Alapon

দক্ষিণ চীন সাগরের দুই সুপার পাওয়ারের সম্ভাব্য যুদ্ধ ক্ষেত্র হয়ে উঠা এবং এর কারণ




বলা হয়ে থাকে সুপার পাওয়াররা কখনো সামনা সামনি কিংবা সরাসরি যুদ্ধ করে না। কারণ এতে উভয় সুপার পাওয়ারের প্রচন্ড ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে। এর পরবর্তী দুটি সুপার পাওয়ার একে অপরের বিভিন্ন স্বার্থহানির চেষ্টা করে। আর এই কাজটি তারা সাধারণত করে থাকে প্রক্সিদের মাধ্যমে। একবিংশ শতাব্দীর সুপার পাওয়ার আমেরিকা এবং উদীয়মান সুপার পাওয়ার চীনের মধ্য এখন সেই পরিস্থিতিই বিরাজ করছে। এই দুটি দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েই চলছে। এরা একে অপরের সাথে যুদ্ধ করার পরিবর্তে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে এবং একে অপরকে হারাতে সচেষ্ট। বর্তমান সুপার পাওয়ার আমেরিকা প্রযুক্তি, অর্থনীতি, কুটনীতিতে উদীয়মান শক্তি চীনকে আটকানোর জন্য প্রচন্ড সক্রিয়। দুটি দেশ একে অপর থেকে প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় তাদের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন একটি জায়গা রয়েছে যেখানে দুটি দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে ছোট যুদ্ধ হতে পারে। আর এই জায়গা হলো দক্ষিণ চীন সাগর (South China Sea)। তাই ধীরে ধীরে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে উত্তেজনা প্রচন্ড বিপদজনক হয়ে উঠছে। দক্ষিণ চীন সাগরের এই উত্তেজনায় আমেরিকা ও চীন ছাড়াও আরও ৫ টি দেশ এই উত্তেজনার অংশ। এই ৫ টি দেশ হলো মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম এবং ফিলিপিনস। এই সমস্যাটা এতটাই জটিল যে, এই সমস্যার বিবাদমান একটি দেশের মতামত অন্যান্য দেশের সাথে মেলে না। প্রত্যেকটি দেশ তাদের আলাদা আলাদ মতামত ও দাবি রাখে। এই দেশগুলো কোন না কোন দ্বীপের মালিকানা দাবি করে। এই দেশগুলোর একটিও তাদের দাবি থেকে পিছু হটতে রাজি নয়। দক্ষিণ চীন সাগরে এমন কী রয়েছে যার ফলে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরের ইতিহাসই বা কী বলে? আর এই সমস্যার চমকপ্রদ তথ্যই বা কী? চলুন জানা যাক।
সবার আগে দক্ষিণ চীন সাগরের ভৌগলিক অবস্থান জানা প্রয়োজন। দক্ষিণ চীন সাগরের আয়তন ৩৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। এই সাগরের নাম থেকেই বোঝা যায় এই সাগর চীনের দক্ষিণে অবস্থিত। এই সাগরের তীরবর্তী ৭ টি দেশ রয়েছে যথাঃ ১। চীন, ২। তাইওয়ান, ৩। মালেয়শিয়া, ৪। ব্রুনাই, ৫। সিঙ্গাপুর, ৬। ভিয়েতনাম এবং ৭। ফিলিপিনস। দক্ষিণ চীন সাগর পৃথিবীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সাগর। কারণ দক্ষিণ চীন সাগর দিয়েই পৃথিবীর মোট বাণিজ্যের ৩০ শতাংশ হয়ে থাকে। এজন্য দক্ষিণ চীন সাগরের তীরবর্তী দেশগুলোর কাছে দক্ষিণ চীন সাগর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চীনের কাছে দক্ষিণ চীন সাগরের গুরুত্ব আরও বেশী। কারণ ৫ টি বৃহৎ সমুদ্রবন্দরের মধ্যে ৩ টিই দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত। চীন তাঁর জ্বালানি তেলের চাহিদার ৮০ শতাংশ এই সাগরের মাধ্যমেই আমদানি করে থাকে। তাই চীন এই সাগরে নিজের শক্তিশালী অবস্থান রাখতে চায়। দক্ষিণ চীন সাগর প্রাকৃতিক সম্পদদ্বারা পরিপূর্ণ এক সাগর। যা তাঁর গুরুত্ব আশেপাশের দেশগুলোর কাছে আরও বাড়িয়ে দেয়। পৃথিবীর মোট মৎস্য সম্পদের ১০ শতাংশ দক্ষিণ চীন সাগরে