Alapon

বেহায়াপনাঃ মানবজাতির চূড়ান্ত ব্যর্থতা...



আজ্জা ওয়া জাল্লা এই শরীরকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন। প্রকৃতপক্ষে, একজন পুরুষের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হল একজন নারী। زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ - মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি সুশোভিত করা হয়েছে নারী। (৩:১৪) এটি খুবই প্রভাব বিস্তারকারী শক্তি। এটি এতোই শক্তিশালী যে, কুরআনে গাছটির জন্য যে ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে সে একই ভাষা ব্যভিচারের জন্যেও ব্যবহার করা হয়েছে। "লা তাকরাবা হা-জিহিস সাজারা", "লা তাকরাবুজ জিনা"। "লা তাকরাবুল ফাওয়াহিশ।" ব্যভিচারের কাছেও যেও না। কোনো নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করার কাছেও যেও না। কোনো ধরণের নির্লজ্জতা এবং বেহায়াপনার ধারে কাছেও যেও না। অতএব, এটি খুবই ভয়ংকর।

আর এটা এমন কিছু ঠিক গাছের নিকটবর্তী হওয়ার মত, কাছে গেলেই এটা আপনাকে টেনে ধরবে। বুঝতেও পারবেন কখন যে কতদূর চলে গেছেন। ভেবেছিলেন, এটা তো শুধু দৃষ্টি বিনিময়। তাকে দেখে পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। এরপর আবার তাকালেন। সে মুচকি হাসি দিলো। আপনিও হাসলেন। এখান থেকে ধীরে ধীরে একটা চক্রের মধ্যে আটকে গেলেন। এরপর সবকিছু সীমার বাহিরে চলে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই এমন কিছুতে আটকে গেলেন বুঝতেও পারছেন না কীভাবে বের হবেন।

সুতরাং, কাছে না যাওয়ার উপদেশটি উত্তম একটি উপদেশ। কারণ, আপনি জানেন না কোথায় থামতে হবে। কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর, পরে আর থামতে পারেন না। আপনি আটকে গেছেন।

তো, আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা বর্ণনা করছেন- যখন মানুষ আল্লাহর অনুমোদিত পথের বাহিরে গিয়ে একে অন্যের নিকট লজ্জাস্থান প্রকাশ করে দেয়, এটাই তখন চূড়ান্ত কদর্যতা, এটাই তখন মানুষের চূড়ান্ত কুৎসিত রূপ।

পুরুষ এবং নারীর সুন্দর একটি ভালোবাসার সম্পর্ক থাকার কথা। আল্লাহ্‌ আমাদের সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন একটি কারণে। যেন আমরা একে অন্যের প্রতি আকৃষ্ট হই। এরপর তিনি একটি ব্যবস্থাপনা তৈরি করলেন যার মাধ্যমে এই সম্পর্কটি বৈধতা পাবে। বিয়ের মাধ্যমে এই সম্পর্কটি বৈধতা পাবে।

মানুষ যখন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের কারণে এই সম্পর্কটি স্থাপন করতে চায়, কিন্তু এমন পন্থায় চায় যা আল্লাহর নিকট অনুমোদিত নয়, তখন সে একই সম্পর্কটি যা সৌন্দর্যের কারণে তৈরি হয়েছিল, আকর্ষণের কারণে তৈরি হয়েছিল— সেই একই সম্পর্কটি তখন কুৎসিত রূপ ধারণ করে।

আর এটা শুধু শারীরিক কদর্যতা নয়। কেউ এটা শোনার পর ভাবতে পারে— আমার একটি মেয়ে বন্ধু আছে। সে সুন্দর। আমি বুঝতে পারছি না কীভাবে সে কুৎসিত হয়ে গেলো, কুরআন নাযিল হওয়ার পর।

