Alapon

উসমান উবনে আফফান রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু...



উসমান উবনে আফফান রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু। খুলাফায়ে রাশেদিনের মধ্যে অন্যতম হলেন তিনি। তৎকালীনযুগের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। রাসূল সা.-র যুগে খাতিবে ওহী ছিলেন।

নাম উসমান। কুনিয়াত আবু আবদিল্লাহ, আবু আমর, আবু লায়লা। লকব যুন নুরাইন! পিতা আফফান, মাতা আরওয়ার বিনতে কুরাইয। মক্কার কুরাইশ বংশের সন্তান। তিনি তায়েফে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মসন নিয়ে রয়েছে মতভেদ।

তাঁকে আস-সাবেকুনাল আওয়ালীন (প্রথম পর্বে ইসলাম গ্রহণকারী) বলা হয়। আশায়েরে মুবাসসেরাহ-র মধ্যে তিনি অন্যতম। আশায়েরে মুবাসসেরাহ বলা হয়— যারা দুনিয়ায় থেকে জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছেন। এরকম সাহাবি হলেন দশজন। তাদের মধ্যে রয়েছেন উসমান রা.। তাঁর ইসলাম গ্রহণের পেছনে বড় অবদান আবু বকর রা.-র। তাঁর দাওয়াত ও তাবলিগে পেয়েছেন আলোর দেখা।

হযরত উসমান রা. যখন ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তখন তাঁর বয়স ত্রিশের উর্ধ্বে ছিলো। কুরাইশদের খ্যাতনামা ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও ইসলাম গ্রহণ করার জন্য হয়েছেন লাঞ্ছনার শিকার। তাঁর চাচা হাকাম ইবনে আবিল আস রশি দিয়ে বেঁধে বেধড়ক মার মেরেছিলেন।
ইসলাম গ্রহণের পর হুযুর সা. তাঁর মেয়ে রুকাইয়্যাকে উসমানের কাছে বিবাহ দেন। হিজরি দ্বিতীয় সনে রুকাইয়্যা ইন্তেকাল করলে উম্মে কুলসুমকে বিবাহ দেন। একারণে উসমান রা.কে যুন-নুরাইন বলা হয়। যুন-নুরাইন অর্থ হলো দুই নুরের অধিকারী। হিজরি নবম সনে উম্মে কুলসুমও ইন্তেকাল করেন। রাসূল সা. বলেন, আমার যদি আরো কন্যা থাকতো, আমি উসমানকে বিয়ে দিতাম।

নবুয়াতের পঞ্চম বছরে মক্কার মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উসমান রা. ও তাঁর সহধর্মিণী রুকাইয়্যা হাবশায় হিজরত করেন। হাবশার মাটিতে প্রথম হিজরতকারী হলেন উসমান রা. ও তাঁর সহধর্মিণী। সেখানে তাঁদের সন্তান আব্দুল্লাহ জন্মগ্রহণ করেন। একারণে উসমান রা.-কে আবু আব্দিল্লাহও বলা হয়। হিজরি চতুর্থ সনে আব্দুল্লাহর ওফাত হয়।

বদর যুদ্ধ ছাড়া প্রায় যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। বদর যুদ্ধের সময় সহধর্মিণী অসুস্থ হওয়ায় রাসূল সা. তাঁকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে বারণ করেন এবং সহধর্মিণীর পাশে থাকার নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে বদর যুদ্ধের গনীমতের অংশ তাঁর জন্যও বরাদ্দ করেন।

তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য ঘোষণা দিলেন এবং সাধ্যনুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করার নির্দেশ দেন। সব সাহাবা ব্যপকভাবে দান করলেন। উসমান রা. তাঁর অর্থকে দু’ভাগ করে একভাগ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে দেন৷ এই যুদ্ধে এত বিপুল পরিমাণ ব্যয় করেন যে, কেউ তাঁর সমতুল্য ব্যয় করে নি।

হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় পয়গাম নিয়ে মক্কার মুশরিকদের কাছে প্রেরণ করেন উসমান রা.কে। মক্কার কাফেররা উসমান রা.কে তাওয়াফ করে চলে যেতে বলেন। উসমান রা. তাঁদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, যতক্ষণ রাসূল সা. তাওয়াফ করবেন না, আমি তাওয়াফ করতে পারবো না।

হযরত উমর রা.-র কাফন-দাফনের পরে মিকদাদ বিন আসওয়ার রা. সূরা সদস্যদেরকে একটি কামরায় একত্র করেন। মতান্তরে আয়শা রা.-র কামরায়। সবার কাছ থেকে পরামর্শ দেন। খলিফা নির্বাচনের ভার পড়ে আব্দুর রাহমান রা.-র কাঁধে। তিনি সবার থেকে মতামত নেন। প্রায়ই উসমান রা.-র দিকে ইঙ্গিত দেন।

উমর রা.-র নির্ধারিত সময় শেষ পর্যায়ে। সকালে মসজিদে নববীতে এসে সাহাবারা ভীড় করেন নতুন খলিফা কে জানতে। আব্দুর রাহমান রা. মিম্বারে দাড়ালেন। নতুন খলিফা উসমান রা.-র নাম ঘোষণা করলেন এবং সবাইকে তাঁর হাতে বাইয়্যাত গ্রহণ করতে বলেন। হিজরি চব্বিশ সনে পহেলা মুহাররম তিনি খলিফার দায়িত্ব নেন।

প্রায় বারো বছর তিনি দেশ পরিচালনা করেছিলেন। শেষের দিকে কিছু কুচক্র বাহিনী বিদ্রোহ করে। খলিফার বাসভবন ঘিরে ফেলে। চায়লে তিনি তাঁদের উৎখাত করে ফেলতে পারতেন, কিন্তু করেন নি। শুক্রবার আছরের পর রোযা রাখা অবস্থায় তেলাওয়াতের সময় উসমান রা.কে হত্যা করে ফেলে। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।)

জান্নাতুল বাকীর হাশশে খাওকাব নামক জায়গায় তাঁকে দাফন করা হয়। মাগরিব ও ইশার মাঝামাঝি সময়ে দাফন করা হয়। যুবাইর ইবনে মুতঈম রা. জানাযার ইমামতি করেন। তাঁর বয়স প্রায় নব্বইয়ের কাছাকাছি ছিলো।

মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম

পঠিত : ১০০৪ বার

মন্তব্য: ০