Alapon

ইসলামি ছাত্রশিবিরের ভাইদের প্রতি ....



ইসলামি ছাত্রশিবিরের ভাইদের প্রতি ....
ভাইদের আচরণের প্রতি যত্নশীলতার অনুরোধ.
এক সময় দেখতাম প্রিয় সংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবিরের ভাইদের মধ্যে প্রচণ্ডরকম বিনয় এবং ভদ্রতা ছিলো । তাঁদের কথাবার্তা, আচার আচরণ এবং চলন বলন থেকে বিনয়ের বৃষ্টি ঝরতো। তাঁদেরকে কেউ ভয়ংকর কটুকথা বললেও তাঁরা সয়ে যেতো। হাসি মুখেই উত্তর দিতো। মারলেও চোখ বুজে সহ্য করতো। কাউকে 'তুই-তোকারি' তো দূরের কথা, তুমি বলতেও খুব একটা দেখা যেতো না। বড়োদের তো বটেই, নিজের চেয়ে অনেক বেশি জুনিয়র ভাইদেরকেও খুব শ্রদ্ধা করতো। ভীষণ ভালোবাসতো।
এখন দেখি, তাঁদের অনেক সর্বোচ্চ শপথের কর্মীদেরও আচরণ দৃষ্টিকটু। বিরোধীদের তো বটেই, একই আদর্শের অনুগামী এবং অনুগতদেরকেও তিক্ত কথায়, কটুবাক্যে বিদ্ধ করে, করে দেয় হৃদয়টাকে ক্ষতবিক্ষত। বাজে আচরণের আঘাতে রক্ত ঝরায় হৃদয় হতে। তাঁদের সিনিয়র এবং দা'ঈ ইলাল্লাহদেরকেও অপমান করে কথা বলেন। অনেকে তো স্বয়ং আমীরে জামায়াতকেও আক্রমণ করেন।
দীর্ঘদিন থেকে আমি দূর থেকে কিংবা কাছ থেকে এসব দেখে আসতেছি। এসব দেখে আমার হৃদয়ে আঘাত লাগে। সে আঘাতে রক্ত ঝরে। প্রচণ্ড রকম ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে আমার অন্তর, আমার কলিজা!
আপনার যদি মনে হয় কেউ ভাব ধরে, আপনার যদি মনে হয় কেউ অতি অহংকার করে, আপনার যদি মনে হয় কেউ কোনো কিছু ভুল করে, তাহলে আপনার কি উচিৎ সেই ব্যক্তির ভুলকে ভুল পদ্ধতিতে মোকাবিলা করা? তাকে অপমান করা? আপনি যদি কোনো বড়ো মানুষকে, বা ছোটো ভাইকে অপমান করে কথা বলেন, পেছনে বা সামনে তার বিরুদ্ধে বিষেদাগার ছড়ান, তাহলে সেটি কি ভালো কাজ?
কেউ একজন অহংকারী হতে পারে, ভাব দেখাতে পারে, ভুলের বালুচরে ডুবে যেতে পারে, তাই বলে আপনি উক্ত ভাইয়ের সাথে বেয়াদবি করতে পারেন না। অন্যের ইখলাস আর আখলাক ঠিক করতে গিয়ে নিজের আদব-আখলাক ধ্বংস করতে পারেন না। আপনার সংগঠন আদব আর আখলাকের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আপনার সংগঠন সুন্দর আচরণ আর মুগ্ধকর ব্যবহার দিয়ে প্রসারিত।
আমার মনে আছে, আমি আমার জীবনে শিবিরের অনেক বড়ো দায়িত্বশীলদের সাথে অশোভন আচরণ করে ফেলেছি। কিন্তু তাঁরা আমাকে উত্তম আচরণ উপহার দিয়ে আমার হৃদয় জয় করেছেন। আমার সেসব মনে পড়লেই তাদেরকে দু'আ করি। এখনো হাজারবার তাঁদেরকে নিজের ভালোবাসার কথা জানান দিই। নিজের ভুলের জন্যে অনুসোচনা করি।
কিন্তু ইদানীং ফেসবুকের কল্যাণে এখন অনেক বেশি লক্ষ্য করছি যে, শিবিরের ভাইদের এমন দারুণ সুন্দর আচরণের পদস্খলন হচ্ছে। তাঁরা দিনকে দিন খারাপ আচরণ আর উগ্রতার দিকে ধাবিত হচ্ছেন কেউ কেউ।
আমি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় সফর করতে, কাজ করতে গিয়ে, চলাচল করতে গিয়ে, লেনদেন করতে গিয়েও দেখি অবস্থা খুব বেশি সুবিধাজনক নয়। এই অবস্থা চলতে থাকলে খুব বেশি এগোনো সম্ভব নয়। নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে বেশিদিন লাগবে না!
এখন যদ্দুর ভালো অবস্থানে আছে আপনার এই দল এই সংগঠন, যতোটুকু টিকে আছে এই আলোর কাফেলা; আমি মনে করি তা আছে সাবেক বর্তমান কিছু ভাইয়ের ইখলাস সম্পন্ন কাজ, গভীর রজনীর তাহাজ্জুদের জায়নামাজে কান্না এবং সর্বপোরি শহীদ ভাইদের রক্তের বদৌলতেই। নয়তো তা-ও থাকতো না আপনাদের অনেকের জন্য!
মনে রাখবেন, আদর্শের বিজয়ের জন্য প্রয়োজন মানুষের দিল বিজয়! ইসলাম রাষ্ট্র বা বিশ্বে প্রতিষ্ঠার আগে সেই ইসলামকে নিজের আচরণে, নিজের দিলে প্রতিষ্ঠা করতে হয়!
খুব হতাশা এবং কষ্ট থেকে লিখছি এ কথাগুলো!
অনেকেই বলবেন, ভাই ফেসবুকে লেখার কী দরকার? বাহিরে আলোচনার কী প্রয়োজন?
আমি বলবো ভাই, এসব আপনাদের তো ফেসবুকেও হয়। বাহিরেও হয়। আমি ব্যক্তিগত কন্টাক্টে, বিভিন্ন সময় সফরেও চেষ্টা করি আমার আলোচনায় বিষয়টি নিয়ে আসতে। কিন্তু পাবলিকলি যেসব সমস্যা হয়, সেসব পাবিলিকলিই বলতে হবে। সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। আমি আপনাদেরকে ভালোবাসি বিধায় সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা এবং দরদ দিয়ে বলেছি। আমি জানি সবাই শুনবে না। আমার লিস্টের একটা অংশ হলেও শুনবে। মানবে। পড়বে। ভাববে। অন্যদেরকে ভাবতে উৎসাহিত করতে। ইন শা আল্লাহ!
শেষ করছি কবি জাকির আবু জাফরের একটা গানের অংশ দিয়ে ;
অমায়িক ব্যবহার যার মুখে আছে
পৃথীবিও ঋণী হয় ঠিক তারই কাছে...
আচরণ ভালো যার, সে তো ভালো
যার কাছে গেলে বাড়ে মনের আলো....
আসুন, মনের আলো ছড়িয়ে দিই দ্বীনের আলো ছড়িয়ে দেয়ার প্রয়োজনেই!

~ আপনাদেরই ভাই রেদওয়ান রাওয়াহা।

পঠিত : ৩৯১ বার

মন্তব্য: ০