Alapon

দশলাখ হাদিস লিপিবদ্ধকারী ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মায়িন-পর্ব : ০১




রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিস সমূহের প্রতি, নববী ইলমের রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি কতোটা ডেডিকেশন থাকলে, কতো বেশি পরিশ্রমের প্র্যাক্টিস থাকলে একজন মানুষের পক্ষে দশলক্ষ হাদিস নিজ হাতেই লিপিবদ্ধ করা যায়? হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন দশলক্ষই!
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসগুলোর শুদ্ধাশুদ্ধি নির্ণয়ের জন্য, যথাযথভাবে উম্মাহর কাছে সংরক্ষণের জন্য ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মায়িন এটাই করেছেন।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো ফাসিক্ব ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তবে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখো’ (হুজুরাত ৪৯/৬)।

আর তাঁর মতো এমন বিদগ্ধ ইমাম কি আল্লাহর এই নির্দেশনা অমান্য করে এর বাহিরে চলতে পারেন? তাই তো তিনি এ হাদিসগুলো সংরক্ষণ করেই শুধু বসে থাকেননি, এগুলোর শুদ্ধতা যাচাই-বাছাই করার কাজও করেছেন। খুবই মনোযোগের সাথেই করেছেন। যার কারণে তাকে শুনতে হয়েছে অনেক অপবাদ আর গালাগালি। তিনি রিজালশাস্ত্রে বিশেষজ্ঞ হওয়ায় (রিজাল শাস্ত্র হলো হাদিসের সনদ সম্পর্কে জ্ঞান। অর্থাৎ সনদে যে সকল বর্ণনাকারী রয়েছেন, তাঁরা নির্ভরযোগ্য কি-না, সে সম্পর্কিত বিশেষায়িত জ্ঞান।) হাদিসের রাবিদের (বর্ণনাকারীদের) ব্যাপারে তার ছাত্রদের অবগত করতেন। হাদিসগুলোর অবস্থা জানাতেন। এটাই তখনকার সময়ে অনেকের সহ্য হতো না। তাই তো তারা তাকে গালাগাল করতো। গীবতকারী বলতো। বলতো ইয়াহইয়া ইবনু মায়িন গীবত-শেকায়েতকে ইবাদাত হিসেবে গ্রহণ করা ব্যক্তি। এমনও অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আসতো যে, তিনি নাকি আল্লাহর সৃষ্টির বিকৃতিকারী। কিন্তু তবুও তিনি কেবল হাদিসের বিশুদ্ধতা প্রমাণ ছাড়া কারো বিরুদ্ধে “টু” শব্দটিও করেননি।

হাদিস শাস্ত্রের বাহিরে তাঁর মজবুত পদচারণা ছিলো। আর সেটা হলো কবিতা সাহিত্যে। তিনি ছিলেন একজন স্বভাব কবি। তৎকালীন খুবই জাঁদরেল কবিদের অন্যতম একজন ছিলেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধবাদীরা কাব্যের মাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে অমূলক-অন্যায় সমালোচনা করতো। ঘৃণামুখি কবিতার চাষাবাদ করা হতো এই মহান মানুষটির বিরুদ্ধে। এতো কিছুর পরেও তিনি তাদের বিরুদ্ধে একলাইনেরও একটা কবিতা লিখে জবাব দিয়েছেন বলে প্রমাণ পাইনি আমরা। কিন্তু তাঁর পক্ষ হয়ে অনেকে অন্যায় সমালোচনাকারীদের জবাব দিয়েছেন। মোটাদাগে সে সময়ে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে গেছে যে, তাঁর পক্ষে-বিপক্ষে কবিতাকে সমালোচনার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে কবিতা যুদ্ধ চলতো। সমালোচকরা যেভাবে ওনাকে কবিতার মাধ্যমে সমালোচনা করতো, তদ্রূপ ওনার শুভাকাঙ্ক্ষীগণও কবিতার মাধ্যমেই তাঁর পক্ষাবলম্বন করতেন। তাঁকে ডিফেণ্ড করতো।

এই মহান মনীষী জন্মগ্রহণ করেন ১৫৮ সালে। বাগদাদে। বসবাসও করতেন সেখানেই। তার জীবনী থেকে জানা যায় তিনি বনু মুরবার আযাকৃত দাস ছিলেন। কিন্তু কীভাবে কেনো দাস হলেন তা অস্পষ্ট। অথচ তার বাবা সরকারি অফিসে কর্মরত ছিলেন। তার বাবারও অঢেল অর্থসম্পদ ছিলো। সেই হিসেবে উত্তারাধিকার সূত্রে তিনি সেই বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিকানা লাভ করেন।

এই যে এতো অর্থবিত্ত, এই অর্থসম্পদ কখনো কখনো মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু এই অঢেল অর্থ তাঁকে কখনো বিপথগামী করেনি। একটা সিঙেল মোমেন্টের জন্যেও অর্থসম্পদ তাঁকে ভুলপথে চালিত করেনি। তিনি আগাগোড়া খাঁটি আল্লাহ ভীরু প্রাজ্ঞ-মেধাবী ও আবেদ একজন মানুষ ছিলেন।

তিনি যে দশলাখ হাদিস নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করতে পেরেছেন, এর পেছনে আমি মনে করি তাঁর ব্যক্তিগত আগ্রহ-উদ্যোগ ও চেষ্টা-সাধনার পাশাপাশি আর্থিক অবস্থার ভূমিকাও আছে। কারণ, তিনি জীবীকার পেছনে ছুটতে হয়নি। সময় ব্যয়ে করতে হয়নি। যার কারণে তাঁর পক্ষে এভাবে অনবরত সময় দিয়ে দ্বীনি ইল্ম চর্চা ও বিতরণের কাজ খুবই সহজ হয়েছে। শুধুই তাই নয়, ইমাম আহমেদ ইবনে হাম্বল, ইমাম বুখারি, ইমাম মুসলিমদের মতো উম্মাহর কিংবদন্তি শ্রেষ্ঠ সন্তানদের তিনিই তৈরি করেছেন। আর্থিক অবস্থা ভালো থাকার কারণে তাঁদেরকে তৈরি করাও সহজ হয়েছে। মানে এই মহান ইমামদের শিক্ষক ছিলেন তিনি। তারা ছিলেন সবাই-ই তাঁর ছাত্র।

// ইমাম ইয়াহইয়া ইবনু মায়িন-০১ম পর্ব//
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৩২৪ বার

মন্তব্য: ০