Alapon

তাওবায়ে নাসুহা


তওবার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে অনুশোচনা করা বা প্রত্যাবর্তন করা। আর নাসুহা অর্থ হল নিষ্কলুষতা ও কল্যাণকামিতা। অর্থাৎ খালেস দিলে আল্লাহর নিকট গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া বা পানাহ চাওয়া। যেখানে প্রদর্শনী বা মুনাফিকির লেশমাত্র নেই।
তাওবায়ে নাসুহা অর্থ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: কখনো তোমার দ্বারা কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তুমি নিজের গোনাহর জন্য লজ্জিত হবে ।তারপর লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো ।ভবিষ্যতে আর কখনো এই কাজ করো না।(তাফহিম)
হযরত ওমর রা: তাওবায়ে নাসুহার সংজ্ঞা এইভাবে দিয়েছেন : তওবা এর পরে পুনরায় গুনাহ করা তো দূরের কথা তা করার আকাঙ্ক্ষা পর্যন্ত করবে না ।(ইবনে জারির)

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ ভুলের উর্ধে নয় ।যে কোনো মানুষই ভুল করতে পারে ।শুধুমাত্র আল্লাহ সকল ভুলের উর্ধে। মানুষ অজ্ঞতাবশত কোন ভুল করে ফেললে আল্লাহ সাথে সাথে তার প্রতিফল দেন না। বরং তাঁর বান্দাকে প্রত্যাবর্তন করার সুযোগ দিয়ে থাকেন।
হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাম বলেছেন :আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবায় তোমাদের ওই ব্যক্তির চেয়ে বেশি আনন্দিত হন যার মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়ার পর তা ফিরে পেলো।( সহীহ বুখারী-৫৮৭০)
"অতঃপর যে তার জুলুমের পর তওবা করবে এবং নিজেকে সংশোধন করবে ,তবে নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন।" (সূরা মায়েদা:৩৯)

আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মন্দও হারাম কাজে লিপ্ত হয়। আল্লাহর হক ও বান্দার হক নষ্ট করি। আর যখন আমরা নিজের ভুল বুঝতে পারি তখন আমরা রবের নিকট ফিরে আসি। গুনাহগার বান্দা প্রতি আল্লাহ তাআলার যেন এতোটুকু ভালোবাসার কমতি নেই। আল্লাহ বলেন"যারা খারাপ কাজ করল তারপর তাওবা করল এবং ঈমান আনল নিশ্চয়ই তোমার রব এর পরও ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।"(সূরা আরাফ: ১৫৩)

তাওবায়ে নাসুহার বৈশিষ্ট্যসমূহ:
১. একমাত্র আল্লাহর জন্য তওবা করা। অন্য কোন লোক দেখানোর জন্য নয়।
২., কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।
৩. কৃত অপরাধ থেকে ফিরে আসা। যদি মানুষের হক থাকে তাহলে ফেরত দেওয়া।
৪. এ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা যে ভবিষ্যতে কখনো এরূপ কাজে জড়িত হবো না।
৫. সময়ের পূর্বেই তওবা করতে হবে অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বেই।

আমরা যদি তাওবায়ে নাসুহা বা খালেস দিলে তাওবা করি তাহলে হয়তো আল্লাহ তাআলা আমাদের সমস্ত গুনাহ মাফ করবেন এবং তাওবাকারীদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
"হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো খাঁটি তওবা আশা করা যায় তোমাদের পাপসমূহ তিনি মোচন করবেন এবং তিনি তোমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।"(সূরা আত-তাহরীম: ৮)

এই আয়াতটির কথাগুলো ভেবে দেখার মতো। এখানে এ কথা বলা হয়নি যে ,তওবা করলে তোমাদের অবশ্যই মাফ করে দেয়া হবে। বরং তাদের প্রত্যাশা দেয়া হয়েছে যে, যদি তোমরা সরল মনে তওবা করো তাহলে এটি অসম্ভব নয় যে আল্লাহ তোমাদের সাথে ভালো আচরণ করবেন।বান্দার তার ক্ষমা লাভের আশা অবশ্যই করা উচিত ।কিন্তু তওবা করলে ক্ষমা পাওয়া যাবে এ ভরসায় গোনাহ করা উচিত নয়।(তাফহিম)

হাদিসে বর্ণিত তাওবায়ে নাসুহার একটি ঘটনা:

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্বে (বনী ইস্রাইলের যুগে) একটি লোক ছিল; যে ৯৯টি মানুষকে হত্যা করেছিল। অতঃপর লোকদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাকে একটি খ্রিষ্টান সন্নাসীর কথা বলা হল। সে তার কাছে এসে বলল, ‘সে ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এখন কি তার তওবার কোন সুযোগ আছে?’ সে বলল, ‘না।’ সুতরাং সে (ক্রোধান্বিত হয়ে) তাকেও হত্যা করে একশত পূরণ করে দিল। পুনরায় সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এবারও তাকে এক আলেমের খোঁজ দেওয়া হল। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে একশত মানুষ খুন করেছে। সুতরাং তার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? সে বলল, ‘হ্যাঁ আছে! তার ও তওবার মধ্যে কে বাধা সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক দেশে চলে যাও। সেখানে কিছু এমন লোক আছে যারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তোমার নিজ দেশে ফিরে যেও না। কেননা, ও দেশ পাপের দেশ।’ সুতরাং সে ব্যক্তি ঐ দেশ অভিমুখে যেতে আরম্ভ করল। যখন সে মধ্য রাস্তায় পৌঁছল, তখন তার মৃত্যু এসে গেল। (তার দেহ-পিঞ্জর থেকে আত্মা বের করার জন্য) রহমত ও আযাবের উভয় প্রকার ফেরেশতা উপস্থিত হলেন। ফিরিশতা- দের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ হল। রহমতের ফেরেশতাগণ বললেন, ‘এই ব্যক্তি তওবা করে এসেছিল এবং পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে তার আগমন ঘটেছে।’ আর আযাবের ফিরিশতারা বললেন, ‘এ এখনো ভাল কাজ করেনি (এই জন্য সে শাস্তির উপযুক্ত)।’ এমতাবস্থায় একজন ফিরিশতা মানুষের রূপ ধারণ করে উপস্থিত হলেন। ফিরিশতাগণ তাঁকে সালিস মানলেন। তিনি ফায়সালা দিলেন যে, ‘তোমরা দু’ দেশের দূরত্ব মেপে দেখ। (অর্থাৎ এ যে এলাকা থেকে এসেছে সেখান থেকে এই স্থানের দূরত্ব এবং যে দেশে যাচ্ছিল তার দূরত্ব) এই দুয়ের মধ্যে সে যার দিকে বেশি নিকটবর্তী হবে, সে তারই অন্তর্ভুক্ত হবে।’ অতএব তাঁরা দূরত্ব মাপলেন এবং যে দেশে সে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল, সেই (ভালো) দেশকে বেশি নিকটবর্তী পেলেন। সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবয করলেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)


পরিশেষে, ইসলামী শরীয়তে তওবা একটি পারস্পরিক বিষয়। একজন ব্যক্তিকে উচিত তার ভুল বুঝতে পারা ও তা পরিত্যাগ করা যার ওপর আল্লাহ ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইসলাম প্রত্যাশা করে মানুষ যেন তার ভুলসমূহ বুঝতে পারে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা চায়। ইসলাম এ ক্ষমা আপনাআপনি হয় না বরং তা অর্জনের বিষয়।
আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আমাদের সকলকে তাওবায়ে নাসুহা নসিব করুন।

পঠিত : ৯৭৩ বার

মন্তব্য: ০