Alapon

বর্তমান সময়ের বিয়ে বিড়ম্বনা...



বাবার অনেক সম্পদ।সম্পদের অট্টালিকা গড়েছেন।আর তাই দেখে অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন সম্পদশালী বাবার বেকার ছেলের সঙ্গে।

পাশের বাসার ভাবী যখন জিজ্ঞাস করেন, মেয়ের জামাই কি করে ভাবী?

মেয়ের মা এক গাল হাসি দিয়ে জবাব দেন, ছেলের বাবার অমুক জায়গায় তমুক ব্যবসা আছে,আবার তমুক জায়গায় সমুক ব্যবসা আছে। ছেলে বাবার সব ব্যবসা দেখাশুনা করে। বাবা আর কত দেখবেন? ছেলেরাই এখন সব।

ফলাফল কি?

ভীষণ ভয়াবহ।

পাশের বাসার ভাবীর সাথে সম্পদের গপ্প বন্ধ করুন। মরীচকা ধরা মস্তিষ্কে তেল দিন।বাবার সম্পদ নয়, ছেলে কি করে তা দেখে মেয়েকে বিয়ে দিন। আশা করা যায়,সুখেই থাকবে। ইনশাআল্লাহ।

এভাবে একটি দু'টি নয়। হাজারো ভুল ধারনা আর রীতি নিয়ে মহা ধুমধামের সাথে বিবাহ সম্পন্ন হচ্ছে । অথচ এ যুগ মক্তবে গিয়ে দু'চারটি জ্ঞান আহরনের যুগ নয়। এ যুগ হাজারো ডিগ্রীধারী শিক্ষিত সমাজের যুগ। কিন্ত বড় আফসোসের বিষয়, এ শিক্ষিত সমাজই এসব রীতির ধারক বাহক।

বর্তমানে বিবাহের সময় মোহরানা ধার্য করা নিয়ে চলে এক তুমুল কান্ড।কনে পক্ষ মোহরানা ধার্য করে ২০ লাখ বা ৩০ লাখ। কখনো কখনো ৪০ লাখ বা ৫০ লাখ।

আশ্চর্যের বিষয় নয় কি!!! পরিশোধ করতে পারবে কিনা তার প্রতি কোন খেয়াল নেই।

মোহরানা আদায় করার গুরুত্ব এবং প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা যদি তারা অনুধাবন করতে পারতো তবে তারা কখনোই এরূপ ধার্য করার কথা কখনোই ভাবতে পারত না।এখানে আবার যুক্তির কথা অনেকে তুলে ধরেছেন।এ বিষয় নিয়ে তর্কবিতর্কের শেষ যেন হতে চাই না।উভয় পক্ষের যুক্তি কে শ্রদ্ধা করি।এক্ষেত্রে আদায় করার ব্যাপারে তিনি কতটুকু শ্রদ্ধাশীল এবং দায়িত্বশীল সে ব্যাপারে আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।

বর্তমানে দেনমোহর আদায় না করা খুব বেশী প্রচলিত হয়ে গিয়েছে। মোহরানা স্ত্রীর অধিকার। এ অধিকারকে বর্তমানে খুব বেশি ক্ষুণ্ন করা হয়।

মহান আল্লাহ সঠিক এবং ন্যায়সংগত মোহর নির্ধারণ করতে বলেছে, তাই স্বামীর অর্থনৈতিক সামর্থ্য বিবেচনা করে মোহর নির্ধারণ করতে হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সর্বোত্তম পরিমাণের মোহর হচ্ছে তা, যা পরিশোধ করা সহজসাধ্য।

কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং তোমরা নারীদের দাও তাদের মোহর খুশি মনে। এরপর তারা যদি স্বেচ্ছায় সাগ্রহে ছেড়ে দেয় কিছু অংশ তোমাদের জন্য তাহলে তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করো। ’ -সুরা নিসা : ৪

মোহর কোনো প্রতিযোগিতার বিষয় নয়, এটি স্বামীর ওপর ন্যস্ত অবধারিত কর্তব্য।

এ দায়িত্ব পালনে কোনো ধরনের উদাসীনতার সুযোগ নেই। আজকাল এটি প্রতিযোগিতার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।যে যত বেশি পারেন মোহরের পরিমাণ তত বেশি বাড়িয়ে দিচ্ছেন আর তার মাধ্যমে তিনি তার সম্পদের পরিমাণ মানুষকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।ইসলামে লৌকিকতা ছোট শিরকের সমতুল্য।

বিরত থাকা উচিত নয় কি?

মূর্খতা নয় কি!?

ক'জন ই বা ভাবছেন?