না, না, না। আমি এটা নিয়ে কথা বলছি না। আপনার ভেতরে এক ধরণের কদর্যতা আছে। আপনার ভেতরের ভালো সত্ত্বাটি ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয় তখন। মানুষকে শুধু শারীরিক দিক থেকে সুন্দর করে সৃষ্টি করা হয়নি। মানুষকে চরিত্রের দিক থেকে সুন্দর করে সৃষ্টি করা হয়েছে, আধ্যাত্মিক দিক থেকে, নৈতিক দিক থেকে। মানুষকে তার ব্যক্তি সত্ত্বার দিক থেকে সৌন্দর্যময় করে সৃষ্টি করা হয়েছে।

আর আপনি যখন অবৈধ একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তখন আপনার ভেতরে যে সৌন্দর্যগুলো ছিল তার থেকে কিছু কিছু তখন হারিয়ে যায়। আল্লাহ্‌ আপনাকে যে সৌন্দর্যগুলো দান করেছিলেন তার থেকে কিছু কিছু তখন আপনার কাছ থেকে পালাতে শুরু করে। আপনার ভেতর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে ফেলা হয়।

ফলে দেখবেন, কোনো যুবক ছেলে যখন কোনো মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, বা কোনো মেয়ে কোনো ছেলের সাথে- তখন লক্ষ্য করবেন তারা দিন দিন তাদের পিতামাতার সাথে বদমেজাজি আচরণ থেকে আরও বেশি বদমেজাজি করতে থাকে। দিন দিন তাদের রাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই সম্পর্কটি তাদের জীবনের অন্য দিকে কদর্যতা নিয়ে এসেছে। আপনি বুঝতেও পারেন না তার এরকম পরিবর্তনের কারণ কী। এটাই হল, সাওআ বা কদর্যতা।

প্রসঙ্গতঃ কুৎসিত এর আরবি হলো, কাবাহা। এটা কাবিহ, এটা কুৎসিত। তাহলে সাওআ অর্থ কী? আরবিতে সাওআ মানে লাশ। লাশ দেখা মানুষের দৃষ্টিতে খুবই অস্বস্তিকর এবং কদর্য। এর দুর্গন্ধ, আকৃতি, গলে যাওয়া মাংস, চামড়া, এর সর্বত্র পোকামাকড়— এ সবকিছুই আমাদের চিন্তায় খুবই অসহ্য।

এই চিত্রটিই আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা তুলে ধরেছেন। অন্য কথায়, আপনার শরীর জীবনী শক্তিতে পরিপূর্ণ কিন্তু আপনার আত্মার মৃত্যু ঘটছে। আপনার আত্মা একটি লাশে পরিণত হচ্ছে। لِیُبۡدِیَ لَهُمَا مَا وٗرِیَ عَنۡهُمَا مِنۡ سَوۡاٰتِهِمَا - শয়তান তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশ করে দিতে চেয়েছিল, কুৎসিত অবস্থা...সে তাদের ভালোদিক দূর করে দিতে চেয়েছিল।

প্রসঙ্গত, এ সম্পর্কে আরেকটি ব্যাপার উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জাল্লা মানব জাতিকে ফেরেশতাদের চেয়েও উত্তম মর্যাদা দিয়েছেন। ইবলিসের চেয়েও তিনি মানুষকে উত্তম মর্যাদা দিয়েছেন। আর শুধু একটি জিনিসের কারণে মানুষ এই উত্তম মর্যাদা লাভ করেছে। وَ نَفَخۡتُ فِیۡهِ مِنۡ رُّوۡحِیۡ فَقَعُوۡا لَهٗ سٰجِدِیۡنَ - “আল্লাহ্‌ যখন মানুষের ভেতর রূহ ফুঁকে দিবেন…।” শরীরকে সুন্দর করে সৃষ্টি করা হয়েছে, কিন্তু যে রূহ আল্লাহ্‌ মানুষের ভেতর ফুঁকে দিয়েছেন, যে আত্মা আল্লাহ্‌ আপনার ভেতর ফুঁকে দিয়েছেন, যে ভালো গুণগুলো তিনি আপনাকে দিয়েছেন — সেটাই আপনাকে বেশি সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে আল্লাহর যে কোনো সৃষ্টির চেয়ে। সেটাই আপনাকে অন্যদের থেকে পৃথক করেছে।
শয়তান এটা জানে। আর তাই সে মানুষের শারীরিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে তাদের আত্মিক সৌন্দর্যকে কুৎসিত করতে চাইবে। এটাই তার লক্ষ্য।

