Alapon

ইমাম ইবনু শিহাব যহরী (রাহি.) : প্রথম হাদিস সংকলক...



যে মহান ব্যক্তি পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সুবিন্যস্ত আকারে রাসুল (ﷺ) এর হাদিস সংগ্রহ,সংকলন ও লিপিবদ্ধ করেন এবং যিনি তাবেয়ীদের মধ্যে রাসুল(ﷺ) এর সুন্নাহ সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তি। তিনিই প্রখ্যাত তাবেয়ী ইলমি কাননের স্নিগ্ধ ফুল ইমাম মুহাম্মদ ইবনু মুসলিম ইবনু আব্দিল্লাহ ইবনু শিহাব আয-যুহরী (রাহি.)।

'ইবনু শিহাব ' মু'আবিয়া (রাদি.) র শাসনামলের শেষ দিকে হিজরী ৫০ সনে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন।পিতা-মুসলিম।মাতা-আয়িশা বিনতু আব্দিল্লাহ। পিতা মুসলিম ছিলেন সংগ্রামী মুসলিম।তিনি আব্দুুল্লাহ ইবনু যুবাইর(রাদি.)র হাতে বায়'আত গ্রহণ করেন এবং বনু উমাইয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।দাদা ইবনু শিহাব ও গোত্র বনু যুহরার প্রতি আরোপিত হয়ে ইবনু শিহাব আয যুহরী নামে প্রসিদ্ধি অর্জন করেন।

জ্ঞানগত উৎকর্ষের দিক দিয়ে 'ইবনুু শিহাব'এর সমাকালীন তার সমকক্ষ আর কেউ ছিল না।তার মধ্যে জ্ঞানার্জনের যোগ্যতা ছিল স্বভাবজাত। তার মেধা,ধীশক্তি ও মুখস্থ শক্তি ছিল অতুলনীয়। এত প্রখর মেধাবী ছিলেন যে,কোন হাদিস,মাসআলা দ্বিতীয় বার শ্রবণের প্রয়োজন পড়তো না।তার স্মৃতিশক্তির একটি ছোট্ট দৃষ্টান্ত হল,তিনি মাত্র আশি দিনে গোটা কুরআন মুখস্থ করেন।

তিনি নিজেই তার মেধা সম্পর্কে বলেন-"আমি আমার স্মৃতিপটে কখনো কোন কিছু গচ্ছিত রাখলে তা আর কখনো হারিয়ে যেতো না।"।

সাধনামূখর জীবনের কিংবদন্তি 'ইবনু শিহাব' শৈশব থেকে মসজিদে নববীতে যে সব জ্ঞানের মজলিস অনুষ্ঠিত হতো,সকল মজলিসে সবার আগে উপাস্থিত হতেন।শিশু-বৃদ্ধ বাছ-বিচার না করে সবার কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করেন।মসজিদের নির্ধারিত মজলিস থেকে বের হয়ে মদিনার অলি-গলিতে ঘুরে ঘুরে আবাল বৃদ্ধ-বনিতা সবার কাছে যা কিছু শুনতেন,লিখে নিতেন।এমনকি পর্দার আড়ালে থাকা পর্দানশিন মহিলাদের কাছে ও যেতেন।

তিনি সাহাবী আনাস ইবনু মালিক (রাদি.),আব্দুুল্লাহ ইবনু উমর, সাহল ইবনু সাদসহ অনেক সাহাবী থেকে হাদিস শ্রবণ করেন।

দীর্ঘ আট বছর তিনি মদীনার ইমাম ও সাতজন ফকিহদের একজন সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব (রাহি.) সান্নিধ্যে থাকেন।এ সম্পর্কে তিনি নিজেই বলেন-'আমি প্রতিদিন উরওয়া' র বাড়ির দরজায় গিয়ে বসে থাকতাম।

জ্ঞানের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ ও রুচির এমন ব্যাপকতার কারণে তিনি সকল প্রকার জ্ঞানে পারদর্শিতা লাভ করেন।যে শাস্ত্রের উপর তিনি আলোচনা করতেন,মনে হতো এটাই তার বিশেষ শাস্ত্র।

বলা হয়ে থাকে যে,তিনি যে শাস্ত্রেই পড়াশোনা করেন তাতে অন্য কাউকে তার সমকক্ষ হওয়ার সুযোগ দেন নি।

'ইবনু শিহাব'কুরআনের একজন বড় হাফিজ ছিলেন।কুরআন সম্পর্কে তার জ্ঞান এত বিস্তৃত ছিলো যে,মনে হতো কালামুল্লাহ ই যেন তার নির্দিষ্ট বিষয়।হযরত নাফি (রাহি.)।যিনি আব্দুুল্লাহ ইবনু উমরের নিকট প্রশিক্ষণ লাভ করেছিলেন,তিনি ও তাকে কুরআন তিলাওয়াত করে শুনিয়েছিলেন।

সকল শাস্ত্রে যদি ও তার পদচারণা ছিল,তবে তার বিশেষ আধীত শাস্ত্র ছিল হাদিস ও সুন্নাহ। তার প্রবল চেষ্টায় ও সাধনায় তার যুগের সকল ইমাম ও আলিমদের জ্ঞান আত্মস্থ করে ফেলেন।

ফিকহ বিষয়ে ও তার স্থান ছিল উঁচুতে।মদীনার বিখ্যাত সাতজন ফকিহদের সকল জ্ঞান তার বুকে সংরক্ষিত ছিল।আর এই সাতজন ফকিহ হলেন-
সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব(রাহি.)
উরওয়া ইবনু যুবাইর(রাহি.)
আবু বকর ইবনু আব্দুর রহমান(রাহি.)
উবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দিল্লাহ(রাহি.)
খারিজা ইবনু যায়দ ইবনু সাবিত(রাহি.)
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার(রাহি.)
কাসিম ইবনু মুহাম্মদ(রাহি.)

'ইবনু শিহাব' এর ব্যক্তিসত্তাটি ছিল জ্ঞান পিপাসুদের কেন্দ্র স্বরূপ।তার দারসের মজলিসে শত মানুষের ভীড় জমতো।যে কারণে তার ছাত্রসংখ্যা হিসেবের ঊর্ধ্বে।তারমধ্যে বিখ্যাত কয়েকজন হলেন-
আতা ইবনু আবি রাবাহ(রাহি.)
উমর ইবনু আব্দিল আযিয(রাহি.)
ইমাম আওযাঈ(রাহি.)
ইমাম মালিক(রাহি.)
মুহাম্মদ ইবনু আলী ইবনু হুসায়ন(রাহি.)।

তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, দানশীল ও মহানুভব ছিলেন।বিত্ত-বৈভবের কোন মূল্য তার কাছে ছিল না।অকাতরে দান করতেন। পথঘাটে মানুষের জন্য পানি পানের ব্যবস্থা করা, মানুষের প্রয়োজন পুরা করা ও অভাব-অনাথ মানুষের পাশে দাঁড়ানো ইত্যাদি সেবামূলক কাজের জন্য তাঁর খ্যাতি ছিল।এমনকি বেশি দান করার দরুন তিনি মাঝে মাঝে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়তেন।

এ মহান তাবেয়ী ইমাম ইবনু শিহাব আয যুহরী (রাহি). ১২৪ হিজরিতে শাম ও ফিলিস্তিনের মাঝামাঝি সীমান্তবর্তী এক গ্রামে ইন্তেকাল করেন। মৃৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
(রাহিমাহুল্লাহ)

- আব্দুল্লাহ ইয়াছিন শরীফী

পঠিত : ৩৩৬ বার

মন্তব্য: ০