Alapon

নারীবাদঃ মুসলিম প্রজন্ম,পরিবার ধ্বংসের হাতিয়ার

'নারীবাদ' শব্দটি খুব সুন্দর হলেও অর্থটি খুব খারাপ।নারী পুরুষ প্রতিযোগিতা নামক এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টির কারিগর হলো নারীবাদ । নারীবাদ বলতে বুঝেন অনেকে শুধু নারীর শিক্ষা , স্বাস্থ্য ইত্যাদির অধিকারকে।যদি নারীবাদ মানে তাইই হতো তাহলে তো ভালোই ছিল।শুরুতে নারীবাদ এরকমই ছিল। পাশ্চাত্যে প্রথম নারীবাদ আন্দোলন শুরু হয়। তখন এই আন্দোলন দরকার ছিল। কারণ নারীরা সেখানে পিতার সম্পত্তির ভাগ পেত না, স্বামীর যদি তাঁর স্ত্রীকে ভালো না লাগত তাহলে তাকে বাজারে বিক্রি করে দেয়া হতো। এছাড়াও আরও অমানবিক বর্বর প্রথা। নারীবাদের শুরুর দিকটা ভালোই ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে নারীবাদ ব্যবহার হতে লাগে ইসলামের বিরুদ্ধে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে ও মুসলিম দেশগুলোর বিরুদ্ধে।

আরে , তুমি নারী । তোমার যদি জামা কাপড় পড়তে ইচ্ছা করে পড়বে , যা পড়তে চাও পড়বে । ধর্ম তোমাকে বন্দি করছে। ধর্মের কথা মানা দরকার নেই।
আরে, তুমি তো নারী।দেখো আমাদের দেশের নারীরা কত শিক্ষির , তাদের নিজস্ব অধিকার আছে। তোমাদের নেই। তোমাদের উচিত ধর্ম থেকে বেড়িয়ে আসা।
আরে, দেখো বোরকা হিজাব তোমার অসম্মানের প্রতীক। এগুলো ছেড়ে দাও।

এইসব কথা শুনে অনেকেই ধাক্কা খান। পাশ্চাত্যে অনুসারীরা দেখায় তাদের নারীরা শিক্ষিত কারণ সেখানে নারীবাদ প্রতিষ্ঠিত।কিন্তু এটা বলেনা যে পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির ব্যাশ্যাও তাদের নারীবাদের ফসল। নারী শিক্ষার উন্নতির সাথে নারীবাদের কোন সম্পর্কে কোন কালেই ছিল না , আজও নেই, আর কোনদিন থাকবেও না। সৌদির প্রায় ৮৩ ভাগ নারী শিক্ষিত। সেখানে নারীরা শিক্ষিত হয়েছি কি নারীবাদের জোরে?

দ্যা ওয়াশিংটন পোস্টের এক জরিপে দেখা গিয়েছে নারীবাদের আবাস ভুমি আমেরিকাতেই ৪৮ ভাগ সন্তান জারজ তথা হারামজাদা। এই জরপি আরও দু দশকেরও অনেক আগে করা হয়েছিল। এখন হয়তো হারামজাদার হার সেখানে ৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে।

আমেরিকাতে নারীরা শিক্ষিত, এর জন্যে নারীবাদের ভুমিকা কোনদিনও ছিল না। যতদিন নারীবাদ ছিলনা তখনো সে দেশের নারীরা শিক্ষিত ছিল , যখন নারীবাদ আছে তখনো নারীরা শিক্ষিত। শুধু নারীরা কেন , হিজড়ারাও শিক্ষিত।

মনে হতে পারে আমেরিকানরা অনেক সুখি, কারণ তারা ধনী। কিন্তু শুধু সম্পদ কখনো মানুষকে সুখি করতে পারেনা। একটা সুখি সমাজ গঠনের সবচেয়ে প্রথমে প্রয়জন একটি স্থিতিশীল পরিবার ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যেটা আমেরিকাতে ধ্বংস হয়েছে। সেখানে বিয়ের পরও স্বামী ও স্ত্রী ব্যক্তিগত ইচ্ছা অনুযায়ী অন্য নারী বা পুরুষের সাথে থাকতে পারে।