মজুদ রয়েছে। যা এর তীরবর্তী দেশগুলো মৎস শিকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই জন্যেই চীন, ভিয়েতনাম ও ফিলিপিনস পৃথিবীর শীর্ষ ১০ টি মৎস্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ চীন সাগরে তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে ১১ বিলিয়ন ব্যারেল তেল এবং ১৯০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। কোন অঞ্চল বা সাগরের এত গুরুত্ব, আবার তা প্রাকৃতিক সম্পদ দ্বারা পরিপূর্ণ। তাহলে সেখানে কীভাবে কোন ঝামেলা না থেকে পারে। ঝামেলা বা সমস্যা সেখানে থাকা অত্যাবশ্যক। এরকমই ঘটেছে দক্ষিণ চীন সাগরের ক্ষেত্রে।
দক্ষিণ চীন সাগরে থাকা ছোট ছোট দ্বীপ ও রিফের ওপর বিভিন্ন দেশের দাবি রয়েছে। কোন কোন দেশ কোন কোন দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি, কোন কোন দ্বীপে সমুদ্রবন্দরও নির্মাণ করে ফেলেছে। যা এই পুরো ব্যাপারটাকে আরও জটিল করে তুলেছে। এবার দক্ষিণ চীন সাগরের ইতিহাসের দিকে নজর দেওয়া যাক। এই বিবাদকে বুঝতে সহযোগিতা করবে। দক্ষিণ চীন সাগরে বাণিজ্যিক যাতায়াত এবং মৎস্য শিকারের ইতিহাস বহু পুরানো হলেও চীনা ঐতিহাসিকদের মতে, আজ থেকে প্রায় ১৯০০ বছর আগে ইস্টার্ন হান সাম্রাজ্যের সময়ে চীনা মৎস্যজীবিরা তথা জেলেরা এখানে মাছ ধরার সময় দক্ষিণ চীন সাগরের এই দ্বীপগুলো আবিষ্কার করেছিলো। আর এই জেলেরাই বংশ পরম্পরায় এই দ্বীপগুলো সম্পর্কে অবগত ছিলো এবং তারাই এখানে মাছ ধরতে আসতো। এরকমই দাবি ভিয়েতনাম ও ফিলিপিনসের ঐতিহাসিকরাও করেন। যাতে তারা এই দ্বীপগুলোর ওপর তাদের দাবির সত্যতা প্রমাণ করতে পারেন। যাই হোক ১৯০০ সালের আগ পর্যন্ত কোন দেশই এখানে জনবসতি গড়ে তোলে নি। তারপর ১৯০৫ সাল আসল। তখন জাপান যুদ্ধে রাশিয়াকে হারিয়ে আজকের চীন ও কোরিয়া দখল করে নেয়। জাপান একটি দ্বীপ দেশ। আমদানিকৃত পণ্যের ওপর জাপানের নির্ভরতা বেশী। তাই জাপান তাঁর সমুদ্র বাণিজ্যের পথের নিরাপত্তার জন্য আজকের তাইওয়ান, হংকংসহ আশেপাশের আরও কিছু দ্বীপ দখল করে নেয়। এই দ্বীপগুলোর ওপর জাপানের দখল ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয়ের আগ পর্যন্ত ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর একটি চুক্তির মাধ্যমে জাপান এই দ্বীপগুলোর মালিকানা ত্যাগ করে এবং এই দ্বীপগুলো চীনের মালিকানধীন হয়ে যায়। উল্লেখ্য তখন চীনে ন্যাশেনালিস্ট সরকার তথা আজকের তাইওয়ানের সরকার ছিলো। তৎকালীন চীনা সরকার গুরুত্ব দ্বীপগুলোর নিয়ন্ত্রণ রেখে বাকী দ্বীপগুলো খালি রেখে দেয়।
তারপর ১৯৪৬ সালে চীনের ন্যাশেনালিস্ট সরকার (Eleven Dash Line) নামক একটি মানচিত্র প্রকাশ করে। যাতে চীনের সামুদ্রিক সীমা দেখানো হয়। এই মানচিত্রে দক্ষিণ চীন সাগরের সকল দ্বীপকে চীনের মালিকানাধীন হিসেবে দেখানো হয়। এই মানচিত্রে দক্ষিণ চীন সাগরের ৮০ শতাংশকে চীনের সামুদ্রিক সীমা হিসেবে দেখানো হয়। চীনের সমুদ্রসীমা চীনের উপকুল থেকে ১৮০০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো। ১৯৪৯ সালে মাও সে তুং এর নেতৃত্বে কমিউনিস্টরা চীন দখল করে নেয়। কমিউনিস্টরা চীনের ন্যাশেনালিস্ট সরকারকে একটি ছোট দ্বীপ তাইওয়ানে পাঠিয়ে দেয়। এরফলে দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলো চীনের কমিউনিস্ট সরকার দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলোর মালিক হয়ে যায়। কিছুদিন পর চীনের কমিউনিস্ট সরকার