অনুশোচনা
তারিখঃ ৩১ জানুয়ারি, ২০২২, ০৮:৪৯
মানুষ মাত্রই ভুল করে।প্রতিটি মানুষ চাইলেও সবসময় সঠিক কাজ করতে পারে না।সঠিক কাজ করতে গিয়ে ভুল কাজ করে ফেলে,এটা মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য।এখানে শুধু ভিন্নতা কেউ ইচ্ছা করে ভুল কাজ করে আর কারো অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়ে যায়।
এরই ধারাবাহিকতায় মুমিনদেরও অনেক সময় ভুল হয়ে যায়।কিন্তু একজন মুমিন ও একজন কাফের,মুশরিকদের ভুল করা এক নয়।
একজন মুমিন ভুল করার সাথে সাথে তার ভিতরে অনুশোচনার ভারি বর্ষণ হতে শুরু করে,সে নিজেকে মহান রবের নিকট সোপর্দ করে দেয়,তার নিকট অন্তরের অন্তস্থল থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করে,সে মহান রবের নিকট তওবা করে যে সে আর এরকম ভুল কখনো করবে না।
যদি ভুলক্রমে আবার একই ভুল হয় তাহলে সে আবার রবের নিকট ফিরে আসে,সে আবার রবের মাগফিরাত কামনা করে,সে আবার তওবা করে,এভাবে ভুল করার মাধ্যমেও মহান রবের নিকটবর্তী হতে থাকে,তার প্রিয় বান্দা হতে থাকে।
অন্যদিকে কাফের,মুনাফিকরা এর ব্যাতিক্রম।তারা ভুল করে অনুশোচনা করে না,তারা মনে করে তারা যা করছে তাই ঠিক এর বিপরীতে যারা আছে তারা সবাই ভুল যদিও তারা মহান রবের আদেশের বিপরীত কাজ করে,তাদের আত্ন-অহঙ্কার নিজের ভুলের স্বীকৃতি দিতে বাধা দেয়,তাদের ভিতরে অনু পরিমান অনুশোচনাও কাজ করে না।যার ফলশ্রুতিতে দিন দিন তারা প্রভুর মাগফিরাত থেকে দূরে যেতে থাকে আর আল্লাহর কঠোর শাস্তির দিকে ধাবমান হতে থাকে।
উদাহরণ স্বরুপ আমরা আদম (আ
ও ইবলিসের কথা বলতে পারি।
আদম (আ
ও মা হাওয়া (আ
কে যখন জান্নাতে বসবাস করতে দেওয়া হলো তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে একটি গাছের নিকট যেতে নিষেধ করেছিলেন।হঠাৎ একদিন ইবলিসের প্ররোচনায় আদম (আ
ও হাওয়া (আ
সেই ফল ভক্ষণ করেন যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে দিলেন।
فَأَزَلَّهُمَا الشَّيْطٰنُ عَنْهَا فَأَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيهِ ۖ وَقُلْنَا اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِى الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتٰعٌ إِلٰى حِينٍ
"অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পর একে অপরের শক্র হবে এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও লাভ সংগ্রহ করতে হবে।"
(QS. Al-Baqarah 2: Verse 36)
এরপর আদম (আ
কি করেছিলেন? তিনি কি নিজের ভুলের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন?
না বরং তিনি গভীর অনুশোচনা করলেন এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনার নিয়ম জেনে নিলেন এবং আল্লাহর কাছে তওবা করলেন।
فَتَلَقّٰىٓ ءَادَمُ مِنْ رَّبِّهِۦ كَلِمٰتٍ فَتَابَ عَلَيْهِ ۚ إِنَّهُۥ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
"অতঃপর হযরত আদম (আঃ) স্বীয় পালনকর্তার কাছ থেকে কয়েকটি কথা শিখে নিলেন, অতঃপর আল্লাহ পাক তাঁর প্রতি (করুণাভরে) লক্ষ্য করলেন। নিশ্চয়ই তিনি মহা-ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।"
(QS. Al-Baqarah 2: Verse 37)
যার ফলস্বরূপ আল্লাহ আদম (আ
কে ক্ষমা করে দিলেন পাশাপাশি আদম (আ
এর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব আরো বৃদ্ধি করলেন।
অন্যদিকে শয়তানের বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন।ইবলিসকে যখন আল্লাহ তায়ালা আদম (আ
কে সিজদা করতে বললেন তখন সে সিজদা করলো তার আত্ন-অহঙ্কারের কারণে।সে আল্লাহর আদেশ অমান্য করলো সে নিশ্চিতভাবেই একটি বিরাট ভুল করলো,ইবলিসের মতো এমনগুজারি ব্যাক্তির তার ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল,তার ভিতরে ভীষণ অনুশোচনার ঢেউ উঠা উচিত ছিল।কিন্তু দিনশেষে তার আত্ন-অহঙ্কার,আত্ন-মর্যাদা তাকে আল্লাহর মাগফিরাত থেকে বিরত রাখলো।তাকে যখন সেখান থেকে বের হওয়ার আদেশ দেওয়া হলো তখন সে ক্ষমা প্রার্থনার পরিবর্তে কি চেয়েছিল পবিত্র কুরআনে তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَنْ تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصّٰغِرِينَ
"বললেন তুই এখান থেকে যা। এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব তুই বের হয়ে যা। তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্ত।"
(QS. Al-A'raf 7: Varse:13)
এমতাবস্থায় শয়তানের চাওয়া ছিল,
قَالَ أَنْظِرْنِىٓ إِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
"সে বললঃ আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।"
(QS. Al-A'raf 7: Verse 14)
সে ক্ষমা চাওয়ার পরিবর্তে সে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ প্রার্থনা করলো যাতে সে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে পারে,তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
পাপ কাজ করার পরে অনুশোচনা করা আর না করার ফলে একজন ব্যাক্তির অবস্থান আল্লাহর নিকট কত পরিবর্তন হয়ে যায়।আদম (আ
কে কিয়ামত পর্যন্ত সম্মান মর্যাদার সহিত স্বরণ করা হবে,অন্যদিকে শয়তান আজীবন আল্লাহ তায়ালার ভৎসনার অন্তর্ভুক্ত হবে আর আখেরাতে তো তাদের দুজনের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এজন্য প্রত্যেক মানুষের উচিত যদি কোন পাপ কাজ সংঘটিত হয়ে যায় সাথে সাথে আল্লাহর নিকট তওবা করা,তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও তওবা কবুলকারী।
মন্তব্য: ০