Alapon

উন্নয়নের চেয়ে নিরাপত্তাই বেশি প্রয়োজন

শখ ছিল বউ-বাচ্চা নিয়ে সমুদ্র সৈকত দেখতে যাবে। বেতন পেলেন, বউ-বাচ্চা নিয়ে যাত্রাবাড়ি থেকে কক্সবাজারও গেলেন। থাকার জন্য একটি আবাসিক হোটেলে উঠলেন। যথারীতি আর দশজনের মতো ঘুরতে বেরুলেন স্ত্রী- সন্তান নিয়ে। কিন্তু বিধি-বাম ভিড়ের মাঝে এক অচেনা যুবকের সাথে ধাক্কা লাগলে কথা কাটাকাটি হয়, পরক্ষণে শান্তও হয় দু'জনে। যে যার মতো চলে যায়।

গোধূলির সূর্যটা যখন বিশাল জলরাশিরতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম নিয়তিও তখন বাধ সেধে বসলো মধ্যবিত্ত পর্যটক পরিবারটির ওপর। আগুন্তক দু'টি গাড়ি এসে তুলে নিয়ে যায় তাদের। স্বামী- সন্তানকে জিম্মি করে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে পর্যটক তরুণীকে। স্বামীর সাথে কথা কাটাকাটির জেড় ধরে স্ত্রীর সম্ভ্রম কেড়ে নিলো একটি সংঘবদ্ধ হিংস্র জানোয়ারের দল।

স্বভাবতই প্রশ্ন তৈরি হয়, কক্সবাজার একটি পর্যটন নির্ভর শহর হওয়ার পরেও কেন সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত দুর্বল? ভুক্তভোগী জরুরি সেবায় ৯৯৯ কল করার পরও কোন সহায়তা না পাওয়ার কারণ কি? জরুরি সেবা তো তাৎক্ষণিক সমস্যায় সহায়তা করার জন্যই তাহলে ঐ তরুণীর বেলায় কি 'স্বামী- সন্তান জিম্মি, সাহায্যপ্রার্থী ধর্ষণের শিকার' এ কথা নিকটস্থ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরা ভয়ে তটস্থ হয়ে গেছিল। এত বড় গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্রকাশ্য দিবালোকে এমন লাফাঙ্গা বখাটেরা বুক উচিয়ে চলাচল করে কি করে!?

পরিবার নিয়ে ঘুরতে গিয়ে যদি কাউকে তার সর্বস্ব হারাতে হয় তাহলে এর দ্বায় কার? পর্যটন শিল্পে তাহলে যথেষ্ট নিরাপত্তাহীনতা রয়েছে। কিছুদিন আগে পর্যটন শিল্প দিবস গেল, রাষ্ট্রের বিভিন্ন মহল পর্যটন শিল্পের অগ্রগতি নিয়ে বহুত লাফালাফি করেছে। দেশ উন্নয়নের জোয়ারে সয়লাব!

কি লাভ তাতে! এত উনয়ন কোন কাজে লাগে? যখন আমি/ আমরা নিরাপত্তার জন্য আপ্রাণ ছুটোছুটি করি। গুম, খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি নানা অপরাধের পরিবেষ্টনে আবদ্ধ। ভুক্তভোগী ঐ রমণীর কাছে এ উন্নয়নে সার্থকতা কি? ঐ অসহায়- নিরুপায় স্বামীর কাছে উন্নয়নের মানে স্ত্রী'র সম্ভ্রম রক্ষা করতে না পারা। ছোট্ট শিশুটির কাছে উন্নয়নের মানে মায়ের আর্তচিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হওয়া, বাবার কপোল বেয়ে হাহাকারের অশ্রুপাত!

হে মানুষ! কি জবাব দিবে ছোট্ট শিশুটিকে? কি জবাব দিবে জীবন্ত লাশ ঐ বোনটিকে? কি জবাব দিবে সুহাসিনী স্ত্রীর চোখের দিকে তাকাতে নাপারা অসহায় যুবক'কে?

আইন হয়ত অপরাধীদের শাস্তিস্বরূপ সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দিবে। কিন্তু ঐ বোনটির মুখ থেকে হারিয়ে যাওয়া দীপ্তিময় হাসির ঝলকানি আদৌ ফিরিয়ে দিতে পারবে কি?

কি হবে এত উন্নয়ন দিয়ে, যদি আমার বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নেয় মানুষরূপী হিংস্র জানোয়ারগুলো?
উন্নয়ন নয়, জননিরাপত্তা নিশ্চিত চাই।

পঠিত : ৩৫৭ বার

মন্তব্য: ০