Alapon

সংখ্যালঘু ধারণা এবং কিছু কথা...



সংখ্যালঘুর ধারণা এক জায়গায় একরকম। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে মুসলমানরা সংখ্যাগুরু। অন্যান্যরা সংখ্যালঘু। কিন্তু এ চিত্রটা কি এ রাষ্ট্রের সবজায়গায় সমান?

মুসলমান বাপের ঘরে জন্ম নিয়েছে এবং বাপে মুসলমানি একটা নাম রেখেছে বলে মুসলমান; এ তরিকার মুসলমানরা সবজায়গায় সংখ্যাগুরু। এতে দ্বিমতের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু প্র‍্যাক্টিসিং মুসলমানরা কি সবজায়গায় সংখ্যাগুরু?

যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলিতে প্যান্ট টাখনুর উপরে পরলে সন্দেহের চোখে দেখা হতো, সেখানে কি মুসলমানরা সংখ্যাগুরু? ফাযায়েলে আমাল জাতীয় বই ছাড়া বাকি ইসলামি বই যেখানে রাখা ছিল ভয় ও শঙ্কার কারণ, সেখানেও কি মুসলমানরা সংখ্যাগুরু? পর্দা ও হিজাব যে ডিপার্টমেন্টগুলিতে মাঝেমধ্যেই খুলে ফেলা হয়, নাহয় কটু কথা শুনতে হয়; সেখানেও কি প্র‍্যাক্টিসিং মুসলমানরা সংখ্যাগুরু?

শুধু ঢাবি কেন? এ দেশের এলিটশ্রেণীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে মুসলমানরা সংখ্যালঘু। প্র‍্যাক্টিসিং মুসলমানরা।

আর এ পুরো বাংলাদেশটাতে আরেক সংখ্যালঘুর নাম 'আলেমসমাজ'। গ্রামের একটা অশিক্ষিত বর্বর বদিল্লা থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত সবজায়গায় এ দেশে আলেমসমাজকে হেয় করা হয়। প্রতিটা ঘটনায়। প্রতিটা স্থানে। যেমন গ্রামে হয়তো কোথাও দাওয়াত হলো। ইমাম সাহেব খেতে গেলেন। পাশে থেকে হয়তো বিনা দাওয়াতে খেতে আসা একজন বলে উঠবে 'এদের আর কোনো কাজকাম নেই। নামাজ পড়াও আর খাও। এটাই কাজ। এত কেমনে খায় এরা'! ইমাম সাহেব গ্রামের একটা হোটেলে গেলেন। হঠাৎ করে হয়তো সেই হোটেলের মালিক টিভি চালিয়ে দিলো। পাশের একজন যে দৈনিক মুভি দেখে কাটিয়ে দেয় পুরোটা সময় সেই একটু পরে বলে উঠবে 'হেতে বলে হুজুর। দেখেন বইসা বইসা টিভি দেখছে আর ফ্রিতে চা খাচ্ছে। এরা আসলে কলঙ্ক'! নামাযের সময় হয়ে গেছে। ইমাম সাহেব কোনো ঝামেলায় হয়তো ১ মিনিট দেরিতে এসেছেন। পাশে থেকে অফিস কামাই দেয়া ঘুষখোর নতুন নতুন মুসল্লি বলে উঠবে 'খাইয়া দাইয়া কাজকাম নেই এক নামায পড়ানো ছাড়া। সেটাতেও দেরি করে। আসলে ফ্রি খেলে চর্বি জমে তো। চর্বির জন্যেই দেরি হয়'! নিয়মিত এসব ঘটে। সাক্ষী আমি নিজেই। এগুলি কেন ঘটে?

ঘটে কারণ দেশের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আলেম ওলামাদের নিয়মিত শেইভ করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। দাড়ি টুপি নিয়ে বাজে কথা বলা হয়। বোরকাকে টেন্ট বা তাঁবু বলে কটাক্ষ করা হয়। আলেম ওলামাদের অপমান করা হয়। হেয় করা হয়। তাদেরকে ঘৃণিতভাবে উপস্থাপন করা হয়। তাদের উপর অত্যাচার চালিয়ে তাদেরকে অসহায় হিশেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এভাবে একটা রাষ্ট্রে তাদেরকে সংখ্যালঘুতে পরিণত করা হয়েছে। তাই আমি সবসময় বলি, 'এ দেশের আলেমরা আরেক সংখ্যালঘু গোষ্ঠী'।

সংখ্যালঘুর ধারণা একেক জায়গায় একেকরকম। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে যারা সংখ্যালঘু ও যাদেরকে সংখ্যালঘু বানিয়ে রাখা হচ্ছে, সকলেরই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক। অন্ধকার কেটে যাক। আলো আসুক। আল ফুটুক। সত্যের আলো...

- হাবিবুর রহমান

পঠিত : ২৯০ বার

মন্তব্য: ০