Alapon

পুনরুত্থান কি সম্ভব? বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোক

“আমাদের যখন মৃত্যু ঘটবে এবং আমরা যখন মাটিতে পরিণত হয়ে যাবো তখন কি আমাদের পুনরুত্থিত করা হবে? এটাতো অবাস্তব বিষয়।” (সুরা ক্বাফ:৩)

এটাই কাফেরদের মূল বক্তব্য যখন তাদের ইসলামের দিকে আহবান করা হয়।তারা ইসলামের অন্যান্য প্রত্যেকটি বিষয়ের সাথে একমত হতে পারলেও তারা কখনো এটার সাথে একমত হতে পারে না।তারা মনে করে তারা যখন মারা যাবে,মরে পচে গিয়ে মাটির সাথে মিশে যাবো তখন এটা কিভাবে সম্ভব সেই মাটির সাথে মিশে যাওয়া দেহটি আবার পুনরুত্থিত করা হবে।

কাফেরদের এই কমন প্রশ্নের জবাবে আল্লাহ তায়ালা খুবই সুন্দর,যুক্তিনির্ভর,সংক্ষিপ্ত কথার মাধ্যমে তাদের এই বিষয়টি বুঝিয়ে দিলেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,“নিশ্চয় আমরা জানি জমিন তোমাদের কতটুকু অংশ ক্ষয় করে এবং এসব কিছু লিপিবদ্ধ আছে একটি সংরক্ষিত কিতাবে।”(সুরা ক্বাফঃ৪)

এই আয়াতের প্রথম অংশের ব্যাখ্যা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী থেকে পাওয়া যায়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ“একটি হাড় ব্যতীত গোটা মানবদেহ ক্ষয়প্রাপ্ত হবে। সেটি হলো পাজরের হাড়(coccyx bone) এবং এই হাড় থেকেই কিয়ামতের দিন সৃষ্টির দৈহিক কাঠামো পুনর্গঠিত করা হবে।”(সহীহুল বুখারী ৪৮১৪, ৪৯৩৫, মুসলিম ২৯৫৫)

উপরের আয়াতের প্রথম অংশ এবং এই হাদিস থেকে কাফেরদের সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ধূলিস্যাৎ করা হয়েছে।তারা যে মনে করতো তারা মৃত্যুর পর মাটির সাথে মিশে যাবে তাদের কোন অস্তিত্বই থাকবে না তাহলে কিভাবে তাদের আবার সৃষ্টি করা হবে,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই বাণীর মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেলো যে তাদের মৃত্যুর পর তাদের মৃতদেহ সম্পূর্ণ নষ্ট হবে না,দেহের একটি অংশ আজীবন থাকবে যেখান থেকে খুব সহজেই তাদেরকে আবার সৃষ্টি করা যাবে।

এখন কাফেররা তো কুরআন বা হাদিসের কথা মানবে না তারা মানবে বিজ্ঞানকে।

চলুন দেখা যাক বিজ্ঞান এই বিষয়ে কি বলে।

বিজ্ঞানীরা প্রচুর গবেষণা করেছে এই বিষয় নিয়ে অবশেষে চীনের বিজ্ঞানীরা প্রমান করেছেন যে, মানুষের শরীরের পিছনে মেরুদন্ডের নিচে যে একটি হাড় রয়েছে যার নাম হল Coccyx bone তা কখনও ভেংগে যায় না বা মাটিতে খেয়ে ফেলে না বা পোড়ানো যায় না বা কোন ক্যামিকেলের মধ্যে দ্রবীভুতও হয় না। বিজ্ঞানীরা এই হাড়টি বহু গবেষনার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে এই হাড়টি কখন ক্ষয়প্রাপ্ত হবে না।

এবার কাফেরদের এই বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া উচিত যদি তারা যুক্তি বিজ্ঞান অনুসরণ করে যে মৃত্যুর পর তারা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে না।

এখন আল্লাহ তায়ালার দ্বিতীয় যুক্তির দিকে একটু লক্ষ করা যাক।

উপরের আয়াতের দ্বিতীয়াংশে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ“এসব কিছু লিপিবদ্ধ আছে একটি সংরক্ষিত কিতাবে।”

আল্লাহ তায়ালা একথার মাধ্যমে কাফেরদের পুনরুত্থিত হওয়ার বিষয়ে সকল দ্বিধাদ্বন্দ্ব ধূলিস্যাৎ করে দিলেন।কেমন করে? চলুন দেখা যাক।

আমাদের চারপাশে যতগুলো যন্ত্রসামগ্রী ব্যবহার করে থাকে তা নিশ্চয়ই কোন না কোন বিজ্ঞানী এগুলো তৈরি করেছেন।কিন্তু প্রশ্ন হলো বিজ্ঞানীরা কি একটি যন্ত্র তৈরি করার পর অনুরুপ হাজার হাজার যন্ত্রপাতি সে একাই তৈরি করেছেন?

না,সে একটি যন্ত্র তৈরি করার পর সেই যন্ত্র তৈরি করার প্রয়োজনীয় উপাদান এবং নিয়মকানুন তিনি একটি পুস্তিকায় লিখে রাখতেন,পরবর্তীতে তার কর্মচারীরা সেই পুস্তিকা অনুসরণ করে হুবহু হাজার হাজার যন্ত্র তৈরি করেছেন।

এই সাধারণ কমন সেন্স যদি বুঝে থাকেন তাহলে আসুন আল্লাহ তায়ালার যুক্তির দ্বিতীয় অংশে।

তিনি মানুষকে সৃষ্টি করার পর তার সৃষ্টির প্রক্রিয়াগুলো সব একটি সংরক্ষিত কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন কাফেরদেরকে যুক্তি দিয়ে এই বিষয়টি বুঝানো যায়।

তিনি কিভাবে মানুষকে সৃষ্টি করেছেন,কি কি উপাদানের প্রয়োজন হয়েছে,কাকে কোন জায়গার মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন,কোন ধরণের মাটি থেকে তৈরি করেছেন,কাকে কি পরিমাণ পানি দিয়ে তৈরি করেছেন ইত্যাদি সকল বিষয় আল্লাহ তায়ালা সংরক্ষণ করে রেখেছেন।

যেহেতু আল্লাহ তায়ালা সকল কিছু হুবহু সংরক্ষণ করে রেখেছেন সেহেতু তাদের পুনরায় সৃষ্টি করা মোটেই কষ্টকর হবে না,খুব সহজেই মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করা যাবে।

সুবহানাল্লাহ আল্লাহ তায়ালা কি অসাধারণ অথচ সংক্ষিপ্ত যুক্তির মাধ্যমে কাফেরদেরকে জানিয়ে দিলেন তোমরা যে বিষয় নিয়ে দ্বিধা করছো সে বিষয়টি অবশ্যই সংঘটিত হবে।

অতএব এই সত্য জানার পর কোন ব্যাক্তির এ বিষয়ে দ্বিধান্বিত হওয়ার কোন সুযোগ নেই সে যদি বিজ্ঞান অথবা যুক্তি অনুসরণ করে।

পঠিত : ১৩২০ বার

মন্তব্য: ০