Alapon

যুক্তরাষ্ট্র কি তাহলে আওয়ামী লীগের থেকে সহযোগিতার হাত ‍গুটিয়ে নিলো...?



মার্কিন অর্থ দফতরের 'ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস' (ওএফএসি) বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদসহ এলিট ফোর্স র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বেনজির আহমেদসহ উক্ত ছয় কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কোনো সম্পদ থাকলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হবে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের উপরও বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। যেমন, প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা পেয়ে থাকে। এসব সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে।

নিষেধাজ্ঞার কারণ

অনেকেই হয়তো ভাবছেন, আচমকাই এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় থেকেই। গত বছর অক্টোবর মাসে ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কাছে সিনেটের আটজন সদস্য চিঠি দিয়ে র‍্যাবের বিরুদ্ধে কিছু সুস্পষ্ট অভিযোগ করেছিলেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বেনজির আহমেদসহ উক্ত ছয় কর্মকর্তার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে এক রিপোর্টে উল্লেখ করে যে, ‘বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় র‍্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ - আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা, ও বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে হেয় করার মাধ্যমে - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলছে।’

এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র বেনজিরদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলো।

এই নিষেধাজ্ঞার প্রভাব

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নিরোসনে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগ আরও বেশি পাকাপোক্ত হয় বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। এই সরকারের আমলেই বিচারবর্হিভূত হত্যার কারণে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের ১৬ কর্মকর্তাকে ফাঁসিসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টে বলা হয়েছে, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন এখন পর্যন্ত ৬০০ মানুষকে গুম করেছে। আর বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড চালিয়েছে সহস্রাধিক। আর এই গুম ও বিচার বর্হিভূত হত্যাকান্ড চালানোর মধ্য দিয়ে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ কারণে একটা দির্ঘ প্রক্রিয়ার পর সাহেব র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন প্রধান এবং বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজির আহমেদসহ ছয় জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল।

এই নিষেধাজ্ঞার অর্থ হলো কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করা। আর এটা স্পষ্ট যে, বেনজির আহমেদদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আরোপের কারণে সরকার মারাত্মক কূটনৈতিক চাপে পড়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ যেসব সুবিধা পেয়ে আসছে, সেসব সুবিধা কমে আসতে পারে, এমনকি বন্ধও হয়ে যেতে পারে। আর যুক্তরাষ্ট্র যদি এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তাহলে ‍যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও অনুরূপ পদক্ষেপ নিতে উৎসাহি হয়ে উঠবে। ফলে, সরকার মারাত্মকভাবে চাপে পড়ে যাবে। আর এই চাপ উপেক্ষা করার মতো শক্তিমত্তা হাসিনা সরকারের নেই- এ কথা পরিষ্কার। ফলে দেখা যাচ্ছে, এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে সরকারের কপালে চিন্তার রেখা ফুঠে উঠেছে।

শেষ কথা

দিন কয়েক পূর্বে সরকার বিরোধী সোশ্যাল মিডিয়া এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে ডিপ স্টেট তাদের খেলা শুরু করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।’

তাহলে কি পিনাকীর কথাই সত্য হতে যাচ্ছে? আমরা জানি যে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পিছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একযোগে কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত আওয়ামী লীগকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেছিল। তাহলে কি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের থেকে সেই সহযোগিতার হাত গুটিয়ে পতনের প্রক্রিয়া ‍শুরু করেছে। এই প্রশ্নের উত্তর আমাদের সময়ই দিয়ে দিবে।

পঠিত : ২৪৬ বার

মন্তব্য: ০