Alapon

সামাজিক অবক্ষয়ঃ মুক্তি কোন পথে?


সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ চরম সামাজিক অবক্ষয়ের মুখোমুখি হয়েছে। ক্রমাগত বেড়ে চলেছে মাদকাসক্তি, পরকীয়া, ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধ। আর এসব অপরাধের ফলাফলস্বরূপ ধ্বংস হচ্ছে পরিবার, সমাজ। এসব অপরাধের বলি হতে হচ্ছে অনেক নিরপরাধকেও। কখনও বাবার, আবার কখনও মায়ের পরকীয়া দেখে ফেলায় খুন হচ্ছে শিশু সন্তান। নিজ পিতা-মাতা যখন এভাবে হিংস্র হয়ে ওঠে, তখন চারপাশের পরিবেশটা যে শিশুদের জন্য কতটা ভয়ানক, অনিরাপদ—তা বলা বাহুল্য। কিন্তু সমাজের এই পরিবর্তন হলো কীভাবে? কীভাবে এটি জীবন্ত-বধ্যভূমিতে পরিণত হলো?
.
বাংলাদেশের সামাজিক জীবনে পশ্চিমাদের পশু সভ্যতা আজ ঠাঁই করে নিচ্ছে। ‘কাছে আসার গল্প’ শুনিয়ে এই সমাজে অশ্লীলতা ছড়ানো হয়েছে, ফ্রিমিক্সিংকে স্বাভাবিক বানানো হয়েছে। ভারতীয় সিরিয়াল-সিনেমায় শেখানো হচ্ছে পারিবারিক অশান্তি-পরকীয়া। আর এসবকিছু প্রচার-প্রসারে অবদান রেখেছে বাংলাদেশের কথিত সুশীল সমাজ। তারা নারী স্বাধীনতা, নারীর ক্ষমতায়ন, বাক-স্বাধীনতার বুলি আওড়িয়ে আমাদের সমাজ থেকে নৈতিক মূল্যবোধকে বিদায় দিয়েছে। আর এর ফলাফলস্বরূপ সমাজে বেড়েছে ধর্ষণ, হত্যা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি।
.
একদিকে কথিত সুশীলরা সামাজিক মূল্যবোধ নষ্টে নেতৃত্ব দিয়েছে, পরকীয়াকে জায়েয বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে অন্যদিকে যখন সামাজিক মূল্যবোধ নষ্ট হওয়ার ফলে ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড বেড়ে চলেছে তখন এরাই আবার এসব অপরাধের বিরুদ্ধে মায়াকান্না কাঁদছে, নীতিকথা শোনাচ্ছে। আসলে এরা অতিমাত্রায় নির্লজ্জ ও স্বার্থপর। নিজের স্বার্থের জন্য এরা পরকীয়াকে জায়েয বানায়, আবার নিজের মেয়ে খুন হলে পরকীয়াকে খারাপ বলে।
.
এরা এসব সমস্যার সমাধানও খুঁজে ভুল জায়গায়। একবার তারা বলে, নিম্ন আয় ও শিক্ষার আলো পৌঁছেনি এমন মানুষের মধ্যে নারী-শিশুনির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা বেশি। মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটলে মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটবে। তখন পারিবারিক স্বস্তি আসবে। [১]

আবার তাদেরই রিপোর্ট এবং বাস্তবতা থেকে জানা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের সমাজের উচ্চশিক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত শ্রেণিতে নারীর ওপর সহিংসতা ও নির্দয়তার ঘটনা বেড়ে চলেছে।
অর্থনৈতিক সচ্ছলতা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা নৃশংসতার মনোবৃত্তি থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারেনি। [২]

এই দুটি একটি অপরটির বিপরীত। তারা এমন দ্বিমুখী চিন্তার চোরাবালিতে আটকে থেকে মানুষের জীবনের সমাধান দিতে চায়! অথচ তারা কখনোই মানবজীবনের সমাধান দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না। কারণ তাদের সিস্টেমটাই দাঁড়িয়ে আছে সমস্যার উপর, অন্যায় ও স্বার্থের উপর।
.
তাদের নীতি হলো, নারীকে নগ্নভাবে চলাফেরার স্বাধীনতা দেবে, আর নারীর দেহ দিয়ে তারা ব্যবসা করবে। তাদের এসব নীতি পশ্চিমাদের থেকে ধার করা। আর পশ্চিমারা এসব নীতির প্রতিফল ইতোমধ্যে ভোগ করছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে ধর্ষণের হার সবচেয়ে বেশি। তাদের পরিবার ও সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সবাই নিজের স্বার্থোদ্ধারে ব্যস্ত। মানুষের মনে শান্তি নেই। তাই তারা আত্মহত্যার সহজ উপায় খুঁজছে।
.
তাদের এসব নীতি দিয়েই আমাদের দেশে সুশীলরা নারী-শিশু নির্যাতন বন্ধের কথা বলে। অথচ এসব নীতির হর্তাকর্তা পশ্চিমা দেশগুলোই নারী-শিশু নির্যাতনের মহাক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। তাদের এসব স্বার্থীবাদী নীতি কখনোই সমাধান দিতে পারেনি, উলটো সমস্যাকে তীব্রতর করেছে। তবে সমাধান কোথায় আছে?
.
এ সবকিছুর সমাধান কেবল ইসলামেই রয়েছে। কারণ ইসলামের সমাধান কোনো ব্যক্তির স্বার্থকেন্দ্রীক নয়। ইসলাম একমাত্র মানদণ্ড যা বিশ্বজগতের প্রতিপালক মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। ইসলাম নারী ও পুরুষের মাঝে কোনো ধরনের বৈষম্য করেনি, বরং ইনসাফ করেছে। নারী-পুরুষের মাঝে তাদের শক্তি-সামর্থ্য ও সার্বিক কল্যাণের ভিত্তিতে কাজ বণ্টন করে দিয়েছে। পবিত্র কুরআনে নারী-পুরুষকে আল্লাহ একে-অপরের পোশাকস্বরূপ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ মানুষকে পরকীয়া, ফ্রিমিক্সিংয়ের মতো অপরাধ থেকে দূরে রাখতে নারীদেরকে পর্দাবৃত থাকতে বলেছেন, আর পুরুষদেরকে বলেছেন দৃষ্টি অবনত রাখতে। এভাবে ইসলামের প্রতিটি বিধান মানবজীবনের উত্তম সমাধান হিসেবে মনোনীত হয়েছে। এই বাস্তবতা না বুঝতে পারলে সমাধান নিয়ে কথা বলার কোনো প্রয়োজন নেই। কারণ তারা আসলে সমাধান চায়-ই না, সমাধান তাদের প্রয়োজন নেই। তারা তো চায় তাদের নোংরা স্বার্থ হাসিল হবে, সস্তা চাতুর্যপূর্ণ কথায়।
.
সবচেয়ে উদারমনা এবং স্বাধীনমনা দেশ পশ্চিমা ইউরোপ, অ্যামেরিকা। স্বাধীনতার বোতল থেকে তলানি টুকুও গিলে ফেলার পরেও তাদের জীবনে ধর্ষন, পরকীয়া, অবৈধ সন্তান এবং হতাশায় আত্মহত্যা কমেনি কেন?
.
কেন?

পঠিত : ৮৯১ বার

মন্তব্য: ০