Alapon

|| ভালোবাসা দিবস : পেছনের গল্প ||



যা বলার ছিলো :-

"ভালোবাসা" প্রচণ্ডরকম একটা জনপ্রিয় শব্দ। শব্দটির আলাদা একটা শক্তি আছে। শব্দটা শুনতেই ভালো লাগে। তারচেয়ে ঢের ভালো লাগে ভালোবাসতে এবং তা পেতেও।
আমি তোমাকে / আপনাকে ভালোবাসি—যখন কেউ এই কথাটি আমাদেরকে বলে , তখন মনে সৃজন হয় এক প্রবল প্রশান্তির প্রণোদনা। আসোলে পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণ-ই ভালোবাসা চায়। ভালোবাসা পেলেই তবে জেগে ওঠে শুষ্ক ও তপ্ত হৃদয়টা। এই ভালোবাসা-ই কখনো কখনো কোনো অমানুষকে মানুষ বানায়। আবার অতিরিক্ত বা অপাত্রে ভালোবাসা কাউকে কাউকে করে তোলে অমানুষ। জীবনের স্বাদ-গন্ধ সব ধূলিসাৎ করে ফেলে। আসোলে ভালোবাসা জিনিসটায় রয়েছে এক অনন্য শক্তি । সেই শক্তির কাছে তাবৎ দুনিয়ার সকল কিছুই তূচ্ছ্য হয়ে যায় ।

আজ চৌদ্দ-ই ফেব্রুয়ারি। রমরমা আয়োজনে পালিত হচ্ছে ভালোবাসা দিবস । ভালোবাসা কোনো দিবস কেন্দ্রীক কিনা, বা ভালোসার জন্যে আদৌ কোনো দিবসের প্রয়োজন আছে কিনা—সে আলোচনা আপাতত রহিত থাক।

যারা সবসময়ই যুক্তি-প্রমাণের কথা বলেন , অন্ধ বিশ্বাস আর অজ্ঞতার বিরুদ্ধে যাদের সার্বক্ষণিক যাদের কথিত সংগ্রাম। যারা হরহামেশা —প্রগতিশীলতার জিকির করে , তারা ইচ্ছে হোক বা অনিচ্ছায় —এর সঠিক ইতিহাস জাতির সামনে পেশ করে না। তা না করে বিকৃতভাবে বিষয়টি তুলে ধরে । অথচ ইতিহাস হলো একটি জাতির দর্পন। ইতিহাস অসচেতন জাতি কোনোদিন প্রকৃত দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হতে পারে না। ইতিহাস অসচেতনতা জাতির জন্যে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। বিকৃত ইতিহাস নিয়ে টেকশই জাতি গঠন করা যায় না। কোনো একটা জাতি যদি বিকৃত আচরণ করতে শুরু করে, প্রশ্রয় প্রদান করে বিকৃতিকে, তখন সে জাতির মগজে পঁচন ধরে। সে রকমের পঁচনের এক উজ্জ্বলতম নমুনা হলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।

পশ্চিমা দেশগুলোতে ১৪-ই ফেব্রুয়ারি :

পশ্চিমা দেশগুলোতে ১৪-ই ফেব্রুয়ারিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে বলা হয়। এ যে দিনটি, এই দিনটিকে লাভ ডে ( Love Day) অথবা ‘লার্ভাস ফেস্টিভ্যাল বলা হয় না। কিন্তু দুর্ভাগ্য হোলো আমাদের দেশে এর— Saint Valentine’s Day —অনুবাদে বলা হচ্ছে ‘ভালবাসা দিবস’! এই যে বিকৃত অনুবাদ , এই অনুবাদের কারণে এদেশের সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি বিভ্রান্ত হচ্ছে উঠতি বয়সের তরুণ-তরুনীরা। ‘ভালবাসা’ মনে অনুরণ তোলা একটা প্রচণ্ড শক্তিশালী শব্দ। তাই ভালবাসা দিবস বলায় এটা যে ভিন্নদেশ ও ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে এসেছে সেটা সহজে বুঝা যায় না ।
শুধু আমাদের দেশ নয়, পৃথিবীর সব মুসলিম অধ্যূষিত দেশে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিজ নামের পরিবর্তে অনুবাদের আবরণে প্রবেশ করেছে। ফলে এ দিবসের প্রকৃত অর্থ , উৎপত্তির কারণ ও ইতিহাস মানুষের কাছে অজানায়-ই রয়ে যাচ্ছে।

