Alapon

নববর্ষঃ ঈমান ধ্বংসের নীলনকশা


প্রতি বছর ইংরেজি ৩১শে ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা ০১ মিনিটে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে বর্তমান বিশ্ব একটি নতুন বর্ষে পদার্পন করে।

উৎপত্তি:

প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জামশিদ খ্রিষ্টপূর্ব ৮০০ সালে নববর্ষ প্রবর্তন করেন। পরবর্তীতে ব্যাবিলনের সম্রাট জুলিয়াস সিজার খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে ইংরেজি নববর্ষ প্রচলন করেন। প্রথমদিকে নববর্ষ বিভিন্ন তারিখে পালন করা হতো।

পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর পহেলা জানুয়ারিতে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়। বাংলাদেশে থাটি ফার্স্ট নাইটের ব্যাপক প্রচলন ঘটে ২০০০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মধ্যরাতের মিলেনিয়াম বা সহস্রাব্দ পালনের মধ্য দিয়ে। (সূত্র ইন্টারনেট)

থার্টি ফার্স্ট নাইট কি ইসলাম সমর্থিত?

১. অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা:

এ রাত্রিকে কেন্দ্র করে চলে অশালীন ও বেহায়াপনার মহোৎসব। যুবতীরা আঁটসাঁট, অশালীন ও অর্ধ নগ্ন পোশাক পরিধান করে অবাধে চলাফেরা করে। অথচ এ প্রসঙ্গে নবী (সাsmile বলেন,

“ঐসব নারী যারা হবে পোষাক পরিহিতা কিন্তু প্রায় নগ্ন। যারা পরপুরুষকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা বক্র উঁচু কাঁধ বিশিষ্ট উটের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।” (সহীহ মুসলিম: ২১২৮)

২. শিরক যুক্ত শ্লোগান:

মুসলিমদের অনেকেই বর্ষবরণ করতে দিয়ে শিরকের মধ্যে লিপ্ত হয়ে ইমান হারা হচ্ছে। আর তাদের শ্লোগান হচ্ছে-

“মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা
অগ্নি স্নানে সূচি হোক ধরা।”


উক্ত শ্লোগানে অগ্নিপূজকদের আগুন দ্বারা পবিত্র হওয়ার ভ্রান্ত বিশ্বাস সু-স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে। অথচ অগ্নিকে সম্মান করা, আগুনের কাছে সাহায্য চাওয়া এবং আগুন দ্বারা পবিত্র হওয়ার ধারণা করা শিরক। আর আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

“নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা তার সাথে শিরুক কারীকে ক্ষমা করবেন না।” (সূরা নিসাঃ ১১৬)

৩. বিজাতীয় সাদৃশ্য:

থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন সম্পূর্ণরূপে বিজাতীয় সংস্কৃতি। এ রাত্রিতে বলে ও ম্যাসেজের মাধ্যমে অভিবাদন জানানো, আতশবাজি, পটকাবাজি, ফ্যাশন শো, ফায়ার প্লে, ট্যাটাে বা উল্কি অংকন, ডিজে পার্টি ও কনসার্ট, নেশা সেবনসহ বিজাতীয় সংস্কৃতির সাথে সাদৃশ্য রাখে। ইসলাম এটি কঠোরভাবে নিষেধ করেছে।

রাসূল (স.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনাে সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করলো সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।” (আহমদ, আবু দাউদ, মিশকাতঃ ৪৩৪৭)

যুব সমাজকে ধ্বংস ও নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট করার নীল নকশা:

যুব সমাজকে ধ্বংস ও নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট করার জন্যই থাটি ফার্স্ট নাইট বাংলাদেশে আমদানি করা হয়েছে। ২০০০ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর রাত ১২টা ২৫ মিনিটে গুলশানে থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপনকারী এক তরুণীকে কিছু মাতাল যুবক শ্লীলতা হানি করে ও তার শরীরের বেশীর ভাগ কাপড় ছিঁড়ে ফেলে। (সূত্র- দৈনিক মানবজমিন, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০০০ইং)

আর ২০০১ সালের শাওন আখতার বাধনের ক্ষত-বিক্ষত দেহ কে না দেখেছেন? আরও কত বাধন। এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় থাটি ফাস্ট নাইট একটি যৌন উৎসব। যা তাদের জন্য অসম্মান জনক। অথচ, আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:

“আর তোমরা জেনার নিকটবর্তী হয়ো না।” (সূরা বনী-ইসরাইল: ৩২)
“মহান আল্লাহ যাবতীয় অশ্লীল অন্যায় কাজ হারাম করেছেন।” (সূরা আল আ’রাফ: ৩২)

৪. গান বাজনা: থার্টি ফাস্ট নাইটকে কেন্দ্র করে আয়োজিত বিভিন্ন কনসার্টে নারী পুরুষের একসঙ্গে গান বাজনা, নগ্ন নৃত্য যেন আবশ্যকীয় বিষয় হয়ে দাড়িঁয়েছে। অথচ ইহা আল্লাহ তায়ালা ও রাসূল (সা) সম্পূর্ণ হারাম ও অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন। (সূরা লুকমান-৬, সহীহ বুখারী-৫৫৯০, ৬৮৯১)

৫.আতশবাজী ও পটকাবাজী: এ রাতে আনন্দ উল্লাস উপভোগ করার জন্য মধ্যরাত থেকে শুরু হয় আতশবাজী ও পটকাবাজী। যা জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক ও ভীতি সৃষ্টি করে এবং জনসাধারণের জন্য কষ্টদায়ক হয়। অথচ আল্লাহ বলেন: যা বিনা অপরাধে মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের কষ্ট দেয়, তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে। (সূরা আহযাব-৫৮, সহীহ বুখারী-২৯০৫)

৬. অর্থ অপচয়: এ রাতকে কেন্দ্র করে অনেক অর্থ অনৈসলামিক ও হারাম কাজে ব্যয় করা হয়। যা অপচয় ও অপব্যয়ের শামিল। আর ইসলাম অপব্যকারীকে শয়তানের ভাই হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। (সূরা বানী ইসরাঈল ২৬-২৭)

৭. যুবক-যুবতীর অবাধ মেলামেশা: এ রাত্রিতে বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, কমিউনিট সেন্টার, সমুদ্র সৈকত, নাইট ক্লাব গুলোতে যুবক-যুবতীরা অবাধে মেলামেশা ও অপকর্মে লিপ্ত হয়। অথচ ইসলাম ইহাকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। রাসূল (সা) বলেছেন: অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রিত হলে তাদের তৃতীয়জন হয় শয়তান। (তিরমিযি, মিশকাত-১৩১৮)

৬. নেশাদ্রব্য সেবন: এ রাতে উশৃঙ্খল যুবক-যুতীরা মদ ও নেশা দ্রব্য পান করে মাতাল হয়ে বিভিন্ন অপকর্ম ঘটায়। আর একারণেই ইসলাম সমুদয় নেশাদ্রব্যকে হারাম করেছে। (সূরা মায়েদা-৯০-৯১ ও সূরা নিসা-১৪, সহীহ মুসলিম ২য় খন্ড, ৯৬৭ পৃষ্ঠা)

সুতরাং- আপনাকে/আমাকে মুসলিম হিসেবে এ দ্বীনকে বর্জন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটা স্পষ্ট বেদআত এবং হারাম। আর আল্লাহ পাক বলেছেন- দু'ধরনের লোক চিরস্থায়ী জাহান্নামি। তাদের মধ্যে এক হলো- শিরক এবং দ্বিতীয় হলো- বেদাতি।

তাই প্রিয় মুসলিম ভাইবোনের প্রতি অনুরোধ- ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর শুক্রবার হলেও আপনার পরিবার পরিজনকে সময় দিন, তাদের সাথে ভ্রমণ করুন স্বাভাবিক ভাবে কিন্তু থার্টি ফার্স্ট নাইট উৎসব হিসাবে উৎযাপন করবেন নাহ। আল্লাহ পাক আমাদের প্রত্যেককে নেক আমল করার, নিজে মেনে চলার তৌফিক দান করুক। আমীন

আল্লাহ্‌ তা’য়ালা বলেন:-
“তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে ও পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো।” (সূরা আত-তাহরীম: ৬)

পঠিত : ৫০৬ বার

মন্তব্য: ০