Alapon

"মুসলিম বিজ্ঞানী যারা ছিলেন তাদের বেশিরভাগই মু'তাজিলি ছিলেন?"



"মুসলিম বিজ্ঞানী যারা ছিলেন তাদের বেশিরভাগই মু'তাজিলি" এই কথা, আর এর সমমানের কথা শুনতে শুনতে আর ভাল্লাগে না। ইনবক্সেও অনেকে প্রশ্ন করে ফেলেছেন এই নিয়ে। এখন পোস্ট দিয়ে ক্লিয়ার করছি।

বিজ্ঞানীদের বেশিরভাগের আকিদা জানা যায় না

খাওয়ারিজমি, জাজারি, বিরুনিদের আকিদা কি ছিল তা জানা যায় না। তাদের লেখা পড়লে বুঝা যায় যে তারা ধর্মপ্রাণ মুসলিম ছিলেন, তবে নির্দিষ্ট ভাবে তাদের আকিদা জানা যায় না।

"মু'তাজিলি বিজ্ঞানীরা" কি আসলে আছে?

আমার অনেক আগে থেকেই সন্দেহ ছিল যে আদৌ কোনো বিজ্ঞানীর আকিদা মু'তাজিলি কিনা। পরে হঠাৎ খেয়াল হল - ওহ হা, আল-জাহিজ তো আছেন। কিন্তু, যেভাবে দাবি করা হয়, "সব মুসলিম বিজ্ঞানী মুতাজিলি ছিল", সেটা অনুসারে দশজন মু'তাজিলি বিজ্ঞানী দেখালেও তা নিতান্তই কম। আর আমি পেয়েছি কেবল একজন মু'তাজিলি বিজ্ঞানী। তাই প্রশ্নটা এখনো মাথায় ঘুরে, "মু'তাজিলি বিজ্ঞানীরা" কি আসলেই আছে?

ফালসাফা আলাদা ধর্মতাত্ত্বিক দল

আল-কিন্দির সময় ফালসাফা বলতে এক জিনিস বোঝাত, আল-ফারাবির সময় অন্য জিনিস, আল-গাজালির সময় অন্য জিনিস, তাফতাজানির (মৃ. ১৩৯০) সময় অন্য জিনিস। বর্তমানে আমরা সোজাসাপটা অনুবাদ করি "দর্শন"। মুতাকাল্লিমুন যখন ফালাসিফার সমালোচনা করেন, তখন প্রায় শতভাগ সময় সেটা একটা ধর্মতাত্ত্বিক দলের সমালোচনা; অন্ধভাবে এক সেট বিশ্বাস ফলো করে - অনেকটা এমন একটা দলের সমালোচনা কেবল। দর্শনের সমালোচনা না। গাজালি, রাজি, ইবনুল জাউজি ফালাসিফা বলতে মুতাজিলা, কাররামিয়াদের মতই আরেকটা দল বুঝিয়ে তার সমালোচনা করেন। শাহরাস্তানি তার কিতাবুল মিলাল ওয়ান নিহালে, ফাখরুদ্দিন রাজি তার রিয়াদুল মু'নিকায় ফালাসিফাকে আলাদা ফিরকা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন।

"ফালাসিফার আকিদা কি" এটা সঠিক প্রশ্ন হয় না। তারা নিজেরাই একটা ধর্মতাত্ত্বিক দল। ফালাসিফার আকিদা মু'তাজিলা না। ইবনু সিনা, আল-ফারাবি সরাসরি মু'তাজিলিদের সমালোচনা করেছেন। আল-কিন্দি, ইবনু রুশদ - যাদের অনেকে ফায়লাসুফ আর মু'তাজিলি দুই-ই ভেবে ভুল করে, তারা দুজনও মু'তাজিলিদের সমালোচনা করেছেন। আর এদের মধ্যে ইবনু রুশদ মু'তাজিলার ব্যাপারে ঠিকমত জানতেই পারেন নি কখনো, কেননা আন্দালুসে মু'তিজিলিদের কাজ পাওয়া যেত না। তিনি যা জেনেছিলেন তা মু'তাজিলিদের বিপরীতে আশআরিদের লেখা বই পড়ে। আর এখন তাকে বলা হয় "মু'তাজিলি"।

