Alapon

"ডঃ বিলাল ফিলিপস : কমিউনিস্ট থেকে ইসলামিস্ট"



"ডঃ বিলাল ফিলিপস : কমিউনিস্ট থেকে ইসলামিস্ট"

নাম তাঁর আবু আমিনা বিলাল ফিলিপস। জন্মেছেন জ্যামাইকায়। পরিবারটি ছিলো খৃষ্টান । তারিখ ছিলো ০৬-ই জানুয়ারি। সন ছিলো ১৯৪৬। কিন্তু তাঁর বেড়ে ওঠা কানাডায়। পূর্ব নাম ছিলো তাঁর ডেনিস ব্র্যাডলি ফিলিপস।
জ্যামাইকান বংশোদ্ভূত এই খ্রিষ্টান ধীরে ধীরে বামপন্থীদের চটকদার বুলির প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে যুবক বয়সেই বামপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েন। হয়ে ওঠেন টাটকা সেই কমিউনিস্ট, যারা ইসলামের ধার ধারেনা। ধর্ম যাদের দুচোখের বিষ।
বিপ্লবের নেশায় বিলাল মত্ত। কিন্তু বিলাল সেখানে মানে কমিউনিস্টদের মধ্যে নিজের মনের খোরাক খুঁজে পাননি। বিপ্লবের যথেষ্ট কার্যকরী কিছু খুঁজে পাননি।
একদিন বিলাল ফিলিপস দেখলেন তাঁর পার্টির একজন যুবতী নারি সদস্য তাদের দলীয় আদর্শ ত্যাগ করেছেন। শুধু তা-ই না, ত্যাগ করে গ্রহণ করেছেন শ্বাসত জীবন বিধান আল-ইসলাম।
সেই নারি বিলালকে কিছু বই দেন। ব‌ইগুলো পড়ে তিনি ইসলাম সম্পর্কে ধারণা পান। ইসলামের শ্বাসত আদর্শে তিনি মুগ্ধ হন। এক পর্যায়ে তিনি ১৯৭২ সালে ইসলাম গ্রহণ করেন। তবে ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে যে দুইজন লেখকের দুটো বইয়ের দ্বারা তিনি বেশি প্রভাবিত হয়েছেন, সেই দুজন লেখকের একজন হলেন সাঈয়েদে কুতুব শহীদ রহ-এর ভাই মুহাম্মাদ কুতুব রহঃ। অন্যজন হলেন বিশ্ববিখ্যাত ইসলামি চিন্তানায়ক ইমাম আবুল আ'লা মওদূদী রহঃ।
কোন দুটো গ্রন্থদ্বারা বা গ্রন্থের প্রভাবে একসময়ের কমিউনিজমের স্বপ্নচারী ডঃ বিলাল ইসলামের বিখ্যাত আলিম ও দা'ঈ ইলাল্লাহ হয়ে গেলেন?
সেগুলো হচ্ছে -
১. Islam the misunderstood religion ( মুহাম্মদ কুতুব)
২. Towards understanding islam ( সাঈয়েদ আবু আ'লা মওদূদী)
হ্যাঁ, মওদূদী রহঃ-এর বইটার বাংলা অনুবাদ হচ্ছে ইসলাম পরিচিতি নামে। আর মুহাম্মদ কুতুবের বইটা ভ্রান্তির বেড়াজালে ইসলাম নামে অনূদিত। দুটো বই-ই প্রকাশ করেছেন আধুনিক প্রকাশনী।
বিলাল ফিলিপস মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের উসুল আল দ্বীন অনুষদ থেকে আরবি ভাষায় ডিপ্লোমা এবং বি.এ. ডিগ্রী লাভ করেন ১৯৭৯ সালে। এবং ১৯৮৫ সালে তিনি রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইসলামিক থিওলজি’তে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। একই বিষয়ের ওপর তিনি ১৯৯৪ সালে ডক্টরেট ডিগ্রী নেন ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলস-এর ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদ থেকে।
বিলাল ফিলিপস নিজে ইসলাম গ্রহণ করে এবং ইসলাম নিজে শিখেই বসে থাকেননি। তিনি ইসলামের শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অনলাইনভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় মানের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যে প্রতিষ্ঠানের নাম আমরা অনেকেই জানি। আর সেটা হলো "ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটি।" তিনি কাতাঁর থেকে এটি পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
দাওয়াতে দ্বীনের কাজেও তিনি যথেষ্ট অগ্রগামী একজন মানুষ। সৌদি আরবের পুণ্যভূমিতে সৌদি শাসকরা যখন মার্কিন সেনাদের ঘাটি করার সুযোগ দেন, তখন তিনি তাদেরকে টার্গেট করেন ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার জন্য। ধীরে ধীরে তিনি মার্কিন সেনাদের মনে ইসলাম সম্পর্কে যে ভুল ধারণা সৃষ্টি হয়ে রয়েছে, তা দূর করার জন্যে প্রচেষ্টা চালাতে লাগলেন। তাঁর এই প্রচেষ্টার বৌদলতে তিন হাজারের অধিক মার্কিন সেনা ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয়গ্রহণ করেছিলেন।
বিলাল ফিলিপস রাজনৈতিক তৎপরতায় যুক্ত না হয়ে স্রেফ দাওয়াতের মাধ্যমেই ইসলামকে বিজয়ী এবং মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করতে আগ্রহবোধ করতেন। সে অনুযায়ী কাজও করতেন। এবং তা আরব আমিরাতে থেকেই করতেন। ১৯৯৪ সাল থেকেই তিনি সেখানে থাকেন। কিন্তু তাঁর এমন নিরীহ অবস্থান এবং সাধারণ দাওয়াতি কাজকেও তাগুতপন্থী শাসকরা মেনে নিতে পারেনি। তাকে ত্যাগ করতে হয় আরব আমিরাতের জমিনও।
২০১৪ সালে তিনি বাংলাদেশে আসতে চান। এবং আসেনও। কিন্তু তাকে এই দেশে কোনো কার্যক্রম এবং মিটিংয়াদিতে যোগ দিতে দেয়া হয়নি।
বিলাল ফিলিপসের দুটো উক্তি থেকে বুঝা যায় যে, তাঁর ভেতর কতোটা নিষ্ঠা ও খুলুসিয়াত বিদ্যমান। সেগুলো হচ্ছে :
১.
“আমরা যা শিখছি তা যদি আমাদের বিশ্বাসের ওপর কোন প্রভাব ফেলতে না পারে, আমাদেরকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যেতে না পারে, আমাদের বিশ্বাসকে আরো মজবুত করতে না পারে, তাহলে এর অর্থ হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্যে, নিয়্যতে ভুল আছে”
২.
“আপনি যেদিন উপলব্ধি করবেন ইসলামের জন্য কী বিশাল পরিমাণ কাজ করা প্রয়োজন অথচ হাতে কতটা কম সময় রয়েছে, সেদিন বুঝতে পারবেন ছুটির দিন কাটানোর মতো কোন সময় নেই।”
বিলাল ফিলিপস অনেকগুলো বইও রচনা করেছেন। আমার জানামতে তাঁর সবচেয়ে বেশি বই অনুবাদ এবং প্রকাশ করেছে সিয়ান পাবলিকেশন।
আল্লাহ আমাদের মাঝে বিলাল ফিলিপসকে দীর্ঘজীবী করুন। তাঁর কাজগুলো কবুল করুন। আ-মী-ন!

~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৮৭৫ বার

মন্তব্য: ০