Alapon

বাংলার নবাবী আমলের বিজ্ঞানী , দার্শনিক ও গ্রন্থাগার

বর্তমানে এমনভাবে আমাদের ইতিহাস শেখানো হয় যে মনে হয় , ব্রিটিশরা এসে এদেশের মুর্খ জনগোষ্ঠীকে উদ্ধার করেছে , বিজ্ঞানের প্রসারেই তাদেরই একমাত্র ভুমিকা । যা একটা প্রচণ্ড মিথ্যাচার । সেই সুলতানি আমল থেকেই জ্ঞান , বিজ্ঞানের ভারত ছিল অন্যতম । হালাকু খান দ্বারা বাগদাদ ধ্বংসের পর কায়রোর পাশাপাশি দিল্লি হয়ে উঠে দার্শনিকদের উঠা বসার কেন্দ্র । ভারতের একক সুলতান অথবা স্বাধীন আঞ্চলিক সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতীয় দর্শনের সাথে আরব দর্শনের মিল ঘটাতে সক্ষম হন । কিন্তু তাদের কৃতিত্ব দেয়া হয় না , উল্টো এই ইতিহাসকে অগোচরেই রেখে দেয়া হয় ।
১৭১৭ সাল কিংবা তাঁর কিছু পরে বাংলায় নবাবী তন্ত্র শুরু হয় ।

মুর্শিদকুলি খান ছিলেন বাংলার স্বাধীন নবাবদের মধ্যে প্রথম । তারপর পর্যায়ক্রমে আরও দু জন নবাব আসেন । এবং এদের পর আসেন নবাব আলিবর্দি খান । তিনি আফগান বিদ্রোহ এবং মারাঠি আক্রমণ থামিয়ে বাংলার জনমনে শুধু স্বস্তিই ফেরান নি । সেই সাথে তিনি রাজধানি মুর্শিদাবাদকে ঢেলে সাজান । তিনি নিজে ছিলেন জ্ঞান পাগল । তাই তাঁর আহ্বানে অনেক দার্শনিক , বিজ্ঞানী বাংলায় চলে আসেন ।

তাঁর আমলে বিখ্যাত দার্শনিকদের মধ্যে ছিল মীর মুহাম্মাদ আলী ফাজিল ।
বিখ্যাত চিকিৎসক ছিল হাকিম হাদি আলী খান এবং হাকিম তাজুদ্দিন । হাকিম হাদি আলী খানকে সে যুগের গ্যালেন বা প্লুটো বলে আখ্যায়িত করা হতো ।
এছাড়াও নকিকুলি খান , মির্জা হুসেইন , কাজই মুজাফফার , মুহাম্মাদ হাজিন , শাহ মুহাম্মাদ হাসান , আবুল কাশিম ও সৈয়ড মূহাম্মাদ আলী র মতো খ্যাতনামা পণ্ডিত ছিল ।
আলিবর্দি খানের আমলে মুর্শিদাবাদে অনেক গ্রন্থাগার গড়ে উঠে । মীর মুহাম্মাদ আলী ফাজিলের ব্যক্তিগত গ্রন্থাগারেই ছিল ২০০০ এর মতো বই ।
১৭৫৭ সালে ব্রিটিশদের কাছে মুর্শিদাবাদের পতন হলে ধ্বংস করে দেয়া হয় এইসব গ্রন্থাগার । অনেক গ্রন্থ নষ্ট করে দেয়া হয় । কিছু গ্রন্থ পশ্চিমে নিয়ে যাওয়া হয় । শুধু বাংলার গ্রন্থাগার ব্রিটিশরা ধ্বংস করেছিল এমনটা নয় । তারা ভারতের যে রাজ্য দখল করত সেখানেই গ্রন্থাগার ধ্বংস করে গ্রন্থগুলো লুট করে নিয়ে যেত । মাইশুর , বাংলা , দিল্লি , লখনো , আগ্রাসহ প্রায় সব গ্রন্থাগারের গ্রন্থ ব্রিটিশরা লুট করে নিয়েছিল ।
ইকবাল গণি খানের মতে," এই লুট করা বইগুলো এখন লন্ডন , প্যারিস , অক্সফোর্ড, কেম্রিজ, দাবলিন, গ্লাসগো , বার্লিন এমনকি Aberystwyth এর ফারসি পুথির বিশাল একটা অংশই ভারতের সুলতান , নবাব ও বাদশাহদের গ্রন্থাগার থেকে লুট করে নিয়ে যাওয়া" ।

অর্থাৎ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য যখন জ্ঞান বিজ্ঞানের শীর্ষে আহরণ করতে যাচ্ছিল তখনই ব্রিটিশরা এসে এই উপমহাদেশকে কয়েক শতাব্দী পিছনে ফেলে দেয় । এবং এই অঞ্চলের যত জ্ঞানী গুণী ব্যক্তি ছিল তাদের ইতিহাস নষ্ট করে ফেলার চেষ্টা হয়।
ইন্দ্রিরা গান্ধী ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্টসের শুমারি অনুযায়ি ভারতের সুলতানি ও বাদশাহি মুঘল আমলের প্রায় ৩ কোটি পুথি , বই এবং অন্যান্য জ্ঞান চর্চার নথিপত্র পশ্চিমের গ্রন্থাগারগুলিতে মুখ লুকিয়ে আছে । শেল্ডন পোলক এই সম্পর্কে লিখেছেন , " এর একটা অতি খুদ্র অংশ আমরা পড়তে পেরেছি " ।


** সুত্রঃ ১। সুলতানি এবং মুঘলযুগে গ্রন্থাগার - বিমল কুমার দত্ত **
** ২। নবাব সিরাজ উদ দউলা ও বাংলার মসনদ- ডক্টর ফজলুল হক **

পঠিত : ৩৭৯ বার

মন্তব্য: ০