আগের সরকারের এলেভেন ড্যাশ লাইনের আদলে নাইন ড্যাশ লাইন (Nine Dash Line) নামক এক মানচিত্র প্রকাশ করে। যেখানে আগের মতই দক্ষিণ চীন সাগরের ৮০ শতাংশ আয়তন এবং সবগুলো দ্বীপ চীনের সমুদ্রসীমার অংশ হিসেবে দেখানো হয়। তৎকালীন সময়ে অন্য কোন দেশ এই দ্বীপগুলোর ওপর নিজেদের মালিকানা দাবি করে নি। ১৯৬৯ সালে জাতিসংঘের একটি গবেষণা দল দক্ষিণ চীন সাগরে একটি জিওলজিকাল সার্ভে করায় এবং দক্ষিণ চীন সাগরে তেল ও গ্যাসের বিশাল মজুদ আবিষ্কার করে। এরপর আশেপাশের দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলো দখল করার এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। চীন, মালেয়শিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপিনস ও তাইওয়ান দক্ষিণ চীন সাগরের সকল দ্বীপ দখল করে নেয়। ফলে দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলোর মালিকানা নিয়ে এক খিচুড়ি তৈরি হয়। প্রতিটি দেশ নিজের দাবিকে সঠিক এবং অন্যের দাবিকে ভুল মনে করে। এর ফলে এই দ্বীপগুলোর মালিকানার জন্য এক যুদ্ধ শুরু হয়। যা কখনো শীতল কখনো গরম রুপে আজও চলছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলো এতটাই ছোট যে, এদেরকে মানচিত্রে ভালো করে দেখা যায় না। এই দ্বীপগুলোকে বোঝার সুবিধার্থে এই দ্বীপগুলোকে ৩ ভাগ করা যাক। এই তিনটি ভাগ হলো যথাঃ ১। Paracel Islands ২। Spratly Islands এবং ৩। Scarborough Shoal। ১৯৭৪ সালে চীন ভিয়েতনামকে সরিয়ে পারসেল আইল্যান্ড দখল করে নেয়। ফিলিপিনসের খুব কাছে থাকা স্পার্টলি আইল্যান্ডকে চীন ২০১২ সালে দখল করে নেয়। স্ক্যাভোরো শোল এ সবচেয়ে বেশী দ্বীপ রয়েছে ভিয়েতনামের কাছে, এরপর চীন, মালেয়শিয়া, তাইওয়ান ও ফিলিপিনসের কাছেও দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। এজন্য এখানে বাকী দুটি দ্বীপের তুলনায় বেশি উত্তেজনা থাকে। চীন এখানে তাদের নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করার জন্য কৃত্রিম দ্বীপও নির্মাণ করছে। চীন এসব দ্বীপের মালিকানা ইতিহাসের ভিত্তিতে দাবি করে। তাইওয়ান যেহেতু নিজেকে প্রকৃত চীন হিসেবে দাবি করে সে হিসেবে চীন এবং তাইওয়ান প্রত্যেকে পুরো নাইন ড্যাশ লাইনকে নিজেদের সমুদ্রসীমা মনে করে। এ ব্যাপারে চীন ও তাইওয়ানের দাবি একই। ভিয়েতনাম নাইন ড্যাশ লাইনের অর্ধেকের বেশী অঞ্চলকে নিজের সমুদ্রসীমা হিসেবে দাবি করে। ফিলিপিনসও নাইন ড্যাশ লাইনের কিছু অংশকে নিজের সমুদ্রসীমা হিসেবে দাবি করে। মালেয়শিয়াও নাইন ড্যাশ লাইনের একটি বড় অংশকে নিজের সমুদ্রসীমা মনে করে। এছাড়া ব্রুনাইও নাইন ড্যাশ লাইনের ক্ষুদ্র অংশকে নিজের সমুদ্রসীমা হিসেবে দাবি করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে একটি দেশের দাবিকৃত সমুদ্রসীমা অন্য দেশের সমুদ্রসীমার ভিতর পড়ছে। চীন ও তাইওয়ান ছাড়া বাকীদেশগুলোর এই দ্বীপগুলোর মালিকানা দাবি করার কারণ ভিন্ন। এই দেশগুলোর মতে, আগে এই দ্বীপগুলোতে না মানব বসতি ছিলো। আর না এগুলোতে কোন দেশের নিয়ন্ত্রণ ছিলো। তাই (United Nations Convention For the Law Of The Sea - UNCLOS) জাতিসংঘের সমুদ্রসীমা বিষয়ক আইন অনুযায়ী কোন দেশের উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ঐ দেশের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন অর্থ্যাৎ এখানে ঐ দেশ মাছ শিকার করতে পারবে, তেল ও গ্যাস উত্তোলন করতে পারবে।৷ ঐ সীমার মধ্যে থাকা দ্বীপগুলো ঐ দেশের মালিকানাধীন। আর দক্ষিণ চীন সাগরের এই দ্বীপগুলো ঐ দেশগুলোর এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের মধ্যে বিধায় এই দ্বীপগুলো ঐ দেশের মালিকানাধীন।
