Alapon

হিজাব বিতর্ক ও কর্ণাটক এর ইতিহাস

কর্ণাটকের ইতিহাস যদি কেউ পর্যালোচনা করে তাহলে অনায়াসেই বলতে পারে যে, বর্তমানে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার যেভাবে গত ১০বছরে মুসলিমদের হয়রানী করছে এর ১০০ভাগ এর ১ভাগ ও যদি মুসলিম শাসকরা হিন্দুদের হয়রানি কিংবা ধর্মীয় স্বাধীনতা না দিয়ে বসবাস করতে দিতো। তাহলে,বর্তমানে কর্ণাটক তথা দক্ষিণ ভারতে হিন্দুদের অস্তিত্বই খুজে পাওয়া যেতো না!
কর্ণাটকে মুসলিমরা প্রায় চারশত বছর সরাসরি রাজত্ব করেন।

এর ধারাবাহিকতা শুরু হয় বাহমানি সালতানাত এর ক্ষমতা গ্রহন দিয়ে।
বাহমানি সালতানাত দক্ষিণ ভারতের প্রথম স্বাধীন মুসলিম রাজ্য ছিল।তুর্কি বংশোদ্ভূত সেনাপতি আলাউদ্দিন বাহমান শাহ দিল্লির সুলতান মুহাম্মদ বিন তুগলকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাহমানি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।১৩৪৭ থেকে ১৪২৫ সাল পর্যন্ত আহসানাবাদ (গুলবার্গা) ছিল বাহমানি রাজধানী। এরপর মুহাম্মাদাবাদে (বিদার) রাজধানী স্থানান্তরিত করা হয়। দক্ষিণাত্যের নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বাহমানিদের সাথে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের প্রতিদ্বন্দ্বীতা চলতে থাকে। মাহমুদ গাওয়ানের মন্ত্রীত্বকালীন সময় সালতানাতের ক্ষমতা সর্বো‌চ্চ শিখরে পৌছায়। বিজয়নগরের সম্রাট কৃষ্ণদেবরায় বাহমানি সালতানাতের টিকে থাকা শেষ পর্যায়কে পরাজিত করার পর বাহমানি সালতানাত ভেঙে যায়।

১৫১৮ সালের পর সালতানাত ভেঙে পাঁচটি রাজ্যের উদ্ভব হয়: আহমেদনগর সালতানাত, গোলকুন্ডা সালতানাত, বিদার সালতানাত, বেরার সালতানাত, বিজাপুর সালতানাত। এদেরকে সম্মিলিতভাবে দক্ষিণাত্য সালতানাত বলা হয়।

কর্ণাটক হল দক্ষিণ পশ্চিম ভারতের একটি রাজ্য। ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর রাজ্য পুনর্গঠন আইন বলে এই রাজ্য স্থাপিত হয়। রাজ্যটির আদি নাম ছিল মহীশূর রাজ্য। ১৯৭৩ সালে রাজ্যের নাম বদলে রাখা হয় কর্ণাটক।

কর্ণাটকের পশ্চিমে আরব সাগর, উত্তর-পশ্চিমে গোয়া, উত্তরে মহারাষ্ট্র, পূর্বে অন্ধ্রপ্রদেশ, দক্ষিণ-পূর্বে তামিলনাড়ু এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে কেরল অবস্থিত।

ধর্মীয় জনগোষ্ঠী
হিন্দু ধর্ম (৮৪.০০%)   ইসলাম (১২.৯২%)   খৃষ্টান ধর্ম (১.৮৭৮৭%)   জৈনধর্ম (০.৭২%)   বৌদ্ধধর্ম (০.১৬%) শিখ ধর্ম (০.০৫%)   অন্যান্য (0০.০২%)  ধর্মীয় নয় (০.২৭%)

বাহমনী সালতানাতের সময় কর্ণাটকের প্রধান ধর্ম ছিলো সুন্নী ইসলাম। ৪৭এর দেশ ভাগের সময়ও কর্ণাটক থেকে তুলনামূলক কম মুসলিম পাকিস্তান পাড়ি জমান।
কর্ণাটকের মুসলিমরা ঐতিহাসিক ভাবেই ধর্মীয় সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে আসছে। কিন্তু! কট্রর হিন্দুত্ববাদিদের কারনে আজ তারা নিজেদের ধর্মীয় স্বাধীনতা (হিজাবের মতো একটি স্পর্শ কাতর অধিকার) রক্ষার জন্য লড়াই করতে বাধ্য হয়েছে।

সেই তুলনা বাংলাদেশের জনসংখ্যার হিসেব করলে দেখা যায় ২০১১সালের আদমশুমারী অনুযায়ী;
ইসলাম(৯০.৩৯%) হিন্দু (৮.০৩%) বৌদ্ধ (০.৬%) খ্রিস্টান (০.৪) অন্যান্য (০.১%)

কিন্তু বাংলাদেশ সহ পুরো মুসলিম বিশ্বে প্রায় ৯০% মুসলিম বসবাস করার পরেও, হিন্দু সহ ভিন্ন ধর্মের কোনো নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার নজির এখনও বিশ্ব দেখেনি।

এই হিন্দুত্ববাদী বিজেপি গত ১০বছরে পুরো ভারতকে একটি মুসলিম বিদ্বেষী দেশে পরিনত করেছে, তারই ধারাবাহিকতায় কর্ণাটকের হিজাব বিরোধী এই আইন বা ঘোষণা।

পঠিত : ৩৮৯ বার

মন্তব্য: ০