Alapon

আর রাহমান : যিনি আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন...



আল্লাহ বলেন ﴾ ‘আর-রাহমান’﴿ [সূরা আর-রাহমান : ১]। এর অর্থ কী জানেন? অর্থ: তাঁর চেয়ে অধিক করুণাময় আর কেউ হতে পারবেন না। তিনি সর্বোচ্চ করুণাময়, পরম করুণাময়, অসীম করুণাময়, ধারণাতীত করুণাময়।

‘আর-রাহমান’ আরবী সিফাতে মুবালাগার শব্দ থেকে উৎসারিত, যা পুরোটাই গুণ। এজন্য এর আরেকটি বিশেষ দিক রয়েছে। তখন অর্থ হবে—আল্লাহর অসীম করুণা ঠিক এই মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ছে।

এর মানে, আল্লাহ তা'আলা আমাদের যত্ন নেন, ভালোবাসেন ও নিরাপত্তা দেন —এগুলো এক ধরণের কথা। আবার অন্যভাবে বললে—‘ঠিক এই মুহূর্তে আল্লাহ আমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন।’ এই মুহূর্তে তিনি আমার খেয়াল রাখছেন। এই মুহূর্তে তিনি আমাকে নিয়ে ভাবছেন। এই মুহূর্তে তিনি আমার পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। এটাই আর-রাহমানের অন্তর্নিহিত অর্থ।

এর অর্থ আল্লাহ আমাকে ঠিক এই মুহূর্তে "কীভাবে তিনি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করছেন' সেটা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করছেন। ঠিক এই মুহূর্তেই; আগামীকাল নয়, পরেও নয়।
আমাদের প্রত্যেকেরই সমস্যা রয়েছে। হয়তো আপনার স্বামী নিয়ে সমস্যা, কারো স্ত্রীকে নিয়ে সমস্যা, কারো সন্তানদের নিয়ে সমস্যা, বাবা-মাকে নিয়ে সমস্যা, শশুর-শাশুড়ি নিয়ে সমস্যা, বস নিয়ে সমস্যা, কর্মী নিয়ে সমস্যা, সরকার নিয়ে সমস্যা, বিদেশযাত্রা নিয়ে সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যা—এভাবে সমস্যা চলতেই আছে। আমরা আমাদের এসব সমস্যা নিয়ে সবসময় চিন্তা করি। কিন্তু “আর-রাহমান” নিয়ে সর্বদা চিন্তা করি না। আমরা শুধু সমস্যা নিয়েই ভাবি অথচ “আর-রাহমান” আমাদের কত সমস্যা থেকে রক্ষা করেছেন সেগুলো নিয়ে চিন্তা করি না।

কারো এলার্জি সমস্যা আছে। সে এটা নিয়ে অভিযোগ দেয়। কিন্তু তার নাক যে এখনো মুখের ঠিক জায়গায় আছে সেটা চিন্তা করে দেখে না। তার যত্ন কে নিচ্ছে? আল্লাহ। অথচ আপনার নাক আরো খারাপ অবস্থায় যেতে পারতো, বেশি খারাপ হতে পারতো।

একজন শিশুর জন্মের সময় কত সমস্যা হতে পারতো? যাদের শিশুদের বাচ্চারা সুস্থ্য আছে তারা সন্তানদের রেজাল্ট নিয়ে অভিযোগ করে—পড়ায় মন নেই, সময়মতো বাড়ির কাজ করে না। এভাবে বাবা-মায়েরা অভিযোগ করতেই থাকে। তাদেরকে যদি বলা হয় আপনার সন্তান নিয়ে কিছু বলুন। তারা কী করবে তখন জানেন? অভিযোগের তালিকা ধরিয়ে দিবে: সময়মতো ঘুমায় না, ঠিকমতো খায় না, রাতের খাবার খায় না, বেশি বেশি টিভি দেখে, সারাক্ষণ ভিডিও গেম খেলে—এভাবে বিশাল একটা অভিযোগের তালিকা ধরিয়ে দেয়।
কিন্তু আপনি যদি এমন বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করেন যাদের সন্তান মৃত্যুবরণ করেছে, তখন তারা কী বলবে জানেন? তারা কখনো বলবে না সে বাড়ির কাজ করতো না, স্কুলে দেড়ি করে যেতো, অল্প খেতো, সর্বদা টিভি দেখতো। তারা বলবে, আমার সন্তান যেরকম চাইতাম ঠিক সেরকম নিখুঁত ছিল। সে খুবই ভালো ছিল, অত্যন্ত ভালো ছিল। তারা কেবলই ভালো গুণগুলোর কথা মনে রাখে। এমনটা কেন? অথচ একদিন আগেই তারা অভিযোগের পর অভিযোগ করতো। চেঁচামেচি করতো। কারণ এটাই মানবিক প্রকৃতি। আমাদের যেসব জিনিস আছে সেগুলোর মূল্যায়ন করি না যতক্ষণ না তা হারিয়ে যায়। যখন নেয়ামত চলে যায় তখন সেগুলোর ভালো দিকগুলো মনে করি।

