Alapon

শহীদ আল-হাজ্জ মালিক আল-শাব্বাজ ওরফে ম্যালকম এক্স-এর জীবনকাহিনি...



ছিনতাই মামলায় ছেলেটাকে গ্রেফতার করা হল। তারপর তাকে আদালতে নেওয়া হয়, এবং তার অপরাধ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হয়। যার ফলে, তাকে কয়েক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। এরপর থেকে ছেলেটির জেল জীবন শুরু হয়।

জেল জীবনে ছেলেটার অধিকাংশ সময় কাটতো লাইব্রেরীতে। সে ইতিহাস, রাজনীতি, দর্শন ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করত । পড়াশুনাতে ছেলেটার এই গভীর মনোনিবেশ দেখে অনেকেই তার প্রতি আকৃষ্ট হয়। একদিন জেলখানার এক কয়েদী তার সঙ্গে লাইব্রেরীতে দেখা করতে আসে। সেই কয়েদি ছিলেন, জেলখানার অন্যতম পুরনো এবং ভদ্র কয়েদি। সেই কয়েদি ছেলেটার নাম জিজ্ঞেস করলে, ছেলেটি বলল, তার নাম ‘ম্যালকম এক্স’।

ম্যালকম এক্স ১৯২৫ সালে নেব্রাডা অঙ্গরাজ্যের ওমাহাতে এক আফ্রো-মার্কিন পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পরিবার ছিল নিগ্রো। সেই সময় আমেরিকাতে প্রচন্ড পরিমাণে বর্ণ সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছিল।

ম্যালকমের বয়স তখন মাত্র ৫ বছর। একদিন আমেরিকার ভয়ংকর শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী গোষ্টি ক্লু ক্লাক্স ক্লান তাদের বাড়িতে হামলা করে। এই হামলায় প্রথমেই ম্যালকম এক্সের বাবা নিহত হয়। এরপর সেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠি ম্যালকম এক্সের চার চাচাকে একে একে জবাই করে হত্যা করে। আর এই জবাই এর দৃশ্য দেখে ম্যালকম এক্সের মা পাগল হয়ে যান। এরপর ম্যালকম এক্সের মায়ের স্থান হয় পাগলাগারদে আর ম্যালকম এক্স অনাথ আশ্রমে।

সেই অনাথ আশ্রমেই ম্যালকম এক্স বড় হতে লাগলেন। ম্যালকম পড়াশুনায় ছিলেন তুখোড়। তিনি ক্লাসের ফার্ষ্টবয় ছিলেন। একদিন ক্লাসে ম্যালকমের টিচার তাকে প্রশ্ন করে, ‘তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও?’
তখন ম্যালকম বলেন, ‘আমি আইনজীবি হতে চাই’।
তখন সেই টিচার তাচ্ছিলের হাসি দিয়ে বলেন, ‘মনে রেখ, তুমি কালো মানুষ। আর কালোদের এতোবড়ো উচ্ছাসা থাকতে নেই।’
সেইদিনের পর ম্যালকম এক্স স্কুল ছেড়ে দেন। জড়িয়ে পড়েন নানা অপরাধজনক কর্মে। সেরকমই এক অপরাধে ম্যালকম এখন জেল খাটছে।

ম্যালকমের পড়াশুনার প্রতি এতোটা মনোযোগ দেখে, সেই কয়েদি তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে থাকে। একসময় তাকে ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ নামে একটি সংগঠনের দাওয়াত দেয়। এই সংগঠনটি মূলত বর্ণ-বিরোধী বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করে থাকতো। যদিও সংগঠনটির নামের শেষে ইসলাম আছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে সংগঠনটি ইসলামি শরীয়াহ খুব একটা মানতো না! আর যেটুকু মানতো, তা ছিল সব বিকৃত।

পাঁচ বছর পর ম্যালকমকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হয়। ১৯৫২ সালে কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে ম্যালকম ‘ন্যাশন অব ইসলামের’ প্রধান এলিজা মুহাম্মাদের শিষ্য হয়ে যান। এভাবেই কেটে গেল কয়েক বছর। এরপর একদিন ম্যালকমের কাছে এলিজা মুহাম্মাদের আসল চেহারা ফাঁস হয়ে গেল। এলিজা বিবাহবহির্ভূত অনেক নারীর সঙ্গেই সম্পর্ক স্থাপন করে। এইসব দেখে ম্যালকম ‘ন্যাশন অব ইসলাম’ থেকে পদত্যাগ করেন এবং হতাশা কাটানোর জন্য হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে সৌদিআরব গমন করেন।

সৌদিআরবে গিয়ে ম্যালকমের চক্ষু তো ছানাবড়া। এতো ভিন্ন ইসলাম। এই ইসলামে তো বর্ণপ্রথাই নেই। সব মানুষই সমান। তিনি প্রকৃত ইসলামের দেখা পেয়ে নতুন করে ইসলাম গ্রহণ করলেন। এইবার ইসলাম গ্রহণ করে তাঁর নাম হল আল-হাজ্জ মালিক আল-শাব্বাজ।
এরপর ম্যালকম আমেরিকায় ফিরে আসেন। ফিরে আসা এই মানুষটি ছিলেন ভিন্ন ম্যালকম। তিনি আমেরিকায় ফিরেই ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন সভা সেমিনার আয়োজন করতে লাগলেন। আর ম্যালকমের বক্তব্য এতোটাই তথ্যবহুল ও আকর্ষনীয় ছিল যে, তার সেমিনারগুলোতে মানুষের উপস্থিতি দিনদিন বাড়তে লাগল। সেইসাথে তাঁর বক্তব্য শুনে শত শত মানুষ ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল।

আর এটাই হয়ে গেল ম্যালকম এক্সের জন্য কাল। ম্যালকম এক্সের নাম এফবিআই এর হিটলিষ্টে প্রথম সারিতে উঠে এলো। এরপর থেকে ম্যালকম এক্সকে প্রকাশ্যে খুব একটা দেখা যেত না। অবশেষে ম্যালকম এক্স একটি সেমিনারে উপস্থিত হওয়ার কথা ব্যক্ত করেন।

১৯৬৫ সালের ২১ ফেব্রয়ারী আজকের এই দিনে ম্যালকম এক্স নিউ ইয়র্ক এর একটি হল রুমে বক্তৃতা দানের জন্য উঠে দাঁড়ান। ঠিক এমন সময় তিন দিক থেকে তিনটি রাইফেল গর্জে উঠল। ম্যালকম এক্সকে সর্বমোট ১৫ টি গুলি করে শহীদ করা হয়। মাত্র ৩৯ বছরে শাহাদাতের অমীয় সূধা পান করে মহান রবের ডাকে সাড়া দেন শহীদ আল-হাজ্জ মালিক আল-শাব্বাজ ওরফে ম্যালকম এক্স।

আল্লাহপাক ম্যালকম এক্স এর শাহাদাতকে কবুল করুন। সেইসাথে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করুন।

পঠিত : ৬৬৪ বার

মন্তব্য: ০