মপদ্ধতির সমালোচনা করা যায়। করিও আমি।
৭- তাদের মতো একটা সংগঠনকে, যারা আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য নিজের জান বাজি রেখে বাতিলের শত হুমকি ধামকি উপেক্ষা করে পথচলে, যাদের জীবনের মিশন-ভিশনই হচ্ছে আল্লাহর জমিনে সর্বস্তরেই আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠা করা, তাদেরকে অনৈসলামিক দল বলে ফতোয়া দেওয়াই হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো জুলুম, সবচেয়ে বড়ো বেঈনসাফি !

যারা গণতান্ত্রিকতার অভিযোগে জামায়াতকে অভিযুক্ত করেন, তারা অনেকেই কওমি মাদরাসা এবং তার উস্তাগণকে আইডল মনে করেন। অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করেবন। অথচ কওমি উস্তাদ্গণই গণতান্ত্রিক রাজনীতি করেন। সেটার সাথে জড়িত তারাও। এটাকে পাইকারি দরে হারাম মনেও করেনা। আমার জানামতে কওমি উস্তাদ্গণও গণতন্ত্রকে জামায়াতের দৃষ্টিতেই দেখে। যেমন মামুনুল হক, আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, আল্লামা আজিজুল হক, চরমোনাই পীর, মুফতি ওয়াক্কাস-সহ কওমি আলিমগণও গণতন্ত্রের রাজনীতি করেন।
আবার যারা বিজাতীয় জাতীয়তাবাদী সংস্কৃতির জন্যে জামায়াতকে অপছন্দ করেন, এটা অবশ্যই ভালো দিক যে, তারা জাতীয়তাবাদের উপাদানকে ইসলামের সাথে গ্রহণ করেনা। কিন্তু এই জাতীয়তাবাদী উপায়-উপাদানের জন্যে কিন্তু তারা জামায়াতকে অনৈসলামিক দল-সাব্যস্ত করে, তাহলে সেই একই দায়ে জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকেও দায়ি করা যায়। করা উচিৎও বটে।


|| জামায়াতের ব্যাপারে আমার দৃষ্টিভঙ্গি ||
~রেদওয়ান রাওয়াহা
২৮-১১-২১ ইং

পঠিত : ৯১৫ বার

মন্তব্য: ০