ঠিক এই মুহূর্তে আমরা আল্লাহকে স্মরণ করছি না। আমরা চিন্তা করছি না আল্লাহ তাঁর ভালোবাসা দিয়ে আমাদের সন্তানদের কতোটা রক্ষা করছেন। আমাদের পরিবারকে রক্ষা করছেন। আমাদের পিতামাতাকে জীবিত রেখেছেন। আপনার পিতামাতা হয়তো আপনার সাথে রাগায়। কিন্তু এটাতো সারা বিশ্বের সমস্যা! যুবকদের প্রতি পিতারা চেঁচামেচি করে। তবুও আলহামদুলিল্লাহ বলুন যে তিনি বেঁচে আছেন। আলহামদুলিল্লাহ যে আপনি তাঁর জন্য ধৈর্য ধরতে পারছেন। তাকে সম্মান করার সুযোগ পাচ্ছেন। এসবই তো আপনাকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়ার উপায়।

আপনি বিনয়ী ও নম্র কিনা সেটা দেখতে পিতামাতার সামনে কেমন আচরণ করেন তা যাচাই করুন। আপনার পিতামাতার সাথে যদি আপনার আচরণগত সমস্যা থাকে তবে আপনার ব্যক্তিত্ব কেমন, ইসলাম আপনার কাছে কী চায় সেগুলো নিয়ে ভেবে লাভ নেই। আল্লাহ চান আমরা যেন বিনয়ী হই। নম্র ও বিনয়ী হওয়া মানে এই নয় যে আপনি খুশুর সাথে নামাজ আদায় করলেন আর পিতামাতার সাথে যা-তা আচরণ করলেন। এটা নম্রতা নয়। আল্লাহ বলেন,
تِلْكَ الدَّارُ الْآخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِينَ لَا يُرِيدُونَ عُلُوًّا فِي الْأَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ
﴾সেই পরকালের আবাস (জান্নাত) আমি তাদের জন্যই বরাদ্দ করব যারা দুনিয়ার বুকে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করতে ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায় না। শুভ পরিণাম তো এসব আল্লাহভীরুদের জন্যই।﴿ [সূরা কাসাস : ৮৩]

আল্লাহ সুবহানাহু ঐসব লোকেদের জন্য জান্নাত তৈরি করে রেখেছেন যারা এই দুনিয়াতে যা-তা করে না। তারা অহংকার ও বড়ত্ব দেখায় না। এমনকি পিতামাতা যদি অন্যায়ও করে তবুও তাদের সাথে বিনয়ী ও নম্র হতে হবে। এগুলো আমাদের জীবনে আল্লাহর ভালোবাসা ও তাঁর দয়ার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ।

এগুলো নিয়ে আমাদের প্রতিদিন চিন্তা করা উচিত। পড়ুন “আর-রাহমান”। একটু থামুন। চিন্তা করুন এর মানে কী—আল্লাহ আমার জন্য কী কী করেছেন ভাবুন।
আমরা অনেকেই বিদেশ যাই। আকাশে প্লেন একটু নড়াচড়া হলেই আমাদের তাকওয়া বেড়ে যায়। বিমান নিচে নামতে থাকে আর আমাদের ঈমান ওপরে ওঠতে থাকে। সুবহানাল্লাহ! এটাই আল্লাহর দয়া, আপনার প্রতি তাঁর যত্ন-ভালোবাসা। তিনি আমাদের প্রত্যেকেরই যত্নই নেন।

মাঝে মধ্যে মানুষজন হতাশ হয়ে যায়। মনে করে আল্লাহ তার ব্যাপারটা দেখে না। 'আমার এত সমস্যা কেন?' আপনি হয়তো “আর-রাহমান” নিয়ে যথেষ্ট চিন্তা করেন না। এটা নিয়ে ভালোভাবে ভাবেন না। তাঁর দয়া, যত্ন ও ভালোবাসা সর্বদাই আছে, আপনাকে বরং কৃতজ্ঞ হয়ে একটু ধৈর্য ধরতে হবে।

- উস্তাদ নোমান আলী খান

পঠিত : ৪৫৪ বার

মন্তব্য: ০