Alapon

চাইল্ড অ্যাবিউজ এবং কিছু কথা...



তখন প্রায় ১১ টা! ততক্ষণে হাতিরঝিলের চক্রাকার বাস আর ট্রলার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে আমি আর মর্তুজা ভাই রামপুরার উদ্দেশ্যে হাটা শুরু করলাম।

কিছুদূর হাটার পর দেখলাম, প্রায় অন্ধকার একটা জায়গায় আমাদের বয়সি (২৭-২৮) একটা ছেলে ৪-৫ বয়সি দুটো মেয়েকে নিয়ে বসে আছে। এতো রাতে তাদের এখানে বসে থাকা খুব একটা স্বাভাবিক ছিল না। তাই আমি হাটার গতি কমিয়ে দিয়ে তাদের লক্ষ্য করতে শুরু করলাম। আমরা তাদের অতিক্রম করা মাত্রই ছেলেটা একটা মেয়েকে কোলের মাঝখানে চেপে ধরল এবং তার বুকে হাত বুলাতে লাগল। এই দৃশ্য দেখা মাত্রই আমি থমকে দাঁড়ালাম।

প্রথমেই ভাবলাম, অন্ধকারে আমি কি ভুল দেখলাম! আমি মর্তুজা ভাইয়ের হাতটা চেপে ধরে বললাম, ‘ভাই, খুব সম্ভবত বাচ্চাদুটোকে সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজ করা হচ্ছে!’

তারপর আমরা দুজনে আড়াল থেকে দেখে নিশ্চিত হতে চাইলাম, সে আসলেই এমন কিছু করছে কিনা! এক পর্যায়ে মনে হলো, সে আমাদের উপস্থিতি বুঝতে পেরেছে। আর বুঝতে পারা মাত্রই সে বাচ্চা দুটোকে নিয়ে উল্টো পথে হাটা শুরু করল।

তখন হাতিরঝিল প্রায় মানুষশূণ্য। অন্যান্য সময় নিরাপত্তরক্ষিদের টহল দিতে দেখা যায়, কিন্তু আজ তাদের টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না। স্বাভাবিকভাবেই প্রথমে আমরা নিজেদের কথা চিন্তা করলাম। এতো রাতে আমরা যদি তাকে অনুসরণ করি, তাহলে আমাদের বিপদ হতে পারে। আর যদি তাকে সুযোগ করে দেই, তাহলে বাচ্চাদুটোর বিরাট ক্ষতি হতে পারে। আর সেই ক্ষতির ভার তাদের সারাজীবন বইতে হবে!

মর্তুজা ভাই বললেন, ‘ভাই, আমাদের যা হবার হবে। চলুন আগে ছেলেটাকে ফলো করি।’
তারপর আমরা তাকে ফলো করতে ‍শুরু করলাম। আমরা দূরত্ব রেখে তার পিছু পিছু হাটতে শুরু করলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর সে চারদিকটা দেখে নিল। যখন সে নিশ্চিত হলো যে, আশে পাশে কেউ নেই, তখন সে অন্ধকার একটা জায়গা দেখে বসে গেল। তারপর একটা বাচ্চাকে মাঝখানে চেপে ধরল এবং তার জামার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দিলো।

আমরা চাচ্ছিলাম তাকে হাতেনাতে ধরব। তাই তার দিকে খানিকটা এগিয়ে যাওয়া মাত্রই সে বাচ্চা ‍দুটোকে সাথে নিয়ে হাটা শুরু করল। কিছুদূর যাওয়ার পর সে একটা রিক্সা নিলো। এমন অবস্থায় মর্তুজা ভাই রিক্সার পিছু পিছু দৌড়াতে শুরু করল। আমিও দৌড়াতে শুরু করলাম।

আমরা রিক্সার পিছু পিছু দৌড়াতে শুরু করলাম। রিক্সাটা একটা গলির ভিতরে ঢুকে গেল। মনে মনে দুআ পড়তে পড়তে আমরাও সেই গলিতে ঢুকে পড়লাম। কিন্তু গলিতে ঢোকার পর আমরা কিছুক্ষণের জন্য রিক্সাটা হারিয়ে ফেললাম। এই সময়টাতে ভীষণ অস্থির বোধ হচ্ছিল। এরপর অদূরের একটা রিক্সা থেকে দুটো বাচ্চার হাসির শব্দ ভেসে এলো। সেই হাসি লক্ষ্য করে এগিয়ে গিয়ে আমরা তাদের পেয়ে যাই। তারপর সেই রিক্সার পিছু পিছু হাটতে থাকি। কিছুদূর যাওয়ার পর তারা রিক্সা থেকে নেমে যায়। রিক্সা থেকে নামার পর একটা বাচ্চা বললো, ‘কাকা, আমি চকলেট খামু!’

তখন বুঝলাম, ছেলেটা সম্পর্কে তাদের কাকা! তারপর চকলেট কিনে তারা একটা বাসায় ঢুকে পড়লো। আর বাচ্চাদের শারীরিক ভাষা বলছিলো, এই বাসাটা তাদের খুব পরিচিত। তার মানে এটা হয়তো তাদেরই বাসা! তার মানে জানোয়ারটা তাদের আর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এতোটুকু নিশ্চিত হওয়ার পর তবেই আমরা বাসায় ফেরার পথ ধরলাম!
আমরা ১০০% নিশ্চিত যে সে বাচ্চাদুটোকে সেক্সুয়ালি অ্যাবিউজ করেছে। হয়তো আমরা না থাকলে, সেখানে আরও খারাপ কিছু ঘটতে পারতো। কারণ, রাত ১১ টার পর হাতিরঝিল প্রায় মানবশূণ্য হয়ে যায়। আর এ সময় যেকোনো অপরাধ করা সম্ভব।

তাই আমরা বাচ্চাদুটোকে সর্বোচ্চ খারাপ অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য তাদের অনুসরণ করেছিলাম।

একটা অনুরোধ! একজন পুরুষ হিসেবে বলছি, আপনার মেয়ে বাচ্চাকে কখনো একা কোনো পুরুষের সাথে যেতে দিবেন না। সে সম্পর্কে চাচা, মামা, কাজিন, টাজিন যাই হোক না কেন! কখনোই তাদের কাছে আপনার মেয়ে বাচ্চাকে একা ছাড়বেন না। তাদের হাতে একা ছাড়া মানেই, আপনার বাচ্চাকে সমূহ বিপদের মধ্যে ফেলা। আর এই বিপদের ভার আপনার বাচ্চাকে সারাটা জীবন বহন করতে হবে।

পঠিত : ৭৬৯ বার

মন্তব্য: ০