আমেরিকার সমাজ ব্যবস্থায় নারীবাদের প্রভাবটা কেমন সেটা জানার জন্য আমাদের উচিত স্যার হুমায়ুন আহমেদের লেখার শরণাপন্ন হওয়া।

" আমার সাথে রথ কোয়ান্ডান বলে এক আমেরিকান ছাত্রি পিএইচডি করত। সেই এয়েতি কোন স্বামী যোগার করতে পারেনি। ভবিষ্যতে পারবে এমন কোন সম্ভাবনাও নেই। সে মেয়েটি বলল, আমি অনেক ছেলেদের সাথে মিশেছি, তারা প্রথম ডেটিঙয়েই বিছানায় নিতে চায়, কিন্তু আমি না করি না করিনা। আমার ভয় করে সে যদি আমাকে ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু এতো কিছু করেও আমি একটা ছেলে জোগাতে পারলাম না।"( ভ্রমন সমগ্রঃ হুমায়ুন আহমেদ)


নারীবাদ পাশ্চাত্যের পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়েছে। অসংখ্য শিশু তাঁর বাবা বা মা কে সেটাই বলতে পারেনা।

এতক্ষন তো শুধু আমেরিকার কথাই শুনলেন। এখনামাদের এশিয়ার অন্যতম ধনী দেশ এশিয়ার অন্যতম নারীবাদী দেশ জাপানের সামাজিক অবস্থা এক জাপানির মুখেই শুনে নিন।
" "জাপানি মেয়েরা নির্মম হৃদয়ের, স্বার্থপর। পুরুষেরা চায় এমন কেউ তার পাশে থাকুক যে তার পাশে থাকুক, কাজ থেকেআসার পর যার সাথে সুন্দর সময় কাটানো যায় এমন কেউ। সেক্স ডলের সাথে আমি তেমনটা করতে পারি"- মাসায়ুকি( একজন জাপানি , সুত্রঃ বিবিসি)


দাজ্জালের অনুসারীদের অন্যতম কাজ হচ্ছে হালালকে হারাম করা, হারামকে হালাল করা। এই নারীবাদীরাও সেইম। নারীবাদীরা যে দাজ্জালের অনুসারী সেটা আজ অনেক মানুষের কাছেই পরিষ্কার।

তসলিমা নাসরিনকে অনেকে মনে করেন তিনি প্রকৃত নারীবাদী না। যদি তসলিমাকে আসল নারীবাদী মনে না হয় তাহলে পাশ্চাত্যে যত নারীবাদী আছে তারা কেউই নারীবাদী না।

নারীবাদ কিভাবে একটি মুসলিম প্রজন্ম ধ্বংস করে?
নারীবাদীদের মতে একটা নারী বা পুরুষ , যার ইচ্ছা তাঁর সাথে সম্পর্ক করবে। এতে বাঁধা দেওয়া অপরাধ।এমনকি বিবাহিত হলেও। এখানে একটা কথা খেয়াল করুণ, যার খুশি তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখবে । অর্থাৎ বিয়ের পর হোক আর আগে , যে যার সাথে খুশি মিলিত হতে পারবে।আর এই অবৈধ মিলিত হওয়ার কারণে যদি সন্তান হয়, তাহলে সে জারজ হিসেবে গণ্য হবে। নারীবাদীদের এমন মতবাদ স্পষ্টই আমাদের বুঝায় যে, একটা মুসলিম শিশুর পিতৃ পরিচয় অথবা মাতৃ পরিচয় মুছে ফেলার জন্য নারিবাদই যথেষ্ট ।

ছোট বেলা থেকে একটা মুসলিম শিশু নারীবাদ শিক্ষা পেয়ে আসে, নির্ঘাত সে ধর্ম থেকে দূরে সরে যাবে। ইভেন, আমি নিজেও সরে গিয়েছিলাম। নারীবাদ শিক্ষা স্পষ্ট ইসলাম বিরোধী , আর এই শিক্ষা যখন কারো মগজে গেথে দেয়া যায়, তাহলে সে ইসলাম থেকে অনেক সময় দূরে সরে যাবে এবং মুরতাদও হয়ে যেতে পারে।
একটা মুসলিম প্রজন্মকে ধর্মহীণ করার জন্য পশ্চিমাদের হাতিয়ার হচ্ছে নারীবাদ।

নারীবাদ কিভাবে মুসলিম পরিবার ধ্বংস করে?
নারীবাদের প্রভাবে পাশ্চাত্যের পরিবার ব্যবস্থা আমাদের বুঝিয়ে দেয় যে পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংসের জন্য নারীবাদ একাই যথেষ্ট। বাংলাদেশে নারীবাদের প্রভাব যত বাড়ছে তত পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংস হচ্ছে।


[b]নারীবাদ মোকাবেলায় আমাদের করনীয় কি?