এবার আসা যাক,স্বর্ণ ধার্য করার ব্যাপারে। কনেপক্ষ খুব বেশি পরিমাণে স্বর্ণের পরিমাণ ধার্য করে দেন।অপরপক্ষের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও খুব কম পরিমাণে স্বর্ণ দিয়ে থাকেন পুত্রবধূকে। নিজ কন্যার বেলায় ষোল কলায় পরিপূর্ণ তাদের হুশ।বিয়েতে অপব্যয়, অপচয় বর কনের পরিবারের জন্য কষ্টকর পরিণতি ডেকে আনে। সামাজিক সম্মান রক্ষার অজুহাতে অনেকে বিয়েতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করে ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে। ইসলাম এসব মাত্রাতিরিক্ত ব্যয়কে সমর্থন করে না।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বিয়ে করেছেন সাধারণভাবে, নিজের প্রিয় কন্যা ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহা কে বিয়ে দিয়েছেন একইভাবে। কোনোরূপ অপচয় ও অপব্যয় করেননি।

আজকাল আবার এটাও দেখা যায়, ক্লাব ও ঠিক করে দেন ছেলেপক্ষ।

আপনাকে,আপনার চৌদ্দ গুষ্টিকে খাওয়াবে আর আপনি কিনা ঠিক করে দিবেন কোথায় খাওয়াতে হবে!?বিয়ের আগেই এই অবস্থা পরের অবস্থা অবশ্যই সহজেই অনুমেয়।

বিয়ে-শাদীতে গায়ে হলুদের নিয়ম বর্তমান সময়ে খুব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গায়ে হলুদকে কেন্দ্র করে অনেক আয়োজন, অনুষ্ঠান, গান বাজনা ও বেপর্দা মেলামেশা আমাদের দেশে হয়। অথচ ইসলামী শরীয়াতে গায়ে হলুদের কোন নিয়ম নেই। বর্তমান বিয়েতে গায়ে হলুদের নামে সারা রাত যে ডিজে পার্টির আয়োজন করা হয় এবং সেখানে যে অশ্লীল অপকর্ম করা হয় তার জন্য কঠোর জবাবদিহিতা করতে হবে কাল কিয়ামতের মাঠে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ ★ وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِ آَيَاتُنَا وَلَّى مُسْتَكْبِرًا كَأَنْ لَمْ يَسْمَعْهَا كَأَنَّ فِي أُذُنَيْهِ وَقْرًا فَبَشِّرْهُ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ ★

‘আর মানুষের মধ্য থেকে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য বেহুদা কথা খরিদ করে, আর তারা ঐগুলোকে হাসি-ঠাট্টা হিসেবে গ্রহণ করে; তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর আযাব। আর তার কাছে যখন আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে শুনতে পায়নি, তার দু’কানে যেন বধিরতা; সুতরাং তাকে যন্ত্রণাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দাও।'(সূরা লুকমান : ৬-৭)

কি আশ্চর্য!

বিয়ের দিন জামাইবাবুকে যেন প্রধান ফটকের ভেতরে ঢুকতে দিবেনা কনেপক্ষ। ভিক্ষা করার মতো থালা হাতে নিয়ে কিছু নর্তকী টাইপের মেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। পর্দা করার গুরুত্ব কতখানি তারা সেখানে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করে না।

বিয়ের অনুষ্ঠানে বরের হাতে সোনার আংটি না পরালে যেন মান সম্মান থাকেনা, অথচ পুরুষদের জন্য সোনা ব্যবহার হারাম। এই বিধানটি তারা জেনেও চুপটি মেরে বসে থাকে এক টুকরো স্বর্ণ হাসিল করার উদ্দেশ্যে।

শুধু জামাইবাবুকে নয় বরং সাথে সাথে দেবর দুলাভাই তাদেরকেও স্বর্ণের আংটি গিফট করতে হবে।তা না হলে বিয়ের পরের দিন পুত্রবধূকে কথা শুনিয়ে দেন।

আজকাল মুসলিমের বিয়ের মধ্যে অমুসলিমদের মতো আংটি বদলের রীতি ঢুকে পড়েছে। শাইখ আলবানী রহ. ‘আদাবুয যিফাফ’ গ্রন্থে বলেন, ‘এতে মূলত কাফেরদের অন্ধানুকরণই প্রকাশ পায়। কেননা তা খ্রিস্টানদের সনাতন রীতি।

আমাদের বিবাহ অনুষ্ঠানগুলোর আরেক গর্হিত কাজ ছবি তোলা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ★

‘প্রত্যেক ছবি অঙ্কনকারীই জাহান্নামে যাবে।'মুসলিম : ৫৬৬২।

অতএব সেই ছবি সম্পর্কে আর কী বলার প্রয়োজন আছে যা পর পুরুষ দেখতে পাই প্রিন্ট করার সময়।

লজ্জার বিষয়!