এটা মালয়েশিয়া, ব্রুনাই, ফিলিপিনস ও ভিয়েতনামের দাবি। কিন্তু জাতিসংঘের এই আইনে একটি অস্পষ্টতা রয়েছে। আর তা হলো কোনটি দ্বীপ এবং কোনটি পাথর তা নিয়ে। জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী যে দ্বীপে মানুষ ঐতিহাসিকভাবে বসবাস করে সেগুলো দ্বীপ এবং যে দ্বীপগুলোতে মানুষ বসবাস করে না এবং বাহিরে থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস না গেলে সেখানে জীবন যাপন করা সম্ভব নয় সেগুলো হলো সামুদ্রিক পাথর। আর সামুদ্রিক পাথরের আশপাশের সমুদ্র কোন দেশের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোনের অংশ নয়। জাতিসংঘের সমুদ্র সীমা আইনের এই অস্পষ্টতার জন্য দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলোর মালিকানা নিয়ে এত বিবাদ। কোন দেশের দাবি যাই হোক কোন দেশের যদি এতটা শক্তি থাকে যাতে সে কোন বিবাদিত জায়গার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে তাহলে তাঁর জন্য পুরো ব্যাপারটা খুআ সহজ। চীন বিগত ৩ দশকে অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করার পর নিজেদের নৌবাহিনীকেও শক্তিশালী করে তুলেছে। চীনের নৌবাহিনীর মোট জলযানের সংখ্যা আমেরিকার নৌবাহিনীর জলযানের সংখ্যার থেকেও বেশী। তাই চীন বল প্রয়োগ করে নাইন ড্যাশ লাইনের দ্বীপগুলোর মালিকানা পেতে চায় এবং বর্তমান সময়ে অধিকাংশে দ্বীপ চীনের মালিকানাধীন। এছাড়া চীন একটি বিতর্কিত রিক্লেমেশন পদ্ধতি চালু করেছে। এই পদ্ধতিতে চীন তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন ৩০০০ একর আয়তনের ৭ টি ছোট ছোট দ্বীপকে মাটি ফেলে ফেলে বৃহৎ আকারের দ্বীপে পরিণত করেছে। চীনের এই কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবেশীদেশগুলো প্রতিবাদ করলেও চীন কারো আপত্তি না শুনে তাঁর আগ্রাসী কাজ চালিয়ে গেছে। দক্ষিণ চীন সাগরের কয়েকটি দ্বীপের অবস্থান নিরাপত্তার দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন পার্শেল আইল্যান্ড। এটি কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপের সমষ্টি। এটি চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তাইওয়ান ও ভিয়েতনাম এটিকে নিজেদের বলে দাবি করি। পার্শেল আইল্যন্ড যদি তাইওয়ান বা ভিয়েতনাম দখল করে নেয় তাহলে তারা পার্শেল আইল্যান্ডকে ব্যবহার করে চীনের হাইনান দ্বীপ এবং চীনে বড় মিসাইল হামলা করতে পারে। এই দ্বীপ চীনের নিয়ন্ত্রণে থাকায় চীন এই দ্বীপ থেকে যে কোন ধরনের হামলা থেকে সুরক্ষিত এবং এই দ্বীপ চীনের জন্য নিরাপত্তার প্রাচীর হিসেবে কাজ করে।
চীনের হাইনান দ্বীপেই চীনের নৌবাহিনীর ইউলেন নৌঘাঁটি রয়েছে। যেখানে নিচের পারমাণবিক সাবমেরিন রাখা হয়। চীন এবং ভিয়েতনাম বর্তমান অনেকটা একে অপরের শত্রু। ভিয়েতনাম একটি লম্বা ও পাতলা ভূখন্ডের একটি দেশ। ভিয়েতনামের উত্তর ও দক্ষিণ অংশের সংযোগস্থলের এক জায়গায় ভিয়েতনামের ভূমি মাত্র ৬০ কিলোমিটার চওড়া। যা ভিয়েতনামের জন্য বিপদজনক। চীন চাইলে হাইনান ও পার্শেল আইল্যান্ড থেকে হামলা করে ভিয়েতনামের উত্তর ও দক্ষিণ অংশকে আলাদা করে দিতে পারে। তাই ভিয়েতনাম পার্শেল আইল্যান্ডে চীনের উপস্থিতিতে চিন্তিত থাকে। অন্যদিকে স্পার্টলি