Alapon

বিয়ে হচ্ছে না, সব দোষ মা-বাবার...?



ইদানিং অনেক ভাইয়েরা বিয়ে করতে না পারার সব দোষ চাপায় মা-বাবার ওপর! মা-বাবাই যেন তাদের বিয়ের পথে সবচেয়ে বড় বাঁধা! প্রিয় ভাই! তুমি বিয়ে করতে পারছ না, এজন্য কেবলই তোমার মা-বাবার দোষ?!

বিয়ের জন্য শারিরীক সক্ষমতার পাশাপাশি আর্থিক সক্ষমতাও আবশ্যক। শুধু শারীরিক সক্ষমতাই যথেষ্ট নয়। মানলাম শারীরিকভাবে তুমি এখন বিয়ের উপযুক্ত। এমতাবস্থায় তুমি মা-বাবার কাছে আবেদন করলে তোমাকে বিয়ে দেওয়ার। তারা তোমার কথায় সম্মতি দিলো না। কিন্তু কেন দিলো না, এর কারণ কি? খোঁজ নিয়েছো? ইসলামের বুঝ না থাকার কারণে যদি বিয়ে না দেয়, তাহলে সেটা দোষ; মেনে নিলাম।

কিন্তু তোমার আর্থিক সামর্থ্য না থাকার কারণে যদি তারা বিয়ে না করার মতামত দেন, তাহলে এটা একেবারে ভুল না। কারণ, পূর্বেই বলেছি বিয়ে শুধু শারিরীক সক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত নয়। আর্থিক সামর্থ্যও থাকা আবশ্যক। এখন তোমার দায়িত্ব হচ্ছে নিজের অনাগত স্ত্রীর মোহর ও ভরণপোষণের জন্য নিজেকে আর্থিকভাবে সক্ষম করে তোলা। নিজের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের পর তারা অনুমতি না দিলেও তুমি বিয়ে করতে পারো।

তোমার স্ত্রীর ভরণপোষণের জিম্মাদার তুমি। তোমার মা-বাবা নয়। তাদের ওপর তোমার স্ত্রীর ভরণপোষণের মোটেও দায় নেই। তারা যদি এক পয়সাও না দেন, তবুও তাদের কোনো গুনাহ হবে না। কিন্তু তুমি যদি সাধ্যমত তার ব্যয়ভার গ্রহণ না করো, তাহলে তুমি গুনাহগার হবে।

প্রশ্ন আসতে পারে, আমি তো এখনও পড়াশোনা করছি। আমি কিভাবে আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হবো। তাহলে উত্তর হচ্ছে, তোমার পড়াশোনা কতটুকু হয়েছে? ফরজে আইনের সীমানা অতিক্রম করে ফেলেছো? যদি এই সীমানা অতিক্রম করে ফেলো, তাহলে তোমার যেহেতু বিয়ের প্রয়োজনটা ওয়াজিব পর্যায়ে চলে গেছে, এখন গতানুগতিক পড়াশোনা বাদ দাও। পড়াশোনা থেকে তোমার বিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে গুনাহ থেকে বাঁচানোর প্রবল আগ্রহ তোমার কাছে দাবি করে তুমি পড়াশোনা বাদ দাও। কোন কর্মে নিজেকে জড়িয়ে নাও। আর্থিক সামর্থ্য অর্জন করো। তারপর মা-বাবাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বিয়ে করে নাও। এটুকুই।

যদি তুমি এরপরও পড়াশোনা চালিয়ে যাও, এমতাবস্থায় তোমার মা-বাবা তোমাকে বিয়ে দিলে সেটা হবে তাঁদের অনুগ্রহ। তোমার এবং তোমার স্ত্রীর ভরণপোষণের জিম্মাদারী নিয়ে তোমার বাবা তোমার ওপর বিশাল অনুগ্রহ করেছেন। এজন্য তোমার মা-বাবার জন্য দিল থেকে দোআ করো। এখন তুমি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে পারো। আর জীবনসঙ্গিনী নিয়ে সুন্দর সংসার গঠন করো।

প্রশ্ন হতে পারে, আপনার কথা ক'জন মানবে? উত্তর হবে, ক'জন মানবে জানি না। পড়াশোনার থেকে বিয়ের প্রয়োজন বেশি হলে আপনাকে বিয়ের সামর্থ্য অর্জন করে বিয়ে করতে হবে। এজন্য গতানুগতিক পড়াশোনা বাদ দিতে হবে। যদি আপনার বাবা আপনার স্ত্রীর ভরণপোষণের জিম্মাদারী না নিতে চান।

এমতাবস্থায় আপনি গুনাহে জড়িয়ে পড়লে শুধু আপনার মা-বাবা-ই গুনাহগার হবে, এমন না। আপনিও গুনাহগার হবেন। আপনার দায়িত্ব আপনি সঠিকভাবে পালন না করার কারণে আপনিও পাপী হবেন! বিয়ে করার শারীরিক এবং আর্থিক সামর্থ্য না থাকলে আপনার প্রতি নির্দেশ হচ্ছে রোজা রাখা। রোজার মাধ্যমে নিজের প্রবৃত্তিকে শান্ত রাখা। বিয়ের মাধ্যমে গুনাহ থেকে বিরত থাকার যে উদ্দেশ্য, তা আপনি আপাতত রোজার মাধ্যমে পূরণ করবেন।
আপনার শারীরিক ও আর্থিক সক্ষমতার পর মা-বাবার দায়িত্ব আপনার বিবাহের পক্ষে মত দেওয়া। এরচেয়ে বেশি কিছু তাদের দায়িত্ব না। নিজের বিয়ের ব্যবস্থা আপনাকেই করতে হবে। আপনাকে বিয়ে করিয়ে দেওয়া তাঁদের দায়িত্ব না। তাঁরা বিয়ের পক্ষে মতামত দিলেই তাঁদের দায়িত্ব শেষ। বাকি কাজ আপনার জিম্মায়। এজন্য মা-বাবার থেকে আপনার দায়িত্বই বেশি। তাই এই কথা ভালো করে স্মরণ রাখুন, বিয়ে করতে না পারার সব দোষ এক বাক্যে মা-বাবার নয়। আপনারও এখানে দায় আছে।

- ইমরান আহমেদ

পঠিত : ৪৪৩ বার

মন্তব্য: ০