এখন কেউ যদি এই বিষয় নিয়ে আপত্তি তোলে, এর বিরোধিতা করে। তখন কথিত প্রগতিশীল চিন্তার মানুষেরা নাক সিঁটকিয়ে বলে ওঠবে— ইশ ছ্যাঁ! কী ধর্মান্ধ রে....!! এদের জন্যে কিচ্ছু করতে পারা যায় না গো...... !!!

তারা সঠিক ইতিহাস, এবং এর পেছনের গল্প খুঁজে দেখার চেষ্টা করবে না। বা তারা জানলেও নতুন প্রজন্মকে জানাবে না। আর আমরা এবং আমাদের প্রজন্মও অনেকটা হুজুগের বশবর্তী হয়ে বিজাতীয় ধর্মীয় বিশ্বাস ও রীতি-নীতিতে লালিত ও পরিপুষ্ট একটি ধর্মীয় উৎসবের দিনকে নিজেদের একটি অন্যতম উৎসবের দিন হিসেবে গ্রহণ করেছে!

'সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’র সত্যিকারের পরিচয় :
‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ (Saint Valentine’s Day)। এখানের প্রথম যে শব্দটি, এই শব্দটিই তার মূল পরিচয় বলে দিচ্ছে। Advanced Oxford Learners’ Dictionary তে Saint শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে —
a person declared to be holy by the Christian Church because of her/his qualities or good works অর্থাৎ : এমন ব্যক্তি, খৃষ্টান গীর্জা কর্তৃক যাকে তার গুণাবলী বা ভালো কাজের জন্য পবিত্র সত্তা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রতি শব্দ Ascetic বা সাধু, তাপস্বী। বাংলায় বলা হয় পবিত্র সত্তা। আবার এদিকে Valentine শব্দের অর্থও কিন্তু ভালোবাসা নয়।

Valentine মূলত একজন ব্যক্তির নাম। খ্রীস্ট ধর্মের জন্য প্রাণোৎসর্গ করার কারণে যাকে গীর্জা কর্তৃক Saint (পবিত্র সত্তা)ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো। সুতরাং সহজেই বিষয়টা অনুমেয় যে , গীর্জা কর্তৃক ‘পবিত্র সত্তা’ হিসেবে ঘোষিত একজন ধর্ম যাযকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন যে দিনটিতে করা হয় —সেটাই সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’। যাকে বাংলাদেশে বলা হয় ‘ভালোবাসা দিবস’।

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ : পেছনের গল্প :
তখন ২৭০ সাল । সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামক একজন রোমান ক্যাথলিক ধর্মযাজক ছিলো। তিনি ছিলেন একজন চিকিৎসকও ৷রোমান সম্রাট ছিলো তখন দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ৷ বিশ্বজয়ী রোমানরা একের পর একরাষ্ট্র জয় করে চলছে ৷তো সে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস ছিলো সাম্রাজ্যবাদী এবং রক্তপিপাষু। তার সাম্রাজ্যবাদিতার জন্যে প্রয়োজন হলো অনেক বড়োসড়ো এক সৈন্যবাহিনীর। অথচ কেউ তার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে রাজি হচ্ছে না। সবচে' বেশি সমস্যা বাঁধে মেয়েদের নিয়ে ৷ তারা নিজেরাও যুদ্ধে যেতে পারে না । আবার পুরুষদেরকেও কোনো ক্রমেই তারা যুদ্ধে পাঠাতে চায় না ৷ বিষয়টি লক্ষ্য করলো সম্রাট । সে খেয়াল করে দেখলো যে, অবিবাহিত যুবকরা যুদ্ধের কঠিনতম মুহূর্তগুলোতে অনেক বেশি ধৈর্যের অধিকারী হয়। বিষয়টা দেখে সাম্রাজ্যবাদী সম্রাট মনে করলো পুরুষরা বিয়ে না করলেই হয়তো সেনাবাহিনীতে যোগদান করবে, এবং যুদ্ধে যেতেও রাজি হবে ৷ সে মনে করলো বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হলে যুদ্ধের প্রতি পুরুষদের অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়। আর ঠিক সে কারণেই রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস নারী-পুরুষের যুগলবন্দী হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত করে। উদ্দেশ্য হোলো যাতে তারা কোনো প্রকার ঝুটঝামেলা ছাড়াই সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। সে ভেবেছিলো, এটা করলেই যুদ্ধ ও সেনাবাহিনীতে যোগদিতে আর কেউ অনাগ্রহ প্রকাশ করবে না। তাই সে তার নিজের যে ভাবনা, সে ভাবনার আলোকেই একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলো। আর বিয়ের মতো একটা পূত-পবিত্র বন্ধনকে করে দিলো নিষিদ্ধ ৷তাই তার এমন অবাস্তব, মানবতা বিরোধী হঠকারী ও বর্বর নীতির বিরুদ্ধে দেশের যুবক-যুবতীরা ভীষণ ক্ষেপে ওঠে ।

সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামের একজন যুবক ছিলো। তিনি আবার একজন ধর্মযাজকও বটে। আবার ডাক্তারও। এই যুবক সম্রাটের এ নিষেধাজ্ঞা কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। বিবাহ করার বয়সে, বিপরীত লিঙ্গের প্রতি যে এই একটা প্রবল আকর্ষণ, তা কি আর আইন করে বেঁধে রাখা যায়?

বিষয়টি ভাবিয়ে তুললো গীর্জার পুরোহিত সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে। এগিয়ে এলেন তিনি। রোমের খৃষ্টান গীর্জার পুরোহিত সেন্ট বা সন্তো নিজের দায়িত্বেই সকল তরুণ-তরুনীদের এক করার ব্যবস্থা করলেন। আর্থাৎ, রাজার আদেশকে প্রত্যাখ্যান করে সকলকে বিয়ে দিতে লাগলেন। এভাবে তিনি তার গীর্জায় গোপনে বিয়ে পড়ানোর কাজ চালাতে থাকেন। গীর্জার ভেতর একটি রুমে তিনি পাত্র-পাত্রীদের বসাতেন। স্বল্প আলোর এক বা একাধিক মোমবাতিও জ্বালাতেন সেখানে। মোমবাতির অল্প আলোয় ভ্যালেন্টাইন চুপিচুপি ফিসফিস করে তাদের বিয়ের মন্ত্র পড়াতেন। তবে তাঁর এই কাজ বেশিদিন চালাতে পারলেন না তিনি ৷ ধরা পড়লো ভ্যালেন্টাইন ৷ তাঁকে বন্দী করা হয়। একে তো তিনি ধর্ম যাজক, আবার যুবক-যুবতীদের বিয়ের পক্ষে। এক করে দিচ্ছেন তাদের। সে জন্যে সমাজে ভ্যালেন্টাইনের প্রচুর ভক্ত-অনুরক্ত তৈরি হয়ে গেছে । তারা তার প্রতি তাদের অনুরাগের চিহ্ন হিসেবে দিয়ে আসতেন অনেক ধরনের শুভেচ্ছাসমেত ফুল ৷ নানাবিধ উদ্দীপনামূলক কথা বলে বন্দী সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে উদ্দীপ্ত রাখতে চেষ্টা করতো তারা, যাতে তিনি ভেঙ্গে না পড়েন।

তাকে রাজার কাছে ধরে নিয়ে আসা হলে তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন যে— খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসে বিশ্বাসী হবার কারণে তিনি কাউকে যুগলবন্ধনে আবদ্ধ হতে নিরুৎসাহিত কিংবা বারণ করতে পারেন না। তার কথা শুনে রাজা আরো তেতে যায়। ক্ষেপে যায় তাঁর ওপর। অতঃপর নিক্ষেপ করে তাঁকে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে ।