আইল্যান্ড ফিলিপিনসের রাজধানী ম্যানিলা থেকে মাত্র ৩৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর এই দ্বীপও চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন। তাই এটি ফিলিপিনসের নিরাপত্তার জন্য একটি হুমকি। ফিলিপিনস আমেরিকা থেকে স্বাধীন হওয়া এক দেশ। যার সাথে আমেরিকার সামরিক চুক্তি রয়েছে। তাই আমেরিকা প্রায় সব সময় ফিলিপিনসের নিরাপত্তার জন্য ফিলিপিনসের নৌবাহিনীর সাথে মহড়া চালায়। আমেরিকা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বাড়ন্ত প্রভাবের ওপর অসন্তুষ্ট। আমেরিকা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বাড়ন্ত প্রভাবের সবচেয়ে বড় বিরোধী। কারণ আমেরিকার জন্যও দক্ষিণ চীন সাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর আমেরিকার ৮৩ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক বাণিজ্য দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে হয়। আমেরিকা নিজের বাণিজ্যের নিরাপত্তার জন্য দক্ষিণ চীন সাগরকে পুরোপুরি চীনের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে দিতে চায় না। তাই আমেরিকা চীনকে তাঁর আঙ্গিনায় চ্যালেঞ্জ করে এবং নিজের একটি নৌ বহর দক্ষিণ চীন সাগরে রাখে। আমেরিকা চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন দ্বীপগুলো কাছ দিয়ে ফ্রিডম অফ নেভিগেশন অপারেশন পরিচালনা করে। এই অপারেশনের দ্বারা আমেরিকা চীনকে এই বার্তা দেয় যে, আমেরিকা এসব দ্বীপে চীনের নিয়ন্ত্রণকে অবৈধ মনে করে। এজন্য অনেক সময় আমেরিকা ও চীনের নৌবাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে।
আমেরিকা দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব কম করার জন্য ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে সাথে নিয়ে একটি জোট গঠন করেছে। যার নাম কোয়াড। এই জোটের সদস্যদের আমেরিকা নিজের স্বার্থের জন্য ব্যবহার করতে চায়। আমেরিকা চায় কোয়াডভুক্ত দেশ চীনের নিয়ন্ত্রণাধীন দ্বীপগুলোর কাছ দিয়ে ফ্রীডম অফ নেভিগেশন অপারেশন পরিচালনা করুক। যাতে চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করা যায়। দক্ষিণ চীন সাগরে বর্তমান সুপার পাওয়ার আমেরিকা এবং উদীয়মান সুপার পাওয়ার চীনের এই রেশারেশি বিশ্ব শান্তির জন্য এক হুমকি। যা ভবিষ্যতে যুদ্ধেও রুপ নিতে পারে।
[সমাপ্ত]


তথ্যসূত্রঃ www.freepik.com
www.vecteezy.com
www.pixels.com
Google Maps
Keeping the South China in
Perspective by Jeffrey Bader, Kenneth
Lieberthal and Michael McDevitt.
Where in the World's is the Philippines
? : Debatting it's National Territory by
Rodolfo Severino
Validity Of International Law Over
Historic Rights by Atsuko Kanehara.
Japanese Expansion into the South
China Sea: Colonization (1902-1939)
By Uliese Granados.
https://amti.csis.org
www.belfercentre.org/publications/
freedom-navigation-south-china-sea-
practical-guide.
english.cctv.com
Territorial Disputes in the South China
Sea | Global Conflict Tracker -
www.cfr.org
South China Sea - Economic aspects |
Britannica
Quad alliance of US, Japan, India and
and Australia is part of Biden's plan
to contain China. But some experts
aren't so sure - CNN - March 11, 2021.

পঠিত : ৪৪৭ বার

মন্তব্য: ০