Alapon

রাশিয়ার ইউক্রেন হামলা নিয়ে

অবশেষে রাশিয়া ইউক্রেনে পুরোপুরি হামলা চালিয়ে ফেললো। যদিও ঘটনার ধারাবাহিকতা রাশিয়ান সংখ্যাগরিষ্ঠ দোনেতস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন হিসেবে ঘোষনা দিয়ে শান্তিরক্ষী হিসেবে পাঠিয়ে এর সর্বশেষ পূর্বাভাস দিয়েছিলো। শেষ খবরে দেখলাম রাজধানী কিয়েভের ১০ কিলোমিটার দুরের একটা এয়ারপোর্টে লড়াই চলছে। ইউক্রেন কিন্তু রাশিয়ার পর ইউরোপের অন্যতম বিশাল রাষ্ট্র, ৬ লাখ বর্গকিলোমিটারেরও বেশি তার আয়তন । অথচ তিন দিক থেকে করা অ্যাটাকের সামান্য প্রতিরোধও করতে পারেনি। ফুটেজগুলোতে দেখা যাচ্ছে কত নিচ দিয়ে রাশিয়ান মিগ আর এম আই নাইন হেলিকপ্টারগুলো উড়ে যাচ্ছে। অবাক হওয়ার মত ঘটনা হলো ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা অথবা মিসাইল সিস্টেম অথবা এয়ারফোর্স, কোনটারই তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। কতটা দ্রুত আর সর্বাত্মক ভাবে তারা মার্চ করেছে ভাবা যায়? ২০১৩ সালের পর থেকে চলা আধুনিয়াকন অথবা পশ্চিমা সহায়তায় কেনা অস্ত্রগুলো কই গেলো তাহলে? ন্যূনতম প্রতিরোধ করতেও দেখলাম না, যদি প্রেসিডেন্ট জেলেনেৎস্কি যদিও হেলিকপ্টার আর বিমান ধ্বংসে কথা বলেছে কিন্তু বাস্তবে সেই প্রতিরোধে রাশিয়া ইউক্রেনের সিমানা ঘেষে চলা মহড়া শেষ করে যখন তাদের বেজে ফিরে যাবার ঘোষনা দেয় তখন সবাই ভাবতে শুরু করে হয়তো রাশিয়া আর ইউক্রেন আক্রমন করবে না। চায়নিজ কিংবদন্তী ওয়ার স্পেশালিস্ট সানজুর নীতির কি অসাধারণ প্রয়োগ করেছে রাশিয়া।
পশ্চিমাদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্টের ফল ব্যর্থ হতে যাচ্ছে অবশেষে। ইস্টার্ন ইউরোপে ন্যাটোকে নিয়ে ঘাটি গেড়ে রাশিয়া ঘিরে ফেলার যে স্বপ্ন দেখছিলো খুব সম্ভবত তা আর সফল হবে না। সত্যিকারার্থে এটা হওয়াটা অবশ্যাম্ভাবিই ছিলো কারণ ইউএসএর চারপাশে যদি রাশিয়া ঘাটি স্থাপন করে সেক্ষেত্রে কি ইউএস বসে থাকবে! এবং পুতিন এটাও জানতো ইউরোপ বা মার্কিনীরা আর একটা সরাসরি যুদ্ধে জড়ানোর সক্ষমতায় নেই । সেই জর্জিয়ার বিশাল একটা অংশের সাথে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখলের পরও পশ্চিমাদের তেমন কোন ভূমিকা নিতে না পারা সম্ভবত পুতিনের এই পরিকল্পনায় আরো শক্তি যুগিয়েছে। পুতিনের আরো একটা সফলতা হলো বেসামরিক হতাহতের পরিমাণটা একদম নগণ্যের খাতায় রাখা। পশ্চিমারা যেখানে ইরাক ও আআফগানিস্তানে ঠিক একই রকম ভুয়া অস্ত্র আর রক্তপাতের অভিযোগে হামলা চালিয়েছিলো অথচ মিলিয়ন মিলিয়ম বেসামরিক মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিয়েছিলো।
সম্ভবত সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এটি বিশ্ব ইতিহাসে সর্ববৃহৎ ঘটনা কারণ ক্রিমিয়া বা জর্জিয়ার একটা অংশ দখল করার সময়ও পরিস্থিতি অ্যাতোটা ভয়াবহ ছিলো না। একটা মজার কথা শুনবেন? এই ইউক্রেনের কাছে কিন্তু একসময় সোভিয়েত ইউনিউনের ১/৩ অংশ পারমানবিক অস্ত্র ছিলো অর্থাৎ পৃথিবীর তৃতীয় ক্ষমতাবান রাষ্ট্র হয়েছিলো পারমানবিক সক্ষমতার দিক থেকে । ২০০ এর ও বেশি আআন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ছিলো, ১৭০০ + পারমানবিক ওয়ারহেড ছিলো অথচ ইউক্রেনের অখন্ডতা রক্ষার নিরাপত্তা চুক্তির নামে ইউএস, ইউকে ও রাশিয়ার সিদ্ধান্তানুসারে সকল অস্ত্র ধ্বংস করা হয়। সেই চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ যেমন পশ্চিমারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে করছে ঠিক তেমনিভাবে ন্যাটোর সম্প্রসারনের কারণে রাশিয়াও পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ করছে। দিন শেষে ঠিকই ন্যাটো কিংবা ইউএস কিয়েভের হয়ে যুদ্ধ না করা ঘোষনা দিয়েছে। অজস্র নিষেধাজ্ঞা ঘোষনা দিয়েছে দেখলাম বাইডেন কিন্তু তাতে কি লাভটা হলো ইউক্রেনের জনগনের তাহলে? এখন তারা দেশছেড়ে পালাচ্ছেন আর বেজমেন্টে আশ্রয় নিচ্ছেন।
সেজন্য বলা হয় একটা দেশের ভবিষ্যত তার রাজনীতি সচেতন জনগনের দ্বারাই নির্ধারিত হয়। যেখানে ইউক্রেনের জন্য দরকার ছিলো সামরিকভাবে শক্তিশালী থেকে ওয়েস্ট ও রাশিয়ার সাথে সমন্বয় করে চলা সেখান থেকে পুরোপুরি উল্টো ডাইভ দিতে গিয়ে সুখি সমৃদ্ধ লিবারিজম আর ফ্রিডম অফ রাইটসের স্লোগানের রাশিয়াপন্থী প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে পশ্চিমাপন্থী সরকার বসিয়েছিলো এবং যা ছিলো পশ্চিমাদের দীর্ঘমেয়াদী বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্লানের বাস্তবায়ন ছিলো। তবুও চেয়েছিলাম ইউক্রেনে হামলা না করুক রাশিয়া, টেবিলেই সমাধান হোক কারণ যুদ্ধ কেই বা চায়! কিন্তু ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেয়ানো নিয়ে পশ্চিমাদের গোয়ার্তুমীতে একটা দেশ সর্বাত্মক যুদ্ধের মুখে পরলো অথচ সেই পশ্চিমারা নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পাশে থাকছে ইউক্রেনের। এছাড়া সোভিয়েত রাশিয়া সহ ক্রিমিয়ায় তাতার মুসলমানদের করুন অবস্থার চেয়ে ইউক্রেনে মসুলমানরা ভালো থাকায় স্বভাবতই আমি ইউক্রেনের পক্ষে। এছড়া ব্যক্তিগতভাবে আমি কম্যুনিজম, অটোক্রেসি প্রভাবিত চায়না রাশিয়ার থেকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পশ্চিমাদের ভালো অপশন মনে করি সারটেইন লেভেল পর্যন্ত।


