Alapon

সম্পর্কজ্ঞান এবং কিছু কথা...



আমরা যখন কারো সাথে সম্পর্ক করি মানে সম্পর্কটা যখন বিয়ে হয়, তখন কিন্তু আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে বিয়ে করিনা। বিয়েটা করি বর্তমান দেখে।

যেমন ধরেন আপনি। আপনাকে যখন কেউ বিয়ে করবে, তখন আজকের আপনাকেই কিন্তু সে বিয়ে করবে। ৫বছর পরের আপনাকে কিন্তু না। তাই এই যে বিয়েটা করা হয়, এটা কিন্তু এই মানসিকতা নিয়ে করা হয় যে, তাকে নিয়ে আমি আমার সারা জীবন কাটাবো। এমনকি মৃত্যুর পর এই আপনিকে সে জান্নাতেও চাইবে, তাইনা?

এখন এই সংসারে ভালো কিছু হবে, আবার খারাপ কিছুও হবে। বিয়ে করার আগে এটা মাথায় রাখতে হবে যে, যে আসবে সে ভালো খারাপ মিলিয়ে মানুষ। তার ভালো দিকটা যেমন আমাকে আনন্দ দিবে, ঠিক খারাপ দিকটাও আমাকে কষ্ট দিবে। কিন্তু এই খারাপ লাগাটা কিন্তু বেশিদিন লাস্টিং করেনা এই জন্য যে, অপরদিকের মানুষটা যখন এটা অপছন্দ করবে, তখন সে চাইবে সেটা বাদ দিতেই। তবুও কিছু খারাপ থাকার পর যখন এই খারাপকে ভালো করার জন্য চ্যালেঞ্জ হাতে নিবে, এতেই তো সাওয়াব, এতেই তো সংসারের মজা।

আপনি ভাবছেন, আজকের আপনাকে যেভাবে ভালো লাগছে, ৫বছর পরের আপনি হয়তো একটু অসুস্থ হবেন, রূপ একটু কমে যাবে বা আচরণে একটু পরিবর্তন আসবে, এটা দুইজনেরই হতে পারে! কিন্তু আমি মনে করি এতে ভালোবাসা কমেনা, বরং বেড়ে যায়। কারণ ততদিনে দুইজন দুইজনকে গভীরভাবে জেনে যান, তখন একটা শরীর হয়ে যাবেন, এটা ভাবনাতেও আসবেনা যে, কীভাবে আমরা একে অপরকে ছাড়া থাকতে পারি। তখন সংসারে নতুন অতিথি আসবে, সেই অতিথিকে বড় করতে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতা যুক্ত হবে। তখন আসলে আজকের আপনার মতো এই ভাবনা থাকবেনা।

তবে হ্যাঁ, কিছু ঝামেলা হয়। মনের অমিল হয়। তবে তা সাময়িক। ক্ষমা করার মানসিকতা লালন করলে, অপরজনের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রাখলে সাময়িক কোন কষ্ট হয়তো পাবেন, কিন্তু বিচ্ছেদের মতো চিন্তা আপনি করতে পারবেন না।

তারপরও যদি কেউ জেদ নিয়ে বসে থাকে, কিছুতেই সে ক্ষমা করবেনা, তাহলে দুইটা সম্পর্ক নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে। এগুলো সম্পূর্ণ নিজের অসুস্থ মানসিকতা বলে আমি মনে করি।

একটা বিয়ে বা সম্পর্ক এটা নিজের থাকেনা। হয়ে যায় দুইটা মানুষের। আজকের দুইটা মানুষ ৫বছর পর সেইম মানুষটাই থাকবে, শুধু যুক্ত হবে নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন অতিথি। সম্পর্ক যখন গড়ে উঠে, তখন সম্পর্ককে যাতে আখেরাত পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায় সে চেষ্টা দুইজনকেই করতে হবে। তাই আগে থেকে ভবিষ্যত ভেবে নেয়াটা বোকামি আর ছেলেমানুষী বই কিছুনা!

সংসারে অভাব থাকবে, স্বামী হয়তো চাহিদা সাথে সাথে পূরণ করতে পারবেনা। তখন স্ত্রীর স্বামীকে বুঝতে হবে, সাহস দিতে হবে। তখনই ভালোবাসা আজকের অবস্থানে না থেকে আরো বৃদ্ধি পাবে!

স্বামী হয়তো সময় বের করতে পারছেনা, কিন্তু এখানে বুঝতে হবে একজন স্ত্রীর কেনো স্বামী সময় কম পাচ্ছে! এখানে নিজেকে তখন আরো বেশি ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয়, তখনই ভালোবাসা বেড়ে যায়।

এভাবেই এই ভালোবাসা বৃদ্ধি পেতে পেতে জান্নাতে পর্যন্ত অবশিষ্ট থেকে যায়!
তাই এটা ভাববেনা না যে, কিছুদিন পর কি আজকের এই ভালোবাসা থাকবে? বরং ভাববেন যে, আজকের ভালোবাসার চেয়ে যখন ভবিষ্যতের ভালোবাসা ও সুখ আরো বেড়ে যাবে তখন সেই ভালোবাসা সমানভাবে গ্রহণ করে নিতে আমি প্রস্তুত তো?

সর্বোপরি কি জানেন? আমাদের ভেতরের এই ভালোবাসা এটা আল্লাহর অনুগ্রহ। এই অনুগ্রহ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। তাই আমাদের এই ভালোবাসা বৃদ্ধিতে আল্লাহর সাহয্য চাইতে হয়। তিনি ভালোবাসা বাড়িয়ে দেন। কখনো কমে গেলে, আল্লাহর কাছে চাইতে হয়। দুইজন দুইজনকে মন থেকে বুঝলে, এই ভালোবাসা কখনো কমতি হবেনা। কিছু ভালোবাসা কথা দিয়ে প্রকাশ করতে হয়না, কিছু ভালোবাসা না বলাতেও প্রকাশ পায়।

যে ছেলের অনায়াসে আরেকটা মেয়ের সাথে পরকিয়া করার সুযোগ আছে, কিন্তু সে নিজেকে সংযত রাখছে শুধু মাত্র নিজের স্ত্রীর জন্য, এটাকে আপনি কি মনে করবেন?

একটা ছেলে সারাজীবন কোন খারাপ সম্পর্কে জড়ালো না, জেনার সুযোগ থাকার পরও করলো না, শুধুমাত্র তার ভবিষ্যৎ স্ত্রীর কথা ভেবে, এটাকে আপনি কি ভালোবাসা বলবেন না?

একটা ছেলে সারাদিন অফিসে পরিশ্রম করছে এই ভেবে যে, দিনশেষে স্ত্রীর জন্য ভালো একটা শাড়ি কিনে দেবে, এটাতে কি ভালোবাসা নেই?

এভাবে ছোট ছোট ভালোবাসা গুলো যখন মার্ক করতে শিখে যাবেন, তখন বুঝতে পারবেন, এই একটা জীবন এই মানুষটার সাথে কম হয়ে যাবে। ৫টা বছর এটা তো কেবলই ভ্রম...

- ওমর ফারুক

পঠিত : ৩৫১ বার

মন্তব্য: ০