মু'তাজিলা "ইউনিভার্সাল র‍্যাশনালিস্ট ক্লাব" না

মু'তাজিলিদেত মাঝে লজিক বিরুদ্ধ মানুষ আছে (আবুল আব্বাস নাশি), দর্শন বিরুদ্ধ মানুষ আছে (ইবনুল মালহিমি), কার্যকারণ বিরুদ্ধ মানুষ আছে (আবুল হুজাইল আল্লাফ)। মু'তাজিলিরা যুক্তির প্রতিক না।

আর ফালাসিফাও "ইউনিভার্সাল ফিলোসফি ক্লাব" না। ইমাম গাজালি তাহাফুতুল ফালাসিফায় সরাসরি উল্লেখ করেন যে ফালাসিফার দর্শনের বাইরেও দর্শন আছে, তারা যা করে তা দর্শনের সমস্ত কিছু না।

এখানে বোঝা প্রয়োজন, "যুক্তিবাদ" ও "যুক্তি প্রয়োগ" এক জিনিস না। মু'তাজিলা যুক্তিবাদী - এটা বলতে বোঝানো হয় তারা যুক্তি কে ওয়াহি থেকে বেশি গুরুত্ব দেয়। ব্যাস। এতোটুকুই। এখন, যুক্তিকে ওয়াহি থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া কি আদৌ যুক্তিগত? যুক্তির সঠিক প্রয়োগে কি এখানে আসা হয়েছে? অনেক বড় প্রশ্ন এটা। যাহোক, প্রথম লাইন টা ভালোভাবে বুঝে নেন কেবল। ইসলামের ইতিহাসে সকল গ্রুপই যুক্তি প্রয়োগ করতো, কিন্তু সকলে যুক্তিবাদি ছিল না।

কয়েকজন, যাদের আকিদা জানা

আল-ফারাবি, ইবনু সিনা ফালাসিফার মধ্যে পড়েন। তবে আল-কিন্দি পড়েন না। ইবনু রুশদ খুব সম্ভবত জাহিরি। ইবনুল হায়সামের ক্ষেত্রে অনেকের ধারণা যে তিনি আশআরি ছিলেন। আবুল বারাকাত বাগদাদি, শারাফুদ্দিন মাসউদি, সাইয়্যিদ শারিফ জুরজানি, আলী কুশজি আশআরি।

.
এত কিছু বাদ দিয়ে আপনি কেবল একটু কমন সেন্স খাটান। মু'তাজিলা ক্ষমতায় ছিল ৩৩ কি ৩৪ বছর। ৩৪ বছরে কি বিজ্ঞান করে উড়িয়ে ফেলা সম্ভব? এতগুলো সাবজেক্টে একটা বিপ্লব ঘটানোর জন্য ৩৪ বছর যথেষ্ট? ইসলামে বিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ কি কেবল ৩৪ বছরের??

হিসাব করলে সহজেই দেখতে পাবেন, মু'তাজিলি শাসনে যা বিজ্ঞান হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে আশআরি শাসনে। আর মু'তাজিলা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় যা বিজ্ঞান হয়েছে তাতে তাদের প্রভাবও নাই আসলে। এইখানে যেসব মিথ উল্লেখ করেছি, তার বিশাল অংশ আসে ওরিয়েন্টালিস্ট বায়াস থেকে। তারা বলেছে, আর আমরা সুন্দর গিলে বসে আছি। যাচাই করি নাই কিছুই।

পঠিত : ২৩৪ বার

মন্তব্য: ০