কারাগারে আটক তিনি। আটকাবস্থাতেই রাজা তাকে খ্রীষ্ট ধর্ম পরিত্যাগ করে প্রাচীন রোমান পৌত্তলিক ধর্মে ফিরে আসার আহ্বান করে। যদি তিনি সেই আহ্ববানে সাড়া প্রদান করেন, তবে বিনিময়ে তাকে ক্ষমা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতিও প্রদান করা হয়। বিষয়টা হোলো, রাজা নিজেও পৌত্তলিক ধর্মে বিশ্বাস করতেন এবং তৎকালীন রোমান সাম্রাজ্যে পৌত্তলিকতার প্রাধান্যও ছিলো প্রবল।

সেন্ট কারাগারের ভেতর থাকাবস্থায় এক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েও ভ্যালেন্টাইনকে দেখতে যেতো। নিয়মিত। আর অনেকক্ষণ ধরে তারা দু’জন প্রাণ খুলে কথা বলতো। এই মেয়েটাও নানা কথা বলে ভ্যালেন্টাইনকে উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা যুগিয়ে যেতো। এক সময় ভ্যালেন্টাইন মেয়েটির চোখের চিকিৎসা করে। আধ্যাত্মিক চিকিৎসা। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আধ্যাত্মিক চিকিৎসায় মেয়েটি নিজ চোখের দৃষ্টিশক্তি ফিরে পায়। এতে মেয়েটি তাঁর প্রতি প্রচণ্ডরকম দূর্বল হয়ে পড়ে । সান্তো মেয়েটির কাছে একটি গোপন চিঠি লিখেন এবং শেষাংশে বিদায় সম্ভাষনে লেখা হয় ‘From Your Valentine” এই শব্দটি মেয়েটির হৃদয়কে আরো বিষাদগ্রহ করে তোলে । ভ্যালেন্টাইনের প্রেম নিয়ে এরচে' বেশি আর কিছুই জানা যায় না।

ভ্যালেন্টাইনের ভালোবাসা ও তার প্রতি দেশের যুবক-যুবতীদের ভালোবাসার কথা সম্রাটের কানে গিয়ে পৌঁছলে সে প্রচন্ডভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। ২৭০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সৈন্যরা ভ্যালেন্টাইনকে হাত-পা বেঁধে টেনে-হিঁচড়ে সম্রাটের সামনে হাজির করে। সম্রাট তাঁকে হত্যার নির্দেশ প্রদান করে।

এরপর এক সময় রোমে পৌত্তলিকদের অবস্থান দুর্বল হয়ে যায়, আর ক্রিশ্চানদের প্রাধান্য সৃষ্টি হয়। আর সে কারণেই ৩৫০ সালে রোমের যে স্থানে ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়েছিল, সেখানে তাঁর স্মরণে একটি গীর্জা বিনির্মাণ করা হয়।

এভাবে প্রায় দেড় শতাব্দি পর ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে খৃষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মগুরু পোপ গ্লসিয়াস ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ (Saint Valentine Day) হিসেবে ঘোষণা করেন।
সে সময়, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে গীর্জায় (খৃষ্টান ধর্মমতে) "পবিত্র সত্তা"(Saint) নিবার্চনের জন্য একটি লটারীর আয়োজন করা হতো । লটারীতে যার নাম আসতো সে সংশ্লিষ্ট বছর থেকে গীর্জা ও ধর্মের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করতো ।

১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ ঘোষণার মূল কারণ কী :

