Alapon

"ইসলাম কি সভ্যতার কনসেপ্টকে সমর্থন করে?"


ইসলাম কি সভ্যতার কনসেপ্টকে সমর্থন করে? আমরা উত্তরে বলবো, অবশ্যই সভ্যতার কনসেপ্টকে সমর্থন করে। ইসলাম নিজেই সভ্যতা গড়তে আগ্রহী। কিন্তু কোন সভ্যতা? সভ্যতার নামে এখন পশ্চিমে যা চলছে সেটাকেই কি আমরা সভ্যতা বলবো? এটাই কি সভ্যতা? ইসলামও এই সভ্যতার এই কনসেপ্টকে সমর্থন করে? আমরা বলবো, অবশ্যই না। পাশ্চাত্যে সাধারণভাবে সভ্যতার যে কনসেপ্ট বিদ্যমান তাকে ইসলাম সভ্যতা বলে না। এমন সভ্যতা গড়নের কথা ইসলাম বলে না।
.
সভ্যতা আসলে প্রত্যেক জাতি সামষ্টিকভাবে যেসকল বিশ্বাস বহন করে তার অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক উভয়দিককেই বোঝায়। এখানে আমি অবশ্য এ্যাকাডেমিকভাবে সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে মিলিয়ে সংজ্ঞা দিয়েছি। তো ইসলাম বিশ্বাসগতভাবে ঈমান, তাওহীদ, রিসালাত, আলিমুল গাইবকে মানে। ইসলাম নীতিগতভাবে নীতি-নৈতিকতার অপরিবর্তনীয় ও চিরস্থায়ী নিয়ম-নীতি, ইনসাফ, আদালত ইত্যাদিতে বিশ্বাস রাখে। ইসলামের ভাষ্য হলো মুসলিম উম্মাহর কাছে একটা সত্য আছে। সেই সত্যকে পৌঁছে দেওয়া, সত্যের সাক্ষ্য মুসলিমদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। ইসলাম বলে পৃথিবীতে মানুষ উদ্দেশ্যহীনভাবে আসেনি। তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে উদ্দেশ্য নিয়ে। সেই উদ্দেশ্যও ইসলাম বর্ণনা করে। যে এই উদ্দেশ্য পালন করতে পারবে যতটা পূর্ণতার সাথে সে ততই সফলকাম ব্যক্তি। দুনিয়া পরিপূর্ণ ছাড়ার জায়গাও নয়, একে চিরস্থায়ী মনে করে স্থায়ী বসতবাড়ি গড়ার স্থানও নয়। মুসলিমরা ইতিবাচকভাবে এই পৃথিবীকে গড়বে। যেহেতু আল্লাহ তাঁদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন সত্যের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য, তাই এর দাবী হলো মুসলিমরা সত্যকে সর্বাগ্রে রাখবে, সত্যসহকারে বাঁচবে, সত্যসহকারেই মরবে। তারা তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিটি ক্ষেত্রকে এমনভাবে সজ্জিত করবে যাতে তাতে সত্যের প্রতিচ্ছায়া ভেসে ওঠে।
.
বলা যায়, এগুলোই ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলোই সভ্যতার মূল উপাদান। সমাজে এসব উপাদানের উপস্থিতি নির্দেশ করে তা প্রকৃতপক্ষেই সুস্থ সভ্যতা। ইসলাম এ ধরণের সমাজই গড়তে চায়। ইসলাম আসলে এ ধরণের সভ্যতাকে সমর্থন করে। যদি এগুলো বিদ্যমান থাকে তাহলে মনোরম বিল্ডিং, সুরম্য প্রাসাদ ইত্যাদি থাকলে সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের কাছে সভ্যতা বলতে মানুষকে না খাইয়ে রেখে মানবপতাকা বানানো, রাস্তা ভেঙে রাস্তার পাশের সুদৃশ্য ঝর্ণা খনন, বিচারের নামে চলা প্রহসনকে প্রশ্রয় দিয়ে জিডিপির ঘোল খাওয়ানো। এগুলোর সাথে ইসলামী সভ্যতার কনসেপ্টের কোনো সম্পর্ক নেই।
.
ইসলাম প্রগতিকে সমর্থন করে এবং স্থবিরতাকে অপছন্দ করে। তবে এই প্রগতি পাশ্চাত্যের প্রগতি নয়, এই স্থবিরতা পশ্চিমের শেখানো স্থবিরতা নয়। মানুষ স্বাভাবিকভাবেই সময়ের সাথে সাথে যেসকল পরিবর্তন করে, যেসকল পরিবর্তন আসে- ইসলাম সেগুলোকে ‘old is gold’ এর বাহানায় নাকচ করে না, যতক্ষণ না দ্বীনের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক না হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমে ধর্ম ও বিশ্বাস জিনিসটাকেই প্রগতিহীনতা বা স্থবিরতা বলে আখ্যায়িত করা হয়। তাদের কাছে সময়ের সাথে সাথে ধর্ম, ধর্মীয় বিশ্বাস, নৈতিক নিয়ম সকল কিছু পরিবর্তন করে বাঁধ ভাঙার নাম হচ্ছে প্রগতি; কিন্তু ইসলাম এগুলোকে আসলে জংলীপনা বলে, প্রগতি নয়। ইসলাম স্থবিরতা অপছন্দ করে। সময়ের স্বাভাবিক পরিবর্তন, সময়ের চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা না করা, সময়ের সাথে সাথে স্বাভাবিক উন্নতি না করাকে –যার সাথে ইসলামের সংঘর্ষ নেই, তা বৈধ ও কখনো কখনো জরুরী বটে- ইসলাম স্থবিরতা বলে। এই গতিহীনতা ইসলামের অপছন্দনীয়।
শাইখুল ইসলাম তাহির ইবনু আশুর বলেন,
.
“প্রকৃত সভ্যতা মূলত ফিতরাতের-ই বহিঃপ্রকাশ। মানবীয় বুদ্ধিবৃত্তিকতা থেকে এর উৎসরণ, আর বুদ্ধিবৃত্তি নিজেই ফিতরাতের অংশ। বিভিন্নপ্রকার উত্তম ও কল্যাণকর জ্ঞান ফিতরাতের সাথে সম্পর্কিত, যেহেতু তা মানুষের মনন ও মনীষার মিথস্ক্রিয়া ও বিনিময়ের মাধ্যমে উদ্গত হয়ে থাকে। একইরকমভাবে বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত আবিষ্কারও মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিকতা থেকে জন্ম লাভ করে থাকে। এটাও মানুষের ফিতরাতেরই একটি অংশ যে মানুষ সেসকল বিষয়ের বহিঃপ্রকাশ দেখতে ভালোবাসে, যা তাদের স্বভাব থেকে উৎসরিত হয়ে থাকে।”
.ওপরের এই কথাটিকে ভালোমত বুঝলে আশা করি সভ্যতার ধারণা স্পষ্ট হবে। ~শাকিল হোসাইন

পঠিত : ২২৮ বার

মন্তব্য: ০