নারীবাদ মোকাবেলায় আমাদের সবচেয়ে প্রথম কাজ হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম প্রচার করা। বাংলাদেশে ইসলাম ৮ম শতাব্দীতে এসেছে। কিন্তু এই অঞ্চলের মানুষ হিন্দুয়ানি কালচার ছাড়তে পারেনি। এখনো পারেনি। তাছাড়া মুঘল আমল থেকে বেশিরভাগ সময়ই এই অঞ্চলের মানুষ শিয়া দ্বারা শাসিত হয়।যার কারণে প্রকৃত ইসলাম তেমনভাবে জায়গা করে নিতে পারেনি। পরে ব্রিটিশ আমলে দেওবন্দ ও বর্তমানের সালাফি আন্দোলন অনেকটা মুল ধারার ইস্লামে দেশে নিয়ে আসে।
কিন্তু সালাফি দাবিকারী একটা অংশ অন্যদিক দিয়ে আমাদের গুমরাহ করছে , দেওবন্দিদে একটা অংশও।
ইসলাম সম্পর্কে আমাদের জানার ইচ্ছা থাকতে হবে এবং মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ যাতে রাখে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। বাংলার ষোড়শ শতকের আলয়াল নামের এক পণ্ডিত বলেছিল, হাজার শিষ্যের চেয়ে একজন বিদ্বান ব্যক্তি উত্তম। তাই আমাদের সবার আগে একটা ইসলামি সমাজ গঠন করতে হবে।

এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের সমাজে নারীর উপর সহিংসতা হয়। আমার বাসার পাশে এক হুজুর ছিল। আমি মনে করতাম ইসলামপন্থি মানেই বউ পিটায়। কিন্তু তিনি আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত করেছেন । বছরখানেক তারা আমাদের বাসার পাশে ছিল। তারা সব সময় সবার সাথে ভালো আচরণ করত। সেই হুজুরকে দেখতাম তাঁর স্ত্রী মাদ্রাসায় গেলে ঘরের ঝারু দিতে, রান্না করতে। কখনো তাদের মধ্যে ঝগড়া দেখিনি। আমি বুঝতে পারি যে ইসলামের ভিতর থাকলে কেউ কখনো তাঁর স্ত্রীর প্রতি সহিংস হয় না। আমরা বাহ্যিকভাবে মুসলিম অনেকেই, কিন্তু অন্তর থেকে না। আমাদের উচিত অন্তর থেকে ইসলাম গ্রহণ করা। আর সঠিক ইসলাম মেনে চল্রলেই লেই নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা যাবে।

নারীবাদ মোকাবেলায় আরেকটি করনীয় হলো সচেতনতা তৈরি। নারীবাদ সম্পর্কে জনগণের সচেতনতা একান্ত জরুরি।নারীবাদ যে ইসলাম ধ্বংসের সর্বনাশা ফাদ এটা প্রত্যেকের জানা জরুরি।

যৌতুক নামক মুশ্রিকদের প্রথা চিরদিনের জন্য ধ্বংস করে দিতে হবে। এই যৌতুকের কারণে অনেক সময় হত্যার মতো ঘটনাও ঘটে। কোন মুসলিম এই বর্বর কুফুরি প্রথা সমর্থন করতে পারেনা। আমরা যেমন বৈশাখের বিরোধিতা করি , যেমন শিরিকি সংস্কৃতির বিরোধিতা করি তেমনই এই যৌতুক নামক জানয়ারবাদি প্রথার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। এই হিন্দুত্ববাদি সংস্কৃতি আমাদের সমাজের একটা বড় সমস্যা।

পঠিত : ৪১৬ বার

মন্তব্য: ০