Alapon

আমেরিকা বাংলাদেশের প্রতি কঠোর হচ্ছে কেন...?




আমরা সবাই জানি, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আমেরিকা এবং ভারতের সমর্থন পেয়েছিল। শুধু সমর্থনই না, সহযোগিতাও পেয়েছিল। ২০০৮ সালের সেই ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফলশ্রুতিতেই আজও আওয়ামী লীগ ভোটারবিহিন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় রয়েছে। কিন্তু ২০০৮ সালে আমেরিকা যে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছিল, ২০২১ সালে এসে সেই আওয়ামী লীগের থেকে সমর্থন উঠিয়ে নিচ্ছে কেন?

জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পূর্বে ওয়াদা করেছিলেন, তিনি বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের অবস্থান সুসংহত করতে চেষ্টা করবেন। সেই চেষ্টার অংশ হিসেবে জো বাইডেন গণতন্ত্র সম্মেলন করতে যাচ্ছেন। সেই গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশের ঠাঁই হয়নি। আর গতকাল আমেরিকা বাংলাদেশ পুলিশ প্রধান এবং RAB এর সাবেক প্রধান বেনজির আহমেদসহ RAB এর বর্তমান সাবেক ৬ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে তারা কেউই আমেরিকার ভিসা পাবেন না এবং আমেরিকায় তাদের কোনো সম্পত্তি থাকলে, সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হবে। অন্যদিকে, গতকাল সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের ভিসা বাতিল করে দিয়েছে আমেরিকা। সম্ভবত, জেনারেল আজিজও আর আমেরিকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। আর এইসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এবং গণতন্ত্র সুসংহত করতে- আমেরিকার ভাষ্যনুসারে।

কিন্তু বাস্তবতা কি এতোই সহজ! যে আমেরিকা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ারিং করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনলো, আজ সেই আমেরিকা আবার বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে পুনঃজীবিত করতে চাচ্ছে। ব্যাপারটা কেমন গোলামেলে মনে হচ্ছে না?

হ্যা, গোলমেলেই বটে। কারণ, আমেরিকার প্রধান উদ্দেশ্য বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা বা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা নয়। আমেরিকার এসব কর্মকান্ডের প্রধান উদ্দেশ্য চাপে ফেলে বাংলাদেশকে কোয়াডে যোগদানে বাধ্য করা।

কোয়াড কী?

চতুর্ভুজীয় সুরক্ষা সংলাপ ( Quad, যা কোয়াড নামে পরিচিত)। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতের মধ্যে একটি অনানুষ্ঠানিক কৌশলগত ফোরাম যা সদস্য দেশগুলির মধ্যে অর্ধ-নিয়মিত শীর্ষ সম্মেলন, তথ্য আদান প্রদান এবং সামরিক ড্রিল সম্পন্ন করে থাকে ।

মূলত, এই কোয়াড গঠন করা হয়েছে চীনকে টেক্কা দেওয়ার জন্য। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনকে চাপে ফেলতে এই কোয়াড গঠন করা হয়েছে। আর আমেরিকা ও ভারত চায় বাংলাদেশ কোয়াডে যোগদান করুক। কারণ, কোয়াডে যোগদান করার অর্থই হলো, চীনের বিরুদ্ধে অনানুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করা। কারণ, কোয়াডের অন্তভুক্ত দেশগুলো চীনের থেকে কোনো সাহায্য নিতে পারবে না, তাদের সাথে কোনো ব্যবসা করতে পারবে না এবং সামরিক কোনো চুক্তি করতে পারবে না। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব কমাতে এবং একইসাথে নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আমেরিকা ও ভারত কোয়াডকে কার্যকর করতে চায়। আর সেই কার্যকর করার অংশ হিসেবে আমেরিকা ও ভারত বাংলাদেশকে কোয়াডে অন্তভুক্ত করতে চায়।

বাংলাদেশের কোয়াডে যোগদান করা উচিত নাকি অনুচিত?

বাংলাদেশের কোয়াডে যোগদান করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ, কোয়াডে যোগদান করা মানেই চীনের সাথে শত্রুতা করা। আর বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেক বেশি চীন নির্ভর। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যেসব উন্নয়ন প্রজেক্ট চালাচ্ছে, সেগুলোর সিংহভাগ অর্থায়ন করছে চীন। ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে সফর করার পর থেকে চীন বাংলাদেশে এতোবেশি বিনিয়োগ করেছে যে, এর অর্থেক পরিমাণ বিনিয়োগও ভারত বা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে করেনি। তাই কোয়াডে যোগদান করা মানেই চীনের বিনিয়োগ হারানো। অন্যদিকে চীনের বিনিয়োগ হারানো স্বীকার করে যদি বাংলাদেশ কোয়াডে যোগদান করে, তাহলেও তো ভারত বা যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে চীনের সমপরিমান বিনিয়োগ বা অর্থসহায়তা প্রদান করবে না। সার্বিক বিচারে বাংলাদেশ আগামী ২০ বছরের মধ্যেও চীনের সঙ্গ ত্যাগ করতে পারবে না। অর্থাৎ কোয়াডে যোগদান করতে পারবে না।

শেষ কথা

শেষ কথা হলো, আমেরিকা ও ভারত যখন অনেক চেষ্টা-সাধনার পরও বাংলাদেশকে কোয়াডে যোগদান করাতে পারেনি, তখন তারা কৌশল হিসেবে চাপ প্রয়োগের রীতি অবলম্বন করেছে। ভারতের পরামর্শে আমেরিকা এখন বাংলাদেশের উপর চাপ প্রয়োগ করছে। তারই অংশ হিসেবে বেনজির আহমেদদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হল। এই নিষেধাজ্ঞা যেকোনো দেশের সরকারের জন্য বিরাট কূটনৈতিক চাপ। এই কূটনৈতিক চাপও যদি আওয়ামী লীগ সরকার উপেক্ষা করে যায়, তখন হয়তো আমেরিকা আরও কঠোরতার পথে হাটবে। হয়তো তারা বাংলাদেশের জাতিসংঘ শান্তি মিশনে অংশগ্রহণে বাধা তৈরি করবে। যা হবে আওয়ামী লীগের সরকারের জন্য মহাবড়ো বিপদ। আর এই বিপদের মুখোমুখি হবার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেই। তখন হয়তো বাধ্য হয়েই মাথা নোয়াতে হবে।

পঠিত : ১১২৪ বার

মন্তব্য: ০