এখন যে প্রশ্নটি সামনে এসে দেখা যাচ্ছে, তা হোলো কারারক্ষীর যুবতী মেয়ের প্রেমে ভ্যালেন্টাইনের কথিত ভালবাসার কারণে কি খৃষ্টান পোপ গ্ল্যাসিয়াস ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ঘোষণা করেছিলো? নিশ্চয়ই না! কারণ, তাদের ধর্মে পুরোহিতদের জন্য বিয়ে করাও বৈধ নয়। পুরোহিত হয়ে কারো যুবতী মেয়ের প্রেমে আসক্তি খৃষ্ট ধর্ম মতেও অনৈতিক কাজ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, ভালবাসার কারণে ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে যেতে হয়নি। কারণ, সে যদি কারারক্ষীর যুবতী মেয়ের প্রেমে আসক্ত হয়ও, তবে তা হয়েছিলো কারাগারে যাওয়ার পর। সুতরাং, ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ ও মৃত্যুদণ্ড প্রদানের সাথে ভালবাসার কোনো সম্পর্ক ছিলোই না। তাই ভ্যালেন্টাইনের কথিত ভালবাসা ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ এর মূল বিষয় ছিলো না। বরং খেয়াল করলে দেখবেন যে খৃষ্ট ধর্মের প্রতি গভীর ভালবাসা-ই ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ডে খুন হবার প্রধানতম কারণ ছিলো। কারণ, নারী-পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজার নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে তিনি গোপনে বিবাহ বন্ধনের কাজ আঞ্জাম দেয়ার মাধ্যমে নিজ ধর্মীয় বিধান পালন করেছিলেন। যার কারণে বন্দী হয়ে অবশেষে তাকে প্রাণ দিতে হয়েছিলো। খৃষ্টান যাজকের নিজ ধর্মের প্রতি এমন সু-গভীর ভালবাসার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করার জন্যেই মূলত তার মৃত্যুর দিনটাকে ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।

পরিশেষে :
সর্বশেষ যে বিষয়টি বড়ো হয়ে দেখা যায়, তা হোলো এই— যেই প্রগতিশীল চিন্তার পোলাপান বা বুদ্ধিজীবীরা বিষয়টিকে হাইলাইট করে, ধারণ করে , এটা নিয়ে হুড়োহুড়ি করে; তারা আজ হতে দেড় হাজার বছর পূর্বের বলে , অদেখা বলে ইসলামের বিধিমালা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সংশয়-সন্দেহ প্রকাশ করে। চৌদ্দশো বছর আগের বিষয় কি এখন মানা যায়? সময় তো এগিয়ে যাবার, প্রগতিশীল হবার— এই টাইপের কথাবার্তা কখনো স্পষ্ট কখনো ইনিয়েবিনিয়ে বলে বা বলার চেষ্টা করে। অথচ সেই ব্যক্তিরা-ই কিনা প্রায় দুই হাজার বছর আগের একটা ধর্মীয় ইশুকে বিকৃতভাবে সামনে এনে পালন করে, আর এই বিষয়টা পালন করিয়ে কী ধরনের প্রগতিশীলতা হাসিল করতে চায় আল্লাহ মা'লুম। এদিকে আমরা মুসলমান সন্তানরা-ও এই যে ভিন্ন একটা সংস্কৃতিকে আমাদের মধ্যে ধারণ করতে হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দিয়েছি তা কি আদৌ উচিত হচ্ছে? ভেবেছি কি কখনো? ধর্মীয় ইশু বাদ দিয়েও যদি বলি— এটা তো আমাদের বাঙ্গালি সংস্কৃতিও নয়।
তা হলে আমরা কীভাবে নিজ জাতিসত্ত্বাকে বিসর্জন করে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা কালচারকে আমাদের মাঝে আমদানি করে কাছে আসার গল্প শুনিয়ে বেড়াই ?
এবং কিছু কিছু পেইজে এ-ও দেখেছি যে , এই দিবস উপলক্ষ্যে বেলুন-কনডমেরও ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে এই দিবস নিয়ে কালপ্রিট মিডিয়া-বুদ্ধিজীবীরা যা করে তা মূলত আমাদের সভ্যতা-সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে তারুণ্যকে বিপথগামী করার নিমিত্তে এক অসাধারণ মতলববাজী। আমাদের দেশ-ধর্ম সভ্যতা-সংস্কৃতির খাতিরেই এই ১৪-ই ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে যে দিবস গড়ে ওঠেছে তা প্রত্যাখ্যান করা এবং অন্যকে সতর্ক-সচেতন করা কর্তব্য। আসুন নিজে সচেতন হই অপরকে সচেতন করি। কারণ, এটা আমাদের না ধর্মীয় সংস্কৃতি, আর না দেশীয় সংস্কৃতি!

|| ভালোবাসা দিবস : পেছনের গল্প ||
~রেদওয়ান রাওয়াহা

পঠিত : ৫৩১ বার

মন্তব্য: ০