পোল্যান্ড তাদের ৯ টি গেট খুলে দিয়েছে ইউক্রেনের জনগনের জন্য। ইউউর সদস্য দেশে হিসেবে চমৎকার মানবিক প্রকাশ অথচ এই পোল্যান্ডই মধ্যপ্রাচ্যের রিফিউজিদের প্রবেশ করতে দিবে না তা নিয়ে দিন কয়েক আগে বেলারুশের সাথে যুদ্ধাবস্থায় পর্যন্ত গিয়েছিলো। পশ্চিমা মানবাধিকার আর লিবারেল ভ্যালুর রংচংয়ে স্লোগানের মাতোয়ারা আমরা মুসলিমরা কি এরপরও তাদের অন্ধ দাসত্ব ছাড়তে পারবো না?
বাংলাদেশের সাথে ইউক্রেনের কিন্তু প্রচুর মিল আছে, বাংলাদশের রাষ্ট্রের একটুখানি ভুল পাশের রাষ্ট্রটির পেটের ভিতর ঠেলে দিতে পারে। এছাড়া রাশিয়া যেমন রাশিয়ান জাতিগোষ্ঠীকে রক্ষার কার্ড খেলছে, ভারতও কিন্ত এর আগে স্বাধীন রাজ্য হায়দারাবাদ ও জুনাগর দখলে সেই একই ধরনের কার্ড তথা হিন্দু রক্ষার কার্ড খেলেছে। সুতরাং যতই দাসত্ব করুক কোন সরকার, দিনশেষে স্ট্রাটেজিক পলিসিগত ভুলই দীর্ঘমেয়াদে দেশকে হুমকি মুখে ফেলবে।
সত্যিকারর্থে, ১৯৯১ এর পর এককেন্দ্রিক বিশ্বে প্রথমবারের মত অ্যাতোবড় চ্যালেঞ্জের শিকার হলো ইউএস ও ওয়েস্ট। চায়নার অর্থনীতিতে শীর্ষস্থানে আরোহন, আফাগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের পরাজয়, বৃটিনের ইউরোপিয় ইউনিয়ন ত্যাগ, ইউক্রেন নিয়ে ন্যাটোতে দ্বিধা বিভক্তি সবকিছু মিলে ওয়েস্ট হেজিমনি পুরোপুরি ব্যাকস্লাইডে। ইউক্রেন পরিস্থিতিতে চালকের অবস্থানে থাকা পুতিন আর ওয়েস্টের আগামী কিছুদিনের সিদ্ধান্তই হয়তো পাল্টে দিবে ভবিষ্যত আন্তর্জাতিক রাজনীতির গতিপথ। হয়তো নতুন এক ঠান্ডা যুদ্ধ অথবা নতুন এক হেজিমনি অপেক্ষা করছে। এখন মুসলিমবিশ্বে দেখা যাক রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশেরই মিত্র তুরস্ক কি করে আর আমরা বাকি মুসলিমরা দুর থেকে শুধু ক্রিড়নক হয়েই থাকবো, কখনো চায়না কখনো রাশিয়া আবার কখনো যুক্তরাষ্ট্র!
~শাকির হাসান

পঠিত : ২৬০ বার

মন্তব্য: ০