বিয়ের পর ওলিমা খাওয়ানো বর-কনে উভয় পক্ষের জন্য সুন্নাত। তবে তা অবশ্যই সামর্থ্যের মধ্যে হতে হবে। সামর্থ্যের বাইরে অতিরিক্ত ব্যয় করে, পর্দা করার কোন ব্যবস্থা না করে,অপচয় করে উঁচু মানের খাবার পরিবেশন করে ওলিমার আয়োজন ইসলাম সমর্থন করে না।

হাস্যকর,বড়ই হাস্যকর!!

ভালো ভাবে সম্পন্ন হলো বিয়ে।আরো অনেক রীতি-রেওয়াজ যেন রয়েই গেল।প্রতি সিজনে সিজনাল ফল না পাঠালেই যেন তিক্ততার শিকার হতে হয় মেয়েকে।কেন রে ভাই?ফল কেনার সামর্থ্য কি আপনার নাই? তাছাড়াও পিঠা খাওয়ার লোভ সামলাতে পারেন না।।

ওহ রে,ফার্নিচার এর কথাতো ভুলেই গেলাম।সাত পদের ফার্নিচার না দিলে তারা যেন সমাজে মুখ দেখাতে পারেন না।কিনে আনুন,ভিক্ষা করার দরকার পড়ছে কি?

কোরবানির সময় মেয়ে পক্ষ থেকে বিশাল আকারের গরু না আসলে যেন তাদের মাথায় বাজ ভেঙে পড়বে। এ কেমন অভদ্রতা!!সন্তান হলে মেয়ের পরিবার পক্ষ থেকে আকিকার জন্য গরু দেয়া আরো একটি ঘৃণ্য প্রথা।

কেন এই বাড়াবাড়ি?

সমাজে এসব চলতেই থাকবে কি?নিরবে সহ্য করে যাবে কি। যৌতুকের ভয়াল থাবা গ্রাস করে নিচ্ছে হাজার হাজার তরুণীকে। কিছুদিন আগেই ঢাবি ছাত্রীর নির্মম হত্যার ঘটনা আমরা দেখতে পাই।

অত্যাচার বেড়েই চলছে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। পঙ্গুত্ব জীবন কাটাচ্ছে হাজার হাজার বোন। কেটে ফেলা হয়েছে কারো কান, উপড়ে ফেলা হয়েছে কারো চোখ, আগুনে ঝলসে দেয়া হয়েছে কারো শরীর, ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে কারো হাত-পা, এমনকি এসিড মেরে ঝলসে দেয়া হয়েছে কারো মুখ।কেউ কেউ মুখ বুজে সহ্য করে আর কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে যৌতুক ‘অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ ভক্ষণ’ এর নামান্তর।আল্লাহ তাআলা বলেন: وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُم بَيْنَكُم بِالْبَاطِلِ “তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না।” (সূরা বাকারা: ১৮৮)

এ ঘাতক ও ঘৃণিত ভিক্ষাবৃত্তি দ্বারা শুধু স্বামীর কাছ থেকে নয়,শশুর-শাশুড়ি, ননদ-দেবর-ভাসুর সবাই একত্রে মেয়েকে যৌতুকের জন্য অকথ্য নির্যাতন করে থাকে। আত্মহত্যা করতে প্ররোচনা করে। কখনো কখনো নিজেরাই হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়।

ভালো পরিবার তো আছে।তা না হলে পৃথিবী স্থিতিশীল থাকতো না।অনেক শ্বশুর-শাশুড়ি আছেন যারা ভালবাসেন তাদের পুত্রবধূকে নিজ কন্যার ন্যায়। বুঝতেই দেন না পুত্রবধূ।ব্যবহার করেন আপন কন্যার ন্যায়।

তাদের প্রতি সম্মান,তাদের প্রতি শ্রদ্ধা। অন্তরের অন্তস্থল থেকে তাদের জন্য দোয়া।

আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন। সাথে সাথে তাঁর নির্দেশিত পথের উপর অটল থাকার শক্তি দান করুন।আমাদের জীবনের প্রতিটি কথা ও কাজে তাঁর প্রিয় হাবীবের সুন্নতের অনুসারী হবার তাওফীক দান করুন। আমীন।

- সংগৃহিত

পঠিত : ৪০৫ বার

মন্তব্য: ০