পরস্পরের সম্মুখে উলঙ্গ না হওয়াটা আদম সন্তানের প্রকৃতিতেই আছে। পোশাক-পরিচ্ছদ পরে থাকা, নিজেদের লজ্জা ঢেকে রাখা এটা আদম সন্তানের সহজাত প্রকৃতিতে স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য মানব জাতির সকলে সহজাতভাবে নিজেদের ঢেকে রাখতে পছন্দ করে। বাচ্চা মেয়ে বা বাচ্চা ছেলে, সামান্য বুদ্ধি হলেই... দুই বছর বয়স, তিন বছর বয়স, চার বছর বয়স, খুবই ছোট, তাদেরকে কোনো ভাবেই এখনো বুদ্ধিমান সচেতন প্রাণী বলা যায় না, কিন্তু, মা জামা পরানোর সময় বাবা যদি সামনে এসে যায়, তারা লজ্জিত হয়ে পড়ে। তারা কম্বলের নিচে লুকিয়ে পড়ে। আল্লাহ্‌ মানব জাতির ভেতর প্রাকৃতিকভাবে লজ্জার চেতনা স্থাপন করে দিয়েছেন।

কিন্তু তখন কী হয় যখন শয়তান কুমন্ত্রণার পর কুমন্ত্রণা দিতে থাকে? সে কুৎসিত সবকিছুকে মানুষের নিকট সুন্দর হিসেবে উপস্থাপন করে। "ওয়া জাইয়ানা লাহুমুস শাইতানু আ'মালাহুম।" শয়তান তাদের কাজগুলোকে তাদের নিকট সুন্দর হিসেবে উপস্থাপন করে।
ঈমান থাকলে, বিশ্বাস থাকলে আল্লাহ্‌ যাকে কুৎসিত বলেছেন আমরাও তাকে কুৎসিত মনে করি; আল্লাহ্‌ যাকে সুন্দর বলেছেন আমরাও তাকে সুন্দর মনে করি। কিন্তু, যদি শয়তানকে আপনার অন্তরে প্রবেশ করতে দেন, যে জিনিসগুলো কুৎসিত মনে হওয়ার কথা ছিল তাই আপনার কাছে সুন্দর মনে হওয়া শুরু করবে।

এরপর সমাজের অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে উপনীত হয়, আপনি যত কম জামা-কাপড় পরবেন, আপনার জামা-কাপড় যত খোলামেলা হবে, রাসূল যেমন বলেছেন, "কা-সিয়াত আ-রিয়াত"। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। একসময় মহিলারা এমনভাবে জামা-কাপড় পরবে, যদিও তাদের শরীরে কাপড় থাকবে কিন্তু দেখতে মনে হবে উলঙ্গ। জামা-কাপড় এমন টাইট হবে, মনে হবে যেন শরীরের উপর রং করা হয়েছে; কোনো কিছু সে পরিধান করেনি। অবস্থা এমনই হবে একসময়। আর এটাই মানব জাতির কাছে সুন্দর মনে হবে।
কিন্তু, পক্ষান্তরে...প্রসঙ্গত এটা শয়তানের ফাঁদ। মানবজাতির চূড়ান্ত ব্যর্থতা হবে তখন, যখন নির্লজ্জতাকে সুন্দর মনে করা হবে, উদযাপন করা হবে।

- উস্তাদ নোমান আলী খান

পঠিত : ৪৫৩ বার